somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনোবল থাকলে আমরাও পারি

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনোবল থাকলে আমরাও পারি
ড: রমিত আজাদ

আজ থেকে বহু বছর আগে ঘটে যাওয়া, আমার জীবনের স্মরণীয় ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি আপনাদের সাথে ভাগ করতে চাই। ১৯৮৯ সাল। আমি তখন জর্জিয়ার রাজধানী তিবিলিসি শহরের, তিবিলিসি রাস্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। শহরটিতে নানা দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করত। আমি সবেমাত্র ল্যাংগুয়েজ কোর্সের ছাত্র। বিদেশের মাটিতেও পা রেখেছি প্রথম। বাংলাদেশের মত দরিদ্র পশ্চাদপদ একটি রাস্ট্র থেকে এসেছি বলে কিছুটা হীনমন্যতাও ছিল। তবে আমরা যারা ল্যাংগুয়েজ কোর্সের বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম, সবসময়ই চেষ্টা করতাম নানা ভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে। আমাদের এই স্পিরিট দেখে সিনিয়ররাও আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করতে শুরু করলেন। বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের অনুস্ঠান হবে, আমরা চেষ্টা করতাম ভালো নাচ-গান পারফর্ম করতে, যাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা হয়। সিনিয়ররা ভাই আপারা সহযোগীতা করতেন টাকা দিয়ে, ইনস্ট্রাকশন দিয়ে। বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের খেলা হবে, চেষ্টা করতাম ভালো খেলতে, যাতে কেউ বলতে না পারে বাংলাদেশীরা খেলা জানেনা।
ফলে সেই বছরের ল্যাংগুয়েজ কোর্সের বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আমাদের একটি ইমেজ তৈরী হয়েছিল। এর মধ্যে একদিন ঘোষণা হলো যে, তিবিলিসি শহরের বিদেশী ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগীতা হবে। যে সকল দেশের ছাত্ররা আগ্রহী, যার যার দেশের টিম নিয়ে ফুটবল খেলবে। সাথে সাথে আয়োজন শুরু হয়ে গেল। এবার শুধু আমরা ল্যাংগুয়েজ কোর্সের ছাত্ররা নই, সিনিয়র-জুনিয়র মিলে পুরো শহরের বাংলাদেশী ছাত্রদের একটিই টিম। টুর্ণামেন্ট শুরু হয়ে গেল। আমরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে খেলতে শুরু করলাম। প্রথম খেলায় জয়। উৎসাহ আরো বেড়ে গেল। পাঠকরা শুনলে হয়তো অবাক হবেন, খেলতে খেলতে আমরা একেবারে ফাইনালে উঠে গেলাম। ফাইনাল খেলা হবে বাংলাদেশ বনাম দক্ষিন আমেরিকা (দক্ষিন আমেরিকার ছাত্র-ছাত্রী কম ছিল বলে ওরা সবাই মিলে একটি টিম করেছিল )। হু হু যাতা দল নয়, একেবারে দক্ষিন আমেরিকা, যারা কিনা প্রায়ই ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়। যেদিনটা ফাইনাল খেলা হবে ঐ দিনটি ছিল ১৬ই ডিসেম্বর। আমাদের বিজয়ের দিন। ঐ দিনটিতে কি পরাজিত হওয়া যায়? মরিয়া হয়ে খেলতে শুরু করলো আমাদের বাংলাদেশী খেলোয়াররা। খেলা শেষ হলো অমিমাংশিত ভাবে। দু পক্ষই প্রচন্ড টেনশনে। দক্ষিন আমেরিকানদের জন্য প্রেস্টিজ ইশু। বাংলাদেশের মত ফুটবলে নাম-গন্ধহীন একটি দেশের কাছে পরাজয় বা ড্র কোনটাই মেনে নেয়া যায়না। আর আমাদের ইমোশন - ১৬ই ডিসেম্বর পরাজিত হবোনা। এরপর টাইব্রকার। টেনশন আরো বেড়ে গেল। টানটান হয়ে আছে সবাই। প্রথম কিক করলো বাংলাদেশী খেলোয়ার, গোল, উল্লাসে ফেটে পরলাম আমরা। ২য় কিক করলো দক্ষিন আমেরিকান খেলোয়ার, গোল, উল্লাসে ফেটে পরল ওরা। ৩য় কিক, বাংলাদেশী খেলোয়ার, মিস। ধরে ফেলেছে ওদের দক্ষ গোলকিপার। মুষড়ে পরলাম আমরা। ৪র্থ কিক দক্ষিন আমেরিকান খেলোয়ার, মিস, বল ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের গোলকিপার। চিৎকার করে উঠলাম আমরা। এরপরের কিকগুলোতে উভয় পক্ষই গোল করলো। শেষ কিক দুইটি সমাধান করবে, কে হবে চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশী খেলোয়ার কিক করলো , গোল, আমাদের চিৎকার । কিন্তু, উত্তেজিত হয়ে অপেক্ষা করছি শেষ কিকে কি হয় দেখার জন্য। শেষ কিকটি করলো দক্ষিন আমেরিকান খেলোয়ার, মিস, বল আবারো ফিরিয়ে দিয়েছে আমাদের গোলকিপার। আমাদের আনন্দ, উল্লাস আর চিৎকারে ফেটে যাওয়ার উপক্রম পুরো স্পোর্টস কমপ্লেক্সের।
পুরষ্কার বিতরন করলেন তিবিলিসি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানীত ডীন। পুরষ্কার বিতরনীর শেষে তিনি একটি বক্তৃতা করেছিলেন, যা আমি কোনদিন ভুলবো না। তিনি বলেছিলেন, "আমি খুব মনযোগ দিয়ে খেলাটা দেখেছি, সত্যিকার অর্থে ভালো খেলেছে দক্ষিন আমেরিকানরাই, কিন্তু বাংলাদেশীরা এই মনোভাব নিয়ে খেলেছে, যে আমাদের জিত্‌তেই হবে। তাদের সেই মনোবলের জোরেই তারা জয়লাভ করতে পেরেছে"।
সেইদিন থেকে আমার মনে হয়েছে, 'মনোবল থাকলে আমরাও পারি'।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×