somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুনা লায়লা

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রুনা লায়লা
---------ড. রমিত আজাদ

রুনা লায়লা - আমার প্রিয় গায়িকা।
খুব ছোটবেলায় বিটিভিতে উনার একটি একক সঙ্গীতানুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। খুব সম্ভবত বিটিভিতে এটিই ছিলো উনার প্রথম একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। বাংলা গানের জগতের অমর কিছু গান তিনি ঐ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন, যেমন,

'স্মৃতি ঝলমল সুনীল মাঠের কাছে, আমার অনেক ঋণ আছে ঋণ আছে',
'অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে, যেন এক মুঠো রোদ্দুর আমার পৃথিবী জুড়ে',
'অনেক তো ঘুরলাম অনেক তো দেখলাম, অন্ধ মনের অলিগলিতে মর্মরে ধ্বনি কত শুনলাম, অবশেষে জানলাম আমার পৃথিবী তুমি তুমি শুধু তুমি',
'আমি গানের ভূবনে খুঁজেছি তোমারে, তাই মধুচন্দ্রিমায় খুঁজে পাইনি, সুদুর আকাশে তাকায়ে রয়েছি, তারার দেশে তো কভু যাইনি',
'ভালোবাসা ভালো নয় লোকে যদি মন্দ কয়, তাহলে ভালোবেসে মরে যেতে কেন সাধ হয়?'।

অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারের সঠিক সালটি এখন আর মনে নেই তবে সেটা ১৯৭৬ বা ১৯৭৭ সাল হবে। বিটিভি তখনও রঙিন সম্প্রচার শুরু করেনি। তবে গানের জগতে রুনা লায়লা তখনই একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। উনার জনপ্রিয়তা তখন এমনই তুঙ্গে যে ঐ একক সঙ্গীতানুষ্ঠানটি শোনার জন্য পুরো বাংলাদেশ তখন টিভি সেটের সামনে ছিলো। তবে উল্লেখযোগ্য যে তখন খুব কম বাড়ীতেই টিভি সেট ছিলো, তাই যাদের বাড়ীতে টিভি সেট ছিলোনা তারা প্রতিবেশীদের বাড়ীতে গিয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছিলো। সেসময় টিভির পিছনে জ্যাক দিয়ে রেকর্ড প্লেয়ারের সাথে লাগিয়ে গান রেকর্ড করার সুবিধা ছিলোনা, ভিডিও রেকর্ডার তো দেশে আসেইনি। আমার মনে আছে, বাড়ীতে গানগুলো রেকর্ড করার আয়োজন করা হয়েছিলো, অডিও রেকর্ডারের মাইক্রোফোন অন করে সবাই চুপটি করে গানগুলি শুনছিলাম আর যন্ত্রে তা রেকর্ড হচ্ছিলো।
তখন আমি নিতান্তই ছোট্ট বালক। রুনা লায়লার গানের সাথে জ্ঞানত: ঐ ছিলো আমার প্রথম পরিচয়। সেই যে উনার গানের ভক্ত হলাম আর কখনোই সেই মুগ্ধতা কাটেনি।

এরপর বিটিভির অন্য একটি অনুষ্ঠানে উনার গাওয়া গান
'ও জীবনরে ও জীবন, তোর রাঙা হাতে ঘুম ভাঙাতে এতো আয়োজন'
গানটি প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো তখন। কিছুদিন পরে এশীয় যুব ফুটবলের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে ঐ একই গান অন্য কোন এক গায়িকা গেয়েছিলেন। রুনা লায়লা গান গাইছেন ভেবে জনতা উল্লাসে ফেটে পড়েছিলো, তবে যখন জানতে পারলো যে অন্য গায়িকা তখন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করে বলছিলো যে, 'রুনা আপাকে আনা যেতনা?'

প্রিয় এই কিংবদন্তি গায়িকা সম্পর্কে এরওর কাছ থেকে ধীরে ধীরে জানতে পারলাম। উনার পিতা একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। কর্মসূত্রে তিনি পাকিস্তানের করাচীতে অবস্থান করছিলেন। উনার দুই মেয়ে ছিলো বড় মেয়ে দিনা লায়লা ও ছোট মেয়ে রুনা লায়লা। পিতামাতা চাইলেন দিনা লায়লা বড় গায়িকা হবেন আর রুনা লায়লা হবেন বড় নৃত্যশিল্পী। সেই উদ্দেশ্যে ওস্তাদ রেখে দিনাকে শেখাতে শুরু করলেন গান আর রুনাকে শেখাতে শুরু করলেন ধ্রুপদী নাচ। এদিকে বড় বোনের গান শুনে শুনে রুনা সব শিখে নিলেন। উনাদের মা যিনি নিজেও ছিলেন একজন গায়িকা অবাক হয়ে দেখলেন, ছোট মেয়ে রুনা শুনে শুনেই সব গান শিখে ফেলেছে। গানের ওস্তাদজীও এটা লক্ষ্য করলেন। তারপর তারা সিদ্ধান্ত নিলেন যে রুনা-কেও গান শেখানো হবে। উনাদের ধন্যবাদ, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। উনাদের কারনেই আমরা এত বড় একজন গায়িকা পেলাম।

রুনা লায়লা উনার গায়িকা জীবন শুরু করেন ১৯৬৫ সালে মাত্র তেরো বৎসর বয়সে। পাকিস্তানী ছায়াছবি জুগনু-তে তিনি গান তাঁর প্রথম গান। চৌদ্দ বৎসর বয়সে উনার গাওয়া গান 'উনকি নজরনসে মহব্বত কা যো পয়গাম মিলা' চারিদিকে সাড়া ফেলে দিলো। পরবর্তিকালে বিবিসি-তে দেয়া একটি ইন্টারভিউয়ে রুনা লায়লা বলেছিলেন যে উনার গাওয়া উর্দু গানগুলোর মধ্যে এই গানটিই উনার সবচাইতে প্রিয়। এরপর তিনি পিটিভি-তে গান গাইতে শুরু করেন। খ্যাতিমান প্রযোজক জিয়া মহিউদ্দীনের প্রযোজনায় তখন পিটিভিতে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হতো সেখানে রুনা লায়লা নিয়মিত গান গাইতে শুরু করেন, এটা তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় (Click This Link )
। ঐ সময় পিটিভিতে একটি একক জনপ্রিয় গানের অনুস্ঠান প্রচারিত হতো। অনুস্ঠানটির নাম ছিলো "বাজমে লায়লা" (Click This Link )। আর অনুস্ঠানটির একক শিল্পী ছিলেন রুনা লায়লা। এবং ঐ সময় এই অনুস্ঠানটি ছিলো এই উপমহাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

রুনা লায়লার গাওয়া প্রথম বাংলা গানটি ছিলো 'গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে', স্বরলিপি ছবিতে ১৯৭০ সালে। গানে ঠোট মিলিয়েছিলেন আরেক কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। গানটি সাথে সাথেই হিট করেছিলো, এবং এখনো এটি বাংলা গানের জগতে সেরা রোমান্টিক গানগুলির একটি।

কোন ব্যাক্তি যখন লাইমলাইটে চলে আসে তখন তার পক্ষে প্রচারনার পাশাপশি বিপক্ষেও প্রচুর প্রচারনা হয়। রুনা লায়লার বিপক্ষে এমন একটি প্রচারনা হলো তিনি নিজেকে তদানিন্তন পাকিস্তানী খ্যাতিমান গায়িকা নূর জাহানের চাইতে উঁচু চোখে দেখছেন। বিষয়টি অতিরঞ্জিত ছিলো এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও এসেছিলো, যা একটি ঋণাত্মক আবহ সৃষ্টি করেছিলো। এত কিছু সত্বেও রুনা লায়লার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিলো।

রুনা লায়লা বাংলাদেশে ফিরে আসেন ১৯৭৪ সালের জানুয়ারী মাসে (Click This Link )। দেশে ফেরার পর প্রথম দিকে উনার অভিজ্ঞতা সুখকর ছিলনা। সঙ্গীত পরিমন্ডলের কেউ কেউ উনাকে ঈর্ষার চোখে দেখতে থাকে, এবং তিনি যেন বাংলাদেশে প্রষ্ফুটিত না হন সেরকম কূটকৌশল চালতে থাকে। এরকম একটি অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি, যেখানে রুনা লায়লা গান পরিবেশন করার পর দর্শকরা বারবার ওয়ান মোর ওয়ান মোর বলছিলো। এক পর্যায়ে একজন গায়ক রুনা লায়লার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়েছিলো।


তবে প্রতিভা ঠেকিয়ে রাখা যায়না। রুনা লায়লা নিজ গুনে বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনে তাঁর স্থান করে নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে তখনকার একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভি উনার একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। যার ব্যাপারে উপরে লিখেছি।

উনার আরো কিছু একক সঙ্গীতানুষ্ঠান বিটিভি পরবর্তিতে প্রচার করেছিলো। এর মধ্যে একটিতে আমার মনে পড়ে তিনি আরো কয়েকটি কালজয়ী গান গেয়েছিলেন।
'যখন থামবে কোলাহল ঘুমে নিঝুম চারিদিক, আকাশের উজ্জ্বল তারাটা মিটমিট করে শুধু জ্বলবে'
'আমি তো সুজন দেখেই ভাব করেছি',
'সুখ তুমি কি আমার জানতে ইচ্ছে করে'
এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেওনা, বৃষ্টিরও ছন্দে বকুলেরও গন্ধে আমায় তুমি ফেলে যেওনা'।


রুনা লায়লার যাদুকরী কন্ঠের পাশাপাশি আরো যে বিষয়টি দর্শকদের মন কাড়তো বা এখনো কাড়ে তা হলো গানের সাথে সাথে উনার দেহবল্লরীর অদ্ভুত নৃত্যকলা। ষাটের দশকে রেডিওর পরে এলো টেলিভিশন। প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব উপহারটি গানের জগতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করার সুযোগ এনে দিয়েছিলো। সেটা আর কেউ পারুক না পারুক রুনা লায়লা ঠিকই পেরেছিলেন। গানের সুর ও ভাষামাধুর্যের সাথে তিনি যোগ করলেন নতুন এই মাত্রা - 'দেহের ভাষা'। বিটিভিতে নেচে নেচে গান গাওয়ার প্রচলন রুনাই প্রথম করেছিলেন। দেহের ছন্দ আর গানের ছন্দ মিলেমিশে সৃষ্টি হয়েছে এক অপূর্ব সঙ্গীত! ছোটবেলায় তিনি যে ধ্রুপদী নাচ শিখেছিলেন সেই গুনেরই এটা একটা বহিঃপ্রকাশ। পরবর্তিতে অনেক গায়িকাই ঐ স্টাইলটি অনুকরন করেছিলেন।

সেই সময় দিল্লি ছাড়া ভারতের আর কোথাও টিভি ব্রডকাস্টিং ছিলোনা। বোম্বে ও কোলকাতায় দূরদর্শন-এর ব্রডকাস্টিং শুরু হয় ১৯৭৭ সাল থেকে। রুনা লায়লা সেই সময়ে ১৯৭৪ সালের নভেম্বর মাসে কোলকাতায় 'সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী' গানটি রেকর্ড করেছিলেন, যা দুই বাংলায়ই হিট হয়। জোক করে অনেকে বলে যে কোলকাতায় রুনা আপার নাম শুনলেই বলে "ঐ যে সেই সাধের লাউ দিদি"। তিনি ১৯৭৪ সালে মুম্বাইতেও কনসার্ট করে দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছিলেন। অরূপ নামে আমার এক ভারতীয় বন্ধু আমাকে বলেছিলেন যে, মেঘালয়ের শিলং-এ রুনা লায়লার স্টেজ শো হয়েছিলো। রুনা লায়লা নাম শুনেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গিয়েছিলো। সবাই মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেছিলো স্টেজ মাতানো রুনার গান।

গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে সে'সময় ভারতের সাথে আমাদের টানাপোড়ন ছলছিলো। সেই সময়ে লেখক খুশবন্ত সিং বলেছিলেন, “তোমরা আমাদেরকে রুনা লায়লাকে দিয়ে দাও, আমরা তোমাদেরকে গঙ্গার পানির হিস্যা দিয়ে দেব” –(Click This Link )। রুনা লায়লা যে আমাদের দেশের কত বড় একটি সম্পদ, এই একটি মন্তব্য থেকেই তা বোঝা যায়।

ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে রুনা লায়লার গান ছাড়া জমতোই না। একবার ঈদের অনুষ্ঠানে তিনি গাইলেন, 'পাহাড়ী ফুল আমি মৌরানী, হায় কেউ জানে না, রূপে যে আছে নেশা, চোখে ছলনা'। সদ্য যৌবনা তরুনীর মত সারা দেহে ছন্দ তুলে নেচে নেচে গাইলেন এই ছন্দময় আধুনিক গানটি। ঘরের ড্রয়িংরুমেও করতালিতে ফেটে পড়েছিলো তরুন-তরুনীরা।

কিছু গানের জন্য তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। যেমন, 'আয়রে মেঘ আয়রে, চঞ্চলা হাওয়ারে" (ছবি - দি রেইন), "যাদু বিনা পাখি" (ছবি - যাদুর বাঁশী)। এমন আরো অনেক গান আছে। রুনা আপা জীবনে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পুরষ্কার পেয়েছেন। এছাড়া তিনি পাকিস্তান ও ভারত থেকেও একাধিক এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

এছাড়া উনার গাওয়া আরো অনেক ছায়াছবির গান চিরঞ্জীব হয়ে আছে। যেমন, 'বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ীতে গেলাম দেখা পাইলাম না (ছবি - কসাই) "একাত্তরের মা জননী" ( ছবি - বিক্ষোভ), 'আমার মন বলে তুমি আসবে', 'বনে বনে যত ফুল আছে, মাথায় মাথায় যত চুল আছে, ততদিন ততদিন বেঁচে থাকো রাজার কুমার' (ছবি - পাগলা রাজা), 'লাল গোলাপী অঙ্গ আমার, গোরা গোরা গাল, কেউ আজ যদি না দেয়রে মন, দিতে হবে কাল'।

বিটিভির রঙিন সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর, গানের কিছু ক্লিপও তিনি করেছিলেন, যা সেই সময়ে বিরল ছিলো। যেমন,
'পান খাইয়া ঠোট লাল করিলাম বন্ধুর ভাগ্য হইলো না',
'ও বন্ধুরে প্রাণও বন্ধুরে কবে যাবো তোমার বাড়ী, পিন্দিয়া গোলাপী শাড়ী, টিকলি মাথায় ঘোমটা দিয়া রে'।
আমার মন পাখীটা যায়রে উড়ে যায়, ধানশালিকের গায়'।
'বাড়ীর মানুষ কয় আমায় তাবিজ করেছে, পাড়া-পড়শি কয় জ্বীনে ভুতে ধরেছে',
'পাখী খাঁচা ভেঙে উড়ে গেলে হবে অচেনা',
'সুজন মাঝিরে, কোন ঘাটে লাগাইবা তোমার নাও, আমি পারের আশায় বইসা আছি, আমায় লইয়া যাও' (ভাটিয়ালি গান)।

বাংলা গানের জগতে রুনা লায়লার স্পর্শ পায়নি এ' জাতীয় কোন গান আছে কিনা সন্দেহ! নজরুল গীতি থেকে শুরু ভাওয়াইয়া পর্যন্ত কোন গান গাননি উনি? এছাড়া গজল ভজনও তিনি গেয়েছেন।

রুনা লায়লা আন্তর্জাতিক গায়িকা, বাংলা ভাষার পাশাপাশি বহুদেশে বহু ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। বিটিভির সেই সময়ের জনপ্রিয় ঈদের নাটক জব্বর আলী সিরিজ ছিলো খ্যাতিমান চিত্র-পরিচালক আমজাদ হোসেন রচিত ও অভিনিত সিরিজের একটি নাটকের নাম ছিলো 'এতদিন কোথায় ছিলেন?' (১৯৮০ সাল)-এ একটি আরবী গান শুনে আমরা দর্শকরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এটা কোন আরবীয় কন্ঠশিল্পীর কন্ঠে গাওয়া, পরে আমরা জানতে পেরে বিস্মিত হয়েছিলাম যে এটা আমাদেরই রুনা লায়লার গাওয়া (তবে মূল গানটি উম্মে কুলসুমের গাওয়া)। উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দী, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পশতু, পারসিয়ান, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্পেনিশ, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান ও ইংরেজি ভাষাসহ মোট ১৮টি ভাষায় তিনি গান গেয়েছেন।

নাম না জানা কোন এক জিপসী (বানজারান) তরুণীর কন্ঠে গাওয়া 'দমাদম মাস্ত কালান্দার' গানটি উপমহাদেশের একটি মাইলফলক (Click This Link)। গানটি গেয়েছেন অনেকেই তবে রুনা লায়লার কন্ঠে এই গানটি যেন নতুন প্রাণ পায়।

বিদেশের মাটিতে তিনি যেখানেই গিয়েছেন দর্শকের মন জয় করে ফিরেছেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মস্কোতে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান করেছিলেন, দুর্ভাগ্যবশত সেই অনুষ্ঠানটি আমি মিস করেছিলাম, খুব আফসোস হয়েছিলো মনে। সেই অনুষ্ঠানটি মস্কো প্রবাসী দর্শকদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিলো। তিনি বারবার ভিডিও করতে নিষেধ করছিলেন তা সত্বেও লুকিয়ে-চুড়িয়ে অনেকেই ভিডিও করেছিলো, প্রিয় শিল্পীর লাইভ শো ভিডিও করতে পারার এতো বড় সুযোগ কে মিস করে বলুন? তবে কমার্শিয়াল পারপাজে কেউই ব্যবহার করেনি ওটি। সকলেই যার যার বাড়ীতে অবসর সময়ে ঐ ভিডিওটি চালিয়ে সুন্দর সময় কাটাতো।

গান গাওয়ার পাশাপাশি জনসেবামূলক কাজও তিনি করে থাকেন। উনার বড় বোন দিনা লায়লা দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন, ১৯৭৬ সালে। বড় বোনের মৃত্যুর পর রুনা লায়লা ১০ টি চ্যারিটি শো করেছিলেন, সেই টাকা তিনি দান করেছিলেন ঢাকার একটি ক্যান্সার হাসপাতালে।

আজকের বাংলাদেশ দৈন্য আর অভাবের দেশ। সংস্কৃতি অঙ্গনও সেই অভাবমুক্ত নয়। রুনা আপার মত প্রতিভাবান শিল্পীরা সেই অভাবের অনেকটাই পুরণ করছেন। আপনি আমাদের সম্পদ, আমাদের গর্ব, আপনার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি রুনা আপা। গঙ্গা কেন পৃথিবীর সব পানির বিনিময়েও আমরা আপনাকে দেবনা, আপনি আমাদের ছিলেন, আমাদেরই থাকবেন।



(কয়েকদিন আগে ফেসবুকে রুনা লায়লা-কে নিয়ে কিছু মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য দেখলাম। ফেইসবুক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, একটি ফ্রী মিডিয়া, সেখানে যে যা খুশী লিখতে পারে সেটা যার যার তার তার ব্যপার। তারপরেও ভাবলাম উনার মত এত বড় মাপের একজন শিল্পীর বিষয়ে আমার মত অতি সামান্য একজন ভক্তের মনের কথাগুলো লেখা দরকার। যা লিখেছি তার অনেক কিছুই আমার স্মৃতি থেকে লেখা। যদি সেখানে কোন ভুল-ভ্রান্তি থাকে পাঠকদের কাছে অনুরোধ রইলো তা ধরে দেয়ার জন্য)


রুনা লায়লার গাওয়া কয়েকটি গানের লিংক
1. https://www.youtube.com/watch?v=-nYv-yqpGsA
2. https://www.youtube.com/watch?v=5tHeaRzJmsU
3. https://www.youtube.com/watch?v=-nYv-yqpGsA&list=RD-nYv-yqpGsA#t=1
4. https://www.youtube.com/watch?v=VZS0LSuEAvg
5. https://www.youtube.com/watch?v=n5F5kS-Wn_M
৬। https://www.youtube.com/watch?v=JW4VMlLRPBI
৭। https://www.youtube.com/watch?v=dAyg9S0mSZQ
৮। https://www.youtube.com/watch?v=TGQ-S5UgGdw

তথ্যসূত্র:
1. Click This Link
2. Click This Link
3. Click This Link
4. https://en.wikipedia.org/wiki/Runa_Laila
5. Click This Link


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:১২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×