সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে বিশ্বের মারণাস্ত্রগুলি। আবার এমন কিছু অস্ত্র রয়েছে যেগুলো ভয়ংকর কার্যকক্ষমতার কারণে কয়েক দশক ধরে মাথা উচু করে টিকে আছে। পাল্লা দিচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে।
১. হ্যাকলার কচ
হ্যাকলার কচ। বিশ্বের অন্যতম ভয়ংকর মারণাস্ত্র এটি। এইচকে এমজি ৪৩ এই মেশিন গানটির প্রস্তুতকারক জার্মানীর হ্যাকলাম অ্যান্ড কচ কোম্পানি। এর নিরীক্ষণ ক্ষমতা ৫.৫ মি.মি। এ অস্ত্রটি পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হয় নব্বই দশকের শেষের দিকে। তবে প্রথম প্রদর্শিত হয় ২০০১ সালে। যদিও অস্ত্রটি অনেক আগেই তৈরি করা হয়েছে, তারপরও এর প্রতি আস্থা রেখে চলেছে ব্যবহারকারীরা। দেখতে অনেকটা সাদামাটা হলেও এর কার্যক্ষমতা অন্যান্য মেশিনগানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। মুহুতেই কেড়ে নিতে পারে অনেক প্রাণ। প্রথম দিকে জার্মানীতে এর ব্যবহার হলেও পরবর্তীতে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। বিশেষ করে বিভিন্ন বাহিনীর গানপয়েন্ট বা চেকপোষ্টে এটি ব্যবহৃত হয়। েসবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইউরোড ও এশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশগুলির মধ্যে। অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তির নিত্যনতুন পরিবর্তনে আজ্ও এর গ্রহণ যোগ্যতা টিকে আছে।
২. এফ-২০০০ অ্যাসল্ট
এফ-২০০০ অ্যাসল্ট রাইফেলটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হলো বেলজিয়ামের প্রখ্যাত কোম্পানি এমএন হারস্টল। মূলত এই রাইফেলটির কল্যাণেই অস্ত্রের বাজারে নতুনভাবে মাথা উঁচু করে দাড়ায় বেলজিয়াম। এটি প্রথম প্রদর্শিত হয় ২০০০ সালে আবুধাবির একটি প্রদর্শনীতে। এ কারণে নামকরণ করা হয় এফ-২০০০। ন্যাটো বাহিনীতে এ অস্ত্রের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে আফগানিস্তান ও ইরাকে এ রাইফেলটি ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। অন্যদিকে এর মধ্যে খুব উঁচুমানের হ্যান্ডগার্ড লাগানো থাকে, যা অন্যান্য রাইফেলে খুব একটা দেখা যায় না। ব্যবহারকারীরা এটি চালাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। বর্তমানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে এমনটি স্পেশাল ফোর্সেও ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। দেখতে আকর্ষণীয় হলেও মারণাস্ত্রের দিক থেকে এফ-২০০০ রাইফেলটির গ্রহণযোগ্যতা অন্যতম।
৩. হ্যাকলার অ্যাসল্ট
এ অস্ত্রটিও জার্মানীর সেই বিখ্যাত হ্যাকলার অ্যান্ড কচ কোম্পানির তৈরি। মূলত এর নাম দেওয়া হয় এইচকে অ্যাসল্ট রাইফেল। জার্মানীদের যে কয়টি রাইফেল সবচেয়ে আকর্ষনীয় তার মধ্যে অন্যতম এটি। এর নিরীক্ষণ ক্ষমতা ৫.৫৬ মি.মি.। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ছোট এবং তুলনামূলক কম ওজন হওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী।
এক জরিপে দেখা যায়, এ অস্ত্রটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইউক্রেন, কাজাকিস্থান ও পোল্যান্ডে। এটি আমেরিকান রাইফেল এম-৪ এর নতুন সংস্করণ। এর মধ্যে শর্ট স্ট্রোক পিষ্টন ব্যবহার করা হয়েছে, যা অস্ত্রটিকে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র খেতাব অর্জনে সহায়তা করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই অস্ত্রটিকে অনুসরণ করে আরও কিছু নতুন অস্ত্র তৈরি করেছে। তা সত্তেও এর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আজও বিদ্যমান ও আকর্ষনীয়।
৪. ক্যালস্নিকভ একে-৪৭
একে-৪৭। এ অস্ত্র সম্পর্কে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অস্ত্রের একটি। ১৯৮৬ সালে সাবে সোভিয়েত ইউনিয়নে এটি সর্বপ্রথম প্রদর্শিত হয়। এর ডিজাইন করেছিলেন মিখাইল ক্যালস্নিকভ। কয়েক দশক পেরিয়ে গেলেও এর গ্রহণযোগ্যত এখনো বিদ্যমান। আধুনিক মারণাস্ত্রের মাঝে আজও উচ্চারিত হয় এর নাম। সোভিয়ে গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ব্যবহৃত হয়ে িএকে-৪৭। অন্যদিকে মাফিয়াদের কাছে এ অস্ত্রটির গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। তুলনামূলক সস্তা ও বহনযোগ্য হওয়ার তাদের প্রথম পছন্দ এটি।
৫. ওজি সাব মেশিন গান।
এই অস্ত্রটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ইসরাইলে। কারণ এই ওজি সাব মেশিনগানের নকশা করেছেন সে দেশেরই উজিল গাল নামে এক মেজর। এটি সাব-মেশিনগানের নতুন সংষ্করণ। এটিতে সংযুক্ত আছে অত্যাধুনিক একটি টেলিস্কোপ।
পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রস্তুত হয়ে েএটি বাজারে আসে ১৯৫০ সালে। কয়েক যুগ পেরিয়ে গেলেও েএর ব্যবহার এখনো চলছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন সীমান্তে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের কাছে এটি এখনো জনপ্রিয়। কারণ দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, ওজনে তেমনি হালকা। সবচেয়ে মজার কথা, অস্ত্রটি তৈরি করেছি েইসরায়েল কিন্তু বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হামাস বাহিনীর কাছে। এমনকি তাদের অস্ত্র তাদের ওপরই ব্যবহার করে হামাস যোদ্ধারা। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের ভিড়ে এখনো মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে এটি। ৯০ এর দশকের শেষের দিকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংস্থা হালকা এই রাইফেলটি ব্যবহার শুরু করে।
৬. এমজি-৩ মেশিনগান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই জার্মানীতেই সর্বপ্রথম তৈরি হয় এমজি-৩ মেশিনগান। তবে এ অস্ত্রটি সারাবিশ্বে পরিচিতি পায় ১৯৫১ সালে। এত কার্তুজ চেম্বার রয়েছে ৭.৬৩ x ৫১ মি.মি। িএ অস্ত্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রের অনুকরণে তৈরি। পৃথিবীর ৩০ টি দেশের সামরিক বাহিনীতে িএ অস্ত্রটি দেখা যায়। ১০৬০ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। অস্ত্রটির ওজন ১০.৫ কেজি। আর দৈর্ঘ্য ১২২৫ মি. মি.। ফায়ার রেট হল ১০০-১৩০০ আরএমপি। এ পর্যন্ত যেসব অস্ত্র জার্মানী ডিজাইন করেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। অস্ত্রটি ব্যপকভাবে ব্যবহারকারী েদেশগুলির মধ্যে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, অষ্ট্রিয়া, ব্রাজিল কানাডা, ডেনমার্ক, ইরান, ইতালি, গ্রিস জার্মানি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আফ্রিকাসহ বিভিন্ন পাহাড়ী দেশেও ব্যবহৃত হয় এটি। কারন উঁচু পাহাড় থেকে নিচের লক্ষবস্তুতে ভেদ করতে এর জুড়ি নেই। সবচেয়ে মজার ব্যাপান হলোড হলিউডের চলচ্চিত্রে যেসব অস্ত্রের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখানো হয় তার মধ্যে এমজি-৩ মেশিনগানটি অন্যতম।
৭. এসিএসডব্লিউ
এক্সএম-৩০৭ এসিএসডব্লিউ অ্যাডভান্স হেভি মেশিনগানটির ডিজাইনান মার্কিন সেনাবাহিনী। এ অস্ত্রটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল করা হয়েছিল, যার ওজন হবে কম এবং দুজন মানুষ এটি চালাতে সক্ষম হবে। এ অস্ত্রটি যখন মানুষ হত্যায় ব্যবহার করা হয় তখন এর নিশানা স্থির করা হয় ১০০০ মিটার। এ গানটির ২ কিলোমিটার রেঞ্জে গুলি ছুড়তে পারে এবং মিনিটে ২৬০ রাউন্ড গুলি করা যায়। এটি ২৫ মি.মি গ্রেডে িবেল্ট সিস্টেমের অস্ত্র। অস্ত্রটি দিনে এবং রাতে ব্যবহার করা যায়। যে কোন পরিবেশের সাথে এ অস্ত্রটি মানিয়ে যায়। এ অস্ত্রটি মার্কিন বাহিনী ব্যবহারের জন্য ২০০৪ সালে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ফায়ার রেটের নিম্নমানের কারণে ২০০৭ সালে এটি ব্যবহার বন্ধ করা হয়।
৮. থমসন এম-১৯২১
থমসন এম-১৯২১ সাব মেশিনগানটি ১৯১৯ সালে আবিস্কার করেন মার্কিন সমরাস্ত্রবিদ জন টি থমসন। এ অস্ত্রটি টমি গান হিসেবে সর্বজন সমাদৃত। প্রথম দিকে সৈনিকদের কাছে এটি ভীষন জনপ্রিয় ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি কর্মকর্তা, টেক্সাসের খামার মালিক ও ছোটখাটো সন্ত্রাসীদের কাছে এ মেশিনগানটির কদর অন্যরকম। কারন এটি অটোমেটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব দ্রুত ফায়ার করতে সক্ষম। প্রায় শতাব্দীকাল ছুঁই ছুঁই করলেও পরিমার্জিত ও আকর্ষণীয় হয়ে বাজারে আসছে।
৯. এএস-৫০ স্নাইপার
ব্রিটিশদের তৈরি যে কয়টি অস্ত্র বিশ্বব্যাপী সমাদৃত তার মধ্যে অ্যাকিউরেসি ইন্টারন্যাশনাল এএস-৫০ স্নাইপার অন্যতম। রাইফেলটির প্রস্তুতকারক প্রখ্যাত ব্রিটিশ ফার্ম অ্যাকিউরেসি ইন্টারন্যাশনাল। এর ওজন ১৪.১ কেজি এবং একটি ম্যাগাজিনে পাঁচ ০.৫০ বিএমজি গুলি ধরে। এ রাইফেলটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর নিশানা ক্ষমতা। এটির মাধ্যমে দূরবর্তী কোন লক্ষ্যে নিশ্চিত ১.৫ এমও, যা এটিকে একটি ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র বলে পরিচিত করেছে। প্রথমদিকে শুধু ব্রিটেনে ব্যবহৃত হলেও পরবর্তীতে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও বাড়তে থাকে এ অস্ত্রটির ব্যবহার। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় লাতিন আমেরিকায়। বিশেষ করে মাফিয়া এবং চোরাকারবারিদের কাছে এ রাইফেলটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
১০. ডিএসআর-৫০ স্নাইপার
নামটি সাদামাটা হলেও কার্যক্ষমতা ও নিশানা ভেদ করতে বিশ্বের অন্যতম মারণাস্ত্র এটি। এর সঙ্গে টেলিস্কোপ জুড়ে দেওয়া থাকে। আর সামনের দিকে থাকে দুটি স্ট্যান্ড। প্রথমদিকে এটি দুরবর্তী শিকারের জন্য ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত চেকপোষ্টে ব্যবহার করা হয়। রাইফেলটি মূলত জার্মানীর তৈরি। েএই অস্ত্রটির সবচেয় আকর্ষনীয় দিক হলো এর ম্যাগাজিন পয়েন্ট। একটি নয়, দুটি পয়েন্ট রয়েছে েএই রাইফেলে। একটি ব্যবহৃত হয় আর অন্যটি রিজার্ভ থাকে, যা িইমাজেন্সিতে কাজে লাগে।
যেসব দেশ এই রাইফেলটি বেশি ব্যবহার করে থাকে তাদের মধ্যে পোল্যান্ড, রাশিয়া ও গ্রিস অন্যতম। এ ছাড়া লাতিন আমেরিকার কিছু দেশেও এর গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। অন্যান্য রা্ইফেলের তুলনায় এর ওজন খানিকটা বেশি। গুলি ছোড়ার সময় চালনাকারীকে খুব শুক্ত হাতে ট্রিগার ধরে রাখতে হয়। অন্যথায় এর ঝাঁকুনিতে লক্ষভ্রষ্ট হতে পারে।
আজ এ পর্যন্তই। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন এবং মন্তব্যের ঘরে প্রকাশ করবেন। সবাই ভালো থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।
সহকারী সাইট
http://www.wikipedia.org/
http://www.bd-pratidin.com/
http://military.discovery.com/t
সময় পেলে এখান থেকে ঘুরে আসবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৭