ঢাকা, জুন ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরা সদস্য মীর কাসেম আলীর জামিন আবেদন নাকচ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।
সোমবার এই জামিন আবেদনের ওপর শুনানিতে মীর কাসেমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলো সঠিক নয়। তিনি বিদেশ গিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাও ভুল।
এই আইনজীবী যুক্তি দেন, ৬২ বছর বয়সী মীর কাসেম অসুস্থ এবং তিনি পালিয়ে যাবেন না। পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে হলেও তার জামিন দেওয়া হোক।
অন্যদিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম এর বিরোধিতায় বলেন, জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা মীর কাসেম বাইরে থাকলে তদন্তে বিঘ্ন ঘটনারো চেষ্টা করতে পারেন। তিনি জামিন পেয়ে গেলে সাক্ষীরা গুম হয়ে যাবেন।
গত রোববার দুপুরে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল মীর কাসেমের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির দেড় ঘণ্টার মাথায় তাকে মতিঝিল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।
মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একাত্তরে তার হুকুমেই একাত্তরে চট্টগ্রামে বহু লোককে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা ও নির্যাতন করা হয়।
জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রধান অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত এই নেতা ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং রাবেতা আল ইসলামী নামে একটি এনজিওর সাবেক আবাসিক প্রতিনিধি।
মীর কাসেম জামায়াত সমর্থক বলে পরিচিত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং টেলিভিশন চ্যানেল দিগন্ত টেলিভিশন ওই প্রতিষ্ঠানেরই সহযোগী সংস্থা।
রোববার ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেমকে গ্রেপ্তারের আবেদনে তার মানবতাবিরোধী অপরাধের কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
তিনি বলেন, মীর কাসেম একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন। আলবদর বাহিনী গঠন করে তিনি ওই বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান হন। এই বাহিনী চট্টগ্রামের মহামায়া ভবনকে ডালিম হোটেলে রূপান্তর করে নির্যাতন ক্যাম্প স্থাপন করে।
“এই ডালিম হোটেলেই চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু নিরস্ত্র মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হত,” বলেন চট্টগ্রামের প্রবীণ এই আইনজীবী।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মীর কাসেম আলীর নির্দেশনায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানান রানা দাশগুপ্ত।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের মীর কাসেমকে একাত্তরে চট্টগ্রামের মানুষ চিনতো মিন্টু নামে। কলেজছাত্র থাকাকালে সেখানেই তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরে জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের দায়িত্ব নেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে পাকিস্তানি বাহিনী এই দেশের যে সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে, তার তালিকা তৈরিতেও মীর কাসেম ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মীর কাসেম পালিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। আবার দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সপ্তম নেতা হিসেবে গ্রেপ্তার হলেন মীর কাসেম। এর আগে গ্রেপ্তার হন গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মো. মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামান।
এছাড়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আব্দুল আলীমের যুদ্ধাপরাধের বিচারও চলছে ট্রাইব্যুনালে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/টিএ/জেকে/১১০৫ ঘ