"১৫ আগস্ট ৭৫" এর মীর জাফর খন্দকার মোশতাক আহমেদ কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার দশপাড়া গ্রামে ৫ মার্চ ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষা জীবনে খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪২ সালে দিকে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি ভুমিকা রাখেন সক্রিয় ভাবে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনে। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। ১৯৫৪ সালে আহমেদ যুক্তফ্রন্টের মনোনিত প্রার্থি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হোন। ১৯৩৫ সালের কেন্দ্রীয় সরকার আর্টিকেল ৯২-এ ব্যবহার করে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দিলে ১৯৫৪ সালে তাকে কারা বরণ করতে হয়। ১৯৫৫ সালের দিকে তিনি কারামুক্ত হয়ে আবার সংসদে যুক্তফ্রন্টের চিফ হুইপ হিসেবে নির্বাচিত হোন। তিনি আবার কারাবন্দি হোন ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করার পর। ১৯৬৬ সালে ছয়-দফার সমর্থন করায় তাকে আবার কারা বরণ করতে হয়। সে সময়ের ১৯৬৯ সালে দেশের আটটি রাজনৈতিক দল আইয়ুব বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করলে তাতে খন্দকার মোশতাক আহমেদ পশ্চিম পাকিস্তান অংশের সমন্নয়ক ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন ১৯৬৯ সালে রাওয়ালাপিন্ডিতে আইয়ুব খানের ডাকা গোল টেবিল বৈঠকে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হোন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারে তিনি পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পান। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারে তিনি বিদ্যুত, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালে তাকে অর্থমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বাকশালের কার্যকারি কমিটির সদস্য ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ৭৫ এর মীর জাফর খন্দকার মোশতাক আহমেদের পরোক্ষ মদদে কিছু সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পর মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেবার পর তিনি ইনডেমিনিটি বিল পাশ করেন। তিনি "জয় বাংলা" স্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" স্লোগান চালু করেন। এই সময় তিনি "বাংলাদেশ বেতার" এর এই নাম পরিবর্তন করে "রেডিও বাংলাদেশ" করেন। তার শাসনামলে তার মদদে চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মোঃ মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (৩ নভেম্বর) হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর সেনা বিদ্রোহের দ্বারা মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় অপসারিত হন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার খুনি খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার খুনি ৭৫ এর মীর জাফর মোশতাক আহমেদ ১৯৭৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক লীগ নামক এক নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর সামরিক শাসককে অপসারণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ২ টি দুর্নিতির অভিযোগ আনা হয় এবং আদালত তাকে ৫ বছরের শাস্তি প্রদান করা হয়। জেল থেকে মুক্তিলাভের পর তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন।
১৯৯৬ সালে ১৫ আগস্ট ৭৫ এর মীর জাফর খন্দকার মোশতাকের ঠিক জন্ম তারিখ ৫ মার্চে মৃত্যু বরণ করেন।
তথ্যসূত্রঃ- উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫