somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জরুরী দো‘আ সমূহ #৪

২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ

৫. সম্ভাষণ বিষয়ে :

ইসলামে সম্ভাষণ রীতি হ’ল পরস্পরকে সালাম করা। ‘সালাম’ অর্থ ‘শান্তি’। আল্লাহর অপর নাম ‘সালাম’। জান্নাতকে বলা হয় ‘দারুস সালাম’ (শান্তির গৃহ)। ইসলাম শব্দের মাদ্দাহ হ’ল ‘সালাম’। ইসলামের অনুসারীকে বলা হয় মুসলিম বা মুসলমান। অতএব মুসলমানের জীবন ও সমাজ ‘সালাম’ তথা শান্তি দ্বারা পূর্ণ। তার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হ’ল পরকালে দারুস সালামে প্রবেশ করা। অতএব মুসলিম সমাজে কেবলই থাকে সালাম আর সালাম অর্থাৎ শান্তি আর শান্তি। এই সম্ভাষণ দ্বারা মুসলমান তার পক্ষ হ’তে আগন্তুক ব্যক্তিকে শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা বেশী বেশী সালাম কর। চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম কর। আরোহী পায়ে হাঁটা লোককে সালাম দিবে। কম সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দিবে। ছোটরা বড়দের সালাম দিবে। দলের পক্ষ থেকে একজন সালাম বা সালামের জবাব দিলে চলবে।[বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি, মিশকাত হা/৪৬৩১, ২৯, ৩২, ৩৩, ৪৮, অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।]
কোন গাছ, দেওয়াল বা পাথরের আড়াল পেরিয়ে দেখা হ’লে পুনরায় পরস্পরে সালাম দিবে।[আবুদাঊদ হা/৫২০০, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৪৯।]
কোন মজলিসে প্রবেশকালে ও বসার সময় এবং উঠে যাওয়ার সময় সালাম দিবে।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৬০, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।]
তিনি বলেন, আল্লাহর নিকটে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যিনি প্রথমে সালাম দেন’।[আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৪৬।]
কোন সম্মানী ব্যক্তিকে এগিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানানো মুস্তাহাব। [আবুদাঊদ হা/৫২১৫-১৭ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৫৮।]
উল্লেখ্য যে, সম্ভাষণ কালে হাইয়া-কাল্লা-হ (আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখুন) বলার হাদীছ ‘যঈফ’।[বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৯, তাহকীক আলবানী।]
তবে হাফেযাকাল্লা-হ (আল্লাহ আপনাকে নিরাপদ রাখুন) বলার হাদীছ ‘ছহীহ’।[আবুদাঊদ হা/৫২২৮ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৬৭।]
কেউ আহবান করলে লাববায়েক (আমি হাযির) বলে জওয়াব দেওয়ার হাদীছ ‘ছহীহ’। [আবুদাঊদ হা/৫২৩৩ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১৭০।]

ফাসেক ব্যক্তিকে সালাম না দেওয়াই ছিল সালাফে ছালেহীনের রীতি। যেমন ছাহাবী জাবের (রাঃ) ফাসেক গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে সালাম দেননি। [বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৫।]
রাষ্ট্রনেতাদেরকে ইসলামী সালাম ব্যতীত অতিরঞ্জিত কোন বিশেষণে সম্ভাষণ জানানো ঠিক নয়। ওছমান বিন হুনাইফ আনছারী (রাঃ) আমীর মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে স্রেফ ইসলামী সালাম দিয়েছিলেন, যেভাবে তিনি খলীফা আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-কে দিতেন। [বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০২৪।]

(ক) সালাম : ‘আসসালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’। অর্থ : ‘আপনার (বা আপনাদের) উপর শান্তি ও আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হৌক’।

(খ) জওয়াবে বলবে- ‘ওয়া আলাইকুমুস সালা-মু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহূ’। অর্থ: ‘আপনার (বা আপনাদের) উপরেও শান্তি এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া সমূহ বর্ষিত হৌক’। ‘আসসালা-মু আলায়কুম’ বললে ১০ নেকী, ‘ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ যোগ করলে ২০ নেকী এবং ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’ যোগ করলে ৩০ নেকী পাবে।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৪৪।]
‘ওয়া মাগফিরাতুহূ’- যোগ করার হাদীছটি ‘যঈফ’।[আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৪৫।]

(গ) যদি কেউ কাউকে সালাম পাঠায়, তবে জওয়াবে বলবে- ‘আলায়কা ওয়া আলাইহিস সালাম’ অর্থ : ‘আপনার ও তাঁর উপরে শান্তি বর্ষিত হউক’। [আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫৫।]

(ঘ) ছালাত অবস্থায় কেউ সালাম দিলে মুখে জওয়াব দেওয়া যাবে না। কেবল (ডান হাতের) আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা যাবে।[তিরমিযী, মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৯৯১, ১০১৩, ‘ছালাতে অসিদ্ধ ও সিদ্ধ কর্ম সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১৯।]

প্রকাশ থাকে যে, জাহেলী যুগে শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আন‘আমাল্লা-হু বিকা ‘আইনান’ (আল্লাহ আপনার চক্ষু শীতল করুন) এবং ‘আন‘ইম ছাবা-হান’ ‘সুপ্রভাত’ (Good morning) বলা হ’ত। ইসলাম আসার পরে উক্ত প্রথা বাতিল হয় [আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৫৪, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ-১।] এবং সালামের প্রচলন হয়।

(ঙ) রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম-অমুসলিম মিলিত মজলিস এবং মহিলা ও শিশুদেরকে সালাম দিতেন’।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৩৪-৩৯; আহমাদ, মিশকাত হা/৪৬৪৭।]

(চ) অমুসলিমরা সালাম দিলে উত্তরে বলবে ‘ওয়া আলায়কুম’ (আপনার উপরেও)।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪৬৩৭।]

(ছ) অমুসলিমদের শিষ্টাচার মূলক সম্ভাষণ করা যাবে। কিন্তু আক্বীদা ও আমল বিরোধী কিছু বলা বা করা যাবে না। যেমন কোন হিন্দুকে ‘নমস্কার’ বলা যাবে না। কেননা এর অর্থ ‘আমি আপনার সামনে মাথা ঝুঁকাচ্ছি। আপনি কবুল করুন’। অমনিভাবে ‘নমস্তে’ বলা যাবে না। কেননা এর অর্থ ‘আমি আপনার সামনে ঝুঁকছি’। বরং উভয়ে উভয়কে ‘আদাব’ বলা উচিত। যার অর্থ ‘আমি আপনার প্রতি শিষ্টাচার প্রদর্শন করছি’।

(জ) কথা বলার পূর্বে সালাম দিবে’।[তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৫৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮১৬।] রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিয়ে শুরু করে না, তাকে অনুমতি দিয়ো না’।[বায়হাক্বী- শু‘আব; মিশকাত হা/৪৬৭৬, ‘অনুমতি প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-২; ছহীহাহ হা/৮১৭।]

(ঝ) মুছাফাহা : অর্থ পরস্পরের হাতের তালু মিলানো । মুছাফাহার সময় একে অপরের ডান হাতের তালু মিলিয়ে করমর্দন করতে হয়। ছাহাবায়ে কেরাম পরস্পরে মুছাফাহা করতেন।[বুখারী, মিশকাত হা/৪৬৭৭, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘মুছাফাহা ও মু‘আনাকা’ অনুচ্ছেদ-৩।]
আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকল শুভ কাজ ডান হাত দিয়ে করা পসন্দ করতেন’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪০০ ‘তাহারৎ’ অধ্যায়-৩, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪; বুখারী হা/১৬৮, ‘ওযূ’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৩১, মুসলিম হা/৬১৭ (২৬৮/৬৭), ‘ত্বাহারৎ’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১৯।]
দুইজনের চার হাত মিলানো ও বুকে হাত লাগানোর প্রচলিত প্রথা সুন্নাত বিরোধী আমল। সাক্ষাতকালে মাথা ঝুঁকানো, বুকে জড়িয়ে ধরা, কোলাকুলি করা, হাতে বা কপালে চুমু খাওয়া নয়, কেবল সালাম ও মুছাফাহা করবে।[ইবনু মাজাহ হা/৩৭০২; তিরমিযী হা/২৭২৮; ঐ, মিশকাত হা/৪৬৮০, ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায়-২৫, ‘মুছাফাহা ও মু‘আনাকা’ অনুচ্ছেদ-৩।]
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, দুইজন মুসলমান সাক্ষাতকালে যখন পরস্পরে মুছাফাহা করে, তখন তাদের উভয়কে ক্ষমা করা হয়, যতক্ষণ না তারা পৃথক হয়।[আবুদাঊদ হা/৫২১২; আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৬৭৯।]
হাতে চুমু খাওয়া ও পায়ে হাত দিয়ে কদমবুসি করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ ‘যঈফ’। [তিরমিযী হা/২৭৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০৪-০৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৯৭৫-৭৬, ‘কদমবুসি’ অনুচ্ছেদ।]
ছাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পরে সাক্ষাতে বলতেন,‘তাক্বাববালাল্লা-হু মিন্না ওয়া মিনকা’ অথবা ‘মিনকুম’ (আল্লাহ আমাদের ও আপনার বা আপনাদের পক্ষ হ’তে কবুল করুন! -তামামুল মিন্নাহ ৩৫৪ পৃঃ)। অতএব সালাম ও ঈদ মোবারক বললেও সাথে সাথে উক্ত দো‘আটি পড়া উচিৎ।

চলবে ......।

জরুরী দো‘আ সমূহ #৩
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১১:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×