somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজে প্রচলিত কতিপয়কু সং স্কা র

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বহু কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। যা প্রতিনিয়ত মানুষ কথায় ও কাজে ব্যবহার করে থাকে। এগুলোর প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের জন্য মারাত্মক হুমকী। কিছু কিছু হল শিরক এবং স্পষ্ট জাহেলিয়াত। কিছু কিছু সাধারণ বিবেক বিরোধী এবং রীতিমত হাস্যকরও বটে। মূলত: বাজারে ‘কি করিলে কি হয়’ মার্কা কিছু বই এসবের সরবরাহকারী। তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরী।

মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নিম্নে সমাজে প্রচলিত কিছু কুসংস্কার তুলে ধরা হল:

১) ছোট বাচ্চাদের দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁত ফেলতে বলা হয়, দাঁত ফেলার সময় বলতে শিখানো হয়, “ইঁদুর ভাই, ইঁদুর ভাই, তোর চিকন দাঁত টা দে, আমার মোটা দাঁত টা নে।”
২) দুজনে ঘরে বসে কোথাও কথা বলতে লাগলে হঠাৎ টিকটিকির আওয়াজ শুনা যায়, তখন একজন অন্যজনকে বলে উঠে “দোস্ত তোর কথা সত্য, কারণ দেখছস না, টিকটিকি ঠিক ঠিক বলেছে।”
৩) বন্ধু মহলে কয়েকজন বসে গল্প-গুজব করছে, তখন তাদের মধ্যে কেউ উপস্থিত না হলে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা বাদ হতে থাকে, এমতাবস্থায় সে উপস্থিত হলে, কেউ কেউ বলে উঠে “দোস্ত তোর হায়াত আছে।” কারণ একটু আগেই তোর কথা বলছিলাম।
৪) পাখি ডাকলে বলা হয় ইষ্টি কুটুম (আত্মীয়)আসবে।
৫) কোন ব্যক্তি বাড়ি হতে বাহির হলে যদি তার সামনে খালি কলস পড়ে যায় বা কেউ খালি কলস নিয়ে তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করে তখন সে যাত্রা বন্ধ করে দেয়, বলে আমার যাত্রা আজ শুভ হবে না।
৬) খানার পর যদি কেউ গা মোচড় দেয়, তবে বলা হয় খানা না কি কুকুরের পেটে চলে যায়।
৭) বলা হয়, কেউ ঘর থেকে বের হলে পিছন দিকে ফিরে তাকানো নিষেধ। তাতে নাকি যাত্রা ভঙ্গ হয় বা অশুভ হয়।
৮) খানার সময় যদি কারো ঢেকুর আসে বা মাথার তালুতে উঠে যায়, তখন একজন আরেকজনকে বলে, দোস্ত তোকে যেন কেউ স্মরণ করছে বা বলা হয় তোকে গালি দিচ্ছে।
৯) বৃষ্টির সময় রোদ দেখা দিলে বলা হয় শিয়ালের বিয়ে।
১০) ভাই-বোন মিলে মুরগী জবেহ করা যাবে না।
১১) ঘরের ময়লা পানি রাতে বাইরে ফেলা যাবে না।
১২) ঘর থেকে কোন উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর পেছন থেকে ডাক দিলে যাত্রা অশুভ হবে।
১৩) ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হবে।
১৪) কুরআন মাজীদ হাত থেকে পড়ে গেলে আড়াই কেজি চাল দিতে হবে।
১৫) পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম খাওয়া যাবে না। তাহলে পরীক্ষায় ডিম (গোল্লা) পাবে।
১৬) মুরগীর মাথা খেলে মা-বাবার মৃত্যু দেখবে না।
১৭) জোড়া কলা খেলে জোড়া সন্তান জন্ম নিবে।
১৮) ঘরের ভিতরে প্রবেশ কৃত রোদে অর্ধেক শরীর রেখে বসা যাবে না। (অর্থাৎ শরীরের কিছু অংশ রৌদ্রে আর কিছু অংশ বাহিরে) তাহলে জ্বর হবে।
১৯) রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
২০) রাতে গাছের পাতা ছিঁড়া যাবে না।
২১) ঘর থেকে বের হয়ে বিধবা নারী চোখে পড়লে যাত্রা অশুভ হবে।
২২) ঘরের চৌকাঠে বসা যাবে না।
২৩) মহিলাদের মাসিক অবস্থায় সবুজ কাপড় পরিধান করতে হবে। তার হাতের কিছু খাওয়া যাবে না।
২৪) বিধবা নারীকে সাদা কাপড় পরিধান করতে হবে।
২৫) ভাঙ্গা আয়না দিয়ে চেহারা দেখা যাবে না। তাতে চেহরা নষ্ট হয়ে যাবে।
২৬) ডান হাতের তালু চুলকালে টাকা আসবে। আর বাম হাতের তালু চুলকালে বিপদ আসবে।
২৭) নতুন কাপড় পরিধান করার পূর্বে আগুনে ছেক দিয়ে পড়তে হবে।
২৮) নতুন কাপড় পরিধান করার পর পিছনে তাকাইতে নাই।
২৯) চোখে কোন গোটা হলে ছোট বাচ্চাদের নুনু লাগাইলে সুস্থ হয়ে যাবে।
৩০) আশ্বিন মাসে নারী বিধবা হলে আর কোন দিন বিবাহ হবে না।
৩১) ঔষধ খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ বললে’ রোগ বেড়ে যাবে।
৩২) রাতের বেলা কাউকে সুই-সূতা দিতে নাই।
৩৩) গেঞ্জি ও গামছা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে নাই।
৩৪) খালি ঘরে সন্ধ্যার সময় বাতি দিতে হয়। না হলে ঘরে বিপদ আসে।
৩৫) গোছলের পর শরীরে তেল মাখার পূর্বে কোন কিছু খেতে নেই।
৩৬) মহিলার পেটে বাচ্চা থাকলে কিছু কাটা-কাটি বা জবেহ করা যাবে না।
৩৭) পাতিলের মধ্যে খানা থাকা অবস্থায় তা খেলে পেট বড় হয়ে যাবে।
৩৮) বিড়াল মারলে আড়াই কেজি লবণ দিতে হবে।
৩৯) ছোট বাচ্চাদের হাতে লোহা পরিধান করাতে হবে।
৪০) রুমাল, ছাতা, হাত ঘড়ি ইত্যাদি কাউকে ধার স্বরূপ দেয়া যাবে না।
৪১) হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলে ভাগ্যে দুর্ভোগ আছে।
৪২) হাত থেকে প্লেট পড়ে গেলে মেহমান আসবে।
৪৩) নতুন স্ত্রী কোন ভাল কাজ করলে শুভ লক্ষণ।
৪৪) নতুন স্ত্রীকে নরম স্থানে বসতে দিলে মেজাজ নরম থাকবে।
৪৫) কাচা মরিচ হাতে দিতে নাই।
৪৬) তিন রাস্তার মোড়ে বসতে নাই।
৪৭) রাতে নখ, চুল ইত্যাদি কাটতে নাই।
৪৮) কাক ডাকলে বিপদ আসবে।
৪৯) শুঁকুন ডাকলে মানুষ মারা যাবে।
৫০) পেঁচা ডাকলে বিপদ আসবে।
৫১) তিনজন একই সাথে চলা যাবে না।
৫২) নতুন স্ত্রীকে দুলা ভাই কোলে করে ঘরে আনতে হবে।
৫৩) একজন অন্য জনের মাথায় টাক খেলে দ্বিতীয় বার টাক দিতে হবে, একবার টাক খাওয়া যাবে না। নতুবা মাথায় ব্যথা হবে।
৫৪) ভাত প্লেটে নেওয়ার সময় একবার নিতে নাই।
৫৫) নতুন জামাই বাজার না করা পর্যন্ত একই খানা খাওয়াতে হবে।
৫৬) নতুন স্ত্রীকে স্বামীর বাড়িতে প্রথম পর্যায়ে আড়াই দিন অবস্থান করতে হবে।
৫৭) পাতিলের মধ্যে খানা খেলে মেয়ে সন্তান জন্ম নিবে।
৫৮) পোড়া খানা খেলে সাতার শিখবে।
৫৯) পিপড়া বা জল পোকা খেলে সাতার শিখবে।
৬০) দাঁত উঠতে বিলম্ব হলে সাত ঘরের চাউল উঠিয়ে তা পাক করে কাককে খাওয়াতে হবে এবং নিজেকেও খেতে হবে।
৬১) সকাল বেটা ঘুম থেকে উঠেই ঘর ঝাড়– দেয়ার পূর্বে কাউকে কোন কিছু দেয়া যাবে না।
৬২) রাতের বেলা কোন কিছু লেন-দেন করা যাবে না।
৬৩) সকাল বেলা দোকান খুলে যাত্রা (নগদ বিক্রি) না করে কাউকে বাকী দেয়া যাবে না। তাহলে সারা দিন বাকীই যাবে।
৬৪) দাঁড়ী-পাল্লা, মাপার জিনিস পায়ে লাগলে বা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলে সালাম করতে হবে, না হলে লক্ষ্মী চলে যাবে।
৬৫) শুকরের নাম মুখে নিলে ৪০দিন মুখ নাপাক থাকে।
৬৬) রাতের বেলা কাউকে চুন ধার দিলে চুন না বলে ধই বলতে হয়।
৬৭) বাড়ি থেকে বের হলে রাস্তায় যদি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় তাহলে যাত্রা অশুভ হবে।
৬৮) কোন ফসলের জমিতে বা ফল গাছে যাতে নযর না লাগে সে জন্য মাটির পাতিল সাদা-কালো রং করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
৬৯) বিনা ওযুতে বড় পীর (!!) আবদুল কাদের জিলানীর নাম নিলে আড়াইটা পশম পড়ে যাবে।
৭০) নখ চুল কেটে মাটিতে দাফন করতে হবে, কেননা বলা হয় কিয়ামতের দিন এগুলো খুঁজে বের করতে হবে।
৭২) মহিলাগণ হাতে বালা বা চুড়ি না পড়লে স্বামীর অমঙ্গল হবে।
৭৩) স্ত্রীগণ তাদের নাকে নাক ফুল না রাখলে স্বামীর বেঁচে না থাকার প্রমাণ।
৭৪) দা, কাচি বা ছুরি ডিঙ্গিয়ে গেলে হাত-পা কেটে যাবে।
৭৫) গলায় কাটা বিঁধলে বিড়ালের পা ধরে মাপ চাইতে হবে।
৭৬) বেচা কেনার সময় জোড় সংখ্যা রাখা যাবে না। যেমন, এক লক্ষ টাকা হলে তদস্থলে এক লক্ষ এক টাকা দিতে হবে। যেমন, দেন মোহর (কাবীন) এর সময় করে থাকে, একলক্ষ এক টাকা ধার্য করা হয়।
৭৭) দোকানের প্রথম কাস্টমর ফেরত দিতে নাই।

প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ, সমাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য কুসংস্কার থেকে এখানে কয়েকটি মাত্র উল্লেখ করেছি। । জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×