আন্দোলন করেই কি সব হয় ?? তাহলে তো সবাই আন্দোলন করবে। তাই সরকারের উচিত আন্দোলনের যুক্তিকতা যাচাই
করে, তবেই এর সমাধান করা। অযুক্তিকক ভাবে কেউ কিছু দাবি করলেই কি তা মেনে নিতে হবে?????? তাই এখনিই সময়, সঠিক সমাধানে আসা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সচিবের সম মর্যাদা দিলে একটা সমস্যা আছে। আজ যদি ঘোষনা দেয়া হয়, ওরাও সচিবদের গ্রেডে বেতন পাবে; তাহলে আগামিকাল হাই স্কুল-কলেজ- প্রাইমারীর শিক্ষকরা যে আন্দোলনে নামবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ওরাও তো শিক্ষক! সচিবদের শিক্ষক; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও গুরু! ওরা যদি বলে, আমরা তো সবার শিক্ষক; আমরাও এক নম্বর গ্রেডে বেতন চাই!! কেমন হবে?
.
আওয়ামীলীগ সরকার অনেক বেশি দূরদর্শী! আমার মনে হয়, সরকার বুঝতে পেরেছে যদি ভার্সিটির স্যারদের এক নম্বরে বেতন দেয়া হয় তবে স্কুল- কলেজের স্যাররাও রাস্তায় নামতে পারে! সাঁইত্রিশ টা ভার্সিটি কনট্রোল করা সম্ভব; হাজার হাজার স্কুল কলেজ কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়!
.
আমরা এমন একটি সময় পার করছি যা স্থির নয়; অস্থির! সময়ের মঞ্চে দাড়িয়ে মনে হবে ঘড়ির কাঁটা হয়তো উল্টো দিকে ঘুড়ছে অথবা আমাদের মাথাগুলিই উল্টো দিকে ঘুড়ছে!
.
এদেশে শিক্ষকদের উপর মরিচের গুড়া মিশ্রিত পানি স্প্রে করা হয়! আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বোচ্চ গ্রেডে বেতন দিতে অস্বীকার করি। কি বিদঘুটে অবস্থা! উন্নত বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানে, চক্ষু চড়কগাছ!! বিশাল ব্যাপার স্যাপার!! কিন্তু আমাদের? এদেশে শতশত প্রফেসর বানাতেও সময় লাগে না; আবার তাদেরকে হুট করে গ্রেড স্কেলে নীচে নামিয়ে দিতেও সময় লাগে না।
.
একটি বিষয় লক্ষনীয়, প্রফেসর আনিসুজ্জামান কিন্তু আন্দোলনের
ব্যাপারে কোন কথাই বলছেন না! অধ্যাপক জাফর ইকবালও নির্বিকার! তিনি ভূমিকম্প নিয়ে কলাম লিখছেন! শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে কলাম লিখছেন না কেন? অনন্ত বিজয় বা অভিজিতের মত ব্লগার খুন হলে তিনি
কান্নাকাটি করে পত্রিকা ভাসিয়ে ফেলেন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষককে যে সময় গ্রেড স্কেল দিয়ে খুন করা হচ্ছে তখন তিনি ভুমিকম্প নিয়ে কলাম লিখছেন কেন? আন্দোলন নিয়ে কলাম লিখছেন না কেন? প্রশ্ন হল, তাহলে ড.আনিসুজ্জামান বা জাফর ইকবাল স্যাররা কি সঠিক রাস্তায়? নাকি আন্দোলনরত শিক্ষকরা সঠিক রাস্তায়?
.
দেশের একপ্রান্তে কোন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হলে সারা দেশে
তোলপাড় শুরু করতো ছাত্ররা! ছাত্ররা মানব বন্ধন করতো...রাস্তা বন্ধ করে দিতো....কিন্তু আজ হচ্ছে কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষকদের অবনমন করা হল, গ্রেড স্কেলে অপমান করা হল কিন্তু ছাত্ররা কিছু বলছে না কেন? শিক্ষকদের মানব বন্ধনে ছাত্ররা নেই কেন? ছাত্ররা কাদের সমর্থন করছে? শিক্ষকরা আন্দোলনে ছাত্রদের পাশে পাচ্ছে না কেন? ছাত্র-শিক্ষক তাহলে সমার্থক দ্বন্দ্ব সমাস নয়? নাকি এই সমার্থক দ্বন্দ্বের ভিতরেও কোন দ্বন্দ্ব আছে?
.
অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন! তার মতে, একটা
ডিপার্টমেন্টে যতজন লেকচারার তার চেয়ে বেশি অধ্যাপক! নিয়োগ পেয়ে লেকচারার হলেই হল! একদিন অধ্যাপক
হবেই হবে...কিন্তু বিসিএস হলেই সচিব হবে এমনটা নয়! অর্থমন্ত্রীর কথায় যুক্তি আছে। শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য হয় ;
স্বজনপ্রীতি হয়...ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও টীচার হতে পারে না।
রাজনীতি করে টাকা দিয়ে অনেকেই শিক্ষক হয়...সরকারের এই অভিযোগও অসত্য নয়।
তাহলে ওরাও কি সচিবের মর্যাদা পাবেন?
.
আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুড়পাক খাচ্ছে। ড.আনিসুজ্জামান স্যাররা নিশ্চুপ কেন? ড.জাফর ইকবাল স্যার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে বড়সড় লিখা না লিখে ভুমিকম্প নিয়ে লিখছেন কেন? ছাত্ররা কেন আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষনা না করে চুপ করে আছে? তাহলে, এরা সবাই কি ভুল করছে?
.
এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোজার সময় বোধ হয় এখন-ই। যাই হোক, শিক্ষক শব্দটি একটি মিশ্র শব্দ। এই শব্দটিতে শ্রদ্ধা-ভক্তি
মিশানো থাকে। মহল্লার সন্ত্রাসী ক্যাডারও তার বাল্যকালের শিক্ষকদের দেখলে মাথা নত করে সালাম দেয়!! এই পেশাটা মহত্ত্বের পেশা!! কিন্তু কেন আজ বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষকরা সেই সন্মান পাচ্ছেন না?? ?