somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিভ্রম

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডিম লাইটের নিয়ন আলোয় চোখ নামিয়ে কিবোর্ডের দিকে দৃষ্টি অনুপাত করে
একটা একটা করে বোতাম চেপে যাচ্ছি।
অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত।
জ্যোৎস্না বিলুপ্ত হয়েছে আমাবর্ষায়!
রাতের গভীরতা বাড়ছে।
নড়বরে হাতল ভাঙ্গা চেয়ারে উদাসীন বসে আছি আমি।
দেয়াল ঘড়ির টিক টিক শব্দটা সময়ের শৃঙ্খলতা বর্ণনা করছে।
চক্রাকারে বিহব্বলতা কানায় কানায় পূর্ণ।
অবাঞ্চিত ধ্বনিমুক্ত শহর নিস্প্রান ঘুমে আচ্ছন্ন।
কলঘর থেকে টিপ টিপ জ্বল পড়া শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য কেদারা ছেড়ে
উঠে দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্যে ট্যাপ টা বন্ধ করা ভালো করে।
দরজা পেরিয়েছি মাত্র,
সাদার উপর ড্র কাঁটা ঘরের বেড়ালটা ডেকে উঠলো ম্যা ম্যা করে।
আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে।
খটকা লাগলো মনে। সর্বনাশ অন্ধকারে ভুল করে বিড়ালের লেজ পাড়িয়ে ধরেছি!
এটা পোষা প্রাণী। কামড়ায় না।
খেতে বসলে আমার গাঁ বেয়ে ওঠে। ঘুমিয়ে থাকলে
ফজরের সময় ম্যা ম্যা শব্দ করে নিদ্রা পরিহার করায়।
আবার রাতে খুব ক্ষুধা পেলে
সারা বাড়ি গোঙানি সুর তুলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় সবার।
মাঝ রাতে পেট পুরে খাবে!
বছরে চারবার করে বাচ্চা দিয়ে আসছে গত পাঁচ বছর ধরে!
এ বেড়ালটার বাচ্চা আমি একটাও রাখতে পারলাম না।
ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে থেকেই বুকিং হয়ে যায়।
পাড়া প্রতিবেশীরা বেশ আগ্রহ নিয়ে বাচ্চা গুলো নিয়ে যায়।
অনেকটা হৈ চৈ করতে করতে।
বেড়ালটার লেজ বিদেশী কুকুরের মতো। মোটা এবং লোমে পরিপূর্ণ।
দেখতে ভালোই লাগে। এর বাচ্চা গুলাও হয় দেখার মতো।
লেজ গুলি মায়ের মতোই হয়।
একারনেই বোধহয় বাচ্চার চাহিদা বেশী! শুধু এজন্য বললেও ভুল হবে।
প্রতিটা বাচ্চায় ঘরকুনো হয়। বেড়াল টা আমার দিকে খুব মায়া চোখে চেয়ে থাকে।
মানুষ হলে নিশ্চিত কথাপকথন করতো। এই কেমন আছো? খেতে দাও না ঠিক মতো।
নিজে মাছ খাও আর আমাকে মাছের কাঁটা দাও? খুব দুষ্টু তুমি! নানান প্রশ্ন ছুড়ে লজ্জায় ফেলতো।
ভাগ্যিস কথা বলতে পারে না।

আঁধারে কিঞ্চিৎ ভুল হয়েছিল,
লেজ পাড়িয়েছিলাম। তড়িঘড়ি পা সরিয়ে নিয়ে কলঘরের দিকে অগ্রসর হলাম।
বেরিয়ে বেড়ালটাকে আগের অবস্থানে নিশ্চিত করতে পারলাম না।
সেখানে নেই।
ভেবে নিলাম বরাবরের মতো ডাইনিংয়ের
নিচে চলে গেছে। খেতে বসলে সারাক্ষণই পায়ের কাছেই থাকে।
মাঝে মাঝে ভয় লাগে পায়ে আঁচড় না দিয়ে বসে। একবার প্রচুর জ্বরের মধ্যে বিড়ালের আঁচড় খেয়ে ছিলাম।
সেটা অন্য এক বিড়াল ছিলো। মশারীর উপর থেকেই আঁচড় দিয়েছিলো। খুব ডেঞ্জারাস বিড়াল। যাক তবুও আমি
কোন ইঞ্জেকশন লাগিয়েছিলাম না। কুকুর, বিড়াল কাটলে নাকি ১৪ টা ইঞ্জেকশন দেওয়া লাগে। আমাকে তো আর কামড়াই নাই শুধু আঁচড় দিয়েছে। তাই ইঞ্জেকশনের দিকে যায় নাই। অবশ্য কামড় খেলেও ইঞ্জেকশন ঢুকাইতাম না। ছোট বেলা থেকে ইঞ্জেকশন
খুব ভয় করি। একবার তো লাত্থি মেরে এক ডাক্তারের দাঁত ভেঙ্গে ফেলছিলাম ইঞ্জেকশন নিয়ে কাছাকাছি আসাতে। লাস্ট যেবার
রক্ত টেস্ট করাইতে গেলাম সেবার এক বাচ্চার চিৎকার শুন মাথা ঘুরে পড়েছিলাম।

ঘরে ফিরে আবার চেয়ারটাতে বসেছি।
অন্ধকারে এক হাতে কি বোর্ড ধরে টুকটুক করে লিখে যাচ্ছি।
পায়ের কাছে কি যেন বিড়বিড় করছে।
হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। কৌতূহলী চোখ নামিয়ে
আবিষ্কার করলাম বেড়ালটা জ্বলন্ত চোখ নিয়ে চেয়ে আছে আমার দিকে।
প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলাম।
ভয় কাটিয়ে বেড়ালটাকে পা দিয়ে সরিয়ে সরিয়ে বাহিরে নিয়ে গেলাম।
পেছনে না ফিরে আবার সামনে অগ্রসর হলাম।
বেসিংয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
চোখে পানি দিচ্ছি। কিছু ভ্রম লেগেছে। ঘোরের মধ্যে আছি।
ক্রমশই হারাচ্ছি অতীতে।
কি হচ্ছে আজ! এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়।
দু মিনিট আগের কথা চিন্তা করছি।
পাশে এখনো বেড়ালটার উপস্থিতি টের পাচ্ছি।
মুখে পানি ছিটিয়ে পাশে তাকালাম।
বেড়ালটা নাই!
থাকবেই বা কি করে?
৩ দিন আগে বেড়ালটা হঠাৎ করে মারা গিয়েছে!
মাথার মধ্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে। বেড়ালটা একেবারেই পিছু ছাড়ছে না আমার!
ইলুশনে ভুগছি। মুক্তি মিলছে না। চোখের সামনে ভাসছে বেড়াল টার নিস্তেজ দেহ!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:২০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×