somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমকামিতা: বিজ্ঞান কি বলে?

২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সমকামিতা বিষয়টি এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে তাদের দেশেই সমকামিদের বিয়ে বৈধতা দিয়েছে তা নিয়ে আমাদের এত মাথা ব্যাথার কারণটা কি? প্রশ্নটা করতেই পারেন? হ্যাঁ আপনাকেই বলছি আমাদের মাথা ব্যাথার কোন কারণ নেই। ছিলনা, থাকতোও না। কারণ বাংলাদেশে সরকারিভাবে এটাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সেই সাথে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্ত সমস্যাটা শুরু হলো ঠিক তখনই যখনি আমাদের দেশেরই কিছু মু্ক্তমনা দাবিদার সমকামি নয় অথচ সমকামিদের অধিকার আদায়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। তাদের ভাষায় এটি প্রকৃতির দাবী এটি কোন রোগ নয়। আমি ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এর ব্যাখ্যা করতে যাবনা। কারণ আপনারা যারা ধর্মে বিশ্বাসী তারা আমার থেকে ভালো জানেন বলেই আমার ধারণা। আর যারা ধর্মে বিশ্বাসী নয় বিজ্ঞান মনস্ক তাদেরকে বিজ্ঞানের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করবো যে এটা একধরণের মানসিক রোগ এবং প্রাকৃতিকভাবে ঘটলেও প্রকৃতির বিরুদ্দে একটি ঘটনা।
চলুন দেখা যাক সমকামিতা সম্পর্কে বিজ্ঞান কি বলে, বংশগতির একজন ছাত্র হিসেবে আমি বিশ্বাস করিযে মানুষের প্রতিটি বিহেভিয়রের সাথে কোন না কোন জিন জড়িত। আর অনেক সময় জিনকে স্বক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করণে পরিবেশ এর প্রভাব থাকে এ বিষয়কে বলে এপিজেনেটিক্স। এবার তাহলে দেখা যাক সমকামিতার পিছনে কোন জিন দায়ী কিনা? হ্যাঁ সমকামিতার জন্য বিজ্ঞানীরা কারণ হিসেবে একটি জেনেটিক মার্কারের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন অনেক আগেই। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে বিজ্ঞানী হ্যামার X ক্রোমোজমের Xq28 স্থানে একটি মার্কারের অস্তিত্ব পেয়েছেন যা কিনা গে বা লেজবিয়ান হওয়ার জন্য দায়ী। হ্যামার তার এক্সপেরিমেন্ট এ যে নমুনা নিয়েছিলেন তার প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এধরণের জিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাহলে প্রশ্ন থাকে যে বাকী ৩০% এর ক্ষেত্রে কি হবে। বিজ্ঞানী হ্যামার শুধু X ক্রোমোজমের Xq28 স্থানে নির্দিষ্ট মার্কার খুজেছিলেন। পরে তিনি সমাপনী টানেন এই বলে যে অন্য কোন জিন এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। অতি সম্প্রতি ৮ নম্বর ক্রোমোজমেও একধরণের মার্কার এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা গে হওয়ার জন্য দায়ী।
শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল যে এটা Y ক্রোমোজমের সাথে সম্পকির্ত কিন্ত পরে পেডিগ্রি (পুর্ব পুরুষ) এনালাইসিস করে দেখা গেল যে এটা কোন রোগীর মামা বংশে পাওয়া যাচ্ছে বাবার বংশে নয়। তবে Y ক্রোমোজমের যে কোন ভূমিকা নেই তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না। কারণ Y ক্রোমোজমের SRY জিনের ম্যালফাংশনের কারণেও অনেক সময় গে হয়ে থাকে।
এখন আসি গে বেশি দেখা যায় না লেজবিয়ান? গে এর অনুপাত বেশি দেখা যায় কারণ সমকামিতা X লিংকড। যেকোন X লিংকড বৈশিষ্টই পুরষের মাঝে থাকলেই তা প্রকাশিত হয় কিন্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে দুই কপি থাকলে তা এক্সপ্রেস হয়।

X + Y heterosexual male
Xh + Y homosexual male
X + X female heterosexual
Xh + X female heterosexual carrier of the Xh gene
X + Xh female heterosexual carrier of the Xh gene
Xh + Xh lesbian.
হরমোনের প্রভাবেও সমকামি হয়। কিছু কিছু গবেষনা থেকে এমন সমাপনী টানা হয়েছে যে, যে সকল মা গর্ভাবস্থায় প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাদের সন্তানদের সমকামি হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটা অতটা জোরালো নয়। কারণ প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যেই অনেক মা স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এবং এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সন্তান হওয়ার পারসেন্টই বেশি।
এতো গেলো সমকামিতার পিছনে জিনগত কারণ ও হরমোনের প্রভাব। এধরণের ঘটনা গুলো যাদের সাথে ঘটে তারা ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য দায়ী নয়। যেমন অনেক রোগের জন্যই রোগীরা দায়ী থাকেনা। এটা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে। এতে তাদের কোন হাত নেই। তবে কিছু এমন রোগী পাওয়া যায় যারা গেইজম চর্চা করতে করতে গে হয়ে গিয়েছে জন্মগত নয়।
এখন প্রশ্ন হলো যদি প্রাকৃতিক ভাবেই ঘটে তাহলে কেন এটা কে অসুখ বা রোগ বলা হবে? কারণ রোগের সংজ্ঞা হলো শারীরিক বা মানসিক কষ্ট পেতে হবে তা নাহলে সেটাকে রোগ বলা যাবেনা। তাছাড়া্ও রোগীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেনা। তাহলে সমকামিদের ক্ষেত্রে কি ঘটে? প্রায় সকল সাইকিট্রাস্টি ই সমকামিদেরকে মানসিক রোগী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আর কোন মানসিক রোগীই নিজেকে রোগী হিসেবে স্বীকার করেনা। আর তারা এর জন্য তেমন কোন শারীরিক সমস্যাতে ভুগেননা। আর সব রোগের ভুগান্তি এক রকমও নয়।
এখন প্রশ্ন হলো মানসিক রোগী হলেই কি তারা জৈবিক চাহিদা মিটাতে পারবেনা? উত্তরটা কি হতে পারে? না পারেনা। কেন পারেনা? কারণ যারা প্রকৃতিকে নিজের ধর্ম বলে মানে আই মিন নাস্তিক তারা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন কি? সেক্স এর উদ্দেশ্য কি? নিশ্চয় বলবেন রিপ্রোডাকশন অর্থাৎ বংশবৃদ্ধি। তা জনাব তাহলে গে বিয়ে বা লেজবিয়ান বিয়েতে কি বংশবৃদ্ধি হবে? না কি শুধু টেস্ট টিউব বেবী দিয়েই সারা বিশ্বের মানব চাহিদা পূরণ করবেন?
একটি রোগকে সাপোর্ট করা যেতেই পারে তবে রোগীকে ট্রিটমেন্ট দেয়ার জন্যই সাপোর্ট করা যেতে পারে। তার রোগকে আরও বৃদ্ধি করা বা রোগকে ভাল বলে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সাপোর্ট করাটা কেবল আরেকজন রোগীর মাধ্যমেই সম্ভব।
আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। কোথাও ধর্মীয় রেফারেন্স দেইনি। আমার লেখা পড়ে যদি কেও মনে করেন যে সমকামিতা একটি রোগ তা হলেও আমি খুশি আর না মনে করলেও আমার কোন দুঃখ নেই। কারণ ভালো মন্দ বেছে নেয়ার দায়িত্বটা আপনার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪১
২৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×