আমি সামহোয়ার ইন ব্লগের কথা প্রথম শুনি আরিফ জেবতিক ভাইয়ের ভ্যালেরিকে নিয়া করা পোস্টের লিঙ্ক থেকে। এক বন্ধু মেসেঞ্জারে লিঙ্কটা দিলো (সেও আছে সামহোয়ারে তবে বেশি নিরব ছেলে); আরেকজন দিল পিডিএফ ফাইল একই পোস্টের। কৌতুহল জাগলো, গেলাম ব্লগ সাইটটিতে। কিন্তু ফ্রন্ট পেইজের অবস্থা দেখে বেশি সুবিধার মনে হইলো না! কয়েকজনের ব্লগে গেলাম। দুর্ভাগ্যবশত ওইগুলা জামাতিদের ব্লগ ছিলো। আমিও ওইসব পোস্ট পড়ে খোদা হাফেজ জানিয়ে দিলাম সাইটটাকে। আর যাই হোক, জামাতিদের সাইটে থাকার ইচ্ছে নাই। কিছুদিন পরে আবার কেন জানি আসলাম। এইবার বেশ কিছু ভালো পোস্ট চোখে পড়লো। আস্তে আস্তে পড়া শুরু করলাম। অবশেষে জুলাই ৭, ২০০৭ তারিখে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। প্রথম বেশ কিছু দিন গেছে এইখানকার অবস্থা বুঝতে আর মানুষজনদের সাথে পরিচিত হইতে। তারপর থেকে নিয়মিত এখানে লগইন করা শুরু।
এখন আসি আসল কথাতে। আমি আমার স্টিকি পোস্ট এডিট করেছিলাম কর্তৃপক্ষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে এখানে কি চলতেছে। বারবার জানানোর পরেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। রিপোর্ট অ্যাবিউজ বাটনের কোন কার্যকারিতাও তো চোখে পড়ে নাই। তাই আর কোন উপায় ছিল না তাদের দৃষ্টি আকর্ষনের। আর কতবার বলবো! সবাই বলতেছে তারপরও এইসব পোস্ট আসেঃ মুক্তিযোদ্ধারা রেপ করেছে, হত্যা করেছে, সেইগুলোর বিচার কেন হয় না। দিনের পর দিন এইসব পোস্ট দেখে এটাকেই আমি প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে নিয়েছি। আমি তার জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না। কিন্তু পাঠকদের কাছে তখনো ক্ষমা চাইছিলাম, এখনো চাই পোস্টের কনটেন্ট সরানোর জন্য। আমাকে কর্তৃপক্ষ থেকে দোষ দেয়া হয়েছে পরিবেশ অস্থিতিশীল করার জন্য। কিন্তু এইটুকু তারা চিন্তা করলেন না যে কেন এই প্রতিকী প্রতিবাদটুকু করলাম, নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ব্যান করে দিলেন। এখানে এসেছি প্রিয় বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে আর বাংলা অক্ষর দেখতে। আমার প্রিয় এই সাইটের পরিবেশ খারাপ করার কোন প্ল্যান আমার কখনো ছিল না, হবেও না।
শুধু দুঃখ লাগে যখন দেখি জামাতিদের আস্ফালন, রাগ লাগে যখন দেখি জামাতিরা এই সাইটটিকে টয়লেট-নর্দমা বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালায়, ক্ষোভ জাগে যখন দেখি মুক্তিযুদ্ধের পোস্ট স্টিকি হলে গা জ্বলা জামাতিগুলোর বাতের ব্যথা নিয়েও নৃত্য।
সা. ইনকে ভালোবাসতাম দেখেই এখানে পরে থাকতাম দিন রাত। অনেকের সাথেই খুব ভালো পরিচয় হয়ে গেছে। অনেকে আমার সিনিয়র বা জুনিয়র। তারপরও তাদের অনেককেই নাম ধরেই ডাকি, তুই তোকারি তুমি করেও কথা বলি কারো কারো সাথে। তারাও আমাকে বলে। অনেককে বড় ভাই সুলভ শ্রদ্ধাও করি। ভার্সিটি লাইফ যখন শেষ হয়, তখন ভেবেছিলাম কখনো আর হয়ত সেইরকম বন্ধুত্ব কারো সাথে হবে না আর। কিন্তু এই ব্লগে এসে টের পেলাম বন্ধুত্ব হতে কোন সময় লাগে না, সীমানা লাগে না। অনেকের সাথে জীবনে দেখাও হবে না, অনেকের আসল নামও জানবো না কোনদিন, তারপরও এই যে ভালো লাগা, একসাথে পথ চলা, এইটাকে কি নাম দিবো!
সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সবার জন্য ভালোবাসা রইলো। আপনাদের সরব নিরব প্রতিবাদ দেখে যে মন খারাপটুকু ছিল ব্যান হবার পরে তা কেটে গিয়েছিল। আপনাদের সবগুলো লেখা সবগুলো কমেন্ট আমি পড়েছি। জানি নিরস স্বরে শুধু ধন্যবাদ বলাটা অনেক কম শোনায়। সম্ভব হলে এর থেকে আরো সুন্দর ভাষাতে কৃতজ্ঞতা জানাতাম। কিন্তু এটা শুধু আমার লিখতে না পারার দুর্বলতাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে। অনেক ধন্যবাদ।
একটা কথা না বলে পারছি না, এইটা একটা লুপের মত হয়ে গেছে। দেশবিরোধী পোস্ট আসবে...আন্দোলন করা হবে...ঐ নিক তখন ব্যান হবে আর সাথে আন্দোলনকারী কিছু নিকও ব্যান হয়...আবার আন্দোলন চলে আনব্যানের জন্য...আনব্যান হয়ে ফিরে আসে...তারপর কিছুদিন খুব ভালো একটা পরিবেশ থাকে...তারপর আবার দেশবিরোধী পোস্ট আসা শুরু হবে... এই জিনিসটা দেখতে দেখতে বিরক্ত কিছুটা আমি। দেশ বিরোধী পোস্ট আসলেই আবার এস্কিমো ভাই, আমি বা অন্য অনেকেই অবশ্যই ঝাঁপিয়ে পড়বে। ফলে কি সে বা তারা আবার ব্যান হবে? সচলায়তন ক্লোজড সার্কেল, পেচালি তেমন ভালো লাগে না কারো; আর কোন সাইট নাই দেখেই তারা জানেন যে আমরা এইখানে থাকতে বাধ্য। আমি তাই নতুন একগাদা ব্লগিং সাইট আসাকে স্বাগতম জানাই যাতে করে এই অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়। বেশ কয়েকটা সাইট আসার কথা শুনেছি, সেগুলোর জন্য শুভকামনা রইলো, প্রচুর ব্লগিং সাইটই কেবল অবস্থার উন্নতি হতে সাহায্য করবে বলে মনে করি। কমিউনিটি ব্লগিং সাইট হওয়া উচিত অফ দা ইউজার, বাই দা ইউজার আর ফর দা ইউজার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৪৪