somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ জুয়া অথবা বিশ্বাসের প্রতিশব্দ

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান


কয়েকজন মানুষকে জবাই করে ফেলা খুব কঠিন কাজ হতে পারেনা। আমি আপনার সাথে একমত না। আমি মনে করি এটা একটা চমৎকার খেলা হতে পারে আমাদের জন্য। আপনার সাথে আমি এ ব্যাপারে বাজি ধরতে পারি। আমি কয়েকজন সাধারন মানুষকে ধরে নিয়ে আসব। তারপর খুব কৌশলে তাদের মগজ ধোলাই করে ফেলা হবে। আমি একেবারে নিশ্চিত করে বলতে পারি ওরা কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই মানুষ জবাই করতে সক্ষম হবে। নিকার খুব আত্মবিশ্বাসের সাথেই কথাগুলো বলল। আমার মনে হয় তুমি এ বাজিতে আমার সাথে হারবে। মানুষকে আমার এতটা বোকা মনে হয়না। তবে তুমি চেষ্টা করে দেখতে পার। যদি সফল হও তবে তোমাকে তোমার প্রজেক্টের জন্য সব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। আর যদি ব্যর্থ হও, তবে তার পরিনাম তুমি জান। বেশ ঠাণ্ডা গলায় নিকারের কথার জবাব দিল বার্ক।

নিকারের নিথর দেহ পড়ে আছে। তাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। নিকারের মত একজন বিখ্যাত ফিকশন রাইটারের মৃত্যুতে সবাই আতংকিত এবং শোকাহত। শুধু একজনকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। সে তার আনন্দ লুকিয়ে রাখার কোন চেষ্টাই করছেনা। তার নাম রিটা। নিকারের সাথে এই মেয়েটা লিভ টুগেদার করছে বলেই সবাই জানে। একসময় রিটা খুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে মিডিয়াকে বলল সে নিকারকে হত্যা করেছে। তারপর সে একটা ধর্মগ্রন্থ থেকে কিছু ভার্স বলে।

হে মানবজাতি, তোমাদের আমরা প্রোগ্রাম করে পৃথিবী নামক এক বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছি। তোমরা আমাদের খেলার পুতুল ছাড়া আর কিছুই না। সুতরাং তোমাদের নিয়ে আমরা যেভাবে খেলব, সেভাবেই তোমারা নিয়ন্ত্রিত হবে। তাতেই তোমাদের মঙ্গল নিহিত আছে।


রিটা, তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে আমাদের আর কোন লাভ নেই। তোমার প্রয়োজন শেষ। রিটাকে ঘিরে কয়েকজন সামরিক অফিসার দাঁড়িয়ে আছে। যদিও রিটা তাদের কাউকেই দেখতে পারছে না। কারন তার চোখ বাঁধা। তোমরাই কি সেসব এলিয়েন যারা আমাদের নিয়ন্ত্রন করছ? রিটা জানতে চায়। তাকে কিছুটা বিচলিত মনে হয়। রিটার কানের কাছে মুখ নামিয়ে কেউ একজন ফিসফিস করে বলে, এলিয়েন বলে কিছু নেই বোকা মেয়ে। আমরাই তোমার বিশ্বাস নিয়ে কৌশলে খেলেছি। রহস্যময় এক গ্রন্থের কিছু ভার্স দিয়ে তোমার বিশ্বাসকে প্রভাবিত করেছি। এটাই আমাদের কাজ। ঠিক একই কাজ নিকারও করত। তার সাথে আমাদের একটা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে আমাদের একচেটিয়া মুনাফায় ভাগ বসাচ্ছিল। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় ছিলনা। তাছাড়া তোমাকে স্যাম্পল হিসেবে ব্যাবহার করে আমরা একজনকে কনভিন্স করেছি। সে এখন একটা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমাদের আর্থিক সহায়তা করতে প্রস্তুত। মৃত্যুর আগে তার নামটা শুনে যাও। তার নাম বার্ক!

গলায় ধারালো কিছু একটার স্পর্শ অনুভব করে রিটা। একটা ভারসের কথা হঠাৎ করেই তার মনে পরে যায়,

হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের ভাগ্যকে বরন করে নাও। আমাদের কাছে আসার চেষ্টা করোনা। তার আগেই তোমরা তোমাদের অস্তিত্ব হারাবে।


ভবিষ্যৎ



বার্কের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। জনগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য আমাদের একজন ভিলেন দরকার ছিল। আমাদের পরিকল্পনা আজ সফল হয়েছে। এলিয়েনদের সর্বচ্চো কমিটির সমন্বয়ক রুট খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলল। তবে একটা খেলায় যখন কোন ভিলেনের চরিত্র আরোপ করা হয়, তখন সেখনে একজনকে নায়ক বানাতে হয়। না হলে খেলা অসম্পূর্ণ থেকে যায়! আমাদেরও একজন নায়ক আছে। যে নায়ক বার্কের ক্ষমতার বলয় ভেঙ্গে জনগনের মধ্যে মুক্তির আকাংখা তৈরি করতে পেরেছে। সে এখন জনগনকে যেভাবে নিয়ন্ত্রন করবে তারা সেভাবেই নিয়ন্ত্রিত হবে! আর আমরা তাকে নিয়ন্ত্রন করব।



রিসাদ, একটা সত্য কথা বলবে? তুমি কি আসলেই এলিয়েনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস কর?

করি। প্রবল ভাবেই করি। তারা চেয়েছে বলেই আজ আমি নায়ক। বার্ক ভিলেন। বার্ক পৃথিবীকে অশান্ত করে ফেলেছিল। মাস পিপল বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিল। তাই এলিয়েনরা আমাকে দিয়ে পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। তারা আবার এলিয়েনদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে কারন তারা ভাবে এলিয়েনরাই আমাকে পাঠিয়েছে।

তুমি কি ভাব? রিসাদের বুকে মাথা রেখে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় নিকিতা।

এ ব্যাপারে আমার ভাবার কোন সুযোগ নেই নিকিতা। আমার কাজ হচ্ছে কর্তব্য পালন করা। এলিয়েনরা আমাকে যা করতে বলে আমি তাই করি। আমাকে যা বলতে বলে তাই বলি। এখানে আমার কোন স্বাধীন অস্তিত্ব নেই। তারা যদি কখনো বলে তোমাকেও ছেড়ে দিতে হবে তবে আমাকে তাই করতে হবে।

জনগনের কাছে আমি মহানায়ক। আমি এখন প্রবল ক্ষমতাধর। কিন্তু আমিই আসলে সবচেয়ে বেশী পরাধীন। এবং আমার কাজ হচ্ছে জনগনকে পরাধীন করে রাখা। তারা যেন এলিয়েনদের তৈরি করা বৃত্ত ভেঙে না বেড় হতে পারে। তুমি জান, যদি আমি ব্যর্থ হই, তবে তারা আমাকেও সরিয়ে দেবে। নতুন কাউকে নিয়ে আসবে।আমি তখন ভিলেন হব। আমার জায়গায় আসবে এলিয়েনদের তৈরি করা নতুন কোন নায়ক। আমি মনে করি এতেই জনগণের মঙ্গল! রিসাদ সুর করে একটা ভার্স বলে,

হে মানব জাতি, তোমাদের জন্য যে বৃত্ত আছে তোমরা কখনো তা ভাঙার চেষ্টা করোনা। যদি কখনো ভেঙে ফেল তবে মনে রেখ বৃত্তের সাথে তোমরাও ধ্বংস হবে! সেভাবেই তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।


শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে এক গহীন জঙ্গলের গুহায় একটা গোপন মিটিং হচ্ছে। সেখানে কয়েকজন মানুষ খুব অস্থির হয়ে আছে। তারা আবারো পরাজিত হয়েছে। বার্কের বিরুদ্ধে তারাই আন্দোলন শুরু করেছিল। ভেবেছিল এবার বার্ককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তারা এলিয়েনদের ব্যাপারে মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাস ভেঙে দেবে। কিন্তু পারেনি। সবাই ব্রুনোর দিকে তাকিয়ে আছে। ব্রুনো তাদের নেতা। এই ব্রুনোই আসলে জনগণকে সংঘটিত করেছিল এলিয়েনপন্থি বার্কের বিরুদ্ধে। সবার মুখে তখন একটাই স্লোগান ছিল, অন্ধ বিশ্বাস নিপাত যাক, যুক্তিবাদ মুক্তি পাক! যুক্তিবাদ জিন্দাবাদ!ব্রুনো জিন্দাবাদ!

তবে তারা অনেকটাই সফল হয়েছিল। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে তারা আসলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এলিয়েন বিশ্বাসের নামে আসলে শাসকগোষ্ঠী দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে আসছে। তাদের নিয়ে আসলে বিশ্বাসের নামে খেলা হচ্ছে। কিন্তু যখনই তারা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে এবার এলিয়েন পন্থীদের বিপর্যয় অনিবার্য, ঠিক তখনই মঞ্চে রিসাদ নামক এক অচেনা নেতার আবির্ভাব ঘটে। রিসাদ আন্দোলনের মোড় অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়! সে খুব দ্রুত মানুষকে প্রভাবিত করে ফেলে। সম্মোহিত করে ফেলে।

আমরা আবার সেই একই ভুল করেছি। ব্রুনোর মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে সবাই চমকে ওঠে। আমরা জনগণকে অবিশ্বাস করতে শিখিয়েছি। আমরা তাদের দিয়ে ভ্রান্ত বিশ্বাস দিয়ে গড়া সমাজ কাঠামোয় আগুন লাগাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা একটা ব্যাপার কখনোই বুঝতে পারিনি। আমরা সবসময় একটা দার্শনিক প্রশ্নের কাছেই বারবার হেরে যাই। সেটা হচ্ছে মানুষ আসলে কোন একটা বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চায়! সে বিশ্বাসের জন্যই লড়াই করতে চায়। আর এ জন্যই তারা এলিয়েন তত্ত্বের নামে বারবার বিভ্রান্ত হয়েছে। আমরা তাদের অবিশ্বাস করতে প্রভাবিত করেছি। কিন্তু পাল্টা কোন বিশ্বাস তাদের মধ্যে বিনির্মাণ করতে পারিনি। ফলে যে তাদের মধ্যে বিশ্বাসের জন্ম দিতে পেরেছে তারা তাকেই নেতা বানিয়েছে। নায়ক বানিয়েছে। আবার বিশ্বাসভঙ্গ হলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আমরা বছরের পর বছর ধরে মানুষের মধ্যে বার্কের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করতে পেরেছি। তাদের মধ্যে এলিয়েনদের প্রতি সংশয়ের জন্ম দিতে পেরেছি। কিন্তু পাল্টা বিশ্বাসের জন্ম দিতে পারিনি। এখানেই আমরা ব্যর্থ।রিসাদ সফল। ব্রুনো যখন কথাগুলো বলছিল, নিকিতার একজোড়া চোখ তখন গভীর ভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করছিল।

ব্রুনো, এই যে তুমি আমাকে বিশ্বাস করছ, এই বিশ্বাসের জন্ম কোথায়? এটাও কি অনেকটা এলিয়েন তত্ত্বে বিশ্বাসের মত না? তুমি জান আমি রিসাদের বান্ধবি। তুমি জান আমি তোমাকেই ভালোবাসি। রিসাদ ভাবে আমি তাকে ভালোবাসি। তোমরা দুজনই জান আমি ডাবল এজেন্ট! তারপরও তোমরা দুজনই আমাকে বিশ্বাস কর। তুমি ভাব তোমাকে ভালোবেসে রিসাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছি। রিসাদ ভাবে তাকে ভালোবেসে তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছি। এটা কি অন্ধ বিশ্বাস না?

ব্রুনো খুব আয়োজন করে একটা চুরুট ধরায়। তারপর তার সেই আকর্ষণী গলায় উত্তর দেয়, আমার কাছে তুমি হচ্ছ একটা জুয়া খেলা। আমি জুয়া খেলছি। সেখানে তোমাকে ভালোবাসাটা হচ্ছে আমার একটা চাল। আমার ধারনা রিসাদও ঠিক একই কাজ করছে। আমাদের দুজনের মধ্যে তোমাকে নিয়ে একটা লড়াই চলছে। সে লড়াই সম্পর্কে আমরা দুজনই সচেতন। এখানে রিসাদের আধ্যাত্মিক নেতা হওয়া কিংবা আমার যুক্তিবাদী আন্দোলন দুটোই একটা কৌশল। আমরা দুজনেই ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলাম। জনগণের শাসক হতে চেয়েছিলাম। সে খেলায় রিসাদ জিতে গেছে। তবে তোমাকে নিয়ে যে খেলাটা হচ্ছে তা এখনো অমীমাংসিত। ব্রুনো কথাগুলো বলেই নিকিতার ঠোঁটে চুমু দেয়। ব্রুনোর প্রবল আকর্ষণী ক্ষমতার কাছে নিকিতা মুহূর্তেই আত্মসমর্পণ করে!

ক্যাম্পের বাইরে তখন ব্রুনোর লেখা একটা থিসিস পাঠ করা হচ্ছিল। সবাই গোল হয়ে বসে তা শুনছিল। তাদের সবার চোখেই স্বপ্ন। বিপ্লবের স্বপ্ন!

অতীত

বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে রুট, বার্ক এবং নিকিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনদিন পর তাদের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হবে! আধ্যাত্মিক নেতা রিসাদের কাছে এলিয়েনদের কাছ থেকে নতুন বার্তা এসেছে। সে বার্তায় বলা হয়, রুট, বার্ক এবং নিকিতা এলিয়েন বিশ্বাসের নামে আসলে মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছিল। তারা আসলে সব ব্ল্যাকহোল পন্থী। শয়তানের অনুসারী!

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে শেষ ইচ্ছা হিসাবে ব্রুনো এবং রিসাদের সাথে দেখা করতে চেয়েছিল নিকিতা। তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছে। ব্রুনো এবং নিসাদ তার সাথে দেখা করতে এসেছে। একসাথে। ব্রুনোর ঠোঁটে চুরুট জ্বলছে। রিসাদের মুখে সে শান্ত হাসি লেগে আছে। তাদের কাউকেই বিচলিত মনে হচ্ছিলনা। দুজনকে দেখে মনে হচ্ছিল তারা অনেকদিন থেকেই একে অপরের সাথে গভীর ভাবে পরিচিত।

নিকিতাঃ কিছুক্ষন পরেই আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে। তার আগে আমি কিছু সত্য জেনে মরতে চাই।আশা করি অন্তত আমার এ চাওয়াটা তোমরা পূরণ করবে।

রিসাদঃ আমি এবং ব্রুনো, আমরা দুজনই অবিশ্বাসী। এলিয়েন তত্ত্বকে আমরা ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলাম। তাছাড়া রুট, বার্ক এরা জেনে শুনেই মানুষের অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছিল। বছরের পর বছর মানুষ এভাবে বিভ্রান্ত হোক তা আমরা চাচ্ছিলাম না। আমরা একটা পরিবর্তন চাচ্ছিলাম। তবে এ সিস্টেম ভাঙা অনেক কঠিন। তুমি জান। অতীতে অনেক সৎ এবং মেধাবী নেতা প্রাণ দিয়েছিল। আমরা জানতাম সোজা পথে কখনোই এই সিস্টেমকে ভাঙা যাবেনা। এলিয়েন তত্ত্বের প্রতি মানুষের বিশ্বাস অনেক প্রজন্ম ধরে। তাই আমরা দুজন মিলে একটা প্ল্যান করি সাত বছর আগে। ব্রুনো এলিয়েন তত্ত্ব বিরোধী বিপ্লবী নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়। আমি এলিয়েনদের আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করি।

ব্রুনোঃ আমি সুকৌশলে মানুষকে প্রভাবিত করতে থাকি। মানুষ অবিশ্বাসী হয়ে উঠতে থাকে। সন্দেহ করতে থাকে। নিকারের মত কিছু লেখক কিছু মানুষকে এলিয়েন তত্ত্বের নামে চরমপন্থি বানিয়ে ফেলত। এটা নিয়ে আবার কয়েকজনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তারা বার্কের কাছে যখন দরকার হত প্রকল্প বিক্রি করত। কিছু মানুষকে চরমপন্থি বানাতে হত ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য। আমরা দুজন মিলে খুব কৌশলে নিকারকে খেলার মাঠ থেকে সরিয়ে দেই। তারপর আমি বার্কের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকি। বার্কের প্রতি যখন জনগন ক্ষেপে ওঠে, এলিয়েন তত্ত্বের প্রতি বিশ্বাস হারাতে থাকে, তখন মঞ্চে আসে রিসাদ। সে এলিয়েনদের এলিট সোসাইটিকে অনেক বছর ধরেই প্রভাবিত করে রেখেছিল। তারা তাকে বিশ্বাস করেছিল। তা ছাড়া আর উপায়ও ছিলনা।

রিসাদঃ তুমি যে আসলে রুটের এজেন্ট তা আমরা আগে থেকেই জানতাম। তুমি এলিয়েন তত্ত্বে বিশ্বাস নিয়ে বারবার প্রশ্ন করতে। আমি যা উত্তর দিতাম তা তুমি রুটের কাছে রিপোর্ট করতে। আমি তোমাকে সবসময় এমন উত্তর দিতাম যেন রুট আমাকে কোন ভাবেই সন্দেহ করতে না পারে।

এলিয়েন তত্ত্বের নামে যুগের পর যুগ মানুষকে শোষণ করা হয়েছে। মানুষের বিশ্বাস নামক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করে গড়ে উঠছে একটা সিন্ডিকেট। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরাও সে সিন্ডিকেটের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছি। আমাকে বিশ্বাস করে তারা চরম মূল্য দিয়েছে। যেমনটা তাদেরকে বিশ্বাস করে এতদিন জনগন দিচ্ছিল। আসলে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জুয়া খেলার নাম হচ্ছে বিশ্বাস করা।

ব্রুনো এবং রিসাদ নিকিতার দিকে তাকিয়ে আছে। নিকিতার খুব ইছে করছে এ দুজনকে অবিশ্বাস করতে। কিন্তু এখন বিশ্বাস করা ছাড়া তার অন্য কোন উপায় নেই। বিশ্বাস অবিশ্বাসের জুয়া খেলায় সে হেরে গেছে। কিছুক্ষন পরেই সবকিছু থেকে তাকে বিদায় নিতে হবে। বিদায় নিতে তাকে বাধ্য করা হবে। কারন জনগণ এখন বিশ্বাস করে তাতেই তাদের মঙ্গল নিহিত!

তিন বছর পর

রিসাদকে সরিয়ে দিতে হবে। এখনই উত্তম সময়। রিসাদ যাদের এখন প্রবলভাবে বিশ্বাস করছে তারা সব বিশ্বাসঘাতক। সব আমার লোক। তারা শুধু ইশারার অপেক্ষায় আছে। খুব শান্ত ভঙ্গিতে চুরুট ধরালো ব্রুনো।

কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনল নিমা। তার মুখে মুচকি হাসি!









সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৬
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×