ইয়াবা মজিদ
১
লোকটার নাম মজিদ। মানুষ তাকে ইয়াবা মজিদ নামে চিনে। নিজ দেশে সে একজন স্টার। সাকিব খান বা সাকিব আল হাসানের মতই। সে জনগণকে ইয়াবা সেবা দেয়। কাজটা খুব কঠিন। কারন কাজটা বৈধনা। যেকোন অবৈধ ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অনেক বড় মাপের আর্টিস্ট হতে হয়! মজিদও নিজেকে একজন আর্টিস্ট ভাবে। এই দেশের মানুষ এমনিতেই নানা রকম হতাশায় আক্রান্ত। টাকা থাকলেও সুখ নাই। না থাকলেও সুখ নাই। মানুষের অসুখের দিনে পর্ণ সাইটগুলো এবং অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের হতাশা থেকে মুক্তি দিয়ে যেতে। মানুষের ডিম্যান্ড দিনে দিনে বাড়ছে। মানুষ মুক্তি চায়। মসজিদ, মন্দির আর আজকাল মানুষকে শান্তি দিতে পারছেনা। শান্তি দেয় এমএমএস! শান্তি দেয় বোম মেরে মানুষ হত্যা, শান্তি দেয় ইয়াবা! মজিদ আসলে মানুষকে শান্তি দিয়ে যাচ্ছে। হতাশা থেকে মুক্তি দিচ্ছে সে এদেশের তরুন সমাজকে। এ কাজে অনেক রিস্ক আছে। দেশের আইন কানুন তার বিরুদ্ধে। সেটা নিয়ে অবশ্য সে খুব একটা চিন্তিত না। কারন আইন কানুনে কি লেখা আছে বা বলা আছে এটা মুখ্য ব্যাপার না। কারা সেসব এক্সিকিউট করার দায়িত্বে আছে সেটাই মুখ্য ব্যাপার।
কয়েকদিন আগে মজিদের শহরের মেয়র সংবাদ সম্মেলন করে ইয়াবার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে!তারপর থেকে অনেকেই নড়েচড়ে বসেছে। সেদিন রাতে মজিদ ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট দুতার্তেকে স্বপ্নে দেখেছিল। এই দুতার্তে তার দেশে সব অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভাবে মেরে ফেলছে। নো মারসি টাইপ অবস্থা। মানবধিকার সংস্থা দরদ দেখাতে চেয়েছিল। তাদের বলা হয়েছে ফাক ইউ! বিশ্বের মোড়ল হয়ে বারাক ওবামা নাক গলাতে গিয়েছিল। গালি খেয়ে ফিরে এসেছে! দুতার্তে তাকে নিয়ে মশকরা করছিল। কিরে মজিদ, তোর মেয়রের উপর নাকি আমার আত্মা ভর করেছে? সে নাকি অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেছে? মজিদের খুব বলতে ইচ্ছে করছিল ফাক ইউ! কিন্তু তার আগেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়! তার বুক ধড়পড় করছিল।
২
হাবু ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। ঘটনা খারাপ। মেয়রের উপর দেখা যাচ্ছে আসলেই দুতার্তের আত্মা ভর করেছে। হাবু মজিদের ব্যবসায় একজন ডিস্ট্রিবিউটর ছিল। খুবই সফল ছিল সে তার কাজে। তাকে এভাবে মেরে ফেলায় মজিদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এই হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানবধিকার কর্মীরা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে চীৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে। এদের কাজকারবার দেখলে মজিদের হাসি পায়। তবে তাদের কথাবার্তা এখন তার পক্ষেই যাবে! এতে যদি মেয়র একটু থামে! মজিদের ইচ্ছা করে এইসব অ্যাকটিভিস্টদের গিফট হিসাবে ইয়াবা পাঠায়! এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার তার ইয়াবা সেবা নিয়মিতই নিচ্ছে! এটা মজিদ জানে! যে সাংবাদিক এক সপ্তাহ আগে তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় রিপোর্ট লিখেছিল, সে মজিদের শহরে সমুদ্র বিলাসে আসলে বিনোদনের জন্য কি কি করে সেটাও মজিদ জানে। এত কিছু জানে বলেই মজিদ আজ একজন সফল এবং ক্ষমতাবান মানুষ। মজিদ জানে কখন কিভাবে কার ডিম্যান্ড পূরণ করতে হয়। কখন কার পায়ে চুমু দিতে হয়! আর কখন কার মাথায় আঘাত করতে হয়। তবে মেয়রকে নিয়ে মজিদ সংশয়ে আছে। তার মতিগতি সে কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। আর এই সংশয় থেকেই মজিদের মনে ভয়ের জন্ম হয়। দুদিন পর মেয়র সমুদ্রবিলাসে আসবে। তাকে কিভাবে সন্তুষ্ট করা যায় সেটা নিয়ে মজিদ ভাবছে।
৩
মেয়র বসে আছে। তার হাতে হাভানা চুরুট! তার মুখোমুখি বসে আছে মজিদ। ইয়াবা মজিদ। মেয়র সমুদ্র বিলাসে এসেছেন। এসেই তিনি একটা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ইয়াবা নামক কোন মাদকের অস্তিত্ব এই দেশে থাকবেনা। মেয়র মজিদের দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে আছে। বল মজিদ, তোমাকে আমার কেন দরকার? কনভিন্স মি!
স্যার, আমাকে আপনার দরকার নেই। আপনার দরকার ক্ষমতা। আপনার দরকার ক্ষমতায় টিকে থাকা! এই টিকে থাকার লড়াইয়ে আমি আপনার দিকের একজন সৈনিক! আমি ইয়াবা নিয়ে বিজনেস করি। এই বিজনেস করাটা আমার কাছে একটা আর্টের মত ব্যাপার।আপনার দেশের তরুন সমাজ হতাশায় নিমজ্জিত। তাদের অনেক কিছু নিয়েই হতাশা। আপনার পক্ষে কোন ভাবেই এদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব না। আমি এদের এই হতাশা থেকে মুক্তির একটা সুযোগ করে দিয়েছি। তারা ইয়াবা নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকলে দেশের কোথায় কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে এসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবেনা। তারা ক্রাইম করবে কিন্তু বিপ্লব করবেনা। ক্রিমিনাল আপনার জন্য কোন সমস্যা না। বরং আপনার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে তাদের মেরে ফেললে দেশের মানুষ বাহবাই দেবে। কিন্তু একজন বিপ্লবী আপনার জন্য সমস্যা। যে তরুন রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ধর্ম এসব নিয়ে যত বেশী পড়বে সে তত বেশী তার নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে থাকবে। সে তখন আপনার ক্ষমতা নিয়ে তত বেশী প্রশ্ন করা শুরু করবে।এসব হচ্ছে দার্শনিক কারন যে কারনে আমার মত মানুষকে আপনার দরকার। প্র্যাকটিক্যাল কারনও আছে। আমাকে সরিয়ে দিলে বা মেরে ফেললে এই এলাকায় আরেক মাদক ব্যবসায়ী চলে আসবে। আপনার বিরোধী পক্ষের দখলে চলে যাবে সব কিছু। আপনি জানেন আজকাল সিন্ডিকেট ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়না। সে সিন্ডিকেটে বুদ্ধিজীবী, কবি সাহিত্যিকের যেমন প্রয়োজন হয় তেমনি আমার মত মাদক ব্যবসায়ীরও প্রয়োজন আছে। আমরা সবাই মিলেই একটা ক্ষমতার বলয় তৈরি করি। আপনার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই আমাকে আপনার প্রয়োজন আছে। মজিদ কথাগুলো বলে মেয়রের দিকে খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে তাকায়। মেয়রের মুখে হাসি খেলা করছে। যে হাসির অনেক রকম অর্থ করা যায়!
৪
সাদি কিছুক্ষন আগে তার মাকে জবাই করে হত্যা করেছে। তার সারা শরীরে মায়ের রক্ত লেগে আছে। মহিলাটার কাছে সে টাকা চেয়েছিল। টাকা দেয়নি। সাদি শান্তি চেয়েছিল। মুক্তি চেয়েছিল। একমাত্র ইয়াবাই তাকে শান্তি দিতে পারে। হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে। মহিলাটা তাকে সে শান্তির পথে, মুক্তির পথে যেতে বাঁধা দিচ্ছিল। তাই সাদি তাকে সরিয়ে দিয়েছে। মহিলাটা জাহান্নামে যাক! সাদির এখন ইয়াবার প্রয়োজন!
মিউচ্যুয়াল ডিলেমা
১
ছেলেটার টাকা আছে। ক্ষমতা আছে। লবিং করার মত লবিস্ট আছে। ক্ষমতাবান ব্যবসায়ী বাবা আছে। ছেলেটার একটা পুরুষাঙ্গও আছে! সে নিজেকে এই দেশের রাজা মনে করে। দেশটা তার কাছে একটা হারেমখানা। দেশের মেয়েগুলো সব তার সেবাদাসী! মোল্লাটাও মসজিদকে এমন হারেমখানাই মনে করেছিল। আর যাকে সে ধর্ষণ করেছিল সে ছিল তার সেবাদাসী। যে বাবাটা তার মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছিল সেও আসলে ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। ভুল করে বিচার চেয়ে ফেলেছিল। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে অবশ্য মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এসব রাজা বাদশাদের একটা কামনা বাসনার ব্যাপার আছে। তারা যা করে তা মিউচ্যুয়ালীই করতে চায়। কিন্তু মেয়েগুলো, শিশুগুলো বুঝেনা।তখন তাদের বুঝাতে হয়। এই বুঝানোর সময় কিছু নিষ্ঠুরতা দেখাতে হয়! হান্নান সাহেবের মেজাজ খারাপ! একদল রামছাগল এসব না বুঝেই ধর্ষণ ধর্ষণ বলে পুরো দেশ এক করে ফেলছে। আরে বাবা! এক বাবা তার মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে, এক শিশু মসজিদে ধর্ষিত হয়েছে এসব নিয়ে আলোচনা কর! ছোটলোকদের নিয়ে আলোচনা করে বুদ্ধিজীবী সাজ! তা না এবার বড়লোকদের কাজকারবারেও নাক গলানো শুরু করে দিয়েছে। তার ছেলে একটা পুরুষ মানুষ! তার একটা কামনা বাসনার ব্যাপার আছে! সেই কামনা বাসনার ব্যাপারটা মেয়েরা বুঝবেনা? ছেলেত সব মিউচুয়ালিই করতে চায়! মেয়েরা বুঝেনা বলেইত তাদের ধর্ষণ করতে হয়! কিন্তু তাতে কি? তার মানেত মিউচুয়ালিই সব কিছু করার ইচ্ছা ছিল। আজকালকার ছাগলগুলো দর্শনও বুঝেনা। শুধু বুঝে ধর্ষণ। কয়েকদিন তনুকে নিয়ে খুব চিল্লাছিল। সেনাবাহিনী নিয়ে অনেক কথা বলেছিল! এখন সব ঠাণ্ডা! ছাগলগুলা বুঝেনা ক্ষমতাবানরা যেখানে ধর্ষকদের বডিগার্ড হয়ে বসে থাকে সেখানে লাফালাফি করে কোন লাভ নেই!
২
হান্নান সাহেব এবং তার ছেলেকে ধরে আনা হয়েছে। কারা কোথায় তাদের ধরে এনেছে সেটা কিছুই বুঝা যাচ্ছেনা। তাদের সামনে একদল তরুন তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। সবাই মুখোশ পরে আছে। তাদের মধ্যে একজন হান্নান সাহেবকে বলল, আপনার এবং আপনার ছেলের কথায় যুক্তি আছে। আসলে সে যা করেছে মিউচুয়ালিই করেছে। মেয়েগুলো রাজি হয়নি বলেই সবকিছু একটু ভিন্ন ভাবে করতে হয়েছে। হান্নান সাহেব এবং তার ছেলে এমন কথায় খুব আনন্দিত হয়। যাক এই ছেলেমেয়েগুলো ছোটলোকদের মত অশিক্ষিত নয়। তার বুঝে! কিন্তু তাদের কেন এভাবে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসা হলো? এ কথা বলার জন্য কিডন্যাপ করার প্রয়োজন কি? হান্নান সাহেবের ক্ষণিকের আনন্দ আবার মাটি হয়ে যায়! তার নিস্পাপ ছেলেটাও তার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।
এখন আপনারা আমাদের এখানে বন্দি। একজন কথা বলে। এখানে আমরাই রাজা বাদশা! আপনারা প্রজা। আমাদের একটা খায়েশ আছে। আমাদের খায়েশ মানে অধিকার! সেটা মেনে নেওয়াটা আপনাদের কর্তব্য! আমরা আসলে ব্যাপারটা মিউচুয়ালিই করতে চাই! হান্নান সাহেবের ছেলের মাঝে কেমন যেন একটা ভয় হয়! সে বুঝতে পারে খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। সেদিন মেয়েগুলোও বুঝেছিল। একজন সরাসরি তার দিকে তাকায়! ছেলেটা ভয়ে কেঁপে উঠে! আমরা ঠিক করেছি খুব সন্মানের সাথে মিউচুয়াল বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে আপনাকে খাসী বানাব। অর্থাৎ আপনাকে আমরা রসুনের কোয়া ট্রিটমেন্ট দেব! সে দৃশ্য আপনার বাবা বসে বসে দেখবে! আপনি রাজি থাকলে ভালো। না থাকলেও কোন সমস্যা নেই। আমরা যা করার মিউচ্যুয়ালীই করব। কয়েকজন তরুন তরুণী ছেলেটার দিকে এগিয়ে যায়! একই সাথে বাবা এবং ছেলের আর্তনাদের আওয়াজ শোনা যায়!
দুটো গল্পই কাল্পনিক। কোন ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে মিলে গেলে সেটার দায়ভার লেখকের নয়!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:০৫