অপার্থিব। আরিয়ান রিয়াদের তৈরি করা এক পরাবাস্তব জগৎ। জগৎটা অনেকটা ভাঙ্গা আয়নার মত। আয়না ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রতিটা টুকরোয় আবার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে।
বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা আছে লেখক পরাবাস্তববাদী গল্পকার। মেটাফোর, ফ্যান্টাসি, ডার্ক কমেডি তার গল্পের বৈশিষ্ট্য। পরাবাস্তব গল্পের একটা সংজ্ঞাও দেওয়া আছে। “ যা কিছু অসম্ভব অথচ সম্ভাবনার শঙ্কা জাগায় প্রতিনিয়ত, যা কিছু অবাস্তব অথচ বাস্তবের চেয়েও অধিক তাই পরাবাস্তব গল্প।” বুঝাই যাচ্ছে লেখক এক অসম্ভব এবং অবাস্তব ক্যানভাসে সম্ভাবনা এবং বাস্তবের অধিক কিছু আঁকতে চেয়েছেন। এবার অল্প কথায় সে অসম্ভব সম্ভাবনা এবং অবাস্তব কিন্তু বাস্তবের অধিক সে অপার্থিব জগৎ থেকে ঘুরে আসা যাক।
বইটি হাতে নিলে প্রথমেই যা চোখে পড়বে তা হচ্ছে বইয়ের প্রচ্ছদ। লেখক নিজেই এ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন। অপার্থিবর “পা” এর জায়গায় দেখা যাচ্ছে একজন মানুষের পা। এই পা অসলে কাকে পিষ্ট করছে? নাকি অর্থবোধক শব্দে এ এক অর্থহীন পদক্ষেপ? যাইহোক প্রচ্ছদটা নিয়ে ভাবার জায়গা আছে। এবং আমার ভালো লেগেছে।
পরাবাস্তববাদী গল্পকার
বইয়ের গল্পগুলো ছোট ছোট। এবং এক্সপেরিমেন্টাল। প্রতিটা গল্পের ভেতরেই একজন পরাবাস্তববাদী লেখককে আবিষ্কার করা যায়। যিনি অসম্ভব এক প্লট নির্মান করে অবাস্তব সব ব্যাখ্যার অতীত চরিত্র নিয়ে কিছু একটা বুঝানোর এবং বুঝবার চেষ্টা করেছেন। এবং একই কায়দায়, একই ভঙ্গিমায় একের পর এক গল্প বলে ফেলা হয়েছে। একটানে গল্পগুলো পড়ে ফেললে মনে হতে পারে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র বা প্লটের এক অভিন্ন গল্প পড়লাম। যেখানে পরাবাস্তব গল্পই হতে হবে এমন এক সংকল্প লেখকের ছিল। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে ঘাড় ধরে গল্পের মোড় পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়েছে শুধুমাত্র পরাবাস্তব আবহ তৈরি করার জন্যই গল্পে ট্যুইস্ট আরোপ করা হয়েছে। লেখকের স্বতঃস্ফূর্ততার বদলে দেখা মিলে পরিকল্পিত হস্তক্ষেপ যার ছাপ বেশ কিছু গল্পে রয়েছে। কিছু কিছু গল্প অনুবাদের মত মনে হয়েছে।
তবে এসব ব্যাপার অগ্রাহ্য করে গল্পের গভীরে ডুব দিতে পারলে দেখা মিলবে এমন কিছুর যা হয় পাঠককে ভাবাবে নাহয় ধাক্কা মেরে গল্প থেকে বের করে দিবে!
মেটাফোর
উদ্ভট প্লট। অ্যাবসার্ড সব ঘটনা। কিন্তু তার ভেতরেই প্রতিফলিত হয় মানুষের যাপিত জীবন। তা না হয়ে অবশ্য উপায় নেই। কারন গল্পগুলো মূলত মানুষ নিয়েই। মানুষের মনের ভেতর অন্ধকার ঘরে ঘাপটি মেরে থাকা প্রবৃত্তিগুলো কিভাবে মানুষের যাপিত জীবন, অবচেতন মন এবং চেতন মনের দ্বন্দ্ব, সীমাবদ্ধতা, সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার চেষ্টা, মানুষের সাথে মানুষের বিভিন্ন রকম সম্পর্কের সাথে বিক্রিয়া করে সেসবের বিভিন্ন সমীকরনের দেখা মিলবে অপার্থিবর পরতে পরতে। এবং তা করতে গিয়ে লেখক এমন কিছু মেটাফোরের জন্ম দিয়েছে যা একই সাথে উপভোগ্য এবং দূর্বোধ্য।
ডার্ক কমেডি এবং প্যারাডক্স
মানুষের মুক্তি নেই। তার জীবন থেকে। বেঁচে থাকা থেকে। মৃত্যু থেকে। মানুষের কোন ইশ্বর নেই। সত্য নেই। মিথ্যা নেই। মানুষের বাস সত্য এবং মিথ্যার মাঝখানে এমন এক জগতে যেখানে মানুষই তার ইশ্বর। মানুষই অদৃষ্ট। মানুষ যখন মানুষের মুখোমুখি হয় তখন সে ইশ্বর এবং অদৃষ্টের মুখোমুখি হয়। নগ্ন আলোয় অন্ধকারের লেনদেন করে করে মানুষগুলো হয়ে উঠে জীবন্ত প্যারাডক্স।
এমন কিছুই মনে হয় লেখক তার অপার্থিব জগতের গল্পগুলোয় বলতে চেয়েছেন। তবে এমনও হতে পারে হয়তো তিনি এমন কিছুই বলতে চান নাই। আমি ভেবে নিয়েছি।
চা পানের সময় হয়েছে। সুতরাং রিভিউ ক্ষতম!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫