somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: প্রতিশোধ-পর্ব ১

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক অচিন দেশে গহীন বনের ধারে ছিল এক বিদ্যাচার্যের কুটির। আচার্য্য তার একমাত্র কন্যাসহ সেই ছায়াময় শান্তির নীড়ে মনের আনন্দে বাস করতেন। কন্যার নাম ছিল বিভাবতী প্রজ্ঞা। একদিন প্রাতে বিভাবতী কাঠ কুড়াতে গেল বনের ভিতর। মনের আনন্দে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে বনফুল কুড়িয়ে আচঁলে ভরেছিল আর ছোট ছোট শুকনো ডালপালা একত্র করছিল সে। সুকন্ঠি বিভার আনমনা সুছন্দ সুললিত কিন্নরি বনের গহিনে অপার্থিব শান্তির আবহ তৈরি করছিল......

“তিমিরবিভাবরী কাটে কেমনে
জীর্ণ ভবনে, শূন্য জীবনে—
হৃ্দয় শুকাইল প্রেম বিহনে।।
গহন আধাঁর কবে পুলকে পূর্ণ হবে
ওহে আনন্দময়, তোমার বীণারবে—
পশিবে পরানে তব সুগন্ধ বসন্তপবনে।।“

গানের শেষে হঠাৎ কে যেন উদাত্ত কন্ঠে বলে উঠল, “--হে অনিন্দিতা”

--“তোমারি মধুর রূপে ভরেছ ভুবন—
মুগ্ধ নয়ন মম, পুলকিত মোহিত মন” ।।

হতবাক বিভা পিছনে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটা ব্যাঙ একটা কাঠের গুড়ির উপর দাঁড়িয়ে জ্বলজ্বলে চোখে চেয়ে আছে। আশেপাশে কাউকে না দেখতে পেয়ে খানিকটা ভয়ই পেল ও। আবার কে যেন কথা কয়ে উঠল।

“মেয়ে, তুমি ভয় পেও না। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।“

বিভা অবাক হয়ে দেখে ব্যাঙটাই কথা বলছে। ব্যাঙ বলে চলল, “আমি তোমাকে অনেক দিন ধরে এই বনে দেখছি, তোমার গান শুনেছি—যত দেখছি ততই মুগ্ধ হয়েছি। তুমি ভয় পাবে বলে এত দিন কিছু বলিনি। আজ আর নিজেকে রুখতে পারলাম না।“

বিস্ময়ে বিহবল বিভা ভয় ভুলে দুইপা এগিয়ে গিয়ে বলল, “তুমি কথা বলতে পার? এটা কি করে সম্ভব?”

“আমি আসলে ব্যাঙ নই। আমি রাজার একজন সভাকবি, আমার নাম হরিধারা পুজারি। আমার এক সামান্য ভুলের কারনে আমার আজ এই দশা।“ ব্যাঙের আকুল দীর্ঘশ্বাস বিভার প্রানের কোথায় যেন বেদনার মত বেজে গেল।

আর কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বিভা শুধাল, “কি ভুল করেছিলে তুমি? কি করে এমন হল?”

ব্যাঙ ছলছল নয়নে বলে চলল তার হৃদয়বিদারক গল্প।

“আমি তো আগেই বলেছি, আমি রাজদরবারে কবিতা পড়ি—রাজ পরিবারের স্তুতি গাই। অপরূপা রাজকন্যা আদিতি আমার কবিতা শুনে আমার প্রেমে পরে। সেকি ঘোর প্রেম--যেন অন্ধ রাহুপ্রায়। আমার বিশ্বচরাচর আদিতিতে লুপ্ত— আর আদিতির ভালবাসা আর বিশ্বাস ছিল আকাশস্পর্শী। কিন্ত বিধিবাম। আমি মনের ভুলে একদিন আমার এক পুরান রচনা আবৃতি করছিলাম—সেটা ছিল পাশের দেশের রাজকন্যা মীরার স্তুতিকাব্য—তার রাস্ট্রীয় ভ্রমনের প্রাক্কালে রাজনের নির্দেশে রচিত। সে কবিতার জন্য রাজা এবং রাজকন্যা মীরা দুজনেই আমার ভূয়সী প্রশংসা করে অনেক ঈনাম দিয়েছিলেম। গর্বিত আমি তাই অনেক আবেগে উদাত্ত কন্ঠে আবৃতি করছিলাম। আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন অদিতি, আমি তা জানতাম না। হঠাৎ আমার সামনে এসে শুধালেন, “কার লাগি এ রচনা তোমার?”

হঠাৎ কেন যেন ভয় পেয়ে আমি বাকহারা হয়ে গেলাম। রাজকন্যা বললেন

“কেন আজ” -- “বিস্মিত কবি বিহবল প্রায়, আনন্দে কথা খুঁজে না পায়?”

আমি নিতান্ত অর্বাচীনের মত মাথা নত করে দুরুদুরু বুকে অকারন ভয়ে বললাম, “এ চরণকটি আপনার চরনতলে নিবেদিত অধম পুজারির অর্ঘ অপরূপা...”

ক্রোধান্বিত কন্যা দারুন রোষে ফুসে উঠলেন, “ধিক কবি! মিথ্যাভাষণে রুচি হল কি করে? যে প্রেমের সদীপ্ত ধ্বজা উড়িয়ে ছিলে একদিন, আজ তাকে একি অপমান? কেন মীরার স্তুতি আমারে কর নিবেদন? আজ আমি তোমায় দিলাম অভিশাপ। অকিঞ্চিত ব্যাঙ হয়ে কাটবে তোমার কাল বনের মাঝে। যে উদাত্ত কন্ঠ লয়ে এত গর্ব তব, ব্যাঙের স্বরে আজ থেকে আবৃতি কর প্রান খুলে। শুধুমাত্র প্রকৃত প্রেমিকার চুম্বনে হবে শাপমুক্তি। ফিরে পাবে আপনার আসল অবয়ব।“

“আমি কোন প্রতিবাদ করার আগেই অশ্রুসিক্ত রাজকন্যা মিলিয়ে গেলেন স্তব্ধ নিলাম্বরে। তার ভুল আমি ভাঙাবার সু্যোগই পেলাম না। ভগ্নমন নিয়ে অদিতি চিরদিনের জন্য মিলিয়ে গেলেন, আত্মহুতি দিলেন প্রেমের কারনে। তার চোখের একফোটা জল যেইমাত্র ভূমি স্পর্শ করল অম্ নি আমি ব্যাঙ হয়ে চলে এলাম এই বনের মাঝে।“

---------চলবে----------
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×