কথাটা তাবলীগের অনেক বয়ানের মুল আলোচ্য বিষয় : মাখলুকের( সৃষ্টির) উপর থেকে এক্কীন হটিয়ে পুরাপুরি খালেকের (স্রষ্টার) উপর এক্কীন করতে পারলে, আপনি মাখলুকের সাহায্য ছাড়াই চলতে পারবেন । কথাটা খুবই চিত্তাকর্ষক, তবে বাস্তব সম্মত নয় । অবশ্য যারা এই কথা বা মতবাদের প্রচার করেন তারা বাস্তবের খুব একটা ধার ধারেন না । যাই হোক মুল আলোচনায় আসা যাক । উম্মতের শ্রেষ্ঠতম পুরুষ আবু বকর রা: খলিফা হয়ে কাপড়ে গাট্টি নিয়ে বাজারে রওনা হলেন ব্যবসার উদ্দেশ্যে । ওমর রা: বললেন আপনি যদি ব্যবসা কর্মে ব্যস্ত থাকেন তবে খেলাফত চলবে কি করে ? আবু বকর রা: বললেন তাহলে আমার সংসার চলবে কি করে ? প্রশ্ন হচ্ছে আবু বকর রা: কি ব্যবসার উপর থেকে এক্কীন হটাতে পারেন নি ? তাবলীগি ভাইদের কথা মত ব্যাবসার উপর থেকে এক্কীন হটাতে পারলে তো আল্লাহ পাক ব্যবসা ছাড়াই পালবেন !
ক্ষিদার কারণে রসুল পেটে পাথর বেধেছেন । প্রশ্ন আসবে রসুল কি খাবারের উপর থেকে এক্কীন হটাতে পারেন নি ? নাকি ক্ষিদা সমস্যা দূর করতে বা কিছুটা লাঘব করতে পাথরে উপর এক্কীন করেছেন ? পবিত্র কুরআন শরীফে হযরত মুসা আ: এর ঘটনা আছে : 'মুসা তোমার হাতে কি' এর উত্তরে তিনি লাঠি দিয়ে কি কি কাজ করেন ( বকরি চরানো , পাতা সংগ্রহ ) এর এক ফিরিস্তি দিয়ে বসেন । লক্ষ করার বিষয় হচ্ছে উনি তো মাখলুক লাঠি দিয়েই কাজ সমাধা করেছেন । মাখলুক ছাড়া করেন নি । তবে কি ওনার এক্কীন সহিহ ছিল না ? নবী রসুলগনের ঘটনাগুলো দেখলে এ কথা স্পষ্ট হয় এসব বস্তু ব্যবহার করে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কাজ কর্ম সম্পাদন করাই সুন্নত বা আদর্শ পদ্ধতি । বস্তু ছাড়া , মাখলুক বাদ দিয়ে বা আসবাব ত্যাগ করে কাজ করা নবীগণের আদর্শ না ।
এক্ষেত্রে একটা বিষয়ে কেউ কেউ ভুল বুঝাবুঝির শিকার হয়ে যান । সেটা হচ্ছে নবীদের মুজিজা বা মোজেজা । কিছু ব্যতিক্রম ধর্মী ঘটনা আল্লাহ তা'লা নবীদের মাধ্যমে প্রকাশ করেন । মজার বিষয় হচ্ছে এগুলো নবীদের এখতিয়ার ভুক্ত কোন বিষয় না । অর্থাৎ বিষয়গুলো এমন না যে নবী চাইলেই এগুলো প্রকাশ হবে আর না চাইলে প্রকাশ হবে না । বা বিষয় গুলো সংগঠিত হওয়া বা না হওয়া নবীদের ইচ্ছা ধীন কোন বিষয় না । আরো মজার বিষয় যে এগুলোর বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু জানানো না হলে , নবী নিজেও জানেন না কখন এমন কিছু প্রকাশিত হবে বা হবে না ।অর্থাৎ উলামারা বলেন হযোত মুসা আ: লাঠি ছাড়লেন, সেটা সাপ হল , কিন্তু সেটা আগে থেকে নবীর জানা ছিল না ।
প্রকৃতির স্বাভাবিক রীতি বিরূদ্ধ কোন বিষয় নবীদের থেকে প্রকাশ পাওয়া কে মুজিজা বলে । আর সেটা কোন দ্বীনদার ভাল মুসলমান থেকে প্রকাশ পেলে সেটাকে কারামত বলে । আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্কীদা " কারামাতুল আউলিয়া হক্কুুন " অর্থাৎ ওলীদের কারামত সত্য । মুজিজার মত কারামত ও ওলীদের এখতিয়ারভুক্ত কোন বিষয় না । অর্থা কোন ওলী পানির উপর দিয়ে পার হয়ে গেলেন - এটা ওনার ইচ্ছাধীন কোন বিষয় না । কোন বিশেষ অবস্হায় আল্লাহর ইচ্ছায় এরূপ ঘটেছে বা ঘটতে পারে । তার মানে এটা না যে ওলী চাইলেই পানির উপর দিয়ে হেটে চলে যেতে পারবেন, বা সবসময় তিনি পানির উপর দিয়ে হেটে হেটে চলাচল করবেন ।
আলা ইবনে হাদরামিন রা: বাহরাইন অভিযানে ঘোড়ার বাহিনী নিয়ে পানির উপর দিয়ে চলে গেছেন । এটা ছিল কারামত । এবং সেটা ছিল একটা বিশেষ অবস্হায় এবং আল্লাহর ইচ্ছায় । আলা ইবনে হাদরামিন রা: এর ইচ্ছা বা পরিকল্পনাধীন না । অর্জিত কোন বিষয় -ও না । বাহরাইন থেকে ফিরার পথে কিন্তু উনি পানির উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে আসেন নি । অথচ একবার পানি পার হওয়ার পর এক্কীন তো আরো বেড়ে যাবার কথা । সুতরাং পানি পার হওয়াটা এক্কীনের সাথে সম্পর্ক না , আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল । আল্লাহ যখন চান তখনই হবে । এর মানে এটা না যে যে সব সাহাবা নৌকা দিয়ে বিভিন্ন স্হানে নদী পার হয়েছেন তাদের এক্কীন কম ছিল !
মজার বিষয় এরকম বিভিন্ন অলৌকিক বিষয় যেমন নবী -ওলীদের থেকে প্রকাশ পায় তেমনি মন্দ লোকদের থেকেও প্রকাশ পায় ! কোন মন্দ লোকের থেকে প্রকাশ পেলে সেটাকে কারামত বলে না , সেটাকে বলা হয় ইস্তিদরাজ বা সাময়িক অবকাশ । যেমন ফিরআউনের নির্দেশে নীল নদের পানি প্রবাহিত হওয়া বা কেয়ামত পর্যন্ত শয়তানের হায়াত পাওয়া - এসবই ইস্তিদরাজের উদাহরণ । শরীয়তের খেলাফ চলে এমন ভন্দ পীরদের কাছ থেকে অনেক অলৌকিক বিষয় সংগঠিত হওয়ার কথা অনেক সময় শুনা যায় । বেশীর ভাগ সময়ই এগুলো বানানো ও মিথ্যা হয়ে থাকে, নিছক মার্কেটিং এর উদ্দেশ্যে প্রচারিত । আবার কোন কোন সময় 'জিন হাসিল' করে অনেক বিভিন্ন কাজ করে থাকে । উল্লেখ্য এই ' জিন হাসিল' কোন বুজুর্গীর বিষয় না , আল্লাহর নৈকট্যের ও কোন উপকরণ বা কারন না । কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে চেষ্টা তদবীর করলে একজন বেনামাজীও 'জিন হাসিল' করতে পারবে । অথচ হাদীসে আছে যার নামাজ নাই তার ধর্ম নাই !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১০