somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহানশাহ থেকে গোলাম আযম................//BBC Bangla//-

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোলাম আযমের জন্ম ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর ঢাকার পুরনো অংশে লক্ষ্মীবাজার এলাকায় নানার বাড়িতে।
তাঁর দাদার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে।ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের কাছে গোলাম আযম এখনও শাহানশাহ ডাকনামে পরিচিত।
তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী জানিয়েছেন, তাঁর বাবার শিক্ষাজীবনের বড় অংশ কেটেছে ঢাকায়।
তবে গোলাম আযম অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত গ্রামের স্কুলে পড়ার পর ঢাকায় এসে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্সে ভর্তি হলেও তা শেষ করতে পারেননি।
মি. আজমী বলেছেন, 'গোলাম আযম তখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং ডাকসু’র জিএস থাকার কারণে অনার্স শেষ করতে না পেরে ডিগ্রি পাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন'।
গোলাম আযম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু'র জিএস ছিলেন ১৯৪৯ সালে।
তখন ডাকসু'র ভিপি ছিলেন অরবিন্দ বোস।
সে সময় ছাত্রদের পক্ষ থেকে ঢাকা সফররত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বাংলা ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন গোলাম আযম।
১৯৭১ সালে গণহত্যা শুরুর সাথে সাথে গোলাম আযম পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে দেখা করে সেই গণহত্যার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
শাহরিয়ার কবির, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবীতে আন্দোলনের নেতা
তাঁর এই ভূমিকাকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয় জামায়াতের পক্ষ থেকে।
সে সেময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় বামপন্থী রাজনীতিক বদরউদ্দিন উমর পরে এ নিয়ে গবেষণাও করেছেন।
তিনি বলেছেন, 'হিন্দু কোন ছাত্রকে দিয়ে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের কাছের স্মারকলিপি পেশ করা হলে ,তার ভিন্ন ব্যাখ্যা হতে পারে। সে কারণে তখন ডাকসু'র ভিপি অরবিন্দ বোসকে বাদ দিয়ে জিএস গোলাম আযমকে দিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছিল'। বদরউদ্দিন উমরের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার বিষয়টি ভুল ছিল বলেও গোলাম আযম পরে মন্তব্য করেছিলেন।
কিন্তু জামায়াতের দাবি, এটি অপপ্রচার।
কয়েক বছরের কর্মজীবন:
গোলাম আযম কর্মজীবনের শুরু ১৯৫১ সালে, রংপুরের কারমাইকেল কলেজে শিক্ষক হিসেবে।
সেই সময়ের তাঁর ছাত্র আনিসুল হক, রংপুরের অন্য একটি কলেজের সাবেক শিক্ষক।
মি. হক বলেছেন, শিক্ষক থাকার সময় গোলাম আযম ক্লাসের বাইরে ছাত্রদের তেমন সম্পর্ক রাখতেন না।

বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যার কয়েকজন শিকার। ফাইল চিত্র।
তখন রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু তাবলীগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে বক্তব্য তুলে ধরতেন।
তাবলীগ জামাত থেকে রাজনীতিতে:
তবে শিক্ষকতা করার সময়ই এক পর্যায়ে গোলাম আযম, সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন ১৯৫৪ সালে।
আর ১৯৫৬ সালে চাকুরী ছেড়ে সরাসরি জামায়াতের রাজনীতিতে নেমে পড়েন।
দলটির সমমনা একজন ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আব্দুল হান্নান বলছিলেন, গোলাম আযম প্রথমে তমুদ্দন মজলিশের সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরে তাবলীগ জামাতে সক্রিয় হয়েছিলেন।
অবশ্য জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সাধারণ সম্পাদক হয়ে মুল নেতৃত্বে এসেছিলেন। গোলাম আযম প্রথম, জামায়াতের আমির হয়েছিলেন ৬৯ সালে।
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম ৭১এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ দিকে ২২শে নভেম্বর ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান যান।
১৯৭৮ সালে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকায় আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে। তবে তিনি আর ফিরে যাননি।
সমঝোতা বা অনুকূল পরিবেশের সুযোগ নিয়েই জামায়াত গোলাম আযমকে প্রকাশ্যে আমির ঘোষণা করেছিল।
আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী, গোলাম আযমের বড় ছেলে
স্বাধীন বাংলাদেশে গোলাম আযম ১৯৮১ সালে প্রথম জনসমক্ষে আসেন।
ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে নিহত ফিলিস্তিনিদের জন্য আয়োজিত গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে গিয়ে সেখানেই প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানিয়েছেন।
প্রায় এক দশক পর ৯১ সালের ২৯শে ডিসেম্বর যখন গোলাম আযমকে জামায়াতের প্রকাশ্য আমির ঘোষণা করা হয়, তখন জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।
সেই আন্দোলনের অন্যতম একজন নেতা শাহরিয়ার কবির বলছিলেন, ৯২ সালের ২৬শে মার্চ গণআদালত করে গোলাম আযমসহ কয়েকজনের প্রতীকী বিচারও করা হয়েছিল।
মি. কবির বলেছেন, ’৭১ সালে গণহত্যা শুরুর সাথে সাথে গোলাম আযম পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সাথে দেখা করে সেই গণহত্যার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
তাদের সহযোগিতা করার জন্য মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী পার্টির সাথে মিলে গোলাম আযম প্রথমে শান্তি কমিটি গঠন করে মিছিল সমাবেশ করেছিলেন।
এর ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী সরাসরি আলবদর এবং রাজাকার নামে দু’টি বাহিনী গঠন করেছিল।’
আন্দোলনের মুখে নাগরিকত্বের প্রশ্নে গোলাম আযমকে জেলে যেতে হয়েছিল।
জেনারেল এরশাদের পতনের পর ৯১'র নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য অন্য দলের সমর্থন প্রয়োজন ছিল, আর সমর্থনের বিনিময়ে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে এক অনানুষ্ঠানিক সমঝোতা হয়।
আব্দুল্লাহ-হিল আমান আজমী বলেছেন, 'এই সমঝোতা বা অনুকূল পরিবেশের সুযোগ নিয়েই জামায়াত গোলাম আযমকে প্রকাশ্যে আমির ঘোষণা করে। কিন্তু একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের মুখে সরকার বাধ্য হয়ে ৯২ সালে মার্চ মাসে গোলাম আযমকে গ্রেফতার করেছিল। সেই গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বিদেশী নাগরিক হয়ে দেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল'।
মি. আজমী আরও জানিয়েছেন, নাগরিকত্বের প্রশ্নে হাইকোর্টে জামায়াত রিট মামলা করে এর পক্ষে রায় পেয়েছিল।
কিন্তু তখন সরকার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছিল।
সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগ থেকে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়ে ১৬ মাস জেল খাটার পর গোলাম বেরিয়ে এসেছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে গোপনে এবং প্রকাশ্যে জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব পালন করে গোলাম আযম অবসর যান ২০০০ সালে।
এখন ৯১ বছর বয়সে এসে মুক্তিযুদ্ধে মানবতা-বিরোধী অপরাধে বিচারের মুখোমুখি হয়ে ২০১২ সালের ১১ ই জানুয়ারি থেকে তিনি গ্রেফতার রয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:১৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×