এ পর্বে আমি বিজনেস ও কর্পোরেট ব্লগিং নিয়ে আলোচনা করবো। যারা কষ্ট করে পড়ছেন ও কমেন্ট করছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
কর্পোরেট ব্লগ এর সহজ সংজ্ঞা বোধহয় দেয়া যায় এভাবেঃ
কর্পোরেশন বা কর্পোরেট হাউস দ্বারা পরিচালিত অথবা স্পন্সরকৃত ব্লগ যেগুলো ঐ কোম্পানির পন্য ও সেবা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে এবং কোম্পানি সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য প্রদান করে।
সুত্রঃ Click This Link
বিজনেস ব্লগকে কর্পোরেট ব্লগের কাছাকাছি হিসেবে ধরা গেলেও কিছুটা অন্যরকম হতে পারে। আপনার হয়তো ছোট কোন ব্যবসা রয়েছে এবং সেটাকে আপনি ব্লগের মাধ্যমে প্রমোট করছেন।
যাই হোক ব্লগ নিয়ে এখন পর্যন্ত একাডেমীক গবেষণা বা বইপত্র খুব বেশি লেখা হয়নি। তাই সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা পাওয়া কঠিন। আমি নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে দেয়ার চেষ্টা করছি এবং যখনই সম্ভব সুত্র উল্লেখ করছি।
কর্পোরেট ব্লগঃ গুগোল ও মাইক্রোসফটের ব্লগ খুজতে গিয়ে দেখলাম যে মাইক্রোসফটের ২০০ এর বেশি ব্লগ রয়েছে যা কোম্পানির কর্মীরা পরিচালনা করে থাকে। পুরো লিস্ট পাবেন এখানেঃ Click This Link
আর গুগোলের পরিচালিত ব্লগের তালিকা পাবেন এখানঃ http://googleblog.blogspot.com/
এ দুটো কোম্পানির কথা তুলে ধরলাম কারণ এ দুটো খুবই বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং ব্লগের মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবহারকারী ও ভোক্তাদের বিভিন্ন আপডেট দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রশ্ন করার জন্য ব্লগ খুবই সহজ মাধ্যম। একজন ব্যবহারকারীর প্রশ্নের মাধ্যমে আরও অনেকে সে বিষয়ে জানতে পারছেন। মাইক্রোসফট আর গুগোল এত বড় কোম্পানি যে তারা তাদের পন্য ব্লগের মাধ্যমে বিক্রি করার চেষ্টা করে না। তবে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ ভাবে বিক্রি বাড়ানোতে ব্লগের অবদান থাকে বলেই এত কর্মী দিয়ে ব্লগ চালায় তারা। অবশ্য এসব ব্লগে নিয়মিত পোস্ট করা হয় না।
বিজনেস ব্লগঃ ধরা যাক আপনার একটি বুটিকের দোকান রয়েছে এবং আপনি এটি অনলাইনে প্রমোট করতে চান। সেক্ষেত্রে ব্লগ অনেক অবদান রাখতে পারে এমনকি ফেইসবুকের থেকেও বেশি। আপনি একটি ওয়েবসাইট খুলুন আপনার দোকানের উপর এবং এরপর সেখানে একটি ব্লগ রাখুন। সেই ব্লগে সপ্তাহে একটি করে আর্টিকেল রাখুন, কিছু ছবি ও ভিডিও দিন। দেখবেন অনেকেই আপনার ব্লগে আসছে এবং বিভিন্ন মন্তব্য করছে। আমার মতে ব্যবসার ধরন যাই হোক না কেন প্রতিটি এসএমই (SME) প্রতিষ্ঠানের একটি করে ব্লগ থাকা দরকার।
কিছু পরিসংখ্যানঃ বাংলাদেশে ব্লগ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা বা সার্ভে পরিচালনা করা হয় না। তাই বাংলাদেশ ভিত্তিক কোন পরিসংখ্যানের কথা আমার জানা নেই। যে সব সংখ্যা দিচ্ছি সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক।
১। আমেরিকার ৮১% লোক ব্লগে প্রদত্ত তথ্যের উপর আস্থা রাখেন বা বিশ্বাস করেন।
২। যেসব ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ব্লগ রয়েছে তারা ১২৬% বেশী বিজনেস লিড পান ব্লগ না থাকা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের তুলনায়। বিজনেস লিড মানেই কিন্তু নতুন কাস্টমার এবং নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা।
৩। যেসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ব্লগ আছে সেসব ওয়েবসাইট গুগোলের মত সার্চ ইঞ্জিনে ৪৩৪% বেশী পেইজ ইনডেক্স করা থাকে। (যারা সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে নুন্যতম ধারণা রাখেন তাদেরকে এ বিষয়টির গুরুত্ব নিয়ে বোঝানোর জন্য ১ টি শব্দও ব্যয় করার দরকার আছে বলে মনে হয় না)
৪। ৬১% আমেরিকান ভোক্তা ব্লগ পোস্ট পড়ে একটি পন্য কেনার ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
৫। ৭০% ক্রেতা বিজ্ঞাপনের থেকে ইন্টারনেটের কন্টেন্ট পড়ে একটি কোম্পানি সম্পর্কে বেশী জানতে পারেন।
সুত্রঃ Click This Link
একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্লগিং এর উপযোগিতা অনেক ধরনের হতে পারে। ক্রেতাদের পন্য সম্পর্কে জানাতে, ক্রেতাদের অভিযোগ শুনতে এবং সর্বোপরি ক্রেতাদের আরও বেশী সেবা দিতে ব্লগের জুড়ি নেই। ব্লগে আপনি লেখা বা টেক্সটের পাশাপাশি ছবি, ভিডিও ও অডিও দিতে পারেন। আর বাংলাদেশেও আজকাল আমরা অনেকেই কিছু কেনার আগে সে পন্য সম্পর্কে সার্চ করে দেখি। সেক্ষেত্রে বাংলা ব্লগ বিশেষ করে সামু ব্লগের তথ্য আগে আসে অনেক ক্ষেত্রেই। তাই ব্লগে সক্রিয় হওয়া বা নিজের প্রতিষ্ঠানের একটি ব্লগ খোলা দরকার।
ফেইসবুকের থেকেও ব্লগকে গুরুত্ব দিচ্ছি দেখে অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন কারণ আমাদের দেশে এখন ফেইসবুকের জয়জয়কার। অনেকেই ফেইসবুক কমার্স বা এফকমার্স এর মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। আসলে ফেইসবুক ও ব্লগ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং পরিপূরক। তবে ব্লগের সুবিধা দুটো বেশী বলে আমার মনে হয়েছে। প্রথমত, গুগোল সার্চে ফেইসবুকের স্ট্যাটাসের থেকে ব্লগের পোস্ট বেশী পরিমাণে আসে বলে আমার মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ত ফেইসবুকের পোস্ট একসময় হারিয়ে যায় এবং খুজতে অনেক সময় লাগে। আর ব্লগে ফেইসবুকের লিংক এবং ফেইসবুকে ব্লগের লিংক দিয়ে আপনি দুটির শক্তিই কাজে লাগাতে পারেন।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কর্পোরেট ব্লগিং এবং বিজনেস ব্লগিং এর কালচার খুব বেশী চালু হয়নি। গ্রামীণ ফোনের ব্লগ নেই, বাংলাদেশ সরকারের ব্লগ নেই, প্রথম আলো বা কালের কণ্ঠের ব্লগ নেই। আমার মতে ঢাকা শহরের অন্তত ১,০০০ প্রতিষ্ঠানের ব্লগ থাকা উচিৎ- হাইস্কুল, কলেজ, বড় দোকান, রেস্টুরেন্ট, ট্রাভেল এজেন্সি, এনজিও, গার্মেন্টস সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের। তেমনটা হলে অনেক ব্লগারের কর্মসংস্থান হবে- ফুল টাইম না হোক পার্ট টাইম। এ দিন খুব বেশী দূরে নয় বলেই আমার বিশ্বাস। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও তাদের অধীনস্থ দপ্তর গুলো ব্লগ চালু করলেই বোধহয় ৫০০ এর মত ব্লগ লাগবে। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর জন্য ১০০ ব্লগ তো লাগবেই।
বাংলাদেশে রপ্তানি মুখী এবং সেবা খাতের কোম্পানিগুলোর ব্লগ তৈরি করা অত্যাবশ্যক। বিশেষত ইংরেজিতে কন্টেন্ট এর দারুণ অভাব। এ ব্যপারে ট্রেড এ্যাসোসিয়েশন বা ব্যবসা সমিতি গুলো এগিয়ে আসতে পারে। ব্লগে অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কাজ করছেন, অনেকে আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা অংশীদার। এ ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ পর্ব এখানেই শেষ। পরবর্তী পর্বে পেশাদার ব্লগিং বা Professional Blogging নিয়ে লেখার আশা রাখি।