somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টান টান উত্তেজনাময় বৈজ্ঞানীক কল্পকাহীনিঃ আইনস্টাইন বনাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনস্টাইন আংকেলের সাথে আমার খাতির বেশ ভালো। আমি পদার্থ বিজ্ঞানের আগা মাথা কিছুই বুঝি না। তারপরেও নতুন কিছু আবিষ্কার করলে আংকেল আমাকে সব বোঝানোর চেষ্টা করেন।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকে না। তবে যেখানে মাথা নাড়ানো দরকার সেখানে মাথা নাড়াই, যেখানে চোখ সরু করা দরকার সেখানে চোখ সরু করি।
বেশিরভাগ সময়ই এসব করতে গিয়ে প্যাচ লাগিয়ে দেই। যেমন যে যায়গায় এসে চোখ সরু করার কথা সেখানে এসে দেখা যায় আমি "হে হে" করে হেসে দিয়েছি।
আমার বোকামী দেখে আইন্সটাইন আংকেল বেশি রাগ করেন না। তবে মাঝে মাঝে ভ্যাংচি কাটেন এভাবেঃ



আংকেল হাসিখুশি মানুষ। রসিকও বটে।
এতো জটিল জটিল জিনিষপত্র নিয়ে গবেষণা করেন, কিন্তু তাকে খুব একটা চিন্তিত দেখা যায়না। তবে কিছুদিন যাবত উনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি মূর্খ ছেলে, তাকে তার চিন্তিত থাকার কারণ জিজ্ঞেস করিনি সাহস করে। উনি বিজ্ঞানী মানুষ। চিন্তা ভাবনা তো করবেনই। উনি না করলে করবেটা কে?
ভেবেছিলাম এসব নিয়ে উনাকে ঘাটাবো টাটাবো না। কিন্তু একদিন সন্ধ্যায় আইন্সটাইন নিজেই আমাকে ডাকলেন, - "রাজি, একটা সাংঘাতিক জিনিষ আবিষ্কার করে ফেলেছি মনে হয় রে!"
আমি অত্যান্ত কৌতুহলী ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করলাম, - "কী? কী?"
হালকা উদাস গলায় আইন্সটাইন আংকেল বললেন, - "সময় ধ্রুব নয় হে বালক। এটা একটা আপেক্ষিক ব্যাপার।"
আমি কিছুই বুঝলাম না। তারপরেও বললাম, "কী সাংঘাতিক! কী সাংঘাতিক!!"
- দাড়া তোকে বুঝাই।
আংকেল খাতা আর কলম নিয়ে আমার সামনে বসলেন।
-ধর দুটি জড় কাঠামো... এর মাঝে একটা স্থির। একটির সাপেক্ষে অন্যটি ধ্রুব বেগে গতিশীল।"
হালকা থামলেন আইনস্টাইন - "কি রে! কিছু বুঝলি?"
আমি কিছুই বুঝলাম না, তারপরেও বললাম,- "ক্লিয়ার। একদম ক্লিয়ার। আপনে বলতে থাকেন।"
- গুড বয়। তাহলে এবার ধর c হচ্ছে আলোর গতি।
আইনস্টাইন আংকেল কিছুক্ষন অংক করলেন। সব শেষে একটা অত্যান্ত জটিল সমীকরণ লিখলেন।
আমি বরাবরের মতোই কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু অনেক জোরে মাথা নাড়ালাম। আমার মাথা নাড়ানো দেখেই হয়তো আইনস্টাইন আংকেল জিজ্ঞেস করলেন "কী বুঝলি বল দেখি!"
খাইছে! এভাবে বিপদে পড়ে যাবো বুঝিনি। আমি আমতা আমতা করা শুরু করলাম।
আমার অবস্থা দেখে আইনস্টাইন আংকেল আবার ভ্যাংচি কাটলেন। তার সেই বিখ্যাত ভ্যাংচি।
তারপর বললেন, - "তুই কিছুই বুঝিসনি গাধা। দাড়া। সহজ করে বলি। ধর, তুই আর আমি জমজ ভাই..."
আমি কপাল কুচকে বললাম - "আপনি আমি যমজ ভাই হতে যাবো কোন দুঃখে?"
- "আরে বলদ ধরে নে না! এখন ধর তুই আলোর কাছাকাছি গতির কোন রকেটে করে পুরো এক বছর মহাশূন্যে চক্কর দিয়ে আসলি। এসে দেখবি আমি বুড়া হয়ে গেছি। কিংবা আমি হয়তো বুড়ো হতে হতে মরে গেছি। আপেক্ষিক সময় তত্ত্বের এটাই হলো মুল কথা।"
আমি সব বুঝে গেছি এমন ভাব করে বললাম, "আপনি তো এমনিতেই বুড়ো। বুড়োরা তো আগে আগে মরবেই। সোজা হিসাব। এখানে আপেক্ষিক ফাপেক্ষিকের কী হলো?"

আইনস্টাইন এবার বিরক্ত হলেন মনে হয় কিছুটা।
- তোর মাথায় কী গোবরও নেই নাকি রে বলদ? এই জিনিষ বুঝিস না ক্যান!"
আইনস্টাইন আমার দিকে হতাশ ভঙ্গিতে তাকালেন এভাবেঃ

আমি লাজুক ভঙ্গিতে হাসলাম।

আইনস্টাইন আংকেল আবার বুঝানো শুরু করলেন। আমি তার এনার্জি দেখে অবাক হলাম। বিজ্ঞানীদের এতো ধৈর্য্য!
- আচ্ছা তোকে সহজ করে বলি শোন"
- আচ্ছা বলেন।
- ধর তুই কোন সুন্দরী মেয়ের পাশে বসে আছিস। তখন তোর এক ঘন্টা সময়কে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আবার যদি আগুনের উপর হাত রাখিস তাহলে পাঁচ মিনিট সময়কে মনে হবে এক ঘন্টা। এটাই হলো আপেক্ষিক সময় তত্ত্ব। এবার বুঝলি?"
আমি চোখে বড় বড় করে বললাম, - "এবার বিষয়টা পুরো ক্লিয়ার। আসলে ঘড়ি নষ্ট থাকবে। এ জন্যই এক ঘন্টাকে মনে হবে পাঁচ মিনিট। আর পাঁচ মিনিটকে মনে হবে এক ঘন্টা। হে হে।"

আমার কথা শুনে গর্জে উঠলেন আইনস্টাইন আংকেল।
"- খামোশ! তোকে আমি আর বুঝাতে পারবো না। আমার দ্বারা তোকে এই জিনিষ বুঝানো সম্ভবও না। তোকে ২০১২ সালে এই জিনিষ বুঝিয়ে দিবেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ৪৮ ঘন্টা যে কতো লম্বা হতে পারে হাড়ে হাড়ে টের পাবি তখন। এখন আমার সামনে থেকে ফুট।"
*********************************************************************

>>> ঘুরে আসতে পারেনঃ
** স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলা সাইন্স ফিকশনঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দা হোম মিনিস্টার
** টান টান উত্তেজনাময় গল্পঃ হিমুর হাতে কয়েকটি নোবেল প্রাইজ

** এক কপি রাখলাম পার্সোনাল ব্লগে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৪২
৫৪টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×