somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উম্মতে মোহাম্মদী কাকে বলে?

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আল্লাহ আদম (আ.) থেকে শুরু করে তার প্রত্যেক নবী-রসুলকে পাঠিয়েছেন একটিমাত্র উদ্দেশ্য দিয়ে তা হলো যার যার জাতির মধ্যে আল্লাহর তওহীদ ও তার দেওয়া জীবনব্যবস্থা, দীন প্রতিষ্ঠা করা। শেষ নবীকে (সা.) পাঠালেন সমস্ত মানবজাতির উপর এই দীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য (কোর’আন-সূরা আল-ফাতাহ-২৮, সূরা আত-তওবা-৩৩, সূরা আস-সফ্-৯)। আমাদের শেষ নবীর (সা.) দায়িত্ব এত বিরাট যে এক জীবনে তা পূর্ণ করে যাওয়া অসম্ভব। তাই তিনি (সা.) এমন একটি জাতি সৃষ্টি করলেন পৃথিবী থেকে তাঁর চলে যাওয়ার পরও যে জাতি তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য তারই মতো সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। এই জাতি হলো তাঁর উম্মাহ-উম্মতে মোহাম্মদী- মোহাম্মদ (সা.) এর জাতি।

বিশ্বনবী (সা.) তাঁর উম্মাহকে পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে তার চলে যাবার পর তিনি যেমন করে সংগ্রাম করে সমস্ত আরবে দীন প্রতিষ্ঠা করে সর্বরকম অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করলেন, ঠিক তেমনি করে বাকি দুনিয়ায় ঐ দীন প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত হবে। ঐটাকে তিনি বললেন ‘আমার সুন্নাহ’; অর্থাৎ আমি সারা জীবন যা করে গেলাম এবং এও বললেন যে, যে আমার এই সুন্নাহ ত্যাগ করবে সে বা তারা আমার কেউ নয়; অর্থাৎ আমার উম্মত নয়। অবশ্যই, কারণ আল্লাহ যে দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে পৃথিবীতে পাঠালেন, যে দায়িত্ব তিনি এক জীবনে পূর্ণ করতে না পারায় এক উম্মাহ সৃষ্টি করে তার উপর অর্পন করে চলে গেলেন, সেই দায়িত্ব যে বা যারা ছেড়ে দেবে-ত্যাগ করবে, তারা নিশ্চয়ই তার কেউ নয়।

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রথম যিনি বিশ্বনবীকে (সা.) রসুল বলে, প্রেরিত বলে স্বীকার করে এই দীনে প্রবেশ করলেন অর্থাৎ আবু বকর (রা.) মুসলিম হয়েই রসুলাল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন- “হে আল্লাহর রসুল! এখন আমার কাজ কী? কর্তব্য কী?” আল্লাহর শেষ নবী (সা.) যে উত্তর দিয়েছিলেন তা আমরা ইতিহাসে ও হাদীসে পাই। তিনি বললেন, “এখন থেকে আমার যে কাজ তোমারও সেই কাজ।” কোনো সন্দেহ নেই যে যদি প্রত্যেকটি মানুষ-যারা ঈমান এনে মহানবীর (সা.) হাতে মুসলিম হয়েছিলেন তারা আবু বকরের (রা.) মতো ঐ প্রশ্ন করতেন তবে তিনি (সা.) প্রত্যেককেই ঐ জবাব দিতেন। “আমার যে কাজ” বলতে তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? তাঁর (সা.) কী কাজ ছিল? তাঁর কাজ তো মাত্র একটা, যে কাজ আল্লাহ তাঁর উপর অর্পণ করেছেন। সেটা হলো সমস্ত রকমের জীবনব্যবস্থা ‘দীন’ পৃথিবীর বুক থেকে অকার্যকর করে দিয়ে এই শেষ দীনকে মানব জীবনে প্রতিষ্ঠা করা।

ইতিহাসে পাচ্ছি, শেষ-ইসলামকে গ্রহণ করার দিনটি থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আবু বকরের (রা.) কাজ একটাই হয়ে গিয়েছিল। সেটা ছিল মহানবীর (সা.) সংগ্রামে তাঁর সাথে থেকে তাঁকে সাহায্য করা। শুধু আবু বকর নয়, যে বা যারা নবীকে (সা.) বিশ্বাস করে মুসলিম হয়েছেন সেই মুহূর্ত থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বা তারা বিশ্বনবীকে (সা.) তাঁর ঐ সংগ্রামে সাহায্য করে গেছেন, তাঁর সুন্নাহ পালন করে গেছেন। আর কেমন সে সাহায্য! স্ত্রী-পুত্র-পরিবার ত্যাগ করে , বাড়ি-ঘর, সম্পত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে , অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে, নির্মম অত্যাচার সহ্য করে , অভিযানে বের হয়ে গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করে এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন বিসর্জন দিয়ে। এই হলো তার উম্মাহ, উম্মতে মোহাম্মদী, তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ পালনকারী জাতি।

উম্মতে মোহাম্মদীর যে অর্থ বললাম, আবু বকর (রা.) সহ সমস্ত সাহাবারা যে সেই অর্থই বুঝেছিলেন; বিশ্বনবী (সা.) যে সেই অর্থই তাদের বুঝিয়েছিলেন তার অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে রসুলাল্লাহর (সা.) পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর ৬০/৭০ বৎসর পর্যন্ত তাঁর উম্মাহর কার্যাবলী। এ ইতিহাস অস্বীকার করার কারো উপায় নেই যে নবী করিমের (সা.) পর তাঁর ঐ উম্মাহ বৃহত্তর ক্ষেত্রে অর্থাৎ আরবের বাইরে তাঁর ঐ সংগ্রাম ছড়িয়ে দিলো এবং পৃথিবীর একটা বিরাট অংশে এই দীন প্রতিষ্ঠা করল এবং মানবজীবনে শান্তি আনলো। আমি উম্মতে মোহাম্মদীর যে অর্থ-সংজ্ঞা করছি তা যদি ভুল হয়ে থাকে তবে ঐ উম্মাহর ঐ কাজের আর মাত্র দু’টি অর্থ হতে পারে। সে দু’টি হচ্ছে- ক) অস্ত্রের জোরে পৃথিবীর মানুষকে ধর্মান্তরিত করা। এটা হয়ে থাকলে আল্লার বাণী- “বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা নিষিদ্ধ” (কোর’আন- সূরা আল-বাকারা-২৫৬)- এর অর্থ আল্লাহর নবীও (সা.) বোঝেন নি, তাঁর সাহাবীরাও বোঝেন নি বা অস্বীকার করেছেন (নাউযুবিল্লাহ)। আর তা হলে অন্ততঃ ঐ সময়ের জন্য আটলান্টিকের তীর থেকে চীনের সীমান্ত আর উরাল পর্বত থেকে ভারত মহাসাগর এই ভূখণ্ডে একটাও অমুসলিম থাকতো না। কিন্তু ইতিহাস তা নয়। খ) পর-রাজ্য, পর-সম্পদ লোভে আলেকজাণ্ডার, তৈমুর, হালাকু ইত্যাদির মতো সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন? না, কখনো নয়। তাহলে কী?

তৃতীয় এমন কী কারণ থাকতে পারে যেজন্য একটি দেশের প্রতিটি যুদ্ধক্ষম ব্যক্তি তার পার্থিব সব কিছু কোরবান করে বছরের পর বছর একটানা যুদ্ধ করে যেতে পারে? কারণ একটাই- মানবজাতির জীবন থেকে সর্বরকম অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা- এটাই হলো রসুলাল্লাহর প্রকৃত সুন্নাহ। রসুলাল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে বা যারা আমার সুন্নাহ ত্যাগ করবে তারা আমার কেউ নয়।” যে বা যারা রসুলাল্লাহর কেউ নয় সে বা তারা কি তাঁর উম্মাহ, ‘উম্মতে মোহাম্মদী’? সাধারণ জ্ঞানেই বোঝা যায়- অবশ্যই নয়। অর্থাৎ তাঁর (সা.) সুন্নাহ ও তাঁর উম্মাহ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটা ছাড়া আরেকটা নেই। আল্লাহ তাঁর নবীর (সা.) উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করে ছিলেন; শুধু দায়িত্ব অর্পণ করে ছিলেন তাই নয়, যে কাজটা করতে তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, যে কাজ তিনি দায়িত্ব পাবার মুহূর্ত থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করে গেলেন- অর্থাৎ সংগ্রামের মাধ্যমে এই জীবনব্যবস্থা, এই শেষ দীন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা- এটাই হলো তাঁর প্রকৃত সুন্নাহ। এই সুন্নাহ ত্যাগকারীদের সম্বন্ধেই তিনি বলেছিলেন ‘তারা আমার নয়’। তার ব্যক্তি জীবনের ছোটখাট, কম প্রয়োজনীয় অভ্যাসের সুন্নাহ বোঝান নি।

একটা গুরুত্বপূর্ণ হাদীস উল্লেখ করছি। তিনি (সা.) বলেছেন-“এমন সময় আসবে যখন আমার উম্মাহ প্রতিটি ব্যাপারে বনি ইসরাইলকে নকল করবে। এমনকি তারা যদি তাদের মায়ের সাথে প্রকাশ্যে ব্যভিচার করে তবে আমার উম্মাহ থেকেও তাই করা হবে। বনি ইসরাইলরা বাহাত্তর ফেরকায় (ভাগে) বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মাহ তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে। এর একটি ভাগ ছাড়া বাকি সবই আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে।” সাহাবারা প্রশ্ন করলেন-“ইয়া রসুলাল্লাহ! সেই এক ফেরকা কোনটি?” তিনি (সা.) জবাব দিলেন-“যার উপর আমি ও আমার সঙ্গীরা (আসহাব) আছি” (হাদীস- আবদুল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- তিরমিযি, মেশকাত )। এই হাদীসটির কয়েকটি অংশ আছে। আমরা একটা একটা করে বুঝে নিতে চেষ্টা করব। প্রথম কথা হলো- প্রথমেই যে তিনি ‘আমার উম্মাহ’ বলে শুরু করলেন তাতে তিনি তাঁর প্রকৃত উম্মাহ বোঝান নি। পেছনে যেমন বলে এসেছি অন্য জাতিগুলি থেকে আলাদা করে বোঝাবার জন্য অর্থাৎ In genaral sense. দ্বিতীয়তঃ বনি ইসরাইল বলতে তিনি বর্তমানে ইহুদি-খ্রিষ্টান (Judio-Christian Civilisation) সভ্যতা বুঝিয়েছেন। ‘পাশ্চাত্য সভ্যতা’ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে খ্রিষ্টান ইউরোপ ও আমেরিকার কথাই মনে আসে। কিন্তু আসলে এরা গোড়া ইহুদি। ঈসা (আ.) খাঁটি ইহুদি বংশে জন্মেছিলেন, নিজে ইহুদি ছিলেন, তাঁর প্রত্যেকটি শিষ্য ইহুদি ছিলেন, ইহুদিদের বাইরে তাঁর শিক্ষা প্রচার করা তাঁরই নিষেধ ছিল। অর্থাৎ মুসার (আ.) দীনকে তাঁর ধর্মের আলেম-যাজকরা বিকৃত, ভারসাম্যহীন করে ফেলায় সেটাকে আবার ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনাই ছিল তাঁর কাজ, নতুন কোনো ধর্ম সৃষ্টি করা নয়। কিন্তু সেটাকে কেমন করে একটা নতুন ধর্মের রূপ দেওয়া হয়েছিল তা এখানে উল্লেখ করতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। কাজেই বিশ্বনবী (সা.) এখানে আলাদা করে খ্রিষ্টান না বলে একেবারে গোড়ায় ধরে শুধু বনি-ইসরাইল বলছেন, কিন্তু বোঝাচ্ছেন আজকের এই জুডিও-খ্রিষ্টান সভ্যতা। তিনি বলছেন আমার উম্মাহ ঐ ইহুদি-খ্রিষ্টান অর্থাৎ বর্তমানের পাশ্চাত্য সভ্যতাকে নকল-অনুকরণ করতে করতে হীনম্মন্যতার এক বীভৎস পর্যায় পর্যন্ত যাবে। আজ নিজের জাতিটির দিকে চেয়ে দেখুন- যেটাকে সবাই বিনা দ্বিধায় উম্মতে মোহাম্মদী বলে বিশ্বাস করে- এ জাতির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক শিক্ষা, আইন-দ-বিধি ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস ঐ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের নকল-অনুকরণ। এ সমস্ত ব্যাপার থেকে আল্লাহর দীন ও তাঁর আদেশ সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। যে উম্মাহটাকে সৃষ্টিই করা হয়েছে ঐগুলি নিস্ক্রীয়-অকেজো করে দিয়ে বিশ্বনবীর (সা.) মাধ্যমে দেওয়া দীনকে পৃথিবীময় প্রতিষ্ঠা করার জন্য, সেই উম্মাহই যদি নিজেরটা ত্যাগ করে ঐগুলিই গ্রহণ ও নিজেদের উপর প্রতিষ্ঠা করে তবে সেই উম্মাহকে ‘উম্মতে মোহাম্মদী’ বলার চেয়ে হাস্যকর ও অসত্য আর কী হতে পারে?

দ্বিতীয় কথা হলো রসুলাল্লাহ (সা.) বলেছেন- বনি ইসরাইল বাহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, আমার উম্মাহ তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হবে এবং মাত্র একটি ফেরকা (যেটা জান্নাতী) বাদে সবগুলি ফেরকাই আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। অতি স্বাভাবিক কথা। কারণ যে ঐক্য ছাড়া পৃথিবীতে কোনো কাজই করা সম্ভব নয়, কাজেই যে ঐক্যকে অটুট রাখার জন্য আল্লাহ সরাসরি হুকুম করলেন-“আমার দেওয়া দীন সকলে একত্রে ধরে রাখো এবং নিজেরা বিচ্ছিন্ন হয়োনা” (কোর’আন- সূরা আলে ইমরান-১০৩)- যে ঐক্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মহানবী (সা.) বললেন, “কোর’আনের কোনো আয়াতের অর্থ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কুফর” (হাদীস- আব্দাল্লাহ বিন আমর (রা:) থেকে- মুসলিম, মেশকাত), যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা সুদৃঢ় করার জন্য বললেন-“কান কাটা নিগ্রো ক্রীতদাসও যদি তোমাদের নেতা হয় তাহলেও ঐক্যবদ্ধভাবে তার আদেশ নির্দেশ পালন কর” (হাদীস- ইরবাদ বিন সারিয়াহ (রা:) থেকে আহমদ, আবু দাউদ তিরমিযি এবং ইবনে মাজাহ, মেশকাত) (এই ঐক্য অটুট রাখার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.) কতভাবে চেষ্টা করেছেন তা কোর’আন এবং হাদীস থেকে দেখাতে গেলে আলাদা বই হয়ে যাবে।) সেই ঐক্যকে যারা ভেঙ্গে তিয়াত্তর ফেরকায় বিভক্ত হয়ে যাবে- তারা আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে না তো কোথায় নিক্ষিপ্ত হবে? জান্নাতে?

তৃতীয় কথা হলো যে একটি মাত্র ফেরকা (ভাগ) জান্নাতী হবে- যেটার কথা রসুলাল্লাহ (সা.) বলেছেন- সেটা সেই কাজ নিয়ে থাকবে যে কাজের উপর তিনি ও তাঁর আসহাব ছিলেন। তিনি (সা.) ও তাঁর আসহাব (রা.) কিসের উপর- কোন কাজের উপর ছিলেন? সেই মহাজীবনী যারা পড়েছেন, তাঁর (সা.) সাহাবাদের ইতিহাস যারা পড়েছেন-তাদের এ কথা স্বীকার করা ছাড়া কোনো পথ নেই যে, নবুয়ত পাওয়ার সময় থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই অতুলনীয় মানুষটির একটিমাত্র কাজ ছিল। সেটা হলো এই শেষ জীবনব্যবস্থা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জীবনে ন্যায়-শান্তি আনা এবং তার জীবিত অবস্থায় ও তাঁর ওফাতের পরে তাঁর সঙ্গীদেরও (আসহাব) জীবন ঐ একই কাজে ব্যয় হয়েছে। অর্থাৎ নেতা ও তার জাতির সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে মানব জাতির কল্যানের জন্য। যে কল্যাণের একটিমাত্র পথ- মানুষের জাতীয় ও ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহর দেওয়া জীবন বিধান প্রতিষ্ঠা, সমস্ত মানব জাতিকে অন্যায়-অবিচার-অশান্তি-যুদ্ধ ও রক্তপাত থেকে উদ্ধার করে পরিপূর্ণ শান্তি, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। যে বা যারা এই সংগ্রাম করবে শুধু তারাই রসুলাল্লাহর (সা.) সুন্নাহ পালনকারী, অর্থাৎ যার উপর আল্লাহর রসুল (সা.) ও তার আসহাব (রা.) ছিলেন।

ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিশ্বনবীর (সা.) ঐ সঙ্গীরা (আসহাব) তাঁর ওফাতের পর তাদের নেতার উপর আল্লাহর অর্পিত কাজ একাগ্রচিত্তে চালিয়ে গেলেন, পার্থিব সমস্ত কিছু উৎসর্গ করে চালিয়ে গেলেন। কারণ তাদের কাছে ঐ কাজ ছিল বিশ্বনবীর (সা.) সুন্নাহ। ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করলে আরও দেখা যায় যে, বিশ্বনবীর (সা.) সংসর্গ যারা লাভ করেছিলেন; সরাসরি তাঁর কাছ থেকে এই দীন শিক্ষা করেছিলেন; এই দীনের উদ্দেশ্য এবং সেই উদ্দেশ্য অর্জনের প্রক্রিয়া শিক্ষা করেছিলেন তারা তাঁর (সা.) ওফাতের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন এবং ঐ ৬০/৭০ বছর পর বিশ্বনবীর (সা.) সাক্ষাত-সঙ্গীরা (রা.) শেষ হয়ে যাবার পরই পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই সংগ্রাম যেই মুহূর্তে বন্ধ হলো জাতি হিসাবে ত্যাগ করা হলো সেই মুহূর্ত থেকে জাতি হিসাবে প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী শেষ হয়ে গেলো। সেই জন্য মহানবী (সা.) তাঁর সুন্নাহ বলতে শুধু তাঁর নিজের সুন্নাহ বললেন না। বললেন- “আমি ও আমার সঙ্গীরা যার উপর আছি” এবং অন্য সময় এও বললেন যে “আমার উম্মাহর আয়ু ৬০/৭০ বছর।”

আজ আমরা কিছু আরবীয় লেবাস ধারণ করে, আলিশান মসজিদ নির্মাণ করে, ডান কাতে শুয়ে, খাওয়ার আগে নিমক আর খাওয়ার পরে মিষ্টি খেয়ে, টাখনুর উপর পাজামা পরে, গোল হয়ে বসে পাড়া কাপিয়ে যেকের করে ভাবছি পাক্কা উম্মতে মোহাম্মদী হয়ে গেছি। আর অন্যদিকে এই জাতি সর্বত্র লাঞ্ছিত, নিগৃহীত, উদ্বাস্তু, ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় অসহায় জীবন যাপন করছে, নিজেদের মধ্যে অনৈক্য-হানাহানি-মারামারিতে লিপ্ত, আমাদের সমাজসহ সারা বিশ্বের মানুষ শান্তিতে আছে নাকি অশান্তিতে আছে এ নিয়ে যাদের মাথা ব্যথা নেই, স্বার্থপরের মতো জীবন অতিবাহিত করছে তারা আসলে নিজেদেরকে উম্মতে মোহাম্মদী ভেবে আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। এরা না মুসলিম আর না তো এরা উম্মতে মোহাম্মদী।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×