somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লটারী টিকেট

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Main Story : The Lottery Ticket
Author: Anton Chekhov
Translated by: Md M.
From: English Library



আইভান ডিমিট্রিচ, একজন মধ্যবিত্ত শ্রেনীর লোক যিনি তার পরিবারের সাথে থাকতেন আর বছরে বারোশো রুবল উপার্জন করে সংসার চালাতেন এবং এতেই তিনি খুব সন্তুষ্ট ছিলেন, রাতের খাবার খেয়ে সোফায় বসে প্রতিদিনের সংবাদপত্র পড়তে ।

" আজ আমি সংবাদপত্রটি দেখতে ভূলে গেছি," তার স্ত্রী টেবিল মুছতে মুছতে বলল ।" দেখো তো লটারীর ফলাফলটি দেয়া হয়েছে কিনা?”

" হ্যাঁ, এখানে দেয়া আছে," বলল আইভান ডিমিট্রিচ ; " কিন্তু তোমার টিকিটের মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে যায়নি তো ? "

" না ; মঙ্গলবার পর্যন্ত এর মেয়াদ আছে ।"

" এর নম্বরটি কত ? "

" সিরিজ ৯,৪৯৯, নম্বর ২৬ ।"

" ঠিক আছে . . . আমরা তাহলে খুঁজব . . . ৯,৪৯৯ এবং ২৬ । "

লটারীর ভাগ্য সম্পর্কে আইভান ডিমিট্রিচের কোনো বিশ্বাস ছিল না, সে চায়ওনি, যথানিয়মে, আগ্রহীও ছিলো না লটারী বিজয়ীর তালিকা দেখতে, কিন্তু, যেহেতু এই মুহূর্তে তার অন্য কোনো কাজও ছিলো না এবং সংবাদপত্রটিও তার সামনে ছিলো, সে তার আঙ্গুল নামিয়ে লটারী বিজয়ীর তালিকাটি পরীক্ষা করতে লাগল ।খুব শীগ্রই, যদিও সংশয়জনিত বিদ্রুপ তার মনে ছিলো, উপর হতে দ্বিতীয় লাইনে ৯,৪৯৯ নম্বরটির উপর তার দৃষ্টি আটকে গেল । নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না, কেউ যেন তাকে এইমাত্র ঠান্ডা জলের ছিটা দিয়েছে, আর শিরশির ভাবের সাথে সে ঘামতে লাগল ।

" মাশা, ৯,৪৯৯ নম্বরটি সেখানে আছে! " কোনরকমে ফাঁপা গলায় সে বলল ।

তার আশ্চর্যাম্বিত আর অবিশ্বাস্য চেহারার দিকে তাকিয়ে তার স্ত্রী বুঝতে পারল যে, সে মজা করছে না ।

" ৯,৪৯৯?" সে জিজ্ঞেস করল, ফ্যাকাসে চেহারা নিয়ে টেবিল ক্লথটি টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে ।

" হ্যাঁ, হ্যাঁ . . . এটি সত্যিই সেখানে রয়েছে! "

" আর টিকেটের নম্বর? "

" ওহ, অবশ্যই! এখানে টিকেটের নম্বরও রয়েছে । দাড়াও দাড়াও . . . দেখছি! না, আমি বলছি! আমাদের সিরিজ নাম্বারটি এখানে! যে ভাবেই হোক, বোঝার চেষ্টা কর . . . ."

স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে, ডিমিট্রিচ একটি অর্থহীন, বিস্তৃত হাসি উপহার দিল, একটি ছোট বাচ্চার মতই যখন তাকে কোনো আকর্ষনীয় জিনিস দেয়া হয় । তার স্ত্রীও হাসল; এটা তার জন্য এবং তার স্বামী উভয়ের জন্যই উত্তেজনাকর ছিল , যে সে টিকিটের নম্বর না খুঁজে শুধুমাত্র সিরিজের কথা বলেছিলো । নিজের সম্ভাব্য সৌভাগ্যের আশায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মাঝে পড়া একজনের জন্য অনেক আনন্দের, অনেক উত্তেজনাকর !

" এখানে আমাদের সিরিজ নম্বরটি রয়েছে," বলল ডিমিট্রিচ, দীর্ঘক্ষন নিরব থাকার পর । " কাজেই একটা সম্ভাবনা রয়েছে যে আমরা জিতেছি । এটা শুধুমাত্র সম্ভাবনা, তবুও তা রয়েছে! "

" ঠিক আছে, এখন দেখো! "

আচ্ছা, আচ্ছা, একটু অপেক্ষা কর । আমাদের অপ্রস্তুত হওয়ার যথেষ্ট সময় রয়েছে । এটা রয়েছে দ্বিতীয় লাইনে, অর্থাৎ এর পুরস্কার হলো পঁচাত্তর হাজার রুবল । সেটা শুধু টাকা নয়, কিন্তু ক্ষমতা, মূলধনও! ঠিক আছে, এক মিনিটের মধ্যে আমি নম্বরের তালিকাটি দেখা শেষ করছি । আমি বলতে চাই, " কি হবে যদি সত্যিই আমরা টাকাটা জিতে থাকি? "

স্বামী স্ত্রী দুজনে দুজনার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগল । লটারী জেতার সম্ভাবনা তাদেরকে উত্তেজিত করে তুলল; তারা বলতে পারছিলো না, বুঝতে পারছিলো না, তারা পঁচাত্তর হাজার রুবল দিয়ে কি করবে, কি কিনবে, কোথায় বেড়াতে যাবে । তাদের মনে শুধু ভাসছিলো ৯,৪৯৯ এবং ৭৫,০০০ সংখ্যা দুটো, যা তাদের জন্য বয়ে আনতে পারে অনেক সুখ ।

আইভান ডিমিট্রিচ সংবাদপত্রটি হাতে ধরা অবস্থায় বারবার রূমের এ মাথা হতে ও মাথা পর্যন্ত পায়চারী করছিল, অবশেষে নিজেকে একটু সামলে নিল ।

" আর আমরা যদি জিতি," সে বলল--- " কেননা, এটি হবে আমাদের নতুন জীবন, এটা হবে এক সত্যিকারের পরিবর্তন! টিকেটটা তোমার, কিন্তু যদি আমার হতো, তবে প্রথমে, অবশ্যই, সম্পত্তি হিসেবে নতুন জায়গা কেনার জন্য আমি পঁচিশ হাজার রুবল খরচ করতাম; দশ হাজার অন্যান্য খরচ, নতুন ফার্নিচার . . . ঘোরাফিরা . . . ঋণ পরিশোধ, ইত্যাদি বাবদ . . . আর বাকি চল্লিশ হাজার ব্যাংকে জমা করে রাখতাম । "

" হ্যাঁ, নিজেদের সম্পত্তি, সেটা খুবই ভালো হত," তার স্ত্রী বলল, সোফায় বসে হাত দুটো কোলের উপর রেখে ।

" টুলা কিংবা অরিয়ল প্রদেশে . . . প্রথম জায়গাটিতে আমাদের ভিলার প্রয়োজন নেই, তবে অবশ্যই, এটা আমাদের উপার্জনের একটি উপায়ও হত ।"

আর তাই ডিমট্রিচের মনের পর্দায় একের পর এক সুখকর ছবি ভেসে উঠতে শুরু করল । আর এর সবগুলোতে সে নিজেকে আবিস্কার করল সংযত, সুহংহত, স্বাস্থ্যবান এবং সর্বোপরি একজন আকর্ষণীয় ব্যাক্তিত্ত্ব হিসেবে ! এখানে, গ্রীষ্মের এক বাটি সুপ উপভোগের পর, অত্যন্ত শান্ত হয়ে সে শুয়ে আছে এক ঝরণার পাশে বালুকাবেলায় অথবা বাগানের লেবু গাছের নিচে . . . . এটা উষ্ন . . . . তার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা তার নিকটে খেলা করছে, বালিতে গর্ত করছে কিংবা ঘাস হতে প্রজাপতি ধরছে । সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আছে, নির্দিষ্ট ভাবে কিছুই ভাবছে না, তবে এটা বুঝতে পারছে যে আজ, আগামিকাল কিংবা তার পরদিন তাকে আর অফিসে যেতে হবেনা । অথবা, শুধু শুয়ে থেকে বিরক্ত হয়ে, সে যাচ্ছে কোনো শস্যের ক্ষেতে, অথবা মাশরুমের খোঁজে কোনো বনে, অথবা জাল দিয়ে মাঝিদের মাছ ধরা দেখছে । যখন সূর্য অস্তগামী হয় তখন সে একটি তোয়ালে আর সাবান নিয়ে ধীরে ধীরে গোসলের স্থানের দিকে যাচ্ছে, যেখানে সে ধীরে সুস্থে শাওয়ার নিচ্ছে, হাত দিয়ে আস্তে আস্তে তার খোলা বুক ঘষছে । আর পানিতে, প্রায় অস্বচ্ছ সাবানের বৃত্তের ভেতর, ছোট ছোট মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং পানির সবুজ আগাছাগুলো আস্তে আস্তে দুলছে । গোসলের পর সুস্বাদু ক্রিম ও নাস্তাসমেত চা পরিবেশিত হচ্ছে . . . . আর সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সাথে আড্ডা কিংবা হাঁটতে বের হওয়া ।

" হ্যাঁ, নিজেদের জন্য সম্পত্তি কেনা একটি ভালো ব্যাপার হবে," তার স্ত্রী বলল, যে নিজেও স্বপ্ন দেখছিলো, এবং তার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছিল যে সে তার স্বপ্নে বিভোর হয়ে রয়েছে ।

আইভান ডিমট্রিচ তখন শরৎকালের কথা ভাবছিলো, এর হিমেল সন্ধ্যাবেলাগুলো, কিংবা সেন্ট মার্টিনস এর কথা । এই সময়টাতে তো তাকে বাগানে কিংবা নদীর ধার দিয়ে লম্বা ভ্রমনে বের হতে হয়, কাজেই হিমেল হাওয়ায় পুরোপুরি আবেশিত হওয়ার পরে, প্রয়োজন হবে বড় এক গ্লাস ভোদকা পান করা এবং তার সাথে হালকা নোনতা মাশরুম অথবা পানিতে ভেজানো শসা, এবং তারপর --- আরেকটা পানীয় . . . . বাচ্চারাও বাগান থেকে দৌড়ে আসতে পারে, সাথে হয়তো অকৃত্রিম স্বাদের গাজর বা মূলো . . . . এবং তারপর সে হয়তো সোফায় চিৎ হয়ে শুয়ে থাকবে, এবং আলস্যভরে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে থাকবে, অথবা, তা দিয়ে তার মুখ ঢেকে রেখে এবং তার জামার বোতাম আলগা করে দিয়ে, সুখনিদ্রায় বিভোর হয়ে যাবে ।

যেহেতু সেন্ট মার্টিনস এর গ্রীষ্মকালের পরের সময়টা আবহাওয়া মেঘাচ্ছন্ন ও গুমোট থাকে । সারাদিন বৃষ্টি পড়ে, খালি গাছগুলো শুধু পানি ঝড়ায়, বাতাস থাকে ভেজা আর ঠান্ডা ।কুকুর, ঘোড়া, মুরগিগুলো ---- সবাই ভিজে, বিষন্ন, অবসন্ন হয়ে থাকে । কোথাও হাঁটার অবস্থা থাকে না; কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়; ঘরের ভেতর বন্দী হয়ে থাকতে হয়, মনমরা হয়ে ধূসর জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় । এটা অবশ্যই হতাশাজনক হবে তখন এখানে থাকা!

আইভান ডিমিট্রিচ থামল এবং তার স্ত্রীর দিকে তাকালো ।

" তুমি জানো, মাশা, আমার দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া উচিত," সে বলল ।

এবং সাথে এও চিন্তা করতে লাগল যে শরতের শেষের দিকে ফ্রান্সের উত্তরে . . . ইতালী . . . অথবা ইন্ডিয়াতে সময় কাটাতে কত মজা হবে ।

" আমারও অবশ্যই বাইরে কোথাও যাওয়া উচিত," তার স্ত্রী বলল ।" কিন্তু তার আগে টিকেটের নম্বরটি মিলিয়ে নাও!"

" দাঁড়াও, দাড়াও! "

সে সারা ঘরে ঘুরে বেড়াতে লাগল এবং চিন্তা করতে থাকল । সত্যিই যদি তাই হয়: যদি তার স্ত্রী তার সাথে যায়? একা একা ভ্রমণ করা ভালো, কিংবা সবাইকে নিয়ে, স্বাধীনচেতা মেয়ে যে এইমুহূর্তে তার সামনে রয়েছে, সারা রাস্তা ভ্রমনে সে হয়তো শুধু বাচ্চাদের কথা বলবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, এবং প্রতিটি পয়সা খরচ করতে আতঙ্ক বোধ করবে । আইভান ডিমিট্রিচ তার স্ত্রীকে ট্রেনে একগাদা বাক্স, পেটরা, বোঁচকা সহ কল্পনা করল; তার স্ত্রী হয়তো কোনো কিছু ভেবে আফসোস করবে, কিংবা বলবে যে ট্রেনজার্নিতে তার মাথা ধরেছে, অথবা সে ইতিমধ্যেই অনেক রুবল খরচ করে ফেলেছে . . . . হয়তো স্টেশনগুলোতে সে গরম পানি, মাখন বা রুটির জন্য ছুটবে . . . . রাতের খাবারের সময় সে হয়তো বলবে অনেক বেশি খরচ হয়ে গেছে . . . .

" তার স্ত্রী হয়তো প্রতিটা পয়সা খরচের জন্য তার প্রতি অসন্তুষ্ট হবে," স্ত্রীর দিকে একবার তাকিয়ে, ডিমিট্রিচ ভাবল ।" লটারী টিকেটটি তার, আমার নয়! পাশাপাশি, তার দেশের বাইরে যাওয়ার কি প্রয়োজন? সেখানে সে কি চায়? সে হয়তো নিজেকে সারাদিন হোটেলে বন্দী করে রাখবে, এবং আমাকেও তার দৃষ্টির বাইরে যেতে দিবেনা . . . . আমি জানি! "

এবং তার জীবনে এই প্রথমবারের মতো তার মন চিন্তা করে দেখলো যে তার স্ত্রী কেমন যেন আকর্ষন হীনভাবে বুড়িয়ে গেছে, আর রান্নাবান্নার মধ্যেই তার জীবন সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে, অথচ সে এখনও এমন তরুন, স্বাস্থ্যবান এবং আকর্ষনীয় যে, তার পক্ষে এখনও পুনরায় কাউকে বিয়ে করা সম্ভব ।

" অবশ্যই, এগুলো তার স্ত্রীর অহেতুক বায়না, " সে ভাবল; " কিন্তু . . . . সে কেন বাইরে যেতে চায়? এর মাধ্যমে সে কি করবে? কিন্তু এরপরও যদি সে যায়, অবশ্যই . . . . আমি ধারনা করতে পারি . . . . বাস্তবে সবকিছু তার কাছে একই, নেপলসে থাকা কিংবা ক্লিন এ ভ্রমন করা । সে শুধুমাত্র আমার সাথে থাকতে চায় । আমাকে তার উপর নির্ভর করে থাকতে হবে । আমি ধারনা করতে পারি, কিভাবে একজন সাধারন মহিলার মতো, টাকা পাওয়া মাত্রই সে তা আটকে রাখবে . . . . এবং তা দিয়ে তার আত্মীয়স্বজনদের ভরণপোষনে ব্যয় করবে কিন্তু আমাকে একটি পয়সাও দিতে রাজি হবে না । "

আইভান ডিমিট্রিচ তার স্ত্রীর আত্মীয়দের কথা ভাবল । সেই সকল দূর্দশাগ্রস্থ ভাই বোন চাচা চাচী লটারীতে টাকা জেতার কথা শুনামাত্র হাজির হবে, ভিক্ষুকের মতো বিলাপ করবে, কিংবা ভন্ড তৈলাক্ত হাসি দিয়ে তাদেরকে তোষামোদ করার চেষ্টা করবে । বিশ্রী, বিরক্তিকর লোকগুলো! যদি তাদেরকে কিছু দেয়া হয়, তারা আরও চাইবে; আর যদি তাদেরকে নিরাশ করা হয়, তারা ওদেরকে ভৎসনা করবে, অপবাদ দিবে , এবং সর্বোপরি ওদের সবধরনের অমঙ্গল চাইবে ।

আইভান ডিমিট্রিচ তার নিজের আত্মীয়দের কথাও ভাবল, তাদের মুখগুলো, নিরপেক্ষভাবে অতীতে যাদের প্রতি সে তাকিয়েছিল, এখন তা যন্ত্রনা আর ঘৃনার উদ্রেক করল ।

" তারা যেন ঠিক সরীসৃপের মতো," সে ভাবল ।

এবং তার স্ত্রীর মুখও, যেন, তাকে বিরক্তি এবং ঘৃনা দ্বারা ব্যথিত করল । স্ত্রীর প্রতি তার হৃদয় ক্রোধান্বিত হলো, এবং সে প্রবলভাবে ভাবতে লাগলঃ

" তার স্ত্রী আসলে অর্থ সম্পর্কে কিছুই জানে না, আর সে জন্যই সে এমন কৃপন স্বভাবের । যদি সে লটারী জেতে তবে সে আমাকে হয়তো একশ রুবল দিবে, আর বাকিটা সে তালাবদ্ধ করে রেখে দিবে ।"

আর সে তার স্ত্রীর দিকে তাকালো, এখন আর হাসিমুখে নয়, কিন্তু ঘৃনাভরে । তার স্ত্রীও তার দিকে তাকাল, তার চোখেও ছিলো ঘৃনা আর বিদ্বেষ। তারও ছিলো তার নিজের দিবাস্বপ্ন, তার নিজের পরিকল্পনা, তার নিজের চিন্তাধারা; সে যেন ঠিক ঠিক বুঝতে পারছিল যে তার স্বামীর স্বপ্ন কি নিয়ে ছিলো। সে জানত যে কে প্রথমেই তার লটারী জেতার অর্থ চাইতে পারে।

" অন্যের জেতা টাকা নিয়ে ভালই দিবাস্বপ্ন দেখা যায়! " যা তার চোখের ভাষা বলছিলো।" না, তুমি তা করতে পারবে না! "

তার স্বামীও তার দৃষ্টি বুঝতে পারল; আবারও তার বুকে ঘৃনা চলাচল করতে শুরু করল, এবং স্ত্রীকে অসন্তুষ্ট করতে সে দ্রুত তাকালো, তাকে উত্যক্ত করতে সংবাদপত্রের চার নম্বর পাতায় তাকালো এবং বিজয়দৃপ্তভাবে পড়লঃ

" সিরিজ ৯,৪৯৯, নম্বর ৪৬! ২৬ নয়! "

একমুহূর্তে আশা এবং ঘৃনা উভয়ই উধাও হয়ে গেল, এবং আইভান ডিমিট্রিচ এবং তার স্ত্রীর দ্রুতই মনে হতে লাগল তাদের কামরাগুলো অন্ধকার, ছোট এবং নীরব, তারা যে নৈশভোজ করছিলো তা তাদের ভাল লাগছিলো না, বরং তা তাদের পাকস্থলীতে ভারী মনে হল, সন্ধ্যাটি যেন ছিল দীর্ঘ এবং একঘেয়ে . . . .

" এসব শয়তানির মানে কি? " বলল আইভান ডিমিট্রিচ, ঝগড়াটে হয়ে উঠতে শুরু করে সে। পা ফেললেই পায়ের নিচে কাগজের টুকরা, পাউরুটির গুঁড়ো, ফলের খোসা। কামরা টি মনে হয় কখনো ঝাড়ু দেওয়া হয় না! সাধারনভাবেই একজনকে বাইরে বের করার জন্য জোর করা হচ্ছে। অভিশাপ সম্পূর্নভাবে আমার আত্মাকে নিয়ে নিয়েছে! আমি যাব এবং প্রথমে যে চিনার গাছটি পাব তাতেই নিজেকে ঝোলাব। "



Main Story : The Lottery Ticket
Author: Anton Chekhov
Translated by: Md M.
From: English Library
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৪৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×