somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

(লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। পড়ার পর অনুগ্রহ করে শেয়ার করবেন। যেন অন্যরাও পড়তে পারেন। একজন পাঠকের পড়াটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। )

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইউফ্রেটিস নদীর উত্তর দিকে অবস্থিত সিরিয়ার একটি শহর রাকা।(Ar Raqqah) । সেখান থেকে খলিফা হারুন উর রশীদের দরবারে একটি চিঠি আসলো। চিঠিতে লিখা- শহরের বিচারক একমাস যাবত অসুস্থ। বিচারকাজ স্থবির হয়ে আছে। খলীফা যেন খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেন।

খলীফা ফেরত চিঠি পাঠালেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন বিচারক শহরে আসছে।

ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই রাকা শহরে নতুন বিচারক এসে কাজে যোগ দিলেন।
বিচার কাজ শুরু হয়েছে। প্রহরীরা একজন বৃদ্ধা মহিলাকে হাজির করলো। মহিলার অপরাধ-সে শহরের রেস্তোরা থেকে একঝুড়ি রুটি আর এক শিশি মধু চুরি করতে গিয়ে একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়েছে।

বুড়ি কি জানেনা , খলীফা হারুনের রশীদের রাজ্যে চুরি করা কতবড় অন্যায়। এ জন্য আইনত চোরের হাতকাটা যাবে, জরিমানা হবে, জেলদন্ড হবে।

বিচারক জিগ্গাসা করলেন-
আপনি চুরি করেছেন?
জ্বি হুজুর আমি চুরি করেছি।

আপনি কি জানেন, চুরি করা কতবড় অপরাধ? কত বড় পাপ?
জ্বি জানি। অনেক বড় অপরাধ। ক্ষমার অযোগ্য।

জানেন,এজন্য আপনার কতবড় শাস্তি হতে পারে?
জ্বি জানি। আর্থিক জরিমানা, জেলজরিমানা এমনকি আমার হাতও কাটা যেতে পারে।

তবে এসব জেনেও কেন আপনি চুরি করেছেন?
কারণ, আমি গত এক সপ্তাহ ধরে অভুক্ত। শুধু আমি অভুক্ত হলেও কথা ছিলো। সাথে আমার এতিম দু নাতিও না খেয়ে আছে। তাই চুরি করেছি। আমার আর কোনো উপায় ছিলোনা হুজুর।

বিচারক এবার পুরো দরবারঘরে চোখ বুলালেন। তারপর বললেন- কাল যেন নগর প্রধান, খাদ্যগুদাম প্রধান, শরিয়া প্রধান , পুলিশ প্রধান, সমাজ হিতৈষি সহ গন্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। যথাসময়ে রায় দেয়া হবে।

বিচারকের নির্দেশ পেয়ে পরদিন সকালে সবাই হাজির। বিচারকও যথাসময়ে উপস্থিত হলেন। রায় ঘোষণা হলো-

চুরি করার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় মোট ৫০টি চাবুক, ১০০ দিনার রৌপ্যমুদ্রা জরিমানা আর অনাদায়ে ১ বছরের কারাদন্ড ধার্য্য করা হলো। তবে বৃদ্ধা মহিলা কোন চলচাতুরীর আশ্রয় না নিয়ে অকপটে সত্য কথা বলার জন্য হাত কাটা মওকুফ করা হলো।

এবার বিচারক প্রহরীকে চাবুক আনার নির্দেশ দিয়ে নিজে বিচারকের চেয়ার থেকে নীচে নেমে এসে বৃদ্ধা মহিলার পাশে দাঁড়ালেন।

প্রহরীকে বললেন- যে নগরে একজন বুভুক্ষু মহিলা না খেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় চুরি করতে বাধ্য হয়-সেখানে তো সবচেয়ে বড় অপরাধী সে দেশের খলীফা। আর খলীফার প্রতিনিধি হয়ে আমি বিচার করতে এসেছি।-তাঁর অধীনে আমি যেহেতু চাকরী করি। তাই ৫০ চাবুকের ২০টি আমার হাতে মারাই হোক। আর এটাই বিচারকের আদেশ। আদেশ যেন পালন করা হয়। বিচারক হিসাবে চাবুক মারতে আমার ওপর যেন বিন্দুমাত্র করুনা অথবা দয়া না দেখানো হয়।

বিচারক হাত বাড়িয়ে দিলেন।দুহাতে পরপর ২০টি চাবুক মারা হলো। চাবুকের আঘাতে হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এরপর বিচারক পকেট থেকে একটা রুমাল বের করলেন।

একজন রুমালখানা দিয়ে বিচারকের হাতে বাঁধার জন্য এগিয়ে গেলে-বিচারক নিষেধ করেলেন।

এরপর, বিচারক বললেন- যে শহরে নগর প্রধান, খাদ্যগুদাম প্রধান সহ অন্যান্য সমাজ হিতৈষীরা একজন অভাবগ্রস্থ মহিলার ভরণ পোষণের ব্যবস্থা করতে পারেনা। তারাও অপরাধী। তাই বাকি ৩০ টি চাবুক সমানভাবে তাদেরকেও মারা হোক।

এরপর বিচারক, নিজ পকেট থেকে বের করা রুমালের ওপর ৫০টি রোপ্য মুদ্রা রাখলেন। তারপর উপস্থিত সবাইকে বললেন- যে সমাজ একজন বয়স্ক মহিলাকে চোর বানায়, যে ঘরে এতিম শিশু উপবাস থাকে সে সমাজের সবাই অপরাধী। তাই এখানে উপস্থিত সবাইকে -১০ দিনার রোপ্য মুদ্রা জরিমানা করা হলো। এবার মোট ৫০০ দিনার রোপ্য মুদ্রা থেকে ১০০টি রোপ্যমুদ্রা জরিমানা বাবদ রেখে বাকি ৪০০ রোপ্যমুদ্রা থেকে ২০টি চুরি যাওয়া দোকানের মালিককে দেয়া হলো। আর বাকি ৩৮০ টি বৃদ্ধা মহিলাকে দিয়ে বিচারক বললেন- এগুলো হলো আপনার ভরণপোষনের জন্য। আর আগামি মাসে আপনি বাগদাদে খলিফা হারুন উর রশীদের দরবারে আসবেন, খলীফা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

পরের মাসে বৃদ্ধা মহিলা খলীফার দরবারে গিয়ে দেখেন- খলীফার আসনে বসা লোকটিকে যেন কেমন চেনা চেনা মনে হয়। তারপর ভয়ে ভয়ে খলীফার আসনের দিকে এগিয়ে যান। একেবারে কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন, লোকটি আর কেউ না, এতো সেদিনের সেই বিচারক।

খলীফা চেয়ার থেকে নেমে এসে বলেন-
আপনাকে আর আপনার এতিম দু নাতিকে উপোস রাখার জন্য সেদিন বিচারক হিসাবে ক্ষমা চেয়েছিলাম, আর আজ দরবারে ডেকে এনেছি- প্রজা অধিকার সমুন্নত করতে না পারা একজন অধম খলীফাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন বুড়ীমা।

এ মহান খলীফা মাত্র ৪৬ বছর বয়সে ৮০৯ সালে ইরানের খোরাশান প্রদেশের তোস শহরে ইন্তেকাল করেন।

ইতিহাসে যিনি "The Just " হিসাবেই পরিচিত।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। ছবি'র এ অসহায় ৮ আর নয় বছরের দুটো বোন সুমি আর প্রিয়া। ওদের অপরাধ ওরা ক্ষুধার যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে শুধু একটা রুটির অর্ধের চুরি করেছিলো। (Sumi and priya, 8 years bangladeshi child brutally beaten by public for stealing half a loaf bread in hunger!- Source +The Daily Star) ।

ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার একটি বিখ্যাত পাঁচতারা হোটেলের নীচে। নাগরিক শোভা বর্ধনে যে শহরে কয়েক মিলিয়ন টাকা আলোয় ভাসিয়ে দেয়, যে শহরে কয়েক ঘন্টার বিনোদনের চাকচিক্যে নগরবাসীরা প্রায় ছয়কোটি টাকা বিকিয়ে দেয়-সেই শহরেই এই দু অসহায় শিশু ক্ষুধার যন্ত্রণায় একটি রুটির অর্ধেক চুরি করে -অন্যায়ের প্রতিরোধকারি জনতার হাতে নির্মম,নিষ্ঠুরভাবে প্রহারের স্বীকার হয়।

এখানে ব্যাংক চুরি হয়, ব্রীজ চুরি হয়, খাম্বা চুরি হয়, শেয়ার মার্কেট চুরি হয়, আইন চুরি হয়, আদালত চুরি হয়, ম্যাকাপ চুরি হয়, পত্রিকা চুরি হয়, ঠ্যাং চুরি হয়, পদ চুরি হয়, মুক্তিযু্দ্ধ চুরি হয়, সার্টিফিকেট চুরি হয়, লাশ চুরি হয়- আরো কত কিছু চুরি হয়। সে প্রসঙ্গে না যাই।

শুধু বিক্ষুদ্ধ জনতার হাত থেকে বাঁচার জন্য ওদের অসহায় ,ভয়ার্ত, ভীতবিহ্বল চোখ দুটো আর একবার দেখি -আর দেখি ওদের মিনতি।

এ দুটো শিশু জানেনা, নির্বাচন কেন হয়, ওরা বুঝেনা ভোট কি। ওরা জানেনা লতিফ কোথায় কুতুবগিরি করছে- ওরা জানেনা দেশের সরকার প্রধান কে/ কি কিভাবে ফটো শেশান করেছে না সত্যি আলোচনায় বসেছে? তিস্তা কি তিস্তার পানি কি, তাও বুঝেনা। কার বেতন কত , এতো বেতনে কি হয় তাও জানেনা। মন্ত্রি মহোদয়ের ঘনঘন সেলফি দেয়ার মাজেজা কি তাও বুঝেনা। কোন মন্ত্রি কেন কাকে ,কত বয়সে বিয়ে করলো -কোন পত্রিকা কিভাবে তা ফলাও করলো তাও ওরা জানেনা। কে কত টাকা খরচ করে গরু, ছাগল, উট, দুম্বা,ভেড়া জবাই দিলো, কে কত বড় আয়োজনে পুজোর প্যান্ডেল সাজালো তাও ওরা বুঝেনা। ওরা শুধু বুঝে সারা দিনের পর কেবল অর্ধেক রুটি আর আজলা ভর্তি জল।

এটাই ওদের স্বাধীনতা, এটাই ওদের মানচিত্র,এটাই ওদের পতাকা।

আজ একজন খলীফা হারুণ উর রশীদের মতো শাসকের কথা বারবার মনে পড়ছে। যিনি একজন প্রজার দুঃখে কাতর হয়ে নিজেই চাবুকের ঘা হাত পেতে নিয়েছিলেন আর সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে অন্যকেও চাবুকের আঘাত দিয়ে জরিমানা করেছিলেন।

আর যে দেশ, যে শহর, যে মানবতাবাদী, যে কবি, যে লেখক, যে সংগঠক, যে সমাজ, যে সমাজ হিতৈষী, যে বিচারক, যে আদালত এই ছোট দুটি শিশুকে বুভুক্ষু রাখে, তারপর ওদের চোর বানায়- তাদের প্রত্যেকের হাতে আজ চাবুক মারবে কে?

কেউ নেই। এ এক মোহগ্রস্থ, গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে দেয়া আত্মম্ভরিত সমাজ। এখানে The Just আর নেই, এ সমাজে এখন শুধু The Dust রাই রয়ে গেছে।

ক্ষমা করো সুমি ,ক্ষমা করো প্রিয়া।

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×