somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখক বন্ধুদের লেখা নিয়ে কিছু এলোমেলো ভাবনা। রেজা ঘটক

০৬ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এ বছর অমর একুশে বই মেলায় আমি ২৭ দিন গিয়েছিলাম। নতুন বইয়ের নতুন ঘ্রাণ আমাকে বার বার মেলায় যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে। নতুন বই হাতে নিলে মনটাও ভলো হয়ে যায়। পাশাপাশি কিনতে না পাড়ার বিড়ম্বনায় মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। আমার অনেক বন্ধু হয়তো বিষয়টা বুঝতে পেরে অনেকেই আমাকে বই উপহার দিয়েছে। আমি তাদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। আবার আমার অনেক বন্ধু আমার কাছে বই চেয়ে না পেয়ে তাদের মন খারাপের বিষয়টিও আমি খুব বুঝতে পারি। বাট, আমার সীমিত আয় আর এই বিপুল চাহিদার কোনোই ব্যালেন্স নেই। তাই মন খারাপ করাও ঠিক যৌক্তিক হবে না।

ইতোমধ্যে আমার অনেক বন্ধুর লেখা পড়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তাদের লেখার বেশ উন্নতি হয়েছে। যাদের নাম বলতে আমার কোন অসুবিধা নেই। যেমন আহমাদ মোস্তফা কামাল। ওর এক্সপারিমেন্টগুলো আমার দারুন পছন্দের। উপন্যাস নিয়ে ও যেভাবে এক্সপারিমেন্ট করলো ওর অন্ধ জাদুকর-এ, আমি বেশ আশাবাদি ওকে নিয়ে। পড়লে যে কারো মনে হবে- চরিত্রগুলো আবার নতুন করে সামনে আসছে। নতুন করে তাদের আবার চিনছি। অনেকটা প্রবন্ধের আলোকে উপন্যাসের ব্যবচ্ছেদ। কামালের চরিত্রের সাথে ফিলোসপিক্যাল কো-রিলেশানটা বেশ উপভোগ্য। ও একটা সুনির্দিষ্ট ফিলোসপি নিয়ে আসে। যা নতুন করে ভাবনা তৈরি করে পাঠকের মনে। এটা আমি খুব এনজয় করি। অন্ধ জাদুকর নিয়ে আমি তাই বেশ আশাবাদি। কামালের গল্পে কিছু না বলা দৃশ্যায়ন থাকে, যেখানে পাঠক তার নিজের মতো করে স্থান-কাল-পাত্র সাজাতে পারে। এই যে সুযোগ লেখক করিয়ে দেন, এটা একটা মস্ত কাজ। দুনিয়ার সব বড় বড় রাইটারদের এই ক্ষমতাটা আছে। কামাল যতো লিখছে, ও ততো শাণিত হচ্ছে। কামালের গল্পগ্রন্থ যেমন `দ্বিতীয় মানুষ', `আমরা একটি গল্পের জন্য অপেক্ষা করছি', `অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না বলে', `ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ', `ভোর ও সন্ধ্যারা নামছে বেদনায়', এবং উপন্যাস `আগন্তুক' এবং `অন্ধ জাদুকর' পড়ে আমি ভীষণভাবে আশাবাদি।

আলফ্রেড খোকন কবি। কিন্তু আমি ওর গদ্যেরও ভীষণ ভক্ত। ওর কবিতায় একটা না বলা ভাষা আছে। কিছু না বলা স্বৃতিচারণ আছে। কিছু শব্দ নিয়ে খেলা আছে। আছে কিছু মুন্সিয়ানা শব্দের ব্যবহারে। জীবনানন্দের যারা ভক্তকুল, তারা হয়তো নতুন জীবনানন্দকে খুঁজে পাবে খোকনের মধ্যে। খুব সাধারণ জিনিস কিংম্বা ভাবনাকেও খোকন কবিতা বানিয়ে ফেলে। এটা সবাইকে দিয়ে হয় না। একটা সময় কেটেছে আমার খোকনের উৎপাতে। হয়তো ও দুটা লাইন বানালো। এবার ওইদিন ওর ওই দুই লাইন আমরা যারা ওর বন্ধ, তাদের সারাদিন হাজারবার শোনার জন্য বাধ্য করতো ও। এখন সেই ছেলেমানুষিটা নেই। বাট নিজেকে অনেক পরিশীলিত করেছে ও। বিশেষ করে এক বিংশ শতাব্দিতে ওর কবিতা নতুন মাত্রা নিয়েছে। ওর ভাবনা অনেক দিক পরিবর্তন করেছে। ওর ভাষার প্রতি দখল অনেক ঈর্ষা করার মতো। নিছক হেয়ালির কোনো বিষয়ও খোকনের হাতে কবিতা হয়ে যায়। আর ওর গদ্য অনেকটা দার্শনিকের হেলিকাপ্টার ভ্রমণের মতো। বিন্দু বিসর্গ সবকিছুকেই ও লেখার আইটেম বানাতে পারে। আমি খোকনের লেখা নিয়েও খুবই আশাবাদি। খোকনের কাব্যগ্রন্থ `উড়ে যাচ্ছো মেঘ', `সম্ভাব্য রোদ্দুরে', `ফালগুনের ঘটনাবলী', `মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ', `সে কোথাও নেই', `সাধারণ কবিতা' এবং গদ্যজার্নাল `আলের পাড়ে বৈঠক' পড়ে আমার শুধু একথাই মনে হয়েছে যে, খোকনের লেখার শ্রেণীবিন্যাস করলে ওর কাব্যিক ও ভাষার দখলের উন্নতি সত্যিই চোখে পড়ার মতো। একজন বড় কবি যেভাবে নিজেকে বিচরণ করায় খোকন দিনদিন সেদিকেই যাচ্ছে। ভাবতে ভালোই লাগছে যে ও বড় কবিদের কাতারে যাবে।

আমি এই ধারাবহিক লেখায় আমার সকল লেখক বন্ধুদের লেখা ও বিষয় আশয় নিয়ে লিখতে চাই। বন্ধুদের মতামত পেলে আমি হয়তো আরো দুঃসাহসী হয়ে উঠবো। এমনিতে আমি ভীষণ সাহসী। কারো কোনো ঠ্যাস মারা বা ব্যঙ্গবিদ্রুপে আমার কিছুই যায় আসে না। আমার যার যা ভালো লাগে, তা বলতে আমি পছন্দ করি। আবার যার যা কিছু খারাপ লাগে তা মাইক নিয়ে না বললেও আলাপের জায়গা পেলে না বলে থাকতে পারি না। ভালোকে ভালো বলায় আর খারাপকে খারাপ বলার স্পর্ধা আমার ছোটবেলা থেকেই। আমার বন্ধুরা বলে যে আমার চোপার জন্য নাকি চাকরি বাকরিও পাইলাম না। আসল সত্য হল চাকরি করা মোটেও আমার কাজ নয়। আমার যখন যা ভালো লাগে, তাই করি। ভবিষ্যতেও করে যাবো। কেউ আটকাতে পারবে না। এদিক দিয়ে আমি গোয়ারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গোয়ার। আবার আমি যখন কিছু পড়ে মজা পাই, তার সবকিছু পড়ার জন্য উতলা হয়ে উঠি। ফ্রি-ল্যান্স রিসার্স করেছি ১০ বছরের বেশি। বাংলাদেশের সব বড় বড় এনজিও, রিসার্স প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক। অনেকে যাকে খুব ভালো মানুষ হিসাবে চেনেন, আমি হয়তো তার অনেক আকাম বা খারাপ কাজের ফিরিস্তি দিতে পারবো। আবার অনেক ভালো মানুষের সাথে হয়তো এখনো আমার পরিচয় হয়নি।

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার আমি ৫০টির বেশি তন্যতন্য করে ঘুরেছি। সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও কর্ম অভিজ্ঞতা আমার অনেক প্রতিষ্ঠিত বন্ধুদেরও নেই। নতুন মানুষের সাথে মিশে এবং মিশতে আমার খুব ভালো লাগে। পুরানা মানুষদের পুরানা প্যাঁচালী আর ভালো লাগে না। অনেক লোককে আমি চোখের সামনে খারাপ হতে দেখেছি। অনেক লোককে আমি প্রতারণার খপ্পরে পড়তে দেখেছি। আর প্রতারণা আমার ছোটবেলা থেকেই সঙ্গি। প্রতারণা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা বড় গল্প লেখার ইচ্ছা আছে।

আমি কর্মের মধ্যে বাঁচতে চাই। যারা কাজ না জেনে মুখে খই ফোঁটানোয় ওস্তাদ, তাদের আমি ভীষণ ভয় পাই। আর মিডিয়ার বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের লোকদের বরাবরই পাপারাজ্জি মনে হতো। এখনো তাই মনে হয়। সব সময় সুবিধা আর সুযোগ সন্ধানি চাপাবাজদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করাটাও বোকামি। যুদ্ধের মধ্যে থেকে যুদ্ধ দেখায় আমার বেশি আনন্দ। বাহির থেকে অন্য কোনো চাপাবাজের মুখে শুনে আসল ঘটনাকেই আমার সন্দেহ লাগে।

সর্বশেষ বিডিআর বিদ্রোগ ও আর্মি অফিসারদের মেরে ফেলার ঘটনা আমাদের মিডিয়া যেভাবে পাল্টি দিয়ে দেখাল। প্রথম মিডিয়া ছিল বিডিআরদের পক্ষে। সেই মিডিয়া আবার রাতারাতি পাল্টি খেয়ে এখন আর্মির পক্ষে। মাঝখান থেকে সাধারণ জনতা কিছুই বুঝল না। যারা করার তারা কাম করে গেল। যারা বলার তারা মুখ বুজে থাকল। বাংলাদেশের মিডিয়ার সত্যিকার কোনো চরিত্র নেই। সেটি তারা আবারো প্রমান করলো যে তারা আসলে পাপারাজ্জি।

আমার লেখক বন্ধুদের অনেকেই এই পাপারাজ্জি দলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মেম্বার। ফলে এখানে সরাসরি কথা বললে পরাদিন অনেকের চেহারার দিকে তাকানো যাবে না। তবু রোজ যেমন সূর্য ওঠে আমরা একটা নতুন স্বপ্নের জন্য অপেক্ষা করি। কারো দোষ না দিয়ে কারো কারো ভালোটুকু এখানে বলার চেষ্টা করবো।

************** চলবে**************

২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×