এ বছর অমর একুশে বই মেলায় আমি ২৭ দিন গিয়েছিলাম। নতুন বইয়ের নতুন ঘ্রাণ আমাকে বার বার মেলায় যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে। নতুন বই হাতে নিলে মনটাও ভলো হয়ে যায়। পাশাপাশি কিনতে না পাড়ার বিড়ম্বনায় মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। আমার অনেক বন্ধু হয়তো বিষয়টা বুঝতে পেরে অনেকেই আমাকে বই উপহার দিয়েছে। আমি তাদের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। আবার আমার অনেক বন্ধু আমার কাছে বই চেয়ে না পেয়ে তাদের মন খারাপের বিষয়টিও আমি খুব বুঝতে পারি। বাট, আমার সীমিত আয় আর এই বিপুল চাহিদার কোনোই ব্যালেন্স নেই। তাই মন খারাপ করাও ঠিক যৌক্তিক হবে না।
ইতোমধ্যে আমার অনেক বন্ধুর লেখা পড়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি, তাদের লেখার বেশ উন্নতি হয়েছে। যাদের নাম বলতে আমার কোন অসুবিধা নেই। যেমন আহমাদ মোস্তফা কামাল। ওর এক্সপারিমেন্টগুলো আমার দারুন পছন্দের। উপন্যাস নিয়ে ও যেভাবে এক্সপারিমেন্ট করলো ওর অন্ধ জাদুকর-এ, আমি বেশ আশাবাদি ওকে নিয়ে। পড়লে যে কারো মনে হবে- চরিত্রগুলো আবার নতুন করে সামনে আসছে। নতুন করে তাদের আবার চিনছি। অনেকটা প্রবন্ধের আলোকে উপন্যাসের ব্যবচ্ছেদ। কামালের চরিত্রের সাথে ফিলোসপিক্যাল কো-রিলেশানটা বেশ উপভোগ্য। ও একটা সুনির্দিষ্ট ফিলোসপি নিয়ে আসে। যা নতুন করে ভাবনা তৈরি করে পাঠকের মনে। এটা আমি খুব এনজয় করি। অন্ধ জাদুকর নিয়ে আমি তাই বেশ আশাবাদি। কামালের গল্পে কিছু না বলা দৃশ্যায়ন থাকে, যেখানে পাঠক তার নিজের মতো করে স্থান-কাল-পাত্র সাজাতে পারে। এই যে সুযোগ লেখক করিয়ে দেন, এটা একটা মস্ত কাজ। দুনিয়ার সব বড় বড় রাইটারদের এই ক্ষমতাটা আছে। কামাল যতো লিখছে, ও ততো শাণিত হচ্ছে। কামালের গল্পগ্রন্থ যেমন `দ্বিতীয় মানুষ', `আমরা একটি গল্পের জন্য অপেক্ষা করছি', `অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না বলে', `ঘর ভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ', `ভোর ও সন্ধ্যারা নামছে বেদনায়', এবং উপন্যাস `আগন্তুক' এবং `অন্ধ জাদুকর' পড়ে আমি ভীষণভাবে আশাবাদি।
আলফ্রেড খোকন কবি। কিন্তু আমি ওর গদ্যেরও ভীষণ ভক্ত। ওর কবিতায় একটা না বলা ভাষা আছে। কিছু না বলা স্বৃতিচারণ আছে। কিছু শব্দ নিয়ে খেলা আছে। আছে কিছু মুন্সিয়ানা শব্দের ব্যবহারে। জীবনানন্দের যারা ভক্তকুল, তারা হয়তো নতুন জীবনানন্দকে খুঁজে পাবে খোকনের মধ্যে। খুব সাধারণ জিনিস কিংম্বা ভাবনাকেও খোকন কবিতা বানিয়ে ফেলে। এটা সবাইকে দিয়ে হয় না। একটা সময় কেটেছে আমার খোকনের উৎপাতে। হয়তো ও দুটা লাইন বানালো। এবার ওইদিন ওর ওই দুই লাইন আমরা যারা ওর বন্ধ, তাদের সারাদিন হাজারবার শোনার জন্য বাধ্য করতো ও। এখন সেই ছেলেমানুষিটা নেই। বাট নিজেকে অনেক পরিশীলিত করেছে ও। বিশেষ করে এক বিংশ শতাব্দিতে ওর কবিতা নতুন মাত্রা নিয়েছে। ওর ভাবনা অনেক দিক পরিবর্তন করেছে। ওর ভাষার প্রতি দখল অনেক ঈর্ষা করার মতো। নিছক হেয়ালির কোনো বিষয়ও খোকনের হাতে কবিতা হয়ে যায়। আর ওর গদ্য অনেকটা দার্শনিকের হেলিকাপ্টার ভ্রমণের মতো। বিন্দু বিসর্গ সবকিছুকেই ও লেখার আইটেম বানাতে পারে। আমি খোকনের লেখা নিয়েও খুবই আশাবাদি। খোকনের কাব্যগ্রন্থ `উড়ে যাচ্ছো মেঘ', `সম্ভাব্য রোদ্দুরে', `ফালগুনের ঘটনাবলী', `মধু বৃক্ষ প্রতারণা বিষ', `সে কোথাও নেই', `সাধারণ কবিতা' এবং গদ্যজার্নাল `আলের পাড়ে বৈঠক' পড়ে আমার শুধু একথাই মনে হয়েছে যে, খোকনের লেখার শ্রেণীবিন্যাস করলে ওর কাব্যিক ও ভাষার দখলের উন্নতি সত্যিই চোখে পড়ার মতো। একজন বড় কবি যেভাবে নিজেকে বিচরণ করায় খোকন দিনদিন সেদিকেই যাচ্ছে। ভাবতে ভালোই লাগছে যে ও বড় কবিদের কাতারে যাবে।
আমি এই ধারাবহিক লেখায় আমার সকল লেখক বন্ধুদের লেখা ও বিষয় আশয় নিয়ে লিখতে চাই। বন্ধুদের মতামত পেলে আমি হয়তো আরো দুঃসাহসী হয়ে উঠবো। এমনিতে আমি ভীষণ সাহসী। কারো কোনো ঠ্যাস মারা বা ব্যঙ্গবিদ্রুপে আমার কিছুই যায় আসে না। আমার যার যা ভালো লাগে, তা বলতে আমি পছন্দ করি। আবার যার যা কিছু খারাপ লাগে তা মাইক নিয়ে না বললেও আলাপের জায়গা পেলে না বলে থাকতে পারি না। ভালোকে ভালো বলায় আর খারাপকে খারাপ বলার স্পর্ধা আমার ছোটবেলা থেকেই। আমার বন্ধুরা বলে যে আমার চোপার জন্য নাকি চাকরি বাকরিও পাইলাম না। আসল সত্য হল চাকরি করা মোটেও আমার কাজ নয়। আমার যখন যা ভালো লাগে, তাই করি। ভবিষ্যতেও করে যাবো। কেউ আটকাতে পারবে না। এদিক দিয়ে আমি গোয়ারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ গোয়ার। আবার আমি যখন কিছু পড়ে মজা পাই, তার সবকিছু পড়ার জন্য উতলা হয়ে উঠি। ফ্রি-ল্যান্স রিসার্স করেছি ১০ বছরের বেশি। বাংলাদেশের সব বড় বড় এনজিও, রিসার্স প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা অনেক। অনেকে যাকে খুব ভালো মানুষ হিসাবে চেনেন, আমি হয়তো তার অনেক আকাম বা খারাপ কাজের ফিরিস্তি দিতে পারবো। আবার অনেক ভালো মানুষের সাথে হয়তো এখনো আমার পরিচয় হয়নি।
বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার আমি ৫০টির বেশি তন্যতন্য করে ঘুরেছি। সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও কর্ম অভিজ্ঞতা আমার অনেক প্রতিষ্ঠিত বন্ধুদেরও নেই। নতুন মানুষের সাথে মিশে এবং মিশতে আমার খুব ভালো লাগে। পুরানা মানুষদের পুরানা প্যাঁচালী আর ভালো লাগে না। অনেক লোককে আমি চোখের সামনে খারাপ হতে দেখেছি। অনেক লোককে আমি প্রতারণার খপ্পরে পড়তে দেখেছি। আর প্রতারণা আমার ছোটবেলা থেকেই সঙ্গি। প্রতারণা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা বড় গল্প লেখার ইচ্ছা আছে।
আমি কর্মের মধ্যে বাঁচতে চাই। যারা কাজ না জেনে মুখে খই ফোঁটানোয় ওস্তাদ, তাদের আমি ভীষণ ভয় পাই। আর মিডিয়ার বিশেষ করে সংবাদ মাধ্যমের লোকদের বরাবরই পাপারাজ্জি মনে হতো। এখনো তাই মনে হয়। সব সময় সুবিধা আর সুযোগ সন্ধানি চাপাবাজদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করাটাও বোকামি। যুদ্ধের মধ্যে থেকে যুদ্ধ দেখায় আমার বেশি আনন্দ। বাহির থেকে অন্য কোনো চাপাবাজের মুখে শুনে আসল ঘটনাকেই আমার সন্দেহ লাগে।
সর্বশেষ বিডিআর বিদ্রোগ ও আর্মি অফিসারদের মেরে ফেলার ঘটনা আমাদের মিডিয়া যেভাবে পাল্টি দিয়ে দেখাল। প্রথম মিডিয়া ছিল বিডিআরদের পক্ষে। সেই মিডিয়া আবার রাতারাতি পাল্টি খেয়ে এখন আর্মির পক্ষে। মাঝখান থেকে সাধারণ জনতা কিছুই বুঝল না। যারা করার তারা কাম করে গেল। যারা বলার তারা মুখ বুজে থাকল। বাংলাদেশের মিডিয়ার সত্যিকার কোনো চরিত্র নেই। সেটি তারা আবারো প্রমান করলো যে তারা আসলে পাপারাজ্জি।
আমার লেখক বন্ধুদের অনেকেই এই পাপারাজ্জি দলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মেম্বার। ফলে এখানে সরাসরি কথা বললে পরাদিন অনেকের চেহারার দিকে তাকানো যাবে না। তবু রোজ যেমন সূর্য ওঠে আমরা একটা নতুন স্বপ্নের জন্য অপেক্ষা করি। কারো দোষ না দিয়ে কারো কারো ভালোটুকু এখানে বলার চেষ্টা করবো।
************** চলবে**************
লেখক বন্ধুদের লেখা নিয়ে কিছু এলোমেলো ভাবনা। রেজা ঘটক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।
এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন
গল্প: সম্পত্তি
গল্প:
সম্পত্তি
সাইয়িদ রফিকুল হক
আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?
রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?
বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন
বয়কট বাঙালি
কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন
“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।
‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন