থিল লাল গৌতম জানান, ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় নিজের তাবুতে প্রাণ হারান খালেদ। যিনি সজল খালেদ নামেই বেশি পরিচিত। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা গায়ানেন্দ্র শ্রেষ্ঠার নেপালের হিমালয়ান টাইমসও এই দু'জনের মৃত্যুর নিশ্চিত করেন। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে শ্রেষ্ঠা জানান, তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে উচ্চতা মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে। খালেদ আর সুং দু'জনেই মারা যান ৮ হাজার মিটার উচুতে এভারেস্টের 'ডেথ জোনে'। এ মৌসুমে আরো পাঁচ অভিযাত্রী ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচু এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে প্রাণ হারান। পর্বতারোহণ মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করা যাবে না বলে নেপালি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয়ের লক্ষে দ্বিতীয় বারের মত অভিযানে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সজল খালেদ। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ শিরোনামের শিশুতোষ চলচ্চিত্রের পরিচালক সজল খালেদ ১১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এটি তার পঞ্চদশ অভিযান আর এভারেস্টে দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর আগেও তিনি এভারেস্টের ২৪ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠেছিলেন। সেবারে বৈরি আবহাওয়ার কারণে অভিযাত্রীরা আর এগোতে পারেননি। তাই তখন নেমে আসতে হয়েছিল।
আর এবার সোমবার এভারেস্ট জয় করে নামার সময় 'ডেথ জোনে' সজল খালেদের স্বপ্ন থমকে গেল।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব খান মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন জানান, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করেন। সেখান থেকে নামার পথে বিকেলে এই বাংলাদেশি পর্বতারোহী মারা যান বলে জানতে পারেন তিনি। ওই দলে মোট আট জন সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধও আছেন। তিনিও এভারেস্ট জয় করেছেন। দলের সদস্যরা নিচে নেমে এলে বিস্তারিত জানা যাবে। গত ২৫ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদ। ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসে যান।
সজল খালেদ নামেই পরিচিত মোহাম্মদ হোসেন। ব্যক্তিগত জীবনে একজন প্রকৌশলী হলেও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই তার পরিচিতি রয়েছে।স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকদের নিয়ে ‘একাত্তরের শব্দসেনা’ নামে একটা ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছিলো সজল খালেদ। সরকারি অনুদানে নির্মাণ করেছিলো শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’।
পর্বতারোহনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ আর প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য সাহস তাকে দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট অভিযাত্রায় আগ্রহী করেছিল। ২০১১ সালে প্রথমবার এভারেস্টে যাত্রা করলেও সেবার সফল হতে পারেননি তিনি।
সজল খালেদ এভারেস্ট বিজয়ের আগে যেসব পর্বতের চূড়ায় আরোহন করেছেন সেগুলো হল: ফ্রে-মাউন্ড (সিকিম-ভারত), সিঙা-চুলি-মাউন্ট (নেপাল) এবং ২০০৬ সালে মুসা ইব্রাহিমের সঙ্গে নেপালের মেরা মাউন্ট। ২০১১ সালে তিনি চায়না-তিব্বত সীমান্ত দিয়ে উত্তরমুখী এভারেস্ট বিজয়ের প্রচেষ্টা করেছিলেন। তখন তিনি ২৩,০০০ ফুট পর্যন্ত উঠেছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে (ফুসফুসে তরল জনিত সদস্যায়) সবার নেমে আসতে হয়েছিল।
সজল স্ত্রী শৈলীসহ ঢাকার খিলগাঁওয়ে বাস করতেন। সজল-শৈলী দম্পতির একমাত্র সন্তানের নাম সুস্মিত হোসেন সূর্য'। সূর্যের জন্ম ৭ আগস্ট ২০১১। আসছে আগস্টের ৭ তারিখ সূর্য দুই বছর পূর্ণ করবে। আর ৭ সেপ্টেম্বর হল সজল-শৈলী'র বিবাহ বার্ষিকী। পর্বতারোহণ নিয়ে এডমান্ড ভিস্টার্সেলের লেখা বই অনুবাদ করেন সজল খালেদ। বইটির নাম 'পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ'। বেঙ্গল ফাউন্ডেশান থেকে বইটি বের হবার কথা ছিল।
সজল খালেদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শিংপাড়া হাসারগাঁ গ্রামে। চার ভাইবোনের মধ্যে (দুই ভাই ও দুই বোন) সজল সবার ছোট। বড় ভাইয়ের নাম শাহাদাত হোসেন বাবু।
সজল-শৈলী'র একমাত্র ছেলে সূর্যকে নিয়ে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন গতবছর ১আগস্ট লিখেছিলেন এই ছড়াটি:
সূর্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
লুৎফর রহমান রিটন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
এত্তোটুকুল ছোট্ট ছেলে নাম হলো তার সূর্য
তার হাতে এক জাদুর বাঁশি, ভালোবাসার তূর্য।
দুষ্টুমিতে ভীষণ পটু মুগ্ধ করা দৃষ্টি
হাস্য এবং চঞ্চলতায় অপূর্ব এক সৃষ্টি!
দুরন্ত সে, দস্যিপনায় কেউ নেই তার তূল্য
স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলল!
চাহিদা তার খুব বেশি নয়, অল্প খুবই অল্প
একটা চুমু, একটু আদর, বিরতিহীন গল্প।
সূর্য নামের এই ছেলেটি তাতেই খুশি বুঝলে?
ত্রিভুবনে আর পাবে না দ্বিতীয়টি, খুঁজলে!
অদ্বিতীয় সূর্যবাবুর একটি বছর পূর্তি
জন্মদিনের উৎসবে তাই আনন্দ আর ফূর্তি।
ফোঁকলা দাঁতে সূর্য হাসে, কী অপরূপ দৃশ্য!
সূর্য তোমার আলোয় আলোয় ভরিয়ে তোলো বিশ্ব।
০১আগস্ট২০১২
একজন আমৃত্যু সংগ্রামী দুঃসাহসী সজল খালেদের জন্য লাল সালাম। জয়তু সজল খালেদ। এভারেস্ট চূড়ায় তুমি বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:০০