somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এভারেস্ট জয় করেও ফিরতে পারলেন না সজল খালেদ।। রেজা ঘটক

২১ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্ট জয় করে নামার সময় এভারেস্টের 'ডেথ জোনে' মারা গেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী সজল খালেদ। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা থিল লাল গৌতমের বরাত দিয়ে নেপালের কান্তিপুর অনলাইন জানায়, দু'জন পর্বতারোহী সোমবার এভারেস্ট থেকে নামার সময় মারা যান। এদের একজন বাংলাদেশের অভিযাত্রী মোহাম্মদ খালেদ হোসেন এবং একজন দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযাত্রী সুং হো-সিউও। সজল খালেদ এভারেস্টের শীর্ষ ওঠা পঞ্চম বাংলাদেশি। সজলের আগে যে বাংলাদেশিরা এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার গৌরব অর্জন করেছেন তারা হলেন- মুসা ইব্রাহীম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার ও ওয়াসফিয়া নাজরিন।
থিল লাল গৌতম জানান, ৮ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় নিজের তাবুতে প্রাণ হারান খালেদ। যিনি সজল খালেদ নামেই বেশি পরিচিত। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা গায়ানেন্দ্র শ্রেষ্ঠার নেপালের হিমালয়ান টাইমসও এই দু'জনের মৃত্যুর নিশ্চিত করেন। এভারেস্টের বেস ক্যাম্প থেকে শ্রেষ্ঠা জানান, তাদের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। তবে উচ্চতা মৃত্যুর একটা কারণ হতে পারে। খালেদ আর সুং দু'জনেই মারা যান ৮ হাজার মিটার উচুতে এভারেস্টের 'ডেথ জোনে'। এ মৌসুমে আরো পাঁচ অভিযাত্রী ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার উচু এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে প্রাণ হারান। পর্বতারোহণ মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করা যাবে না বলে নেপালি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট বিজয়ের লক্ষে দ্বিতীয় বারের মত অভিযানে গিয়েছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সজল খালেদ। ‘কাজলের দিনরাত্রি’ শিরোনামের শিশুতোষ চলচ্চিত্রের পরিচালক সজল খালেদ ১১ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এটি তার পঞ্চদশ অভিযান আর এভারেস্টে দ্বিতীয় উদ্যোগ। এর আগেও তিনি এভারেস্টের ২৪ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠেছিলেন। সেবারে বৈরি আবহাওয়ার কারণে অভিযাত্রীরা আর এগোতে পারেননি। তাই তখন নেমে আসতে হয়েছিল।
আর এবার সোমবার এভারেস্ট জয় করে নামার সময় 'ডেথ জোনে' সজল খালেদের স্বপ্ন থমকে গেল।
নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব খান মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন জানান, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় খালেদ হোসেন এভারেস্ট জয় করেন। সেখান থেকে নামার পথে বিকেলে এই বাংলাদেশি পর্বতারোহী মারা যান বলে জানতে পারেন তিনি। ওই দলে মোট আট জন সদস্য ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৮২ বছর বয়সী এক বৃদ্ধও আছেন। তিনিও এভারেস্ট জয় করেছেন। দলের সদস্যরা নিচে নেমে এলে বিস্তারিত জানা যাবে। গত ২৫ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে এভারেস্টের উদ্দেশে রওনা দেন খালেদ। ২৪ এপ্রিল তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসে যান।
সজল খালেদ নামেই পরিচিত মোহাম্মদ হোসেন। ব্যক্তিগত জীবনে একজন প্রকৌশলী হলেও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই তার পরিচিতি রয়েছে।স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকদের নিয়ে ‘একাত্তরের শব্দসেনা’ নামে একটা ডকুমেন্টারি নির্মাণ করেছিলো সজল খালেদ। সরকারি অনুদানে নির্মাণ করেছিলো শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘কাজলের দিনরাত্রি’।
পর্বতারোহনের প্রতি তীব্র আকর্ষণ আর প্রতিকূলতাকে জয় করার অদম্য সাহস তাকে দ্বিতীয়বারের মতো এভারেস্ট অভিযাত্রায় আগ্রহী করেছিল। ২০১১ সালে প্রথমবার এভারেস্টে যাত্রা করলেও সেবার সফল হতে পারেননি তিনি।
সজল খালেদ এভারেস্ট বিজয়ের আগে যেসব পর্বতের চূড়ায় আরোহন করেছেন সেগুলো হল: ফ্রে-মাউন্ড (সিকিম-ভারত), সিঙা-চুলি-মাউন্ট (নেপাল) এবং ২০০৬ সালে মুসা ইব্রাহিমের সঙ্গে নেপালের মেরা মাউন্ট। ২০১১ সালে তিনি চায়না-তিব্বত সীমান্ত দিয়ে উত্তরমুখী এভারেস্ট বিজয়ের প্রচেষ্টা করেছিলেন। তখন তিনি ২৩,০০০ ফুট পর্যন্ত উঠেছিলেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে (ফুসফুসে তরল জনিত সদস্যায়) সবার নেমে আসতে হয়েছিল।
সজল স্ত্রী শৈলীসহ ঢাকার খিলগাঁওয়ে বাস করতেন। সজল-শৈলী দম্পতির একমাত্র সন্তানের নাম সুস্মিত হোসেন সূর্য'। সূর্যের জন্ম ৭ আগস্ট ২০১১। আসছে আগস্টের ৭ তারিখ সূর্য দুই বছর পূর্ণ করবে। আর ৭ সেপ্টেম্বর হল সজল-শৈলী'র বিবাহ বার্ষিকী। পর্বতারোহণ নিয়ে এডমান্ড ভিস্টার্সেলের লেখা বই অনুবাদ করেন সজল খালেদ। বইটির নাম 'পর্বতের নেশায় অদম্য প্রাণ'। বেঙ্গল ফাউন্ডেশান থেকে বইটি বের হবার কথা ছিল।
সজল খালেদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার শিংপাড়া হাসারগাঁ গ্রামে। চার ভাইবোনের মধ্যে (দুই ভাই ও দুই বোন) সজল সবার ছোট। বড় ভাইয়ের নাম শাহাদাত হোসেন বাবু।
সজল-শৈলী'র একমাত্র ছেলে সূর্যকে নিয়ে ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন গতবছর ১আগস্ট লিখেছিলেন এই ছড়াটি:

সূর্যকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা
লুৎফর রহমান রিটন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
এত্তোটুকুল ছোট্ট ছেলে নাম হলো তার সূর্য
তার হাতে এক জাদুর বাঁশি, ভালোবাসার তূর্য।
দুষ্টুমিতে ভীষণ পটু মুগ্ধ করা দৃষ্টি
হাস্য এবং চঞ্চলতায় অপূর্ব এক সৃষ্টি!
দুরন্ত সে, দস্যিপনায় কেউ নেই তার তূল্য
স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলল!

চাহিদা তার খুব বেশি নয়, অল্প খুবই অল্প
একটা চুমু, একটু আদর, বিরতিহীন গল্প।
সূর্য নামের এই ছেলেটি তাতেই খুশি বুঝলে?
ত্রিভুবনে আর পাবে না দ্বিতীয়টি, খুঁজলে!

অদ্বিতীয় সূর্যবাবুর একটি বছর পূর্তি
জন্মদিনের উৎসবে তাই আনন্দ আর ফূর্তি।
ফোঁকলা দাঁতে সূর্য হাসে, কী অপরূপ দৃশ্য!
সূর্য তোমার আলোয় আলোয় ভরিয়ে তোলো বিশ্ব।
০১আগস্ট২০১২

একজন আমৃত্যু সংগ্রামী দুঃসাহসী সজল খালেদের জন্য লাল সালাম। জয়তু সজল খালেদ। এভারেস্ট চূড়ায় তুমি বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা উড়িয়েছো।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:০০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×