somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

।। ছোটগল্প: চন্দ্রমনি ।। রেজা ঘটক

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন.
বৈদিক যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কৈবর্তরা সমাজে প্রান্তিকগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত। বৈদিক সাহিত্য, রামায়ন ও মহাভারতে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। 'ব্রাত্য' মানে যারা ব্রত থেকে চ্যুত বা ভ্রষ্ট। বর্তমান আধুনিক সমাজেও এদেরকে নিম্নবর্গ, হরিজন, দলিত, ছোটলোক ইত্যাদি বলে গালি পারে শিক্ষিত সমাজের গোমুর্খের দল। প্রচীন সাহিত্যে ব্রাত্য বা অন্তজ শ্রেণী হিসেবে রজক, চর্মকার, নট, বরুড়, মেদ, ভিল্ল এবং কৈবর্ত নামে মোট সাত শ্রেণীর ব্রাত্য বা অন্তজের সন্ধান মেলে। সময় এবং অঞ্চল ভেদে কৈবর্ত শ্রেণী'র আবার অনেক নাম পাওয়া যায়। যেমন মৎস্যঘাতী, মৎস্যজীবী, মাছধরা, জেলে, পাতর, ধীবর, রাজবংশী, কেওট, কৈবর্ত, দাশ, মালো, মল্লবর্মণ, গাবর, মেছো, মাউছ্যা, জাইল্যা, জলদাশ ইত্যাদি। হরিপদ কৈবর্ত মেয়ে শৈলীরানী আর মেয়েজামাই চন্দ্রমণিকে কৈবর্তদের অতীত ইতিহাস শোনাচ্ছিলেন। বিলাস রাজবংশী'র নৌকায় তারা উত্তর পতেঙ্গা থেকে কৈবল্যধাম যাচ্ছিলেন। চন্দ্রমনি শ্বশুর মহাশয়কে প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা বাবা, আমাদের এই কোনঠাসা অবস্থার জন্য আসলে কারা দায়ী?
মেয়েজামাই'র প্রশ্নের জবাবে শ্বশুর মহাশয় হরিপদ কৈবর্ত আবার বলতে লাগলেন, 'মনুসংহিতা'র বিধান মতে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য আর শূদ্রের মধ্যে শূদ্ররা হল সবচেয়ে নিম্নগোষ্ঠী। ঋষি মনু বলেছেন যে, শূদ্র অর্থ সঞ্চয় করতে পারবে না, উচ্চবর্ণের পথ দিয়ে শূদ্র শবদেহ বহন করতে পারবে না, ব্রাহ্মণের নিন্দা করলে শূদ্রের জিহবা কেটে নেওয়া যাবে, ব্রাহ্মণের সঙ্গে এবসাথে বসলে শূদ্রের পাছায় লোহার ছেঁকা দিয়ে তাকে নির্বাসন করা যাবে। এমন অনেক কঠিন কঠিন বিধান উচ্চবর্ণের হিন্দুরা পালন করতো। মূলত, ক্ষমতা আর শাসনকাজ নির্বিঘ্ন করতে এভাবে উচ্চবর্ণের হিন্দুরা সমাজকে চারশ্রেণীতে ভাগ করলো। ব্রাহ্মণরা ক্ষত্রিয়ের ছত্রছায়ায় যাগযজ্ঞে আর ধর্মকর্মে পৌরহিত্য করতে লাগল। শাসনকার্যের দায়িত্ব নিল ক্ষত্রিয়রা। শিল্পবাণিজ্য আর কৃষিকাজের দায়িত্ব পেল বৈশ্যরা। আর সব ধরনের কায়িক পরিশ্রমের ভার অর্পন করলো শূদ্রদের উপর। সেই হিসেবে ধর্মের দোহাই দিয়ে উচ্চবর্ণ হিন্দুরাই আমাদের কোনঠাসার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। আর এই চিত্র বালুখালি, উত্তর পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলি, খেজুরতলা, সলিমপুর, কুমিরা, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই যেখানেই যাও এখনো দেখতে পাবে। এমনি কি কর্নফুলি, মাতামুহুরী, হালদা, সাঙ্গু, এসব নদীর এপার ওপার যেসব জেলেরা এখনো বসবাস করছে সেখানেও একই অবস্থা। আমার ধারণা, শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা ভারতবর্ষে কৈবর্তরা এখনো উচ্চবর্ণ হিন্দুদের কাছে এখনো অচ্চুদ।
এতোক্ষণ শৈলীরানী চুপচাপ বাবা আর স্বামীর কথোপকথোন শুনছিলো। এসব বড়দের কথা শৈলীরানী একদম বুঝতে পারে না। সে বরং তার চেয়ে একটু বড় নৌকার মাঝি বিলাসের সঙ্গে পুরানো বন্ধুত্বের খাতিরটা আরেকটু ঝালাই করে নিল। আচ্ছা বিলাস দা, তুমি বিয়া করবা কবে? বিলাস রাজবংশী'র বাড়ি শৈলরানী'র বাবার বাড়ির খালের ঠিক উল্টোপারে। হরিপদ কৈবর্ত মেয়ে-জামাইকে আনতে বিলাসকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। বিলাস শৈলীরানী'র কথায় না হেসে পারলো না। আঁই তো গড়ার চাই। মা-বাবা রাজি ন। বছর দুই যাউক। তারপর গড়ির..হে হে হে..
আষাঢ়ের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এই আছে এই নেই। নৌকার খোলে অবশ্য একটা ভাঙা ছাতা আছে। কিন্তু তা বের করার উপায়ও নেই। দক্ষিণা বাতাসে বিলাসের নৌকা ঠিক রাখা তখন আরো কঠিন হয়ে যাবে। যে কারণে আষাঢ়ের হঠাৎ আসা এই দমকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিকে ওরা তেমন পাত্তাও দেয় না। বেলা দ্বিপ্রহর নাগাদ বিলাস হরিপদ কৈবর্তের ঘাটে নৌকা ভেড়াতে সক্ষম হল। শৈলীরানী সবার আগেই এক লাফে চিরচেনা সেই ঘাটে এমন লম্ফ দিল যে, আরেকটু হলেই চন্দ্রমনি নৌকা থেকে ছিটকে যাচ্ছিলো। ভাগ্যিস শ্বশুর মহাশয় হরিপদ কৈবর্ত চন্দ্রমনিকে ধরে রাখলো।
........................চলবে..........................
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৪৬
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×