বর্তমান সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছাড়া মোট রাজনৈতিক দল আছে আটটি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে হিসেবের বাইরে রাখলে সংখ্যাটি এখন সাত। নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়েছে মোট চারটি রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। নির্বাচনকালীন সরকারে এখনো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এলডিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপি যোগ দেয়নি। সুতরাং নির্বাচনকালীন যে সরকারকে আজ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে সেটিকে সর্বদলীয় সরকার বলা যায় না। সেটি ব্যকরণ শুদ্ধও নয়। কিন্তু গণমাধ্যম এবং সরকারের পক্ষ থেকে এটাকে সর্বদলীয় সরকার বলা হচ্ছে। এটা সর্বদলীয় সরকারের একটি ব্রান্ডিং করার কৌশল মাত্র। বরং এটাকে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার বলাই শ্রেয়।
এই সরকারে মোট কত জন থাকবে তা দুই-এক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে। পাশাপাশি আরো কিছু বিষয় এখন অনেকটাই স্পষ্ট। সেগুলো কি কি? বর্তমান সংবিধানের আলোকে ২৪ শে জানুয়ারির মধ্যেই আগামী দশম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। যদি এই সরকার সেটি করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধানের আরেক দফা মুচলেকার কৌশল নিয়ে সেটাকে আরো ৯০ দিন অর্থ্যাৎ ২৪ শে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত বাড়াতে পারবে। তারপর? ২৪ শে এপ্রিলের মধ্যে যদি কোনো সাধারণ নির্বাচন না হয়, তাহলে দেশে সুস্পষ্টভাবেই একটি সাংবিধানিক সংকট শুরু হবে। অর্থ্যাৎ নির্বাচনকালীন সরকার ২৪ শে জানুয়ারি'র মধ্যে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে ২৪ শে এপ্রিল পর্যন্ত লাইফ সাপোর্ট নিয়ে চলতে পারবে। তারপরেই সেই সাংবিধানিক সংকটের শুরু হবে।
এখন প্রশ্ন হল, প্রধান বিরোধীধল বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে? যদি না যায় তাহলে সেই নির্বাচন কি গ্রহনযোগ্য হবে? এর আগে ১৯৮৬ সালে, ১৯৮৮ সালে ও ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কখনো কখনো অংশগ্রহন করেনি। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি যায় নি। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউ যায় নি। আর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি'র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যায় নি। ওই তিনটি সংসদের মেয়াদ ছিল সংক্ষিপ্ত। ওই তিনটি সংসদের উদাহরণ আমাদের সামনে থাকলেও তখন পরিস্থিতি অনেকটা ভিন্ন রকম ছিল। প্রথম দুইটির সময়ে দেশে ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। সংসদ সেখানে মুখ্য ছিল না। কিন্তু ১৯৯১ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে আসার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তার মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি'র নির্বাচনে সংসদের মেয়াদ ছিল ভয়াবহ রকমের সংক্ষিপ্ত। সংসদীয় গণতন্ত্রে কে কখন সরকারি দলে থাকবে আর কে বিরোধীদলে থাকবে এটা জনগণ ভোটের মাধ্যমেই ঠিক করে। কোনো একটি রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচনে না যায়, সেটি সেই দলের নিজেদের স্বার্থ ও ক্ষমতার লোভ সংক্রান্ত একটি ব্যাপার। যদি সেই দল মনে করে, তারা বিদ্যমান কাঠামোতে নির্বাচনে গেলে হেরে যাবে, ক্ষমতায় যাবার সাধ পূরণ হবে না। তাই নির্বাচনে যাবে না, সেটা স্রেফ সেই দলের দলীয় নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়। মোটেও গোটা রাষ্ট্রের সকল জনগণের বিষয় নয়।
যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে না যায়, সেটা বিএনপি'র নিজস্ব স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়-আশয়। সেখানে গোটা রাষ্ট্রের সকল জনগণের বিষয় মোটেও সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে যায় না। স্রেফ বিএনপি'র নিজস্ব দলীয় বিষয়। এখন বিএনপি ছাড়াই যদি আগামী নির্বাচনে শতকরা পঞ্চাশ ভাগের বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলেই সেই নির্বাচন ব্যকরণে সিদ্ধ হবে। সেটাকে যদি শতকরা ষাট ভাগ বা তার চেয়েও বেশিতে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যে কাউকে সেই নির্বাচন মানতে বাধ্য করবে। কারণ, একটি দেশের যদি শতকরা ষাট ভাগ বা তারও বেশি মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহন করে, তাহলে সেই নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহন করেনি, সেটা আর বিবেচ্য বিষয় থাকবে না। কারণ, পৃথিবীর বহু দেশে বহু-বহু রাজনৈতিক দল আছে। অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে না। তাদের ছাড়াই সেই দেশ চলছে। এর অনেক ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ দেওয়া যাবে।
যদি বিএনপি আগামী নির্বাচনে না যায়, আর যদি সেই নির্বাচনে শতকরা ষাট ভাগ বা তারও বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকে, তাহলে বিএনপি কে আর কেউ গণনায় রাখবে না। নির্বাচন সিদ্ধ হবে। হয়তো সরকার আগামী নির্বাচনে বিএনপি না গেলে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতেই এখন বেশি মনযোগী হবে। সেটাই হবার কথা। আর যদি বিএনপি নির্বাচনে না যাবার পর, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি শতকরা পঞ্চাশের কম থাকে বা সেটা চল্লিশের কোঠায় নেমে আসে, সেই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষই গ্রহন করবে না। বিশ্বের কোনো কুতুব বা কোনো প্রভু সেটা মানলো আর না মানলো, সেটা তখন বিবেচ্য হবে না। মোটকথা, দেশের মানুষের বিবেচ্য বিষয়ই প্রাধান্য পাবে।
বাংলাদেশের ৪২ বছরের জীবনে যতোগুলো নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের 'হ্যা না' ভোট আর সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের 'হ্যা না' ভোট বাদ দিলে অন্য সকল নির্বাচনই ব্যকরণে সিদ্ধ। সেখানে সংসদের মেয়াদ যতোদিনই থাকুক না কেন। সুতরাং বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে না যায়, তাহলে বিএনপি হয়তো ভবিষ্যতে একটি মুসলিম লীগের মতো জনসম্পৃক্ততা হীন রাজনৈতিক দলে পরিনত হবে। কেন সেই ব্যাখ্যাটিও দিচ্ছি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত জেনারেল জিয়াউর রহমান বা তার অনুসারী বা তার সাঙ্গপাঙ্গরা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা ভোগ করেছে। ক্ষমতা দখল করার সেই প্রক্রিয়াটি ছিল বন্দুকের নলের মাধ্যমে। দেশের রাষ্ট্রপতিকে সপরিবারে হত্যা করে সেই খুনিচক্র রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করেছিল। ৬ বছর ৭ মাস ৯ দিন সেই খুনিচক্র দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে রেখেছিল। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বলি দেওয়া হয়েছিল। দেশের রাজনৈতিক গতিধারাকে সরাসরি উল্টোপথে হাঁটানো হয়েছিল। জিয়া নিজেই বলেছিলেন, 'আই উইল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট, মানি ইজ নো প্রব্লেম'। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংসের সেই শুরু। সেখান থেকে এখনো বাংলাদেশ বের হতে পারেনি। তারপর জেনারেল জিয়ার যোগ্য সাগরেদ জেনারেল এরশাদ ২৪ মার্চ ১৯৮২ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত আরেকটি বন্দুকের নলের ডগায় ক্ষমতা দেখিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়েছিলেন। মূলত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো গণতন্ত্র ছিল না।
দীর্ঘ এই ১৫ বছরে সামরিক দুই শাসক দেশের বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছেন। রাষ্ট্রের জনপ্রশাসন ধ্বংস করেছেন। নির্বাচন কমিশন ধ্বংস করেছেন। বিপরীতে কি কি করেছেন? টাকা বানানোর মেশিন চালু করেছেন। টাকা দিয়ে রাজনৈতিক নেতা কেনার সংস্কৃতি চালু করেছেন। বিচারপতিদের ক্ষমতার লোভ শিখিয়েছেন। রাষ্ট্রের জনপ্রশাসনকে দলীয় আনুগত্য স্বীকার করা শিখিয়েছেন। রাজনীতি'র বাইরে ধামাধরা রাজনীতি করে কিভাবে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায়, সেই মন্ত্র শিখিয়েছেন। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটি দেশের প্রশাসন যে ব্যবস্থায় অভ্যস্থ হয়ে যায়, সেটি তারা রাতারাতি ছেড়ে দেবে? আর যদি সেটা হয় টাকা আয়ের সবচেয়ে সহজ ও শর্টকাট পদ্ধতি?
তো ১৯৯১ সালে স্বৈরাচার পরবর্তী প্রথম সরকার গঠন করলো বিএনপি। তারা সেই চারিত্রিক দোষের গুনেই হোক আর ক্ষমতাকে আরো পাকাপাকি করতেই হোক, জিয়ার প্রদর্শিত পথই অনুসরণ করলো। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরো সুস্পষ্ট ধ্বংসের চূড়ান্ত দোরগোড়ায় নিয়ে গেল। এবার দলীয় বিচারপতিকে দিয়ে যেনোতেনো ভাবে একটা নির্বাচন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য বিএনপি তখন তালবাহানা করতে শুরু করলো। বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের জাতীয় সংসদে হাজির করলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী মেনে নিয়ে ৩০ মার্চ ১৯৯৬ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হল। কিন্তু নির্বাচনী দাওয়ায় কিছু সূক্ষ বিষয় রেখে গেছিল তারা। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে সেটি প্রয়োগ করার মতো দুঃসাহস জনরোষের মধ্যে পরবে, তাই সেটি কাগজে থেকে গেল। ২০০১ সালে আবার বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই কাগুজে বিষয়টিকে আরো পাকাপাকি করতে বিচারপতিদের বয়স সীমা বাড়ালো। সেটায় কাজ না হলে নিজেদের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন খড়গ জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। তারপরের ইতিহাস ওয়ান ইলেভেনের। একটি সাধারণ নির্বাচন করার নাম করে তারা দুই বছর ক্ষমতা ধরে রাখলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুধুমাত্র বিএনপি এককভাবে যতোটা দায়ী, অন্য দলগুলো সম্মিলিতভাবে ততোটা দায়ী হবার মত খারাপ এখনো হয়নি।
বিএনপি গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দিল। বঙ্গবন্ধু'র খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করলো। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেট হামলা হল। সেই হামলা দিয়ে আওয়ামী লীগকে চিরতরে গুড়িয়ে দেবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তারপর জাতিকে একটি জজ মিঞা নাটক দেখালো খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংসদে আসন পেয়েছে মাত্র ৩০টি। ৩০ আসন নিয়ে দেশের প্রধান বিরোধীদল হিসেবে তারা গোটা পাঁচ বছর সংসদে যায়নি। নানান তালবাহানা করে সংসদে যায়নি বিএনপি। কিন্তু সংসদ সদস্য পদ টিকিয়ে রাখতে মাঝে মাঝে হাজিরা দিয়েছে। বেতন ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা ভোগ করেছে। শুল্কবিহীন গাড়ি আমদানির সুযোগ ভোগ করেছে। সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। ক্ষমতার মোহে আক্রান্ত একটি দলের নাম বিএনপি।
আমরা হাওয়া ভবন কেস স্টাডির কথা জানি। আমরা মানি লন্ডারিংয়ের কথা জানি। আমরা খাম্বা থিউরির কথাও জানি। আমরা দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের কথাও জানি। আমরা কথিত বাংলা ভাইয়ের কথাও জানি। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীকে জাতীয় পতাকা দিয়ে জাতি'র সামনে ঘোরানোর ইতিহাসও জানি। এখন বিএনপি'র একমাত্র লক্ষ্য বিচারাধীন যুদ্ধপরাধীদের কিভাবে বাঁচানো যায় সেটি। আর ক্ষমতায় না যেতে পারলে বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের যা হবার সেটি হবে। ইতোমধ্যে অনেকগুলো'র রায় হয়ে গেছে। এখন পুরানা বাহানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দাও এই কথা বলে, হরতালের নামে নাশতকা করে, জ্বালাও পোড়াও করে, নিরীহ মানুষ মেরে বিএনপি আসলে দিশেহারা। জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বিএনপি কি করে নির্বাচনে যায়? ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহনের সুযোগ নেই। ভাসুরকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে গিয়ে কি করবে? তাই নানান অজুহাতে তারা সময় ক্ষেপন করছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে শেষ হবে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে চালাবে, তা নিয়ে বিএনপি এখনো কোনো সুস্পষ্ট কথা বলেনি। সেটি বলার মত অবস্থায় এখন বিএনপি নেই। কারণ, বিএনপি এখন কাগজে কলমে প্রধান বিরোধী দল হলেও কার্যত এটি জামায়াতে ইসলামী'র বি-টিমে পরিনত হয়েছে। জামায়াত যেহেতু নির্বাচনে যেতে পারবে না। তাই বিএনপি কিভাবে যায়? তার চেয়ে আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও মানুষ মারা লুটপাট করাটা যেহেতু রক্তের ভেতরেই আছে, সেটিই এখন করছে তারা।
বিএনপি আগামী নির্বাচনে না গেলেও দেশের মানুষ এখন একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অপেক্ষায়। বিএনপি'র অনেক নাটক দেখা হয়েছে। এটি এখন সোজা কথায় বাদ। অর্থ্যাৎ আপনি এখন ধামুন। আপনাদের অপকর্ম অনেক দেখা হয়েছে। আর নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে ২০১৯ সালের একাদশ সাধারণ নির্বাচনে এই দলটিকে তখন বাটি চালান দিয়ে বাংলাদেশে খুঁজতে হবে। বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও আগামী দশম সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা থাকবে। শতকরা ৬৫ ভাগেরও বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকবে। দেশের মানুষ আর হরতাল চায় না। ক্ষমতায় কে থাকলো, কে গেল, কে গেল না, কো গোস্যা করলো, এটা নিয়ে ভাবার আর সময় নাই। আমরা শান্তি চাই। আমরা নিরাপত্তা চাই। আমরা নিজেদের কাজ নিজেরা করতে চাই। ক্ষমতাবানরা আমাদের কাজ করে দেবেন না। আমাদের দেশের ৮০ ভাগ কৃষক কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে ফসল ফলায় না। তারা নিজেদের কাজটি নিজেরা করেন। দেশের এই ৮০ ভাগ কৃষক যেহেতু রাজনীতি ছাড়াই দেশে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছেন। ক্ষমতার তারা কিছুই বোঝার চেষ্টা করেন না। হরতালে তাদের কাজের কিছুটা ব্যঘাত ঘটে বটে। নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়।
যদি এখন সরকার আইন করে হরতালটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে দেশের মানুষ রাজনৈতিক অধিকারের নামে এই সহিংস অধিকারের অকারণে বলি থেকে মুক্তি পাবে। দেশের মানুষের সেবা করাই যদি প্রধান বিষয় হয়, তাহলে হরতাল বন্ধের আইন করতে হবে। হরতাল বন্ধ করাটা ধীরে ধীরে জাতীয় গণ-দাবিতে পরিনত হচ্ছে। আপনি হরতাল ডেকে এসি রুমে নিরাপদে শুয়ে বসে টেলিভিশন দেখে কাটাবেন, প্রধানমন্ত্রী'র ডাকেও আপনি ঘর থেকে বের হতে পারবেন না, আমরা নিরীহ মানুষ যারা, আমাদের তো পেটের তাগিদে বাইরে যেতে হবে। কাজকাম করতে হবে। সুতরাং বিএনপি'র আন্দোলনের নামে হরতাল এখন কেন বেআইনী হবে না, সেটা নিয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
আগামী দশম সাধারণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণ হলে সেখানে শতকরা ৬৫ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করলে, বিএনপি একটি ভাগাড়ে দলে পরিনত হবে। যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে তাদের সেই বাটি চালান থিউরির সামনে যেতে হবে। মুসলিম লীগের ইতিহাস আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়। সো, বিএনপি নির্বাচনে গেল কি গেল না, সেটি এখন মোটেও বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় ভোটে সর্বোচ্চ মানুষের অংশগ্রহন নিশ্চিত করা। আমরা শান্তি চাই। নিরাপদে নিজেদের কাজকাম করতে চাই। এটাই আসল কথা। ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ গেলেও আমাদের পকেটে পয়সা হেঁটে আসবে না। ক্ষমতায় বিএনপি গেলেও আমাদের খাবার কেউ যোগাড় করে দেবে না। আমরা সাধারণ জনগণ, নিজেদের আহারের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়। তাই আমরা শুধু রাষ্ট্রের কাছে শান্তি আর নিরাপত্তা চাই। ক্ষমতার ভেলকি নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। সো, সাধু সাবধান।।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৮