ইংরেজিতে 'টিট ফর ট্যাট' যার অনেক বাংলা প্রচলিত আছে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। অথবা ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। গত বৃহস্পতিবার মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় ব্যস্ত রাস্তা থেকেই আটক করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে কর্মরত ভারতীয় দূতাবাসের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবড়াগাড়েকে। পরে দেবযানীকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাসী করে হাজখানায় স্ট্রিট প্রস্টিটিউট ও ড্রাগ ইউজারদের সঙ্গে রাখা হয়। দেবযানীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ মার্কিন প্রশাসনের সেটি হল, ২০১২ সালে নিউইয়র্কে ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে যোগ দিয়ে দেবযানী ভারত থেকে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে একজন পরিচারিকাকে ‘জাল ভিসায়' আমেরিকায় নিয়ে যান এবং মার্কিন আইন অনুসারে ন্যূনতম মজুরি থেকে সেই পরিচারিকাকে তিনি কম বেতন দিতেন। ভিয়েনা কনভেনশনে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ বা শিষ্টাচারের যে সংস্থান রয়েছে তার উল্লেখ করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ দাবী করে, দেবযানী এরমধ্যে পড়েন না৷ যা করা হয়েছে সবকিছুই নাকি মার্কিন আইন মেনেই করা হয়েছে৷ এর আগেও মার্কিন প্রশাসন বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির ঘটনা ঘটিয়েছেন অনেক ভারতীয়'র সঙ্গে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মার্কিন এই আচরণের সম্মুখে এর আগে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম, প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ এবং প্রখ্যাত বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানও মুখোমুখি হয়েছিলেন৷ মার্কিন প্রশানসনের কূটনৈতিক শিষ্টাচারের একই ধরনের আচরণ ইরান, কিউবা ও ভেনেজুয়েলার অনেক উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতা ও কূটনৈতিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গেও একইভাবে করা হয়েছিল।
মার্কিন মোড়লগিরি'র এই অনৈতিক আচরণকে ঘিরে গোটা ভারত এখন ফুঁসে উঠেছে। জবাবে ভারতীয় প্রশাসন আমেরিকার বিরুদ্ধে যে সকল জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো হল-
১. ভারতে বসবাসরত সকল মার্কিন কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্র চাওয়া হয়েছে।
২. কনস্যুলেট ও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সব ধরনের এয়ারপোর্ট পাস প্রত্যাহার করা হয়। এখন থেকে বিমানবন্দরে দূতাবাসের গাড়ির জন্য আলাদা ব্যবস্থা আর থাকবে না। গাড়ি রাখতে হবে সাধারণ পার্কিংয়ে।
৩. মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ব্যারিকেট তুলে নিয়ে সামনের রাস্তা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
৪. ভারতের মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে কর্মরত ভারতীয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতার বিবরণ ও গৃহস্থলী কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বেতন ভাতার বিবরণসহ সকল খুটিনাটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে।
৫. ভারতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোর শিক্ষককদের ভিসার বিবরণসহ বেতন ভাতা ও ব্যাংক একাউন্টের সকল তথ্য চাওয়া হয়েছে।
৬. মার্কিন কূটনীতিকদের আমদানি ছাড়পত্র বাতিল করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে বিশেষ আমদানি অগ্রাধিকার প্রত্যাহার করা হয়েছে। যে কারণে এখন আর কিছু আনা যাবে না বিদেশ থেকে।
৭. বিমানবন্দরে মার্কিন কূটনীতিকদেরকেও সাধারণ যাত্রীর মতোই শুল্ক পরীক্ষা ও তল্লাশি করা হবে।
৮. ভারত সফররত মার্কিন সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছেন সংসদের স্পিকার মীরা কুমার, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস উপ-সভাপতি রাহুল গান্ধী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্ডে ও বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী।
ভারতের পাল্টা ব্যবস্থার মধ্যেই মার্কিন প্রশাসন বেশ নড়েচড়ে বসেছে। দেবযানীকে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মুচলেকা দিয়ে যদিও জামিন করিয়েছে ভারত। পাশাপাশি দেবযানী'র কূটনৈতিক রক্ষাকবচকে আরো সুদৃঢ় করতে জাতিসঙ্গের স্থায়ী মিশনে ইতোমধ্যেই বদলি করা হয়েছে। ভারতীয় প্রশাসনের দাবী, ভারতীয় কূটনীতিকরা দেশ থেকেই পরিচারক-পরিচারিকা নিয়ে যান। সরকারি কর্মী হিসেবে পাসপোর্ট তো বটেই, বেতনের বাইরেও তাঁদের নানারকম সুযোগ-সুবিধা দেয় ভারত সরকার। কিন্তু মাঝে মাঝে গোলমাল বাঁধে আমেরিকা-ইউরোপে যাওয়ার পরে। পাকাপাকি ভাবে সেসব দেশে থেকে যেতে পারলে অনেক সুযোগ-সুবিধা এ কথা বোঝার পরেই তাঁরা প্রথমে কর্মস্থল থেকে উধাও হয়ে যান। তখন তাঁদের পাসপোর্ট বাতিল হয়। তার পরে উদয় হয়ে সেই পরিচারক-পরিচারিকা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের মজুরি কম দেওয়া হয় বা তাঁরা পাচারের শিকার। মানুষ পাচারের শিকার প্রমাণ হলে আমেরিকার বিশেষ ভিসা পেয়ে যান এঁরা। আর কয়েক বছর এই নিয়ে কাটাতে পারলেই মিলতে পারে মার্কিন নাগরিকত্বও।
এক্ষেত্রেও এমন হয়েছে বলেই সন্দেহ দিল্লির। যে পরিচারিকাকে নিয়ে এই কাণ্ড ঘটলো সেই সঙ্গীতা রিচার্ড জুন-জুলাই মাসে নিউ ইয়র্কেই নিখোঁজ হয়ে যান। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও তখন কোনো ফল হয়নি। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক জানতে পেরেছে, দেবযানীর গ্রেফতারের মাত্র দু’দিন আগে ওই সঙ্গীতার স্বামী ফিলিপ ও দুই সন্তান নিউ ইয়র্কে যান। মার্কিন দূতাবাসই তাঁদের ভিসার বন্দোবস্ত করে। প্রথমে ফিলিপ দেবযানীর বিরুদ্ধে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করে নেন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের সন্দেহ, আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী কোনও ষড়যন্ত্র শিকার। সেই নিয়ে যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, তাই চাপ জারি রাখতে হবে দিল্লীর।
দেবযানী'র ঘটনা দিল্লীতে জানাজানি হলে পরদিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে প্রতিবাদ জানান বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। মার্কিন প্রশাসনকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বলেও ভারতীয় প্রশাসন থেকে দাবী করা হয়। জবাবে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা নয়, দেবযানী খোবরাগাড়ের ঘটনায় সরাসরি দুঃখপ্রকাশ করল আমেরিকা। বুধবার ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি। দেবযানীর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন জন কেরি। দিল্লির অবশ্য দাবি ছিল, নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে আমেরিকাকে। এ দিন ভারতের বিদেশসচিব সুজাতা সিংহের সঙ্গে কথা হয় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরমানের। কথোপকথন ইতিবাচক হয়েছে বলেও সূত্রের দাবি।
আমেরিকার মতো প্রবল প্রতিপত্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে ভারতের এমন কঠোর অবস্থান রীতিমতো বিরল ঘটনা। কূটনীতিকদের কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
কিন্তু দিল্লির রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এখন অন্য অনেক কথাও শোনা যাচ্ছে। অনেকেই বলছেন, নিউ ইয়র্কে কর্মরত ভারতীয় ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেফতারি এবং হেনস্থাকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের কঠোর ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছে। সামনে যেহেতু লোকসভা ভোট। তার আগে চার রাজ্যে গো-হারা হেরেছে শাসক দল কংগ্রেস। এই ঘটনাকে তাই কংগ্রেস খড়কুটো বলে আঁকড়ে ধরে নিজেদের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও মেরামত করতে চাইছে। না হলে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদী যদি বিষয়টি কেড়ে নেন, সেই ভয়ও রয়েছে তাদের। তার ইঙ্গিতও অনেকটা মিলেছে গতকাল। রাজনাথ সিংহ থেকে রবিশঙ্কর প্রসাদ, সকলেই দেবযানীকে হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করে দাবি করেছেন, কংগ্রেস যে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের সখ্যের কথা বলে, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সেটা আদৌ সত্যি নয়। যশবন্ত সিনহা আবার এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ভারতে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকদের মধ্যে কয়েক জন তাঁদের সমকামী সঙ্গীদের নিয়ে এসেছেন। গত সপ্তাহেই ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট সমকামী সম্পর্ককে বেআইনি ঘোষণা করেছেন। মার্কিন আইন ভাঙায় যদি দেবযানীকে সে দেশে আটক করা হয়, তাহলে তো ভারতেরও উচিত এঁদের জেলে পোরা! আর নরেন্দ্র মোদী? ভারত সফররত মার্কিন কংগ্রেসের পাঁচ জনের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেই থামেননি তিনি, টুইটে ফলাও করে জানিয়েছেনও সে কথা।
দুই সন্তানের মা দেবযানী ১৯৯৯-এর ব্যাচের আইএফএস অফিসার। ২০১২ সালে তিনি নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে যোগ দেন। সে বছরই সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয়কে পরিচারিকা হিসেবে নিয়ে যান দেবযানী। মঙ্গলবার সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে দেবযানীর বাবা উত্তম খোবরাগাড়ে দাবী করেন, গত বৃহস্পতিবার রাস্তা দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেবযানীকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ। উনচল্লিশ বছর বয়সি ওই ভারতীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিচারিকার ভিসায় মজুরি সংক্রান্ত ভুল তথ্য দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, গ্রেফতারের পরে দেবযানীকে নগ্ন করে তল্লাশি করা হয়। চোরাচালানকারীদের দেহের বিভিন্ন গোপন অংশ যেভাবে তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়, বাদ যায়নি তা-ও। সবশেষে মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কুঠুরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এই খবর জানার পরই হইচই শুরু হয়ে যায় দিল্লীতে। পর দিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে ডেকে প্রতিবাদ জানান বিদেশসচিব সুজাতা সিংহ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিবাদ এখানেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এ যাত্রায় তা হয়নি।
ভারতের সাধারণ মানুষের দাবী, এ ধরণের অপমানজনক ব্যবহারের উপযুক্ত জবাব না দিলে বিশ্ব ভারতকে মাড়িয়ে যেতে দুঃসাহস দেখাবে। এখন থেকে বিদেশি দেশগুলির জন্য ভারতের আইন আরো কঠোর করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো দেশ ভারতীয় কূটনীতিককে ব্ল্যাকমেল বা হেনস্থা করতে না পারে৷ আবার বিরোধী পক্ষরা বলছেন যে, সংসদীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মনমোহন সিং নিজের দুর্বল সরকারের তকমাটা দেবযানী ঘটনাকে আমলে নিয়ে কাটিয়ে উঠতে চাইছেন।
কূটনৈতিক পাড়ার বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অনেকটা সাঁড়ে মহিষে লড়াই করলো। সেই লড়াইয়ে মার্কিনীরা কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘন করেছে। গায়ের জোরে তারা কূটনৈতিক মর্যাদার একজন বিদেশী মহিলার সঙ্গে অসভ্য, বর্বর এবং ইতরের মত আচরণ করেছে। যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমেরিকায় সভ্যতার কোনো উন্নতি ঘটেনি। শক্তি প্রদর্শণ, কাউকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাসি করা আর পরিচয় জানার পরেও মাদকসেবী ও দেহব্যবসায়ীদের সঙ্গে একই হাজতখানায় রাখা অরুচিকর, অসুস্থ মানসিকতা এবং অসভ্যতার চরম ঔদ্বত্যের উদারণ। ভারত বিষয়টিকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সকল সভ্যতা বজায় রেখেই কড়া ভাষায় প্রতিবাদ করতে পেরেছে। পেরেছে এই কারণে যে দেশটির নাম ভারত। আমেরিকা যে এখনো সভ্যতার কোনো ন্যূনতম সীমা অতিক্রম করতে পারেনি, তা তারা দেবযানী'র ঘটনায় আবারো গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল। এই আমেরিকাই যখণ আবার দেশে দেশে মানবাধীকার নিয়ে কথা তোলেন, তখন তাদের নিজেদের চেহারা একবার আয়নায় দেখে নিলে বিশ্ববাসী'রই সেটাতে অনেক লাভ হবে। সরি আমেরিকা, ইউ আর টোটালি এ বাঞ্চ অব বাস্টার্ড অ্যানিমলস নট হিউম্যান বিয়িং। তোমাদের মুখে মানবাধিকারের কথা একদম শোভা পায় না। বরং মানবাধিকার শব্দটি নিজেই লজ্বা পায় তোমরা যখন ওটা অন্যদের বেলায় উচ্চারণ কর।
আমেরিকা ও ভারতের এই কূটনৈতিক লড়াই থেকে বাংলাদেশের অনেক কিছুই শেখার আছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেটি আমরা এই বিষয় থেকেই শিক্ষা নিতে পারি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:২০