somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাঈদী'র রায়, মাননীয় আইনমন্ত্রী'র উক্তি ও প্রসিকিউশনের দুর্বলতা!!!

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর একাত্তরের ঘৃণীত মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী'র আপিলের রায় কমিয়ে আজীবন কারাদণ্ড হবার পর মাননীয় আইনমন্ত্রী মিডিয়ার কাছে যে মন্তব্য করেছেন, এটি কোনো ভাবেই সুস্থ মানুষ হিসেবে মেনে নেবার মত নয়। মামলায় সাঈদীর রায় হবার পর মাননীয় আইনমন্ত্রী মিডিয়াকে বলেছেন, ‘উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যে রায় হয়েছে তা মাথা পেতে নিচ্ছি। তবে, ব্যক্তিগতভাবে আমি বলব, কিছুটা হতাশ ও মর্মাহত হয়েছি। এটা আমার আবেগ। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর এ ব্যাপারে কিছু করা যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনি আরো বলেছেন, 'যেটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে, আমি শুনেছি তিনি পিস কমিটির মেম্বার ছিলেন এবং এ বিষয়ে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় যারা পিস কমিটির মেম্বার হয়েছিলেন তারাতো সচেতনভাবেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। আমি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। তবে প্রসিকিউশন টিমের যা অবস্থা, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিৎ। ট্রাইব্যুনালে কিছু কিছু মামলা চলছে, কিছু রায় অপেক্ষমাণ আছে। প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আমি কোনো পরিবর্তন আনিনি। তবে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

মাননীয় আইনমন্ত্রী আপনার কথা থেকেই এটা সুস্পষ্ট যে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে কিছু ঝামেলা আছে। তাহলে সেই ঝামেলাগুলো কি কি তা কি বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারবে? দীর্ঘ ৪২ বছর পর মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের জন্য যে স্পর্শকাতর মামলাগুলো এই ট্রাইব্যুনালে এখন বিচারধীন, আপনি রাষ্ট্রের আইনমন্ত্রী হিসেবে সেই প্রসিকিউশনের ঝামেলা না এড়িয়ে সুস্পষ্টভাবেই রাষ্ট্রের সঙ্গে বেঈমানী করেছেন। নতুন সরকার গঠেনর পর আপনি আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে সেই ঝামেলাগুলো জানার পরেও কেন সেগুলো ঠিক করেন নি? কেন একটি জোড়াতালির প্রসিকিউশন টিম দিয়ে এত বড় স্পর্শকাতর মামলাগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে? তাহলে আইনমন্ত্রী হিসেবে আপনি এই নয় মাস কি করলেন? যদি প্রসিকিউশনের কোনো দুর্বলতার কারণে সাঈদীর মত দুর্ধর্ষ অপরাধী প্রাপ্ত সাজা থেকে রেহাই পেয়ে যায়, সেই দায় আপনি আইনমন্ত্রী হিসেবে মোটেও এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্রের আইনমন্ত্রী হিসেবে প্রসিকিউশনের সকল ব্যর্থতার দায় আপনার ঘাড়েই পড়ে।
আপনি কেন দীর্ঘ নয় মাসেও এই দুর্বল প্রসিকিউশন টিমকে শক্তিশালী টিমে রূপ দিতে পারলেন না? আবার আপনি বলছেন যে,
প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আপনি কোনো পরিবর্তন আনেননি! প্রসিকিউশন টিমের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব তো আপনার নয়? প্রসিকিউশন টিমের সুবিধা-অসুবিধা দেখা নাকি রাষ্ট্রের বা জাতির সুবিধা অসুবিধা দেখা, কোনটা আপনার গুরুদায়িত্ব ছিল মাননীয় আইনমন্ত্রী?
আপনি জাতির সুবিধা অসুবিধার কথা ভুলে সচেতনভাবেই নিরব ছিলেন। আর প্রসিকিউশনের দুর্বলতার সুযোগে সাঈদীর মত আসামীর সাজা কমে গেল। এখন এই দায় কে নেবে? আপনার এই ব্যর্থতার দায় তো বাংলাদেশ নেবে না। বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষ নেবে না। আপনি কেন প্রসিকিউশন টিমের দুর্বলতার কথা জেনেও সেখানে পরিবর্তন আনলেন না?

খুব শীঘ্রই আরো কিছু মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় আসবে। সেই রায়গুলো কি আপনার কথিত প্রসিকিউশনের দুর্বলতার বা ঝামেলার ফলে এমন ভাবেই সাজা কমার একটা দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে? তাহলে আইনমন্ত্রী হিসেবে আপনি জাতির সঙ্গে স্রেফ বেইমানী করছেন। আপনি শপথ নিয়ে আইনমন্ত্রী হয়েছেন। রাষ্ট্রের কোনো অসুবিধা হলে সেটি দেখার দায়িত্ব তাহলে কার? আপনি আইনমন্ত্রী হিসেবে তাহলে কি দায়িত্ব পালন করছেন?
প্রসিকিউশন টিম মেরামতে আপনার সচেতনভাবে ইচ্ছাকৃত ঢিলেমির ফলে সৃষ্ট অক্ষমতায় সাইদীর মতো আসামি মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেল। এই দায়ভার তো আপনাকে নিতেই হবে মাননীয় মন্ত্রী। সরকার আপনাকে যে দায়িত্বটি দিয়েছে, সেই রাষ্ট্র ও জাতির সুবিধা-অসুবিধা দেখার কাজটি আপনি ঠিকমতো করলেই এই ক্ষতি জাতিকে বহন করতে হতো না। এখানে আপনার ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হবার মত নরম গলায় কোনো মন্তব্য আমরা মানতে পারছি না। আপনার ব্যর্থতার দায় থেকেই সাঈদীর সাজা কমেছে এটাই এখন আপনার বক্তব্যের সূত্রেই সুস্পষ্ট।
সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনায় নিয়ে রায় দিয়েছেন। আপিল বিভাগের রায় সবাইকে মেনে নিতে হবে।’ বেশ ভালো কথা। কিন্তু প্রসিকিউশনের দুর্বলতার সুযোগ যিনি করে দিলেন, তার কি হবে? কেন দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী প্রসিকিউশনের দুর্বলতার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। এমন কি সামনে যে মামলাগুলো খুব শীঘ্রই আসবে, সেখানেও তিনি সেই দুর্বল প্রসিকিউশন রাখার পক্ষে? আমরা দেখতে চাই, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধীর আগামী মামলা গুলো আদালতে ওঠার আগেই মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রসিকিউশনের দুর্বলতাগুলো ঠিক করে প্রসিকিউশনকে আরো শক্তিশালী করার যথাযথ উদ্যোগ নেবেন। যদি তিনি সেখানেও ঢিলেমি করেন বা করার চেষ্টা করেন বা এড়িয়ে গিয়ে দুর্বল প্রসিকিউশন দিয়ে মামলাগুলো পরিচালনার সুযোগ করে দেন, তাহলে বাঙালি জাতি আপনাকে ক্ষমা করবে না মাননীয় আইনমন্ত্রী।

আপনার ব্যর্থতার দায় গোটা বাংলাদেশ নেবে না। আপনার ব্যর্থতার দায় বাঙালি জাতি নেবে না। আমরা আশা করব, অন্য মামলাগুলো আদালতে ওঠার আগেই আপনি আপনার ব্যর্থতা বুঝতে সক্ষম হবেন। এবং প্রসিকিউশনকে আরো শক্তিশালী করার যথাযথ উদ্যোগ নেবেন। নইলে আইনমন্ত্রী হিসেবে আপনার নামের পাশে একটি কলঙ্ক যোগ হবে। আর সেই কলঙ্কের দায়ভার গোটা বাঙালি জাতি বহন করতে পারে না।
মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী মামলার সকল প্রসিকিশন যাতে আরো শক্তিশালীভাবেই কাজ করতে পারে সেই উদ্যোগ আপনাকেই যথাযথভাবে নিতে হবে। নইলে আপনি আর আইনমন্ত্রীর পদ দখল করে বাংলাদেশের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারেন না। বাঙালি জাতি সেই সর্বনাশের দায় নিতেও পারে না মাননীয় আইনমন্ত্রী।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×