somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজকের টক অব দ্য টাউন !!!

০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের টিটুয়েন্টি ম্যাচেও বাংলাদেশ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২-০ তে সিরিজ হারলো। কিন্তু ক্রিকেটকে ছাড়িয়ে আজকে টক অব দ্য টাউন ছিল- সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে এমন একটি গুজবে। গুজবের সূত্রপাত আজকে সচিবালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটি একনেকের সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অনুপস্থিতিকে ঘিরে। ওই একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের অনুপস্থিতিতে ক্ষুদ্ধ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই ক্ষুদ্ধতাকেই একটা মহল তীলকে তাল বানিয়ে রটিয়ে দিয়েছে দপ্তর হারাচ্ছেন সৈয়দ সাহেব। কিছু কিছু পত্রিকা সূত্র উল্লেখ না করে এই খবরটিকে ছড়িয়ে দেয়।
একনেকের বৈঠকে সৈয়দ আশরাফ অনুপস্থিত ছিলেন, কারণ তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জে ছিলেন। সন্ধ্যায় জেলা শহরে আওয়ামী লীগের এক ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তবে সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এ ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এ ​বি​ষয়ে আমার কাছে কোনো নির্দেশনা নেই।’ এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আজ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়নি। বিভিন্ন পত্রিকায় সিনিয়র মন্ত্রীদের মন্তব্য নাম প্রকাশ না করে ছাপা হয়েছে। কেউ কেউ নাকি বলেছেন, পুরো বিষয়টি এখন নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভার নেতা হিসেবে যে কোনো মন্ত্রীর উপর ক্ষুদ্ধ হতেই পারেন। মন্ত্রীদের কার্যক্রম, দৌড়ঝাঁপ, মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি সহ নানান কিসিমের বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যেক মন্ত্রীই মূলত প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটাই রীতি। কিন্তু তা নিয়ে গুজব বা ঠাট্টা-তামাশা কেন? এই গুজব ও ঠাট্ট-মস্করায় কাদের খুশি হবার কথা? এমন গুজব ছড়িয়ে দিয়ে মাঝখান থেকে কেউ কী কোনো শিকার বাগিয়ে নিচ্ছে? এসব বিষয়কেই এখন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদকে ভাবতে হবে।
সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগে উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো ব্যক্তি নন। কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফ ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কেন্দ্রীয় জেলখানায় সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার করার পর তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি পুরো সময়টা আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন।
১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার ওই সরকারে তিনি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বন্দি দশায় তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল জেল থেকে মুক্তি পেলেও দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সৈয়দ আশরাফ পালন করেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারে তিনি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৪ সালে পুনরায় সরকার গঠন করলে সৈয়দ আশরাফকে একই দায়িত্বই দেন শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু'র সরকার যেদিন তাজ উদ্দীনকে মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ করেছিলেন, সেটি ছিল বঙ্গবন্ধু'র গোটা রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল। পরিবার সহ নিজের জীবনের বিনিময়েও মুশতাক গংদের কাছ থেকে বাকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দেশের পরিচালন ক্ষমতা থেকে দূরে ছিল। দলটির উপর দিয়ে নানান চড়াই উৎরাই গেছে। যে কোনো বড় রাজনৈতিক দলেই এই সংকট হতে পারে। কিন্তু তা কাটিয়ে ওঠার মত প্রজ্ঞা নিশ্চয়ই সেই দলের সিদ্ধান্তগ্রহনকারীরা জানেন।
আওয়ামী লীগের মত একটি বিশাল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে সাংগঠনিক দুর্বলতা কতোটা ভয়ংকর হলে, গণ-মানুষ থেকে দলটি কতোটা জনবিচ্ছিন্ন থাকলে, সেই দলের ভেতরে ভেতর থেকে দুশমন/ষড়যন্ত্রকারী বা বাহির থেকে আওয়ামী লীগের শত্রুরা সৈয়দ আশরাফের মত পরীক্ষিত ব্যক্তিকে নিয়ে এমন গুজব ছড়িয়ে দলের ভেতরে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করতে পারে, তা কী কেউ ভেবে দেখেছেন?
আওয়ামী লীগ যতোই নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা আড়াল করার চেষ্টা করুক, ভেতরে ভেতরে এমন একটি মহল যে এখনো সক্রীয় রয়েছে, সেই বিষয়ে সবাইকেই সতর্ক থাকতে হবে। দীর্ঘদিন দলের ভেতরে কার্যকরী গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকলে এই ধরনের সংকটের মুখে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার পরার ইতিহাস দেখা যায়। সেটা ভারতের প্রবীন দল কংগ্রেসের বেলায় যেমন সত্য, পাকিস্তানের পিপলস পার্টির বেলায়ও সত্য, এমন কি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বেলায়ও তাই দেখা যায়।
দলের ভেতরে কারা কিসের স্বার্থে এমন গুজবে উসকানি দিচ্ছে তা নিয়ে এখন দলটির গুরুত্ব সহকারেই ভাবা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকেই এই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই দীর্ঘ সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদটি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই নানান কিসিমের টানাপোড়ন রয়েছে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটি যে কোনো সিনিয়র মন্ত্রী'র চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সৈয়দ আশরাফ সেই গুরু দায়িত্ব ২০০৭ সালে খোদ আওয়ামী লীগের ঘোর সংকটের মুহূর্ত থেকেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাঁর ব্যাপারে যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হলে দলের নেত্রীকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারেই তা ভাবতে হবে। বিষয়টি মোটেও যে কোনো একজন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। যদি সৈয়দ আশরাফ সাহেবকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করা হয়, সেক্ষেত্রে তিনিও পাল্টা দুঃখ পেয়ে মন্ত্রী পরিষদ থেকেই পদত্যাগ করতে পারেন। তাই বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগকে আরো গভীর ভাবেই বিশ্লেষণ করেই আগাতে হবে। নইলে আওয়ামী লীগ নিজেই নিজের পায়ে বিনা মেঘে বর্জপাত ঘটাতে পারে। অতএব সাধু সাবধান।

..........................................
৭ জুলাই ২০১৫
ঢাকা

বি.দ্র. দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর উপর আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থেকেই যেসব মন্তব্য এখানে করেছি, এটাকে কেউ পলিটিক্যালি নেবার কোনো প্রয়োজন দেখি না। যে কোনো রাজনৈতিক দলের উপর স্বাধীন ভাবে বিশ্লেষণ করার মত ব্যাপারটি ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলেই মনে করি।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৫১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×