somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদমের মানিঅর্ডার !!! মূল গল্প: টি. সি. জাপ। অনুবাদ: রেজা ঘটক

০২ রা আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৫:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. আদমের চিঠি
একদিন এক ডাকপিয়ন আমার বাড়িতে আসলো। বলল, আদমের নামে একটা চিঠি আছে। আমাকে জিজ্ঞেস করল, মিন্টা গ্রামের আদম কে? জবাবে বললাম, আমিই আদম। আমাকে কে চিঠি দেবে? ডাকপিয়ন বলল, সৌল। সৌল তোমার কে? বললাম, আমার ছেলে। ওহ, তাহলে এই নাও সৌলের চিঠি। বলে ডাকপিয়ন চলে গেল।
চিঠি হাতে আদম চিৎকার করে উঠল। মার্থা... মার্থা...এদিকে আসো। এই দেখ, আমাদের সৌল চিঠি লিখেছে।
মার্থা হুড়মুড় করে দৌঁড়ে স্বামী আদমের কাছে আসলো। চিঠির কথা শুনে খুব খুশি হল। আবার অজানা আতংকে মার্থার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। সৌলের চিঠি! তাহলে সৌল বেঁচে আছে? আমাদের সৌল? ভালো আছে ও?
আদম বা মার্থা কেউ পড়তে পারে না। তাই চিঠি নিয়ে মার্থা গ্রামের মাস্টার মশাইয়ের কাছে ছুটল। পঞ্চাশ বছর আগে মিন্টা গ্রামে কোনো স্কুল ছিল না। আদম ছোট্ট এই গ্রামের একজন গরিব কৃষক। আর মার্থা তার স্ত্রী। আদম ও মার্থার এক ছেলে ও তিন মেয়ে। মেয়ে তিনটার বিয়ে হয়ে গেছে। আর দুই বছর আগে একমাত্র ছেলে সৌল কোথায় যেন চলে গেছে।
দেড় ঘণ্টা পর মার্থা আর মাস্টার মশাই ফিরে আসলো। তাদের পেছন পেছন গ্রামের আরো অনেক লোক। সবাই সৌলের চিঠি পড়া শুনতে চায়। মাস্টার মশাই খামটা খুলে সৌলের চিঠিখানা পড়া শুরু করলেন।

প্রিয় বাবা,

আমি লন্ডনে বসবাস করছি। ফ্যাক্টরিতে আমার একটা চাকরি হয়েছে। তবে কাজটা খুব কঠিন। কিন্তু আমার বেতন বেশ ভালো।
আমি ভালো আছি। দেশের মানুষের সঙ্গে এখানে আমি থাকি। এই চিঠির সঙ্গে তোমাকে একশো ডলার পাঠালাম। এটা তোমার আর মায়ের জন্য।
মা-বাবা তোমাদের দু'জনকেই আমি খুব ভালোবাসি।

ইতি
তোমাদের সৌল

আদম মাস্টার মশাইকে জিজ্ঞেস করল, একশো ডলার? নাকি কোনো ভুল হচ্ছে? জবাবে মাস্টার মশাই বললেন, না না ভুল হবে কেন? এই যে তোমাকে একটা কাগজ দিয়েছে। এটাই একশো ডলার।
কাগজটা কিসের? আদম আবার প্রশ্ন করল।
কাগজটা একটা মানিঅর্ডার। তুমি দারপুর পোস্টঅফিসে গিয়ে এটা দেখালেই ওরা তোমাকে একশো ডলার দিয়ে দেবে।
একশো ডলার? আদম আবার জিজ্ঞেস করল?
আদমের প্রশ্ন শুনে উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসতে লাগল। আদম, তুমি এখন অনেক ধনি। তুমি এখন যা খুশি তাই কিনতে পারো। বাড়ি, জমি, যা খুশি।
জবাবে আদম বলল, অবশ্যই। আমি প্রথমে কিছু মিষ্টি ও খাবার কিনব। আর তোমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াব। জবাবে মার্থা বলল, আমার সৌল খুব ভালো ছেলে।
সেদিন বিকালে গোটা গ্রামে সৌলের মানিঅর্ডার নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলল। সংসারে যে অনেক কিছু লাগবে, সে কথাও আদমকে শোনাল মার্থা।

২. আদম দারপুর গেল
পরদিন খুব সকালে ঘুমন্ত গ্রাম রেখে আদম দারপুর পোস্টঅফিসের উদ্দেশ্যে ছুটল। দশ মাইল হেঁটে বড় রাস্তায় উঠে বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে আদম একটু জিরিয়ে নিল। সঙ্গে থাকা মার্থার দেওয়া নাস্তাও খেলো। তারপর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। দারপুর আদম খুব একটা যায় না। দারপুর বাজারে একটা মাত্র দোকান আদম চেনে। সেখান থেকে সংসারের জন্য কিছু কেনাকাটা করার অভিজ্ঞতা আছে তার। এছাড়া দারপুর তেমন ভালো মত চেনে না আদম।
দারপুর পৌঁছে আদম পোস্টঅফিসে ছুটল। পোস্টঅফিসে অনেক মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। মানিঅর্ডারের কথা বললে একটা লোক আদমকে লাইনে দাঁড়াতে বলল। আদম সেই লাইনের একেবারে সবার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।
এক সময় আদম পোস্টঅফিসের সেই লাইনের মাথায় চেয়ারে বসা বৃদ্ধ লোকটির কাছে পৌঁছল। বৃদ্ধ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? জবাবে আদম বলল, আমি।
আপনার কী চাই? বৃদ্ধ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন।
আদম মানিঅর্ডারের কাগজটি বৃদ্ধ'র হাতে দিয়ে বলল, এটা আমার মানিঅর্ডার। আমার এখন টাকা চাই। একশো ডলার।
বৃদ্ধ লোকটি চশমার ফাঁক দিয়ে আদমের দিকে একবার তাকালেন। বললেন, আইডেনটিটি কার্ড কোথায়?
আদম জবাবে বলল, কী বললা? বুঝি নাই। আবার কও?
বৃদ্ধ অনেকটা ক্ষেঁপে অনেকটা জোরগলায় বললেন, আইডেনটিটি কার্ড। আপনার আইডেনটিটি কার্ড কোথায়?
জবাবে বৃদ্ধ'র চেয়ে দ্বিগুন ক্ষেঁপে আদম বলল, কিসের আইডেনটিটি কার্ড? আমার টাকা চাই?
আদম থেকে চোখ নামিয়ে বৃদ্ধ অফিসারটি বললেন, আইডেনটিটি কার্ড ছাড়া কাউকে আমি টাকা দেই না। আইডেনটিটি কার্ড হল, যেখানে আপনার নাম, পরিচয় আর ছবি থাকবে। যা দেখে আমি বুঝব এই টাকার আপনি মালিক। এরপর কে আছে?
বুড়ো আদমকে তেমন পাত্তা না দেওয়ায় আদমও বুড়োর উপর একচোট ক্ষেপলো। আমি কে এইটা সবাই জানে। আমার নাম আদম। মিন্টা গ্রামে আদমকে চেনে না এমন কোনো লোক নাই। আমার কোনো আইডেনটিটি কার্ড লাগে না। আমারে দেখলে সবাই চেনে।
বুড়ো এবার একটু জোর দিয়ে বললেন, আহম্মক কোথাকার! কে আপনি? মিন্টা কোথায়? আমি খুব ব্যস্ত।
আদম আবার চিৎকার করল, আমার মানিঅর্ডার দাও। নইলে আমাকে একশো ডলার দাও।
বুড়ো এবার চশমার উপর দিয়ে আদমের দিকে চোখ তুলে বললেন, আমাকে আপনার আইডেনটিটি কার্ড দেখান। আমি আপনাকে সত্যি চিনি না। বলে আদমের হাতে মানিঅর্ডার দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
এবার আদম বুড়োর কাছে জানতে চাইলো, কোথায় আমি আইডেনটিটি কার্ড কিনতে পারব? বুড়ো কোনো জবাব দিলেন না। কিন্তু লাইনের একটি লোক বলল, তুমি মিউনিসিপল অফিসে যাও। ওরাই তোমাকে আইডেনটিটি কার্ড দিতে পারবে।

৩. আইডেনটিটি কার্ড
এরপর আদম মিউনিসিপল অফিসে গিয়ে এক অফিসারের কাছে আইডেনটিটি কার্ড চাইল। অফিসার আদমের হাতে একটা ফরম দিয়ে বলল, এই ফরমটা পূরণ করবা। সঙ্গে তোমার তিনটা ছবি আনবা। আর দুই ডলার হল তোমার ফি। আগামীকাল এসব ঠিকঠাক নিয়া আসো।
জবাবে অফিসারকে আদম বলল, আগামীকাল? আজ দেওয়া যায় না? আমার বাড়ি মিন্টা। দারপুর আসতে পাঁচঘণ্টা লাগে। আমি বুড়ো মানুষ। আজ কী কিছুতেই দেওয়া যায় না?
জবাবে অফিসার লোকটা বলল, কাল আসো। বলে অন্য কাজে সে ব্যস্ত হয়ে গেল।
এরপর আদম দারপুর বাজারে এসে মিন্টার কাউকে পায় কিনা অনেক খোঁজাখুঁজি করল। কিন্তু কাউকে পেল না। তারপর সেই পরিচিত দোকানদারের কাছে গেল। দোকানদারকে বলল, আমি একটা আইডেনটিটি কার্ড চাই। কিন্তু অফিসার এই ফরমটা দিয়ে বলল, তোমার তিনটা ছবি সহ এটা পূরণ করে দুই ডলার নিয়া আসো। এখন আমার তিনটা ছবি কিভাবে পাই?
দোকানদার ফরমটা দেখে বলল, হুম, বুঝেছি। এই সোজা যাও। তারপর দ্যাখো ওখানে একজন ছবি তোলার লোক আছে।
আদম বাজারে ঘুরে ঘুরে সেই ছবি তোলার ঘর খুঁজে বের করল। দরজায় কড়া নাড়া মাত্র এক লোক উকি দিলেন।
লোকদিকে দেখে আদম বলল, আমার একটা আইডেনটিটি কার্ড চাই। এখন আমার তিনটা ছবি লাগবে। শুনে ভদ্রলোক বলল, ওহ তাই বুঝি। আসো আসো, ভেতরে আসো। দেখ আমার ক্যামেরা কত ভালো। এটা দারপুরের সবচেয়ে ভালো ক্যামেরা, বুঝলে?
জবাবে আদম বলল, আমি জীবনেও ক্যামেরা দেখিনি। ওটা আমার দেখার ইচ্ছেও নাই। তুমি দ্রুত আমার ছবি তুলে দাও।
জবাবে লোকটা বলল, উহু, বেশি উতলা হইও না। এই নাও চিরুণী আর আয়না। তুমি আগে রেডি হও। ততক্ষণে আমি ক্যামেরা ঠিক করি।
শোনো বুড়ো, এই দারপুরে আমার চেয়ে ভালো ফটোগ্রফার একজনও নাই। তাই আমার রেট একটু বেশি। তোমার তিনকপি ছবির জন্য আমাকে আড়াই ডলার দিতে হবে। কী রাজী?
জবাবে আদম বলল, আড়াই ডলার?
জি। আর টাকাটা আমাকে আগেই দিতে হবে। ফটোগ্রাফার জবাব দিল।
জবাবে আদম বলল, আমি তো কখনো ছবি তুলি নাই। ছবি তোলার দামও জানি না।
ফটোগ্রাফার বলল, ঠিক আছে বুড়ো, তোমার ছবি আমি দুই ডলারে তুলে দেব। কী এবার রাজী?
এরপর আদম ফটোগ্রাফারকে দুই ডলার দিল। ফটোগ্রাফার আদমের ছবি তুললো। ছবি তোলা শেষে ফটোগ্রাফার বলল, আগামীকাল তুমি ছবি পাবে। শুনে আদম বলল, ছবি আমার এখনই চাই। তিনটা ছবিই চাই।
শুনে ফটোগ্রাফার বলল, বলদের মত কথা বলো নাতো বুড়ো! ছবি করতে কমপক্ষে চব্বিশ ঘণ্টা লাগবে। এখন যাও, কাল আসো।
আদম একটু অবাক হয়ে বলল, ঠিক আছে। কাল আসব? আমি কিন্তু সকালেই আসব?
জবাবে ফটোগ্রাফার বলল, ঠিক আছে। এখন তুমি যাও। আমার অনেক কাজ আছে। হ্যা, কাল সকালেই আসো।
এরপর আদম আবার বাস স্ট্যান্ড এসে মিন্টার উদ্দেশ্যে রওনা হল।
এদিকে বাড়িতে মার্থা ও গ্রামের লোকজন আদমের অপেক্ষায় পথের দিকে চেয়েছিল। আদম বাড়িতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেল। মার্থা জানতে চাইল, টাকা কোথায়? জবাবে আদম বলল, টাকা পাই নাই। মানিঅর্ডার ভাঙাতে পারি নাই। আগে আমার আইডেনটিটি কার্ড লাগবে। তারপর মার্থার কাছে সারাদিনের ঘটনা আদম সব খুলে বলল। সকালে আবার আদমকে দারপুর যেতে হবে। আদম খুব ক্লান্ত। তাই একটু খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল।

৪. কিসের ছবি!
পরদিন সকালে আদমের ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হল। সূর্য তখন অনেক উপরে উঠে গেছে। আদম দ্রুত রেডি হয়ে দারপুরের উদ্দেশ্যে ছুটলো। দশ মাইল হেঁটে বড় রাস্তায় এসে দেখল দারপুর যাবার কোনো বাস নাই। মিন্টা থেকে যত বাস যায় সব সকালেই চলে গেছে। আদমের আর সেদিন দারপুর যাওয়া হল না। পুরো বুধবার আদম বাড়িতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে কাটালো। গ্রামের সবাইকে আদম সকল ঘটনা খুলে বলল। আইডেনটিটি কার্ড ছাড়া টাকা দেবে না সে কথা শোনার পর মাস্টার মশাই বললেন, হ্যা, এটাই নিয়ম। তোমার আইডেনটিটি কার্ড লাগবে।
তারপর মাস্টার মশাই সেই ফরমটা পূরণ করলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার আদম খুব ভোরে আবার রওনা দিয়ে দশ মাইল হেঁটে বড় রাস্তায় গিয়ে দারপুরের বাস পেল এবং দারপুর পৌঁছাল। আদম প্রথমে বাজারে সেই ছবিঘরে গেল। কিন্তু ছবিঘর বন্ধ। অনেক জোরে জোরে শব্দ করে দরজায় নক করার পর এক বুড়ো মহিলা এসে দরজা খুলল। কে তুমি? কাকে চাই? জবাবে আদম বলল, আমার ছবি চাই। জবাবে বুড়ি বলল, আমার কাছে কোনো ছবি নাই।
জবাবে আদম বলল, মঙ্গলবার আমি এখানে ছবি তুলে গেছি। আমার এখন ছবি চাই?
বুড়ি বলল, ওহ। সে তো এখানে নাই। সে বাইরে। জবাবে আদম বলল, এই যে আমি এখানে বসলুম। সে আসলে আমি ছবি নিয়ে তারপর যাবো।
কয়েক ঘণ্টা পর ফটোগ্রাফার আসলো। আদমকে দেখে একটু মিটমিট করে হাসছে লোকটা। কাছে আসতেই আদম বলল, আমার ছবি দাও। তোমার জন্য আমি সেই অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি।
জবাবে লোকটি বলল, ওহে বুড়ো, কিসের ছবি? আমি তো তোমারে চিনি না।
শুনে আদমের মাথায় একেবারে রক্ত উঠে গেল। মঙ্গলবার আমি তোমার কাছে ছবি তুলেছি। আমার আইডেনটিটি কার্ডের জন্য ছবি। তিনকপি ছবির জন্য তোমাকে আমি দুই ডলার দিয়েছি। এখনই আমার ছবি দাও নইলে আমার টাকা দাও?
লোকটি বলল, কিসের ছবি? কিসের টাকা? তোমার কাগজপত্র দেখাও। রিসিপট কোথায়?
আদম আরো ক্ষেঁপে গেল। রিসিপট? কিসের রিসিপট? তুমি আমাকে কোনো রিসিপট দাও নাই?
লোকটি বলল, রিসিপট ছাড়া তো আমি ছবি দিতে পারবো না।
সঙ্গে সঙ্গে আদম বদমায়েশটাকে একটা জোড়ালো চটকানি মারল। আদম বুড়ো হলেও গায়ে এখনো অনেক শক্তি। সেই শক্তি আর রাগক্ষোভ মিশে এক একাকার অবস্থা। লোকটি আদমের এক চটকানিতে মাটিতে পড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। এই বুড়ো আমাকে মেরে ফেলবে, বাঁচাও, বাঁচাও।
বদমায়েশটার চিৎকার শুনে সেখানে কিছু লোক ভিড় করলো। আদম তখনো ফটাফট আরো কয়েক ঘা মারলো। বদমায়েশটা তখন আরো জোড়ে চিৎকার করলো। আদমও চিৎকার করে আরো মার দিল। এক সময় ভিড় করা লোকজন আদমকে ধরে থামালো। ওই সময় সেখান থেকে পুলিশ হেঁটে যাচ্ছিল। লোকজন আদমকে পুলিশের হাতে তুলে দিল। তখন বদমায়েশ ফটোগ্রাফার লোকটা বলল, এই বুড়ো আমাকে তিনবার হিট করেছে। ও আমাকে খুন করতে এসেছিল। ও একটা ডাকাত। আমার টাকা নিতে এসেছিল।
পুলিশ আদমকে থানায় নিয়ে গেল। পুলিশ আদমকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি ওকে তিনবার মেরেছো?
জবাবে আদম বলল, হ্যা, মেরেছি। ও আমার ছবি দেয় না।
জবাবে পুলিশ বলল, তোমার আইডেনটিটি কার্ড দেখাও?
আমি আদম। মিন্টা গ্রামে বাড়ি। আমি এখনো আইডেনটিটি কার্ড পাই নাই। জবাবে পুলিশ বলল, বুড়ো, যাও তোমার গ্রামে যাও। দারপুর আর কখনো এসে মারামারি করো না। যাও এখন।
তারপর পুলিশের থেকে ছাড়া পেয়ে আদম গ্রামে ফিরে আসলো।

৫. মানিঅর্ডার ভাঙালো !
পরদিন আদম গ্রামের সবাইকে এই ঘটনা খুলে বলল। গ্রামের সবাই খুব ক্ষোভ দেখালো। মার্থা খুব অখুশি হল। মার্থা বলল, সৌল খুব পরিশ্রম করে টাকা পাঠালো। আমাদের কোনো টাকাও নাই। এখন আমরা কি করব?
সেদিন সন্ধ্যায় মাস্টার মশাই আবার আদমের বাড়িতে আসলেন। আদমকে বললেন, শোনো, মিস্টার সেথের জন্য আমি একটা চিঠি লিখেছি। তুমি এই চিঠি নিয়ে গেলে সেথ তোমাকে টাকা দিয়ে দেবে। তুমি বরং এখন সেথের কাছে যাও। মানিঅর্ডার ভাঙাও।
জবাবে আদম বলল, সেথ কে?
মাস্টার মশাই বললেন, আমার বউয়ের চাচাতো ভাইয়ের বন্ধু। সে দারপুরের খুব প্রতাপশালী লোক। একমাত্র সেথই পারবে তোমার মানিঅর্ডার ভাঙাতে। তুমি এই চিঠি নিয়ে সেথের কাছে যাও।
শনিবার আদম আবার দারপুর গেল। অনেক কষ্টে সেথের বাসা খুঁজে বের করল। দরজায় নক করায় একজন লম্বা লোক দরজা খুলে জানতে চাইলো, কাকে চাই? আদম বলল, আমি সেথের সঙ্গে দেখা করতে চাই।
লম্বা লোকটি জিজ্ঞেস করলো, তুমি কে? সেথের সঙ্গে কিসের প্রয়োজন?
জবাবে আদম বলল, সেথের জন্য আমার কাছে একটা চিঠি আছে।
ও আচ্ছা, দাও চিঠিটা দাও?
আদম পকেট থেকে চিঠি বের করে লম্বা লোকটার হাতে দিয়ে বলল, এই যে চিঠি। কিন্তু আমি সেথের সাথে দেখা করতে চাই।
জবাবে লম্বা লোকটা বলল, অনেকেই সেথের সঙ্গে দেখা করতে চায়। উনি খুব ব্যস্ত মানুষ। এখন উনি এখানে নাই। আগে উনি তোমার চিঠি পড়বেন। তারপর দেখা হওয়ার প্রশ্ন!
আদম লম্বা লোকটার হাতে চিঠি দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর একটা বিশাল কালো গাড়ি এসে সেখানে থামলো। একজন লোক গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে গেল। বেশ কিছুক্ষণ পর লম্বা লোকটি এসে আদমকে ডেকে ভেতরে নিয়ে গেল।
সোফায় বসা সেথকে দেখিয়ে লম্বা লোকটি বলল, ওই যে মিস্টার সেথ। লম্বা লোকটার পেছন থেকে আদম সেথের উদ্দেশ্যে বলল, আমি আদম। মিন্টা গ্রামে আমার বাড়ি।
জবাবে মিস্টার সেথ বললেন, হ্যা, আমি তোমার গ্রাম চিনি। তোমার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আমি তোমার উপকার করতে পারব। মানুষকে উপকার করাই আমার কাজ। দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বসো।
আদম পকেট থেকে মানিঅর্ডার বের করে মিস্টার সেথের হাতে দিয়ে বলল, এই যে মানিঅর্ডার। একশো ডলার এখানে। আমার ছেলে বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে।
মিস্টার সেথ মানিঅর্ডার হাতে নিয়ে খুলে দেখে বললেন, তুমি এটা কোত্থাও ভাঙাতে পারবে না। এটাতে একশো ডলার নাই। এটাতে আসলে কিছুই নাই। এটা এখন একটা কাগজ মাত্র।
জবাবে আদম বলল, কী বললে? এটাতে কোনো টাকা নাই? এটা কিছুই না?
মিস্টার সেথ আবার মানিঅর্ডারে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বললেন, হুম, এখানে কিছুই নাই। তোমার ছেলে মানিঅর্ডার কি জিনিস এখনো বোঝে না। এটা আমাদের দেশে ভাঙানো যাবে না। এটা অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। আর এই দ্যাখো, এর ভাঙানোর তারিখও চলে গেছে। এটা দিয়ে এখন কিচ্ছু হবে না।
শুনে আদম বলল, কিচ্ছু হবে না?
জবাবে মিস্টার সেথ আদমের হাতে মানিঅর্ডার ফেরত দিয়ে বললেন, আমি খুব দুঃখিত। তুমি বুড়ো মানুষ। কষ্ট করে অনেক দূরের গ্রাম থেকে এসেছো। তোমাকে আমি এখন কী খাওয়াতে পারি বলো? বলে মিস্টার সেথ ভেতরে চলে গেলেন। জবাবে আদম বলল, আমি মোটেও ক্ষুধার্ত নই।
কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে আদমের জন্য চা আর বিস্কুট আসলো। আদম বসে চুপচাপ চা-বিস্কুট খেল। আর গভীর চিন্তা করতে লাগলো।
মিস্টার সেথ আবার ভেতর থেকে আসলেন। বললেন, শোনো বুড়ো, আমি মানুষের খুব উপকার করি। আমি একজন ধনি লোক। তোমার মানিঅর্ডারটা আমাকে দাও।
আদম আবার মানিঅর্ডার মিস্টার সেথের হাতে দিল। মিস্টার সেথ ওটা হাতে নিয়ে আবার বললেন, হ্যা, এখানে আসলে কিচ্ছু নেই। কিন্তু আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই। তোমার জন্য আমি এটা ভাঙাতে চাই। আমি তোমাকে কিছু টাকা দিচ্ছি। দাঁড়াও, আমি টাকাটা নিয়ে আসি। বলে মিস্টার সেথ আবার ভেতরে চলে গেলেন।
আদম মুহূর্তে একটু খুশি হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই লম্বা লোকটা আবার আসলো। আদমের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলল, এটা মিস্টার সেথ তোমাকে দিয়েছে। এখন তুমি যেতে পারো।
আদম টাকার খামটা হাতে নিয়ে মিস্টার সেথের বাসা থেকে বাইরে আসলো। বাস স্ট্যান্ডে আসার পথে খামটা খুলে দেখল সেখানে দশ ডলার। আদমের তখন একমাত্র ছেলে সৌলের কথা খুব মনে পড়ল।
আমার ছেলে সৌল আমার জন্য একশো ডলার পাঠিয়েছে। আর সেথ আমাকে মাত্র দশ ডলার দিল। ওহ, আমি যেন আরো বুড়ো হয়ে গেলাম! আমি আবারো গরিব হয়ে গেলাম!!
..............................
২ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×