ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের উপর সরকার বাহাদুরের আদৌ কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এরা যখন খুশি, যেভাবে খুশি, যত মুনাফায় খুশি, সেভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। বর্তমানে দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই। অথচ আঠারো কোটি মানুষকে তোয়াক্কা না করে এই অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে।
সরকার বাহাদুর এক চুলার গ্যাসের মূল্য ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা আর দুই চুলার গ্যাসের মূল্য ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করেছে। ১ থেকে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বিল বাড়ায় নি। তবে নতুন দরে ৫০ থেকে ৭৯ ইউনিট পর্যন্ত ৩ টাকা ৫৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা করেছে। ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ০১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ১৪ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ১৯ পয়সা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের জন্য ৫ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিট পর্যন্ত ৮ টাকা ৫১ পয়সা টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ৭০ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ঊর্ধ্বে ব্যবহারকারী গ্রাহকদের জন্য ৯ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৯ টাকা ৯৮ পয়সা করেছে।
গোটা বিশ্বে যখন তেল ও গ্যাসের মূল্য নিম্নমুখী তখন আমাদের সরকার বাহাদুর কোনো ধরনের যুক্তি না দিয়ে জনসেবার নামে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগ দিয়ে জনগণের পকেট কাটছে। সারা বিশ্বে তেলের দাম কমায় বিদ্যুৎ ঋৎপাদন খরচ এখন আগের চেয়ে কমেছে। অথচ আমাদের সরকার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়েছে। সরকারের এই গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অযুহাতে দেশের অন্যান্য অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রাতারাতি অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বাড়িয়েছে।
এক প্যাকেট বেনসন অ্যান্ড হেজেজের গায়ে মূল্য ২০২ টা কিন্তু ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ২২০ টাকা দিয়ে। এটা কেমন বিচিত্র মূল্য ব্যবস্থা?
খাবার হোটেলে হঠাৎ করেই পরোটার দাম একটাকা বেড়ে গেছে। সবজির বাজার চড়া, মাছের বাজারে উর্ধ্বগতি। এ এক আজব কিসিমের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় চলছে বাংলাদেশ। তেলের দাম বাড়ানো মানে যাত্রীভাড়া অটোমেটিক বেড়েছে। এই যে হঠাৎ করেই সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ল, এর পেছনে যুক্তি কী? বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যেখানে যুক্তির কপালে জোটে চাপাতির আঘাত।
আমাদের নিশ্চয়ই রোসা লুক্সেমবুর্গের কথা মনে আছে। জার্মানির এই মহিলা ছিলেন তুখোর মার্কসবাদী তাত্ত্বিক, ফিলোসপার, অর্থনীতিবিদ, পোলিশ-জুইস বিপ্লবী, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, শ্রমিক ও কর্মীর স্বার্থের জন্য যিনি মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে গিয়েছেন। ১৯১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন জার্মানির পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দলবদ্ধভাবে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় রোসা লুক্সেমবুর্গকে খুন করে। এই মহিলা খুন হন পুরুষদের হাতে। রোসা লুক্সেমবুর্গ বলেছিলেন, স্বাধীনতা চিরকালই তাদের, যারা অন্যরকম ভাবনা চিন্তা করেন। অর্থাৎ বিরোধীদের স্বাধীনতাটাই আসল স্বাধীনতা। এমন কি রুশ বিপ্লবের সময় রোসা লুক্সেমবুর্গ লেনীন এবং বলশেভিকদেরও সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীদের প্রতি তাদের আচরণের জন্য।
রোসা লুক্সেমবুর্গের সেই কথাটি এখনো বাংলাদেশের জন্য শতভাগ সত্য। বিরোধীদের স্বাধীনতাই স্বাধীনতা। বাংলাদেশে সরকারের বিপক্ষে কথা বললেই বিরোধীতা করা বুঝায়। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের জনসেবা করার জন্য সরকার পক্ষ কোনো দিনই বিরোধীতা এড়াতে পারে না। অথচ বিরোধীদের প্রতি সরকারের যে আচরণ, এটা এক কথায় স্বৈরাচারী আচরণ। কখনো কখনো একটি নির্বাচিত সরকারও স্বৈরাচার হয়ে ওঠে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচনকে যদি আমরা ভোটার বিহীন না বলে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতাও বলি, তবুও সরকার বাহাদুরের বর্তমান আচরণ অনেকটাই স্বৈরাচারী দোষে দুষ্ট। যদি রাষ্ট্রে কোনো বিরোধীপক্ষই না থাকে, তাহলে একটি নির্বাচিত সরকারও যে স্বৈরাচার সরকারের মত আচরণ করে, তার নজির এখন বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে।
এর যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা হল, যদি কোনো বিরোধীদল সক্রিয় নাও থাকে, শুধুমাত্র সরকারের বিভিন্ন আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ডই এক সময় অটোমেটিক জনসমর্থন হারায়। কারণ জনগণের সঙ্গে এ ধরনের সরকারের একটা বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়। গণমানুষের বিট বুঝতে এরা সব সময় অক্ষম থাকে। একদল চাটুকার ও দালালদের দ্বারা এ ধরনের সরকার সব সময় অন্ধের হাতি দর্শনের মত জনগণের মনের ভাব বুঝতে চেষ্টা করে। যার পরিনতি ইতিহাসে ভুড়িভুড়ি। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা মাথায় রেখে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কেন চড়া এ বিষয়ে সরকারকে খোলাখুলি জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
.............................
২৮ আগস্ট ২০১৫
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৩০