somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারী বৃষ্টিতে নাকাল রাজধানীবাসী !!!

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানী ঢাকা ডুবে নাকাল হয় রাজধানীবাসী। একদিকে তীব্র যানজট অন্যদিকে অতিবৃষ্টির পানিতে ডুবে হাজারো বিরম্বনায় এখন রাজধানীবাসী। এভাবে যদি আরও এক সপ্তাহ ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে পুরো রাজধানী ঢাকা অচল হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ভরা ভাদ্র মাসের অতিবৃষ্টির কারণে অনাকাঙ্খিত বন্যা মোকাবেলা করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখন ঢাকায়।

আচ্ছা, রাজধানী ঢাকার এখন জনসংখ্যা কত? এক কোটি? দেড় কোটি? দুই কোটি নাকি আড়াই কোটি? তাদের মধ্যে রাস্তায় বা খোলা জায়গায় কতজন বসবাস করেন? তাদের দুর্দশা এখন কতোটা চরমে? ঢাকার এত এত মানুষের জন্য বর্তমানে যানবাহন কত? পাবলিক বাস কত? প্রাইভেট কার কত? রিক্সা কত? এছাড়া নানান কিসিমের যানবাহন বা কত? সেই তুলনায় ঢাকার রাস্তায় জায়গা আছে কতটুকু? একটি আদর্শ মহানগরীর জন্য যেখানে অন্তত শতকরা ২৫ ভাগ জায়গা রাস্তার জন্য বরাদ্দ থাকার কথা, সে তুলনায় রাস্তার জন্য ঢাকায় কতটুকু শর্ত মানা হয়েছে?

ঢাকায় আগে যে ৫৬টি খাল ছিল, সেগুলো কারা দখল করল? কিভাবে দখল করল? সেই খাল গুলো কোথায় কিভাবে হারিয়ে গেল? বর্তমানে ঢাকায় অস্তিত্ব আছে যে ২৬ টি খালের, সেগুলোর আন্তসংযোগ বর্তমানে কতোটা রক্ষা করা হয়েছে? ঢাকার চারপাশে চারটি নদী- বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ। ঢাকার চারপাশে চারটি নদী থাকা সত্ত্বেও পানি নিস্কাশনে এত সমস্যা হবে কেন? ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা তাহলে কেমন?

ঢাকার রাস্তাগুলো কেন বর্ষাকালেই সবচেয়ে বেশি খোড়াখুড়ি করা হয়? বছরের পর বছর এই নিয়ম আর কত যুগ ধরে চলবে? পানি নিস্কাশনের জন্য রাজধানী ঢাকার ড্রেনেজ সিস্টেম কতোটা পরিকল্পিত ও কার্যকর? এই অনাকাঙ্খিত দুর্যোগের মধ্যে আবার গ্যাসের ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের দাম উর্ধ্বমুখী। ঢাকায় জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তারা কতোটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে? নাকি সরকারের একটি মহল এই দাম বাড়ানো থেকে কোটি কোটি টাকার মুনাফা ঘরে তোলে? সরকার দাম বাড়ালো গ্যাস আর বিদ্যুতের। তাহলে যাত্রীবাসের ভাড়া কেন বাড়ল? খাবার হোটেল পরোটার দাম কেন বাড়ল? সবজির বাজার কেন চড়া?

এমন হাজারো প্রশ্ন যদি দায়িত্ব প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, মন্ত্রণালয় বা দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, কী ধরনের জবাব পাওয়া যাবে? আমরা সবাই যেটা অনুমান করতে পারি, এসব প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যে ব্যাখ্যাটি দাঁড় করাবেন, সেটি এখন প্রায় আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। মাগার রাজধানীবাসীর নাকাল ও দুর্ভোগের হার তাতে একটুও কমেনি বরং দিনদিন বেড়েই চলেছে। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, আসল সমস্যাটি কোথায়? গলদটা সত্যি সত্যি কোথায়? আর সেই গলদের দায় কার বা কাদের? নাকি আমপাবলিক শুধু দুর্দশা সয়ে যাবার জন্য সারা বছর প্রস্তুত থাকবে? সেই গলদের সমাধান বা কী? ৪৪ বছরেও যে সমস্যার সমাধান হয়নি বরং দিন দিন কেবল বেড়েই চলছে, সেই সমস্যার সমাধান হতে আসলে ঠিক আর কত বছর লাগবে? এসব প্রশ্নের সত্যি সত্যি কোনো উত্তর বাংলাদেশের মানুষের জানা আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।

রাজধানী ঢাকার পানি নির্গমণের নানারকম দায়িত্বে আছে অন্তত চারটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান- ঢাকা ওয়াসা, ডিসিসির দু'পাশের কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড আর রাজউক। এই চারটি প্রতিষ্ঠানের চরম দায়িত্বহীনতা, অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত পদক্ষেপ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ের অভাব, দুর্নীতি, নাগরিকদের দুর্ভোগ দিয়ে আড়ালে রমারমা বাণিজ্য, দখল, রাজনৈতিক দখল, ক্ষমতার অপব্যাবহার, ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার দৌরাত্ম, এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের গা সয়ে যাওয়া মানসিকতাই এই অকাল দুর্দশার জন্য দায়ী। পাশাপাশি টিএনটি, ডেসা, সহ সেবাপ্রদান করা সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো এসব প্রশ্নের দায় এড়াতে পারে না। দায় এড়াতে পারে না সরকার বাহাদুর। দায় এড়াতে পারে না জনসেবার নামে জনদুর্ভোগ দেওয়ার নির্লজ্ব ব্যবস্থা! আমাদের গোটা সিস্টেমের কোথাও একটা মস্তবড় ফাঁক আছে নিশ্চয়ই।

পাশাপাশি সরকারের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বিপরীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির, বাণিজ্য, মুনাফা, ভাগ-ভাটোয়ারা, আর একগুয়েমি অনেকটাই দায়ী। দিনে দিনে রাজধানী ঢাকাকে একটি পরিকল্পিত আবর্জনায় পরিনত করার দিকেই সবার লক্ষ্য। রাজধানী ঢাকা আর কত দিন পরে পরিত্যক্ত নগরীতে পরিনত হবে, এই নিয়ে বরং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এখন কোর্স চালু করতে পারে। তাঞলে ছেলেমেয়েরা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ভালো হবেষণা রিপোর্ট লিখতে সমর্থ হবে। যানজটে রাজধানী অচল। পানি বন্দি হয়ে রাজধানীবাসী অচল। এ যেন তোতা পাখির বুলি। ঘুম থেকে উঠে এটা শোনাই যেন আমাদের নিয়তি। অথচ নেপথ্যে যারা দায়িত্বে, তাদের যেন কিচ্ছু করার নেই। নাকে তেল দিয়ে তাদের বুঝি বারো মাসই ঘুমানোর সময়! হায়...

একটি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সময়ের মূল্য থাকা উচিত। রাজধানী ঢাকার সাধারণ নাগরিকদের সময়ের যেন কোনোই মূল্যই নেই কারো কাছে। কেবল ভিআইপি, সিআইপি-মন্ত্রী বাহাদুরদের সময়ের ভারী উচ্চ মূল্য! একজন অসহায় রোগীর যানজটে আটকা থাকা সময়ের কোনো মূল্য নাই এখানে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যারা দায়িত্বে তাদের যেন কারো কোনো দায়িত্ব নেই! পানি নিস্কাশনের যাদের দায়িত্বে, তাদের যেন কোনো দায়িত্ব নেই। রাজউকের যেন কোনো দায়িত্ব নেই। ওয়াসা, ডেসা, টিএন্ডটি, সিটি করপোরেশান কারো যেন কোনো দায়িত্ব নেই। সরকার বাহাদুরেরও যেন কোনো দায়িত্ব নেই। এ কোন মগের মুল্লুক রে ভাই!!

এ নিয়ে লিখে সময় নষ্ট করে কোনো লাভ নেই। তারচেয়ে বরং আসুন দুটি ছোট্ট দৃষ্টের মধ্যে একটু চোখ বুলাই।

দৃশ্য এক:
বাংলাদেশে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মাননীয় ভাইস চ্যাঞ্চেলর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত প্রফেসরকে ক্যাম্পাসে বসেই কলার ধরে আচ্ছামত বকাঝকা করলেন। নানান কিসিমের হুমকি ধামকি দিলেন! একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী-কর্মকর্তা-কর্মচারী সেই দৃশ্য দেখে তখন হাততালি দেবে নাকি ঘটনায় জড়িতদের বিবাদ মেটাতে নাক গলাবে? এই দৃশ্যকে বাংলাদেশের বাইরের মানুষ বা কিভাবে মূল্যায়ন করবে? আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলরগণ নিজেদের পদরক্ষার জন্য সময় বেশি নষ্ট করেন নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশি সময় দেন?

দৃশ্য দুই:
বাংলাদেশের কোনো একটি গ্রামের হাটের দৃশ্য। পাওনা টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন বাগবিতণ্ডার পর পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে একজন পাওনাদার তার দেনাদারকে ভরা হাটে পেয়ে গলায় গামছা দিয়েছেন। সেই দৃশ্য দেখার জন্য হাটের কিছু মানুষ জটলা করল। কয়েক মিনিটের মধ্যে দুই চারজন মাতবরও সেখানে উপস্থিত হলেন। এবার ঠিক হলো পাওনাদার আর দেনাদারের বিষয় নিয়ে শালিস বসবে হাটের পর। বলুন তো সেই শালিস দেখার জন্য কতজন লোক সেদিন হাট থেকে দেরি করে বাড়ি ফিরবে? আর যারা ঘটনা জেনে আগেই বাড়িতে গেছেন, তাদের বা শতকরা কতজন সেই ঘটনায় পরে কী বিচার হলো, তা জানার জন্য কৌতুহলী থাকবেন?

এবার বলুন তো, এই দুইটি দৃশ্যকল্পের মধ্যে বাংলাদেশে আপনি কতটুকু পার্থক্য আবিস্কার করেন? আমরা কতটা সভ্য হয়েছি? একবার ভাবুন... নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে দেখুন না, জবাব পাওয়া যায় কিনা...
.............................
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১:১৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×