somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পালাকার-এর ভারত জয়!!!

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের পর এবার ভারত জয় করল পালাকার। সম্প্রতি কলকাতার দর্শকদের মুগ্ধ করেছে ঢাকার থিয়েটার গ্রুপ পালাকার। নান্দীরঙ্গ আয়োজিত পাঁচ দিন ব্যাপী পঞ্চম নাট্যোৎসবের তৃতীয় দিনে, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে, কালীঘাটের তপন থিয়েটার মঞ্চে পালাকার (বাংলাদেশ)-এর প্রযোজনা ছিল 'নারীগণ'। 'নারীগণ' নাটকটির রচয়িতা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন আতাউর রহমান। নাটকটির সহ-নির্দেশনা দিয়েছেন আমিনুর রহমান মুকুল।

নান্দীরঙ্গ আয়োজিত পাঁচ দিন ব্যাপী বাংলার এপার-ওপার পঞ্চম নাট্যোৎসবে এবার বাংলাদেশ থেকে নান্দীরঙ্গের আমন্ত্রণে কলকাতা গিয়েছিল ঢাকার থিয়েটার গ্রুপ পালাকার। কালীঘাটের তপন থিয়েটার মঞ্চে ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হাউজফুল দর্শকের সামনে পালাকার প্রদর্শন করল প্রায় দুই ঘণ্টার নাটক 'নারীগণ'। 'নারীগণ' একটি ঐতিহাসিক নাটক। দুইশো ষাট বছর আগে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে ব্রিটিশ বেনিয়াদের ষড়যন্ত্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন তারিখের সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধে ব্রিটিশ লর্ড রবার্ট ক্লাইভের সৈন্যদের কাছে বাংলার নবাবের প্রধান সিপাহশালার মীরজাফর আলী খাঁ'র ষড়যন্ত্রে বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হন। আর তখন ভারতবর্ষে ইংরেজদের দুইশো বছরের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয়।

১৭৫৭ সালের ৩ জুলাই উপমহাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশ প্রায় দুইশো বছর ব্রিটিশদের গোলামিতে পরিণত হয়েছিল। নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর পর নবাব পরিবারের অন্দরমহলের নারীদের কী হয়েছিল, সেটাই 'নারীগণ' নাটকের মূল বিষয়বস্তু।

৩ জুলাই নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর নবাব মহলের অন্তপুরে বন্দি নারীদের নানান উপলব্ধি, নবাব সিরাজের বন্দি নানী শরিফুন্নেছা, মা আমিনা, পত্নী লুৎফুন্নেসার জবানে নাটকটিতে উঠে আসে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা পরম্পরা। রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ, নারীর মর্যাদা ও নারীদের ইচ্ছার স্বাধীনতাসহ অনেক বিষয়ে অবমাননার হাত থেকে বাঁচতে এই বন্দি নারীরা তখন আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে না। কারণ তাদের আত্মহননের পথও তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। অঙ্গুরির বিষ কেড়ে নেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় খঞ্জর। প্রহরীর রূঢ় হাত তাদের শরীর স্পর্শ করে। তাদের বন্দি করার মাধ্যমেই কেবল ঘটনার শেষ হয় না। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে এবং বিদ্রোহের পথ রুদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এসব নারীদের একসময় হত্যাও করা হয়। এসব ঘটনা পরম্পরা নিয়েই 'নারীগণ' নাটকটি।

কালীঘাটের তপন থিয়েটার মঞ্চে সেদিন হাউজফুল দর্শকের সামনে ইতিহাসের সেই ঘটনা পরম্পরার এক জীবন্ত চিত্র তুলে ধরে পালাকার। 'নারীগণ' নাটকটি কলকাতার দর্শকদের কাছে সেদিন হয়ে উঠেছিল ইতিহাস ফিরে দেখার এক দুর্লভ মুহূর্ত। উপস্থিত দর্শকরা ফিরে গিয়েছিলেন ইতিহাসের দুইশো ষাট বছর আগে সংগঠিত সেই ঐতিহাসিক ঘটনা পরম্পরায়। প্রায় দুই ঘণ্টার নাটকে এক ঘোর লাগা নস্টালজিয়ায় ইতিহাস ভ্রমণে মেতেছিলেন তপন থিয়েটার মঞ্চের উপস্থিত দর্শকমণ্ডলী। নাটক শেষে কলকাতার থিয়েটারের অনেক প্রথিতযশা নাট্যব্যক্তিত্ব মঞ্চে উঠে পালাকার নাট্যদলকে তাঁদের সেই ইতিহাস ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শোনান। পাশাপাশি সেই ঐতিহাসিক স্মৃতিময় নস্টালজিক অভিজ্ঞতা শোনানোর ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা পালাকারের 'নারীগণ' প্রযোজনার ব্যাপক প্রশংসা করেন।

তপন থিয়েটার মঞ্চে পালাকার যেভাবে দর্শকদের মুগ্ধ করেছে, সেই প্রশংসাবাণী না শুনিয়ে, সেদিনের নাটক শেষের ছোট্ট একটা ঘটনার উদাহরণ এখানে কেবল উল্লেখ করতে চাই। সাত আট বছরের একটি শিশু তার মায়ের সঙ্গে সেদিন মঞ্চে ছিল। নাটক ও নাটক শেষে কলকাতার বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিদের ওই প্রশংসা পর্ব শেষ হলে, তপন থিয়েটার হলের দর্শক সারিতে ওই শিশুকে নিয়ে তখনো বসেছিলেন এক মা। শিশুটির আবদার নবাব সিরাজকে না ছুঁয়ে কিছুতেই সে বাড়িতে যাবে না। পরে শিশুটির সেই আবদার মেটানো হয়েছিল নবাবকে শিশুটির সামনে হাজির করে।

'নারীগণ' নাটকে নবাব সিরাজের নানী শরিফুন্নেছার চরিত্রে অভিনয় করেন ফারহানা মিঠু। সিরাজের মা আমিনার চরিত্রে অভিনয় করেন দীপ্তা রক্ষিত লাভলী। সিরাজের পত্নী লুৎফার চরিত্রে অভিনয় করেন তানিয়া হোসাইন। সিরাজের খালা ঘসেটি বেগমের চরিত্রে অভিনয় করেন ফাহমিদা মল্লিক শিশির। এছাড়া নাটকে নতর্কী চরিত্রে জয়িতা মহলানবীশ, ডালিম চরিত্রে মনিরা অবনী, পায়েলী চরিত্রে তিথী দাশ সাথী, নবাব সিরাজের চরিত্রে শামীম সুফী, কুতুব-১ চরিত্রে শাহরিয়ার খান রিন্টু, কুতুব-২ চরিত্রে সানসি ফারুক, কুতুব-৩ চরিত্রে শামীম সাগর, কুতুব-৪ চরিত্রে সেলিম হায়দার, আলীবর্দী খাঁ চরিত্রে ফাইজুর মিল্টন, মাঝি চরিত্রে হিমালয় নিমগ্ন অরিত্র, প্রহরী-১ চরিত্রে আমিনুর রহমান মুকুল, প্রহরী-২ চরিত্রে ইমরান হোসেন, প্রহরী চরিত্রে মুরাদ, বাঁদি চরিত্রে নভেম্বর টুইসডে রোদ।

'নারীগণ' নাটকটির মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন অনিকেত পাল বাবু, আলোক পরিকল্পনা করেছেন ঠাণ্ডু রায়হান, সংগীত পরিকল্পনা করেছেন অজয় দাশ, পোষাক পরিকল্পনা করেছেন লুসী তৃপ্তি গোমেজ, পোস্টার করেছেন দিলারা বেগম জলি এবং নাটকটির প্রযোজনা অধিকর্তা ছিলেন আমিনুর রহমান মুকুল।

নান্দীরঙ্গ নাট্য সংস্থা এবার কলকাতায় পালাকার পরিবারকে যেভাবে বরণ করেছেন, যে আন্তরিক আতিথিয়েতা দেখিয়েছেন, প্রতিটি মুহূর্ত যেভাবে পালাকারের সকল চাহিদা মিটিয়েছেন, বিশেষ করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নাটকের সেট নির্মাণ, লাইট সেটআপ, মিউজিক সেটআপসহ সকল কাজে সহযোগিতা দিয়েছেন, তা সত্যি সত্যি দুই বাংলার থিয়েটারের জন্য এক নবযুগের সূচনা করেছে। বিশেষ করে নান্দীরঙ্গের অপুদা (সম্বুদ্ধ গাঙ্গুলী) যেভাবে সার্বক্ষণিক পালাকার পরিবারকে সঙ্গ দিয়েছেন, সেজন্য পালাকার পরিবার সত্যি সত্যিই কৃতজ্ঞ।

বাংলাদেশ-ভারত এপার বাংলা-ওপার বাংলার যে যোগসূত্র নান্দীরঙ্গ ও পালাকার স্থাপন করেছে, এটা আগামীতে উভয় দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ে ও থিয়েটার চর্চায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। উভয় দেশের এই কালচারাল ফ্রেন্ডশিপ ভবিষ্যতে আরো মজবুত ও টেকসই হোক। নান্দীরঙ্গ নাট্য সংস্থাকে পালাকার পরিবারের পরাণের গহীন ভেতর থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। জয়তু নান্দীরঙ্গ। জয়তু পালাকার।

.................................
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×