somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমর একুশে বইমেলার ডায়েরি!!!

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ছিল অমর একুশে বইমেলার উনিশতম দিন। আজকে বইমেলায় অনেক বইপ্রেমীকে বই কিনতে দেখেছি। যা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। বইমেলায় ঢুকে আজ শুরুতেই দিব্যপ্রকাশের সামনে পেলাম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের ভাইকে। দিব্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশ পেয়েছে সাবের ভাই'র নতুন উপন্যাস 'এই কাহিনী শেষ হয়নি'। সাবের ভাই'র সাথে আড্ডা মেরে গেলাম বিদ্যাপ্রকাশের সামনে।

বিদ্যাপ্রকাশের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলাম জনপ্রিয় মনোবৈজ্ঞানিক লেখক মোহিত কামালের সঙ্গে। মোহিত ভাই পাঠকদের এক আশ্চার্য জাদুতে মুগ্ধ করেন। মোহিত ভাই'র কোনো বই যে পাঠক একবার পড়েন, সে তার পরবর্তী বইগুলো এসে কেনেন। মোহিত ভাই'র কাছে সেই রহস্যের দু'একটা শুনে খুব মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আর মোহিত ভাই'র ভক্তদের সঙ্গে তাঁর প্রয়োগ করা কৌশল শেখার চেষ্টা করছিলাম। এ বছর বিদ্যাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত মোহিত কামালের উপন্যাস 'তবুও বাঁধন' এবারের বইমেলায় বেস্ট সেলার তালিকার অন্যতম একটি বই। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী দেলোয়ার রিপন।

বইমেলায় এলোমেলা ঘুরে ঘুরে বইপ্রেমীদের বই কেনা দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। একসময় গেলাম জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির স্টলে। সেখানে জাকির হোসেন ভাই তৃষ্ণা মেটালেন। একুশের বইমেলায় এবার জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির একটি স্টল আছে। বলা যায় এবারের বইমেলার মাতুব্বর প্রকাশকদের এটা একটি অানুষ্ঠানিক অফিস। জাকির ভাই'র কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, বইমেলায় লেখকদের বসার জন্য তাঁরা কী ব্যবস্থা আদায় করেছেন বাংলা একাডেমি থেকে? বইমেলায় বইপ্রেমীদের জন্য পানি খাবারের ব্যবস্থা নাই কেন? বইমেলায় একটি স্টল খুঁজে পাবার জন্য বইমেলায় কোনো সাইনবোর্ড নেই কেন? জাকির ভাই কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি অন্যপ্রকাশের প্রকাশক ও লেখক-নির্মাতা মাজহারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পাঞ্জেরী প্রকাশনার প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক ভাইকে আমি এসব প্রশ্নের জবাব পেতে মেলায় অনেক খুঁজেছি। কিন্তু না পেয়ে পরে উদ্যান থেকে এপারে এসে একাডেমিতে গিয়ে উত্তরাধিকার কার্যালয়ে গিয়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক কবি সরকার আমিনের রুমে গিয়ে আবার আড্ডায় মাতলাম। আমার সঙ্গে ছিল দুই থিয়েটারকর্মী ও অভিনেতা কাজী ফয়সাল ও ইকতারুল ইসলাম। আমিন ভাই নিজ হাতে আমাদের কফি বানিয়ে আপ্পায়ন করলেন।

কিছুক্ষণ পর আমাদের আড্ডায় শরিক হলেন প্রথম কানাডা প্রবাসী কবি সাদ কামালী ভাই ও পরে ডক্টর অনু হোসেন। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে আমার বসনিয়ার যুদ্ধের উপর যে ডকু ফিকশন 'বসনা' প্রকাশ পেয়েছে, সেটি সাদ ভাই নাড়াচড়া করতে করতে প্রেমে পড়লেন। সাদ ভাই 'বসনা' কিনতে খুব আগ্রহী। আমরা চা-সিগারেটের টাকা বের করার জন্য সাদ ভাইকে বললাম, এই কপিটা আপনি গায়ের মূল্যে কিনলে আমাদের একশো টাকা লাভ হবে। নতুবা আপনাকে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে কষ্ট করে সংগ্রহ করতে হবে। সাদ ভাই গাজীপুর থেকে ফেরার পথে টঙ্গীতে একটা মনোরম কফি হাউজে আড্ডা মারার পর বইমেলায় এসেছেন। ঢাকার রাস্তার জ্যামের ধক্কলে সাদ ভাই তখন কিছুটা বিধ্বস্ত! তাই আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আমাদের নগদ একশো টাকা বাড়তি দিয়ে 'বসনা' কিনলেন।

আমিন ভাই অলরেডি 'বসনা' ৬০ পৃষ্ঠা পড়েছেন। আমিন ভাই বললেন, সাম্প্রতিক সময়ে একটানা এত পৃষ্ঠা পড়ার এটা একটা রেকর্ড। আমিন ভাই'র আমার 'বসনা' ভালো লাগছে জেনে খুব খুশি হলাম। অনু ভাইও 'বসনা' কেনার আগ্রহ দেখালেন। একাডেমি থেকে নিচে এসে লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গনে বহেড়াতলায় আড্ডা দিলাম কবি ওবায়েদ আকাশের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার নিয়মিত বন্ধুদেরও পেয়ে গেলাম সেখানে।

তরুণ কবি ও আর্টিস্ট সাদি তাইফ দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে লিখছেন কাব্যগ্রন্থ 'পাখিশাস্ত্র'। প্রায় হাজার পৃষ্ঠার বই পাখিশাস্ত্রের বিশেষত্ব হলো বইতে সাদি নিজের আঁকা পেইন্টিং দিয়ে সুন্দর অলংকরণ করেছেন। 'পাখিশাস্ত্র' এবারের বইমেলায় সবচেয়ে বড় ভলিউমের কাব্যগ্রন্থ। সাদি যখন বইটি হাতে দিলেন, বইয়ের ভেতরটা দেখেই প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। আহা এমন একটি বই লেখার স্বপ্ন যে কোনো তরুণ কবি'র জন্য সত্যি সত্যি একটা স্বপ্ন। সাদি সেই স্বপ্ন সফল করে দেখিয়েছেন। 'পাখিশাস্ত্র'-এ ফটোগ্রাফিও আছে। তরুণ ফটোগ্রাফার হোসাইন আতাহার সূর্য'র অনেক ফটোগ্রাফি আছে 'পাখিশাস্ত্র'-এ। অভিনন্দন সাদি তাইফ।

আজকের আড্ডায় ছিলেন কবি মাহমুদুল হাসান মাসুম, কবি শাফি সমুদ্র, লেখক ঋষি এস্তেবান, কবি ও দ্রষ্টব্য সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, শিল্পী চারু পিন্টু, কবি মাহবুব আলম, শিল্পী শতাব্দী ভব, কবি অহো নওরোজ, ড. মাসুদুজ্জামান, অনুবাদক সোহরাব সুমন, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, কবি জুয়েল মোস্তাফিজ, কবি মামুন খান, কবি আসমা বিথী, কবি স্বপন নাথ, কবি বদরুল হায়দার, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী, কবি শাখাওয়াত টিপু, কবি তানিম কবির, চিৎকার ব্যান্ডের শিল্পী পদ্ম, সাংবাদিক-লেখক রওশন ঝুনু, কবি অতনু তিয়াস, কবি রনি অধিকারী, কবি সোহাগ সিদ্দিকী, কবি অনিকেত শামীম, কবি মনির ইউসুফ, চলচ্চিত্র নির্মাতা নিয়াজ মাহমুদ প্রমুখ।

এছাড়া নিয়মিত যাদের সঙ্গে দেখা ও কুশল বিনিময় হয় বিপ্লবী ইফতেখার আহমেদ বাবু, কবি অনার্য আদিম, শতাব্দী সানজানা, জ্যোতি, ইভা, উপমাসহ অনেকেই ছিল। আজ নিয়ে দু'দিন কবি নীল সাধু বইমেলায় অনুপস্থিত। সাধুদাকে খুব মিস করেছি। গতকাল তুলা ভাবী এসেছিলেন, আজ তুলা ভাবীও মালি দিছেন।

বইমেলা থেকে বের হবার একটু আগে জানতে পেলাম একুশের বইমেলায় শিল্পী শতাব্দী ভব'র লেখা 'ভব'র চটি' বইটি, যেটা গত বছরের বই, প্রকাশ করেছিল পাললিক সৌরভ, সেটি একাডেমি'র মিডিয়া সেন্টার থেকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি নিয়ে আমি বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা কবি হামীম কামরুল হককে জিজ্ঞেস করেছি। হামীম বললেন, ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো বই নিষিদ্ধ ঘোষণার বিপক্ষে আমি। আমি জানি না কী কারণে 'ভব'র চটি' নিষিদ্ধ করেছে। তবে শিল্পী শতাব্দী ভব জানালেন, একাডেমি থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নোটিশের চিঠি তিনি পাননি।

শতাব্দী ভব এমনিতে বিপ্লবী শিল্পী। গত বছর থেকে প্রকাশিত লেখক। কিন্তু ভব'র চটি' গত বছরের বই হলেও এবার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটি, আমার কাছেও ক্লিয়ার না। তবে পাঠকদের জন্য বলতে পারি, 'ভব'র চটি' একুশের বইমেলায় নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যাবে।

বাংলা একাডেমি'র কিছু খামখেয়ালীপনার প্রতিবাদ করলেও আমরা সবসময় একটি নিরাপদ ও সফল অমর একুশে বইমেলা দেখতে চাই। বইপ্রেমীদের হাতে নতুন বই দেখে আজ যেমন আমার ভালো লেগেছে। আশা করি বইমেলার শেষদিন গুলোও এমন বই হাতে সবাই নিরাপদে বাড়ি ফিরবেন। আমাদের প্রাণের বইমেলাকে আমরাই সফল করে তুলব। বই কিনুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন। অমর একুশে বইমেলা সফল হোক।

.........................................
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪১
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×