somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আমার কিছু প্রস্তাব!!!

০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৬ বছর হয়ে গেছে। আমাদের অমর একুশে বইমেলার বয়সও প্রায় ৪৫ বছর। অথচ আমরা এখনো একটি গুছানো বইমেলা করতে সামর্থ্য দেখাতে পারিনি। অমর একুশে বইমেলা নিয়ে আমি এখানে কিছু যৌক্তিক প্রস্তাব পেশ করছি। আশা করি আগামীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও বাংলা একাডেমি এবং অংশগ্রহণকারী প্রকাশকগণ বিষয়গুলো যথাযথভাবে আমলে নেবেন।

১. অমর একুশে বইমেলাকে দুইভাগ করা চলবে না। বইমেলা হবে একভাগে। টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে স্টল বরাদ্দ দোওয়ার পাশাপাশি, একাডেমি'র ভেতরের পুরো অংশটা রাখা হোক বইমেলার জন্য। এতে জায়গা সংকটের দোহাই আর চলবে না।

২. বাংলা একাডেমি ও শিশু একাডেমি ছাড়া অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও বা এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া চলবে না।

৩. একাডেমি'র মাঠে যেখানে বছরের পর বছর প্রবন্ধ পাঠের মস্করার ব্যর্থ আয়োজন করা হয়, ওটা বইমেলার মাঠ থেকে দয়া করে একাডেমির ভেতরে কোনো হলে নিয়ে যাওয়া হোক। বইমেলার সময় সকল অনুষ্ঠান সেই হল থেকে প্রচার করা হোক।

৪. প্রবন্ধ পাঠের ওই মাঠটিসহ নজরুল মঞ্চের সামনের জায়গাটি কেবল শিশু কর্নার করা হোক। পাশাপাশি লিটল ম্যাগ কর্নারে বহেড়াতলায় যাবার জন্য চারপাশ খোলা রাখা হোক।

৫. একাডেমি'র ভেতরে কোনো খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া চিরতরে বন্ধ করা হোক। খাবারের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হোক উদ্যানে। আর বইমেলা চলাকালীন উদ্যানে প্রবেশ ও বাহির হবার জন্য কয়েকটি অস্থায়ী গেট করা হোক।

৬. বইমেলায় প্রবেশ ও বাহির হবার জন্য টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের পাশাপাশি, উদ্যান থেকে কয়েকটি আলাদা আলাদা অস্থায়ী প্রবেশ ও বাহির গেট করা হোক।

৭. মান উত্তীর্ণ ও বাছাইকৃত মোট চারশো জন প্রকাশকের জন্য অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়া হোক। যারা একুশে বইমেলায় নোট বই বা পাইরেসি বই বিক্রি করার জন্য স্টল বরাদ্দ পায়, তাদের বরাদ্দ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

৮. টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তার দু'পাশে কেবল দুই সারি স্টল বরাদ্দ করা হোক।

৯. বইমেলার সকল প্রবেশ পথে স্টল নম্বরসহ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মানচিত্র স্থাপন করা হোক।

১০. বইমেলায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করার ব্যাপারে মেলা চলাকালীন সময়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

১১. বইমেলায় যাবার জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করা হোক। যে বাসগুলো চারুকলার সামনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি'র বাসভবনের সামনে, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিউটিট এবং কার্জন হলের সামনে বইমেলায় আগতদেরকে ড্রপ করবে এবং বইমেলা শেষে তুলে নেবে।

১২. সকল প্রাইভেট কারের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্কের পাশের খোলা রাস্তায় পার্কিং ব্যবস্থা করা হোক। বাকি পথুটুকু গাড়িওয়ালারা পায়ে হেঁটে যাবেন। যে কারণে উদ্যান থেকে বইমেলায় বেশ কয়েকটি প্রবেশ পথ ও বাহির পথ রাখতে হবে।

১৩. বইমেলার সময় করা হোক চারটা থেকে রাত দশটা। ছুটির দিন সকাল দশটা থেকে রাত দশটা।

১৪. বইমেলার জন্য পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা করা হোক উদ্যান অংশে।

১৫. বইপ্রেমী, প্রকাশক, লেখকসহ বইমেলায় আগত সবার জন্য ফ্রি পানি খাবার যথেষ্ঠ ব্যবস্থা রাখা হোক প্রবেশ ও বাহির পথের মুখে মুখে বা সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন কর্নারে। বিভিন্ন কর্নারে কফি নয় কেবল চায়ের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হোক।

১৬. একটি স্থাপতি প‌্যানেল দিয়ে পুরো এলাকার মানচিত্র করে সুনির্দিষ্ট নকশায় বইমেলার অস্থায়ী স্টল নির্মাণ করা হোক।

১৭. পুরো অমর একুশে বইমেলাটি একটি দক্ষ স্থাপতি প‌্যানেল দিয়ে নকশা করা হোক। আর সেই নকশা অনুযায়ী প‌্যাভেলিয়ান ও অন্যান্য ছোট বড় স্টল বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। যাতে কোথাও কোনো অনাকাঙ্খিত জটলা তৈরি হতে না পারে। বিশেষ করে বড় বড় প্রকাশনার স্টলগুলো সেভাবে বিন্যস্ত করা হোক।

১৮. বইমেলার পুরো অংশে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইট থাকার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হোক।

১৯. অমর একুশে বইমেলায় স্টল বরাদ্ধের ব্যাপারটি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা হোক। যাতে প্রকাশকরা সময় নিয়ে ঠিক ফেব্রুয়ারির ১ তারিখেই তাদের নতুন প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে পুরোদমে বইমেলায় যোগদান করার সুযোগ পায়।

২০. বইমেলায় সব ধরনের বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের বিষয়টি একাডেমির নির্ধারিত হলে নির্দিষ্ট ফি'র বিনিময়ে করা হোক। আর প্রত্যেক বইয়ের জন্য সময় বরাদ্দ করা হোক পাঁচ বা দশ মিনিট। যদি কেউ এই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যাপারটি লংঘন করে, তাকে পাঁচগুণ জরিমানা করা হোক। সোজা কথায় কেউ যদি এক হাজার টাকা অ্যাডভান্স জমা দেন, তাহলে একাডেমির নির্দিষ্ট হলে তার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে। কিন্তু সময় (টাইম-বার) লংঘন করলে তাকে পাঁচগুণ মানে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হোক।

২১. যে সকল মিডিয়া বইমেলা সরাসরি সম্প্রচার করতে চায়, তাদের উপর বড় অংকের ফি ধার্য করা হোক। আর তাদের নকশা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট জায়গায় বরাদ্দ দেওয়া হোক।

২২. বইমেলার প্রবেশপথ ব্যতিত বইমেলার ভেতরে কোথাও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বন্ধ করা হোক। প্রয়োজনে প্রবেশপথে আরো কঠোর চেকিং ব্যবস্থা চালু করা হোক। কিন্তু বইমেলার ভেতরে পুলিশের উপস্থিতি বন্ধ করা হোক!

২৩. বইমেলার ভেতরে লেখকদের ও বইপ্রেমীদের জন্য আলাদা আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হোক। লেখকদের আড্ডার স্থলে কোনোভাবেই দর্শকদের বসার ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

২৪. প্রকাশকদের স্টলে লেখকদের স্থায়ীভাবে বসার ব্যাপারটি কঠোরভাবে বন্ধ করা হোক। পাঠকদের দায়িত্ব দেওয়া হোক, তাদের নিজেদের পছন্দের বইটি কেনার। আর যদি কেউ লেখকের অটোগ্রাফ নিতে চায়, সে বই হাতে লেখকদের আড্ডা স্থলে লাইনে দাঁড়াক।

২৫. বইমেলার সময় বইমেলার ভেতরে কোনো মন্ত্রী বা ছাত্রনেতা যাতে মিছিলের মত ডিসটার্বিং জিনিস আমদানি করতে না পারে, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

বাংলা একাডেমি চাইলে এ বিষয়ে আমি আরো বিস্তারিত বক্তব্য পয়েন্ট আকারে যুক্তিসহকারে ব্যাখ্যা করতে রাজি আছি। এভাবে আগামী ২০১৮ সালের অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করে দেখুন, বিষয়টি কত সহজে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসে। এলোমেলা হ-য-ব-র-ল অবস্থায় আমরা আর কোনো বইমেলা দেখতে চাই না। অমর একুশে বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। তাই এটিকে সুন্দর ও গুছানো একটি বইমেলায় রূপদানের জন্য সকল মহল আন্তরিক হলেই কেবল সম্ভব। 'শ্যাম রাখি না কূল রাখি' দিয়ে অমর একুশে বইমেলার মত একটি মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজন করা সত্যি সত্যিই কঠিন। আমার প্রত্যাশা থাকবে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকগণ উপরে উল্লেখিত আমার পয়েন্টগুলো যথাযথভাবে বুঝবেন এবং সে অনুযায়ী আগামী বইমেলা আয়োজনের প্রতি সদয় আন্তরিকতা দেখাবেন।

বন্ধুরাও আমার পয়েন্টের সঙ্গে আরো ভালো পয়েন্ট যোগ করুন। যাতে আগামী অমর একুশে বইমেলাটি আরো সুসজ্জিত, নিয়ন্ত্রিত এবং সুন্দর হতে পারে। অমর একুশে বইমেলা অমর রহে। বই পড়ুন। প্রিয়জনকে বই উপহার দিন।

বিনীত
রেজা ঘটক
১ মার্চ ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪১
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×