somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'দ্য সেলসম্যান' আসগার ফারহাদি'র একটি নিউরিয়ালিস্ট সাসপেন্স!!!

০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইরানিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা আসগার ফারহাদি কান চলচ্চিত্র পুরস্কারের পর এবার দ্বিতীয়বার 'অস্কার পুরস্কার' অর্জন করলেন। আসগার ফারহাদি নির্মিত 'দ্য সেলসম্যান' ছবিটি গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে 'বেস্ট স্ক্রিনপ্লে' ও 'বেস্ট অ্যাক্টর' বিজীয়। এবারের ৮৯তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে 'দ্য সেলসম্যান' 'বেস্ট ফরেইন ল্যাংগুয়েজ অ্যাওয়ার্ড' লাভ করে। এর আগে ২০১২ সালে আসগার ফারহাদি 'এ সেপারেশান' ছবির জন্য 'বেস্ট ফরেইন ল্যাংগুয়েজ অ্যাওয়ার্ড' লাভ করেন। 'এ সেপারেশান' এর পর 'দ্য সেলসম্যান' আসগার ফারহাদি'র দ্বিতীয়বার অস্কার বিজয়ী ছবি।

আর্থার মিলারের নাটক 'ডেথট অফ এ সেলসম্যান' নাটক অবলম্বনে আসগার ফারহাদি চিত্রনাট্য ও নির্দেশনা দেন 'দ্য সেলসম্যান' ছবিটির। 'ডেথট অফ এ সেলসম্যান' নাটকে ইমাদ (সাহাব হোসেইনী) ও রানা (তারানেহ আলীদুস্তি) দম্পতি একটি থিয়েটারে অভিনয় করেন। যেখানে ইমাদ করেন উইলি লোমানের চরিত্র আর রানা করেন লিন্ডা'র চরিত্র। এছাড়া ইমাদ থিয়েটারের বাইরে একটি স্কুলে ইনস্ট্রাকটর হিসেবেও কাজ করেন। কিন্তু স্থানীয়রা ইমাদকে ব্যঙ্গ করে ডাকে সেলসম্যান।

এক রাতে হঠাৎ ইমাদ ও রানা দম্পতির বসবাসের বিল্ডিংটা পাশের বাড়ির উপর ভেঙ্গে পড়ে। তখন এই দম্পতি আশ্রয় পাবার জন্য নতুন একটি বাড়ির সন্ধানে বের হয়। এক পর্যায়ে তারা থিয়েটারের সহকর্মী বাবাকের (বাবাক করিমি) সহায়তায় একটি বেশ নিরিবিল বাড়ি ভাড়ায় থাকার জন্য খুঁজে পায়। সেই বাড়িতে ওঠার পর ঘটে এক বিপত্তি। এক অজ্ঞাত লোক ওই বাড়িতে ঢুকে বাথরুমে রানাকে নির্যাতন করে পালিয়ে যায়।

বাইরে থেকে ইমাদ বাসায় ফিরে রানার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাথরুমে পৌঁছে দেখে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। দ্রুত রানাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় প্রতিবেশীদের সহায়তায়। রানা'র সেন্স ফিরলেও তার আক্রমণকারী কে, এটা সে কিছুই মনে করতে পারে না। তখন থেকেই ইমাদ তার বউয়ের উপর আক্রমণকারীকে অনুসন্ধান করতে থাকে প্রতিশোধ নেবার নেশায়।

এক পর্যায়ে ইমাদ প্রতিবেশিদের মাধ্যমে আবিস্কার করে যে, এই ফ্লাটে আগে একজন প্রস্টিটিউট থাকতেন। তার কাছে অনেক পুরুষ আসতো। আর পুরানা ক্লায়েন্টদের অনেকের সাথেই ওই প্রস্টিটিউটের খুব খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। হয়তো তাদের কেউ একজন ভুল করে রানা'র উপর এই হামলা করেছে।

ওদিকে হাসপাতাল থেকে রানা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও সে আর ওই বাথরুমে যেতে পারে না। ওই বাথরুমে গিয়ে রানা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর এক পর্যায়ে এটা ক্রনিক আকার ধারণ করে, কিন্তু স্বামী ইমাদকে সে ওই হামলার পুরো ঘটনা কিছুই ব্যাখ্যা করতে পারে না। এক পর্যায়ে থিয়েটার সহকর্মী বাবাকের সাথে ঝগড়া করে ইমাদ-রানা দম্পতি থিয়েটার ছেড়ে দেয়।

ওদিকে ইমাদ ওই বাড়ির বাইরে একটি পরিত্যক্ত ভ্যান ও একটি মোবাইল খুঁজে পায়। ইমাদ মনে করে, এটাই রানাকে হামলাকারীর জিনিস। সেই হিসাবে রানার উপর হামলাকারীকে নতুন করে অনুসন্ধান চালাতে থাকে ইমাদ। এদিকে রানা ড্রায়ারে কিছু টাকা পায়। রানা মনে করে, এই টাকা হয়তো স্বামী ইমাদ তার জন্য জিনিসপত্র কেনার জন্য রেখে গেছে। আসলে ওই টাকাও সেই হামলাকারীর।

রানা'র হামলাকারীকে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ইমাদ তার এক ছাত্রকে খুঁজে পায়, যার বাবা একজন ট্রাফিক পুলিশ। ইমাদ সেই ট্রাফিক পুলিশের কাছে সহায়তার জন্য যায়। ওই ট্রাফিক পুলিশ থেকে ইমাদ জানতে পারে- ওই ভ্যানটি মজিদ নামের এক লোকের। ইমাদ এক পর্যায়ে মজিদের শ্বশুড়কে খুঁজে পায়। তখন মজিদের শ্বশুড় জোড়ালোভাবে দাবি করে যে, কয়েক মাস পরপর এই ভ্যানটির মালিকানা বদল হয়। আর চ্যালেঞ্জ করে যে, মজিদ তেমন মানুষ না, সে এই কাজ কিছুতেই করতে পারে না। মানে রানাকে হামলা করার জন্য মজিদকে আর সরাসরি সন্দেহ করা যাচ্ছে না।

এক পর্যায়ে ইমাদ মজিদের শ্বশুড়কে সেই বাড়িতে গিয়ে রানার মুখোমুখী হওয়ার প্রস্তাব করে। ওদিকে রানা তার স্বামী ইমাদকে কান্নাকাটি করে বলে, কিছুতেই সে ওই বৃদ্ধ লোকটির (মজিদের শ্বশুড়) মুখোমুখী হবে না। কিন্তু ইমাদ চায় ওই বৃদ্ধ লোকটি রানা'র সামনে মজিদ সম্পর্কে সব খুলে বলুক।

এক পর্যায়ে ওই বৃদ্ধ লোকটি ইমাদের বাড়িতে পরিবারসহ আসে, কিন্তু রানার মুখোমুখী হওয়ার আগেই সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ইমাদ তাকে জরুরি মেডিকেল সেবার ব্যবস্থা করে। মজিদের শ্বশুড়বাড়ির লোকজন ইমাদকে ধন্যবাদ জানায়। এক পর্যায়ে ইমাদ ওই বৃদ্ধ লোকটির কাছে একা থাকে, অন্যরা বাইরে যায়। তখন ইমাদ ওই লোকটিকে কষিয়ে একটা চড় মারে। তারপর ইমাদ আর রানা আবার থিয়েটার করতে ফিরে যায়। এই হলো 'দ্য সেলসম্যান' ছবির সংক্ষিপ্ত কাহিনী।

নির্মাতা আসগার ফারহাদি বলেন, ছবি বানানোর জন্য আমি জ্যঁ পল সাত্রে ও হেনরিক ইবসেনের উপর অনেক গবেষণা করেছি। এক পর্যায়ে আমি আর্থার মিলারের নাটক 'ডেথট অফ এ সেলসম্যান' খুঁজে পাই। এটা ছিল আমার জন্য দারুণ এক আশির্বাদ। কারণ, আমি নিজেও 'ডেথট অফ এ সেলসম্যান' নাটকের মত একসময় থিয়েটারকর্মী ছিলাম। তাই 'ডেথট অফ এ সেলসম্যান' থেকেই আমি 'দ্য সেলসম্যান' ছবির চিত্রনাট্য অ্যাডাপ্ট করি। ছবিতে আর্থার মিলারের 'ডেথট অফ এ সেলসম্যান' নাটকের উইলি লোমান ও লিন্ডাকে ইমাদ ও রানা হিসেবে প‌্যারালাল দেখানোর পাশাপাশি আমি মানুষের মধ্যে হিউমিলিউয়েশন এবং সম্পর্কের এক জটিল টানাপোড়নকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।

এর আগে আসগার ফারহাদি ২০১১ সালে 'এ সেপারেশান' ছবিটি নির্মাণ করে সারাবিশ্বে আলোচনায় চলে আসেন। 'এ সেপারেশান' ছবির আর্টিস্টদেরকেই ফারহাদি 'দ্য সেলসম্যান' ছবিতে কাস্ট করেছেন। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট তেহরানে সকাল ৬.৪৫ মিনিটে 'দ্য সেলসম্যান' ছবিটি মুক্তি পায়। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে এটি টরেন্টো আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নোমিনেশান পায়। ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি 'দ্য সেলসম্যান' লন্ডনে প্রিমিয়ার শো করে। ট্রাফালগার স্কয়ারে 'দ্য সেলসম্যান' এর একটি ফ্রি শো হয়। যেখানে মেয়র সাদিক খান ছিলেন হোস্ট। আগামী মার্চ মাসে 'দ্য সেলসম্যান' ইংল্যান্ডে মুক্তি পাবে।

২৬ ফেব্রুয়ারি অস্কার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আসগার ফারহাদি যোগ দিতে পারেননি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা নতুন আইন ' Executive Order 13769' এর অধীনে ইরানসহ ছয়টি দেশের কেউ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না। তাই আসগার ফারাহাদিও তার টিম নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে যেতে পারেননি। তবে অস্কার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আসগার ফারহাদির পাঠানো একটি বার্তা পড়ে শোনানো হয়। সেখানে আসগার ফারহাদি বলেন, 'My absence is out of respect for the people of my country and those of the other six nations who have been disrespected by the inhumane law that bans entry of immigrants to the US.'

ইরানিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা আসগার ফারহাদি'র অন্যান্য চলচ্চিত্র গুলো হলো 'লো হাইয়েটস' (২০০২), 'ড্যান্সিং ইন দ্য ডাস্ট' (২০০৩), 'দ্য বিউটিফুল সিটি' (২০০৪), 'ফায়ারওয়ার্কস ওয়েডনেসডে' (২০০৬), 'কানান' (২০০৭), 'তামবৌরিন' (২০০৮), 'ট্রায়াল অন দ্য স্ট্রিট' (২০০৯), 'অ্যাবাউট ইলি' (২০০৯), 'এ সেপারেশান' (২০১১), 'দ্য পাস্ট' (২০১৩) ও 'দ্য সেলসম্যান' (২০১৬)।

..............................
৩ মার্চ ২০১৭


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৩২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×