১৯৯৬ সালে 'কন্যারে কন্যারে' গানটি লিখেছেন শিল্পী অনন্ত দৌলত। নিজের লেখা 'কন্যারে কন্যারে' গানটি তিনি পরবর্তীতে নিজেই সুর করেছেন। আর ২০০৯ সালে যখন শিল্পী অনন্ত দৌলত ও শিল্পী রুক্সি 'ফিরে আসবে তুমি' অ্যালবামটি প্রকাশ করেন, তখন সেই অ্যালবামে 'কন্যারে কন্যারে' গানটি শিল্পী অনন্ত দৌলত নিজেই গেয়েছেন। 'ফিরে আসবে তুমি' অ্যালবামে 'কন্যারে কন্যারে' গানটি ৭ নাম্বার ট্রাকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা হলো 'কন্যারে কন্যারে' গানটির আদি কথা।
এবার দেখা যাক শিল্পী শান চোরাই করা 'কন্যারে' গানটি কীভাবে গাইলেন! সম্প্রতি শিল্পী শান-এর গাওয়া 'কন্যারে' নাম দিয়ে ইউটিউবে ধ্রুব মিউজিক স্টেশান থেকে একটি গান প্রকাশ করা হয়েছে। এই ট্রাকটি মিউজিক ভিডিও। যেখানে 'কন্যারে' গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী শান। গানটির কথা ও সুর লিখেছেন এম আর খান। সঙ্গীত করেছেন রোকন ইমন। ইতোমধ্যে ইউটিউবে গানটি অন্তত ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৪৮১ জন দেখেছেন বা শুনেছেন।
শিল্পী অনন্ত দৌলতে কথা ও সুর করা এবং নিজের গাওয়া গানটি কত জন শুনেছেন সেটি আমার আলোচনার বিষয় নয়। কিন্তু 'কন্যারে কন্যারে' গানটির মালিক শিল্পী অনন্ত দৌলত। এম আর খান সাহেব 'কন্যারে কন্যারে' গানটির লিরিক একটু এদিক সেদিক করে ওটাকেই 'কন্যারে' নাম দিয়েছেন। গানটির সঙ্গীত করেছেন রোকন ইমন। আর শিল্প শান সেই গানটি গেয়েছেন। আর গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করেছে ধ্রুব মিউজিক স্টেশান।
বাংলাদেশে গান চুরির ঘটনা এটিই নতুন নয়। এর আগে বন্ধু মারজুক রাসেলের লেখা গান চুরির অনেক গল্প আমি মারজুকের কাছে শুনেছি। বন্ধু কামরুজ্জামান কামু'র লেখা গান চুরির অনেক গল্প আমি কামু'র কাছে শুনেছি। একবার গান চুরি'র সেই সব দরবার নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ, বিচার চাইতে এবং গানের কপিরাইট ও যথাযথ রয়্যালটি পাওয়ার দাবি নিয়ে মারজুক আর কামুকে সঙ্গে নিয়ে লতিফ সিদ্দিকি সাহেবের সঙ্গে দেখা করছিলেন। লতিফ সাহেব তখন মন্ত্রী ছিলেন। পরে গুণদা বলেছিলেন, গান চোর ধরা পড়লেও এই দেশে এর বিচার হবে না। এটাই বাস্তবতা!
প্রশ্ন হলো, গান চুরি করে এভাবে আর কতকাল পার পাওয়া যাবে? শিল্পী অনন্ত দৌলত 'কন্যারে কন্যারে' গানটি নিয়ে এখন এম আর খান সাহেব, রোকন ইমন, ধ্রুব মিউজিক স্টেশান ও শিল্পী শান-এর বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনে মামলা করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টির জন্য একজন শিল্পী বা একজন কবি বা একজন লেখককে কেন মামলার মত একটা বিদঘুটে ব্যাপারে জড়াতে হবে?
আমাদের উচিত চোরকে ধরিয়ে দেওয়া। জনসম্মুখে চোরের সকল চুরির আকাম কুকাম প্রকাশ করা। সাধারণ মানুষ যখন এসব চোরকে প্রত্যাখ্যান করবে, কেবল তখনই এসব চোররা তাদের আকাম কুকাম বন্ধ করবে। চুরি করে হয়তো বিখ্যাত হওয়া যায়, মাগার সেই বিখ্যাত হওয়াতে কোনো কারিশমা নাই। কারণ চোর নিজেই জানে, সে একটা পাক্কা চোর। চোরের বিচার করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমরা এমন একটি বিচারহীন রাষ্ট্রে বসবাস করি, যেখানে খুনের বিচার হয় না, ধর্ষনের বিচার হয় না, গুমের বিচার হয় না। আর সেখানে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি চুরির বিচার চাওয়ার মত মুর্খামি আর কী হতে পারে।
শিল্পী অনন্ত দৌলতের 'কন্যারে কন্যারে' গানটি চুরি করে এম আর খান সাহেব যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, রোকন ইমন সেই গানটি একটু নতুন করে ফিউশান করে যে মুর্খামি করেছেন, শিল্পী শান সেই গান গেয়ে যে বিখ্যাত হবার চেষ্টা করছেন, ধ্রুব মিউজিক স্টেশান সেই চোরাই গানটি মিউজিক ভিডিও বানিয়ে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইন ও কপিরাইট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহবান জানাই।
ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি চুরি করার কারো বাপের সাধ্য নাই। আমাদের অজান্তে এমন অসংখ্য চোর এদেশে এখন কালচারাল অঙ্গনেও বিখ্যাত হবার চেষ্টা করছে। আশা করি সবাই এসব চোরদের আপদ বালাই থেকে সাবধান থাকবেন। শিল্পী অনন্ত দৌলত এর পক্ষে যথাযথ আদালতের ও আইনের আশ্রয় নেয়াই হবে যুক্তিযুক্ত কাজ। আর আমাদের কবি, লেখক, শিল্পী সাংবাদিক ভাইদের বলব, চোরদের নিয়ে সজাগ থাকুন। নইলে ওরা একদিন আপনার জিনিসও চুরি করে, আপনার চোখের সামনেই এই মরার দেশে বিখ্যাত হয়ে যাবে।
শিল্পী অনন্ত দৌলত 'কন্যারে কন্যারে' গানটি নিয়ে এখন একজন ভিকটিম। আসুন আমরা সবাই শিল্পী অনন্ত দৌলতের পাশে দাঁড়াই, যাতে চোর আর আপনার ঘরেও শিং দিতে না পারে, সে ব্যাপারেও সজাগ হই। দেশে এখন চোরাই গানের রমরমা ব্যবসা হচ্ছে! আহা মরি মরি!
বি.দ্র.
আপনাদের সুবিধার জন্য শিল্পী অনন্ত দৌলতের 'কন্যারে কন্যারে' গানটি ও চোরাই গানের শান-এর গাওয়া মিউজিক ভিডিওটি এখানে আলাদা আলাদা লিংক দিলাম।
https://www.youtube.com/watch?v=HSp8BmoxgpA
https://www.youtube.com/watch?v=5f47oSORx8Q&feature=youtu.be
.........................................
২৩ মে ২০১৭
রেজা ঘটক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৫৮