somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘গার্মেন্টস’ ও একজন বাস্তবতা বিবর্জিত মিস আনাম!!!

১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘গার্মেন্টস’ নামে একটি গল্প লিখে তাহমিমা আনাম ও' হেনরি পুরস্কার পেয়েছেন। বিষয়টি মিস আনামের জন্য গৌরবের হলেও গল্পটিতে অত্যন্ত সচেতনভাবেই একুশ শতকের নাগরিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের গার্মেন্টেস সেক্টরে কর্মরত লাখ লাখ প্রান্তিক শ্রমজীবী মানুষজনের জীবন-সংগ্রাম ও স্বপ্নকে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। বাস্তবতা বিবর্জিত এমন একটি গল্প বরং ভীনদেশীদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত নেগেটিভ ধারণাই রপ্তানি করছে!

ধরুন, মিস আনাম তার বাবাকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে ধানমন্ডি ফেরার পথে টয়োটা এসি গাড়িতে বসে, পাশে বসা বাবার কাছে খুব আহ্লাদি ঢংয়ে জানতে চাইলেন, আচ্ছা বাবা, রানা প্লাজার ঘটনাটা কী? জবাবে মিস্টার আনাম মেয়েকে বুঝিয়ে বললেন যে সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে। আর মারা যাওয়া বেশিরভাগ মানুষ গার্মেন্টস শ্রমিক। গরীব মানুষ। যাদের সম্পর্কের মিস আনামের সত্যিকার অর্থেই কোনো ধারণা নাই।

রানা প্লাজার ওই দুর্ঘটনা সারাবিশ্বের মিডিয়ায় তখন খুব আলোড়ন তুলেছিল। তাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে মিস আনামের মাথায় একটি গল্পের প্লট দানা বাধতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতার বাইরে গিয়ে প্রান্তিক এই শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে ফান করার স্পর্ধা কেবল তারাই দেখাতে পারে, যারা নিজের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না। বাংলাদেশের সমাজ এখনো সভ্যতার শীর্ষ পর্যায়ে না পৌঁছালেও বাংলাদেশের কোথাও কোনো গ্রামীণ শালিসি বিচারে একটি যুবতী মেয়েকে উলঙ্গ করার মত ঘটনার কোনো নজির নাই। কেবলমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সময় বিকৃতমনা পাকি-জারস সেনারা ও তাদের দোসররা কিছু কিছু জায়গায় এটা করেছে নিজেদের পৈচাশিক আনন্দ উপভোগের একটা উপায় হিসেবে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর সেই একই পৈচাশিক আনন্দ ও তৃপ্তির ঢেকুর গিলতে গিয়ে মিস আনাম কী ধরনের আনন্দ পেলেন, তা সহজে বোধগম্য নয়।

ঢাকা শহরে ব্যাচেলর মেয়েরা বাসা ভাড়া পায় না, তাই তিনজন মেয়ে একটা ছেলেকে বিয়ে করবে এমন কল্পনা কেবল ভৌতিক ও কুরুচিপূর্ণ মননেই বাসা বাধতে পারে। আর বাংলাদেশের কাজী অফিসগুলোতে কীভাবে বিয়ে পড়ানো হয়, সেই ধারণাটুকু যার একদম নাই, তার কল্পনাপ্রসূত এমন অদ্ভুত গল্পে সেই তিন মেয়ের পতি যে একজন খোজা হবে, এটাই তো স্বাভাবিক! আসলে ‘গার্মেন্টস’ গল্পটি লিখে মিস আনাম নিজেকে বাংলাদেশের সমাজের কাছে একজন খোজা হিসেবেই তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশের কৃষ্টি, কালচার, আচার, ব্যবহার, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যার বিন্দুমাত্র সংযোগ নাই, কেবল তার পক্ষেই এমন অরুচিকর আকাশকুসুম আষাঢ়ে গল্প ফাঁদা সম্ভব। এসি গাড়ির গ্লাসের ফাঁক দিয়ে গামেন্টসের মেয়েদের দেখে তাদের নিয়ে এমন নিম্নরুচির গল্প লিখে পুরস্কার মিললেও, এটি বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের সমাজ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে মিস আনাম গল্পের কৌশলে বহির্বিশ্বে তীব্র এক প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছেন।

সমাজ ও বাস্তবতার বাইরে ফ্যান্টাসি লেখা সম্ভব, কুরুচিপূর্ণ সমাজ বিবর্জিত কাল্পনিক ও অবাস্তব কিছু লিখে হয়তো পুরস্কার জোটানোও সম্ভব, কিন্তু তার সত্যিকার কোনো সাহিত্য মূল্য যেমন নাই, তেমনি তা কোনো গৌরবেরও বিষয় হতে পারে না। আর তা নিয়ে এত আদিখ্যতা দেখানোরও কিছু নাই। মিস আনামের বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে এবং আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক কৃষ্টি ও ব্যবহার সম্পর্কে এমন উদ্ভট নেতিবাচক ধারণা বরং আমাদের মূল্যবোধকে তীব্রভাবে আহত করেছে। সেকেন্ডারি তথ্য হয়তো লেখার জন্য সহায়ক কিন্তু বাস্তবতা বিবর্জিত লেখা গৌরবের বদলে কলংক ছড়ায়। তাই ‘গার্মেন্টস’গল্পটি লিখে মিস আনাম বাংলাদেশের জন্য গৌরব নয় বরং মহামারী কলংক ছড়িয়েছেন।

-------------------------
১৬ জুন ২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১:০৯
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×