জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা ভিভিয়েন ট্যান বিবিসিকে বলেছেন, এক রাতের ব্যবধানেই তারা আজ (রোববার) নতুন অন্তত ১৩,০০০ রোহিঙ্গাকে চিহ্নিত করেছেন। ফলে, শনিবার যেখানে রাখাইন থেকে পালিয়ে ঢোকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬০ হাজারের মত বলা হয়েছিলো, আজ (রোববার) সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৭৩ হাজার। যেভাবে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে তাতে শীঘ্রই আশ্রয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরণের জরুরী সঙ্কট তৈরি হতে পারে।
পুরনো যে দুটো রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির- কুতুপালংএবং নয়াপাড়া, তাতে আর তিল ধরণের জায়গা নেই। স্থানীয় স্কুল মাদ্রাসা ছাড়াও, বিভিন্ন খোলা জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে পালিয়ে আসা মানুষজনকে ঠাঁই দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বর্তমান হারে শরণার্থী আসতে থাকলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। নোম্যানসল্যান্ডে এখনো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত ক্রোস করে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে।
মায়ানমার থেকে আগত হিন্দু রোহিঙ্গাদের ভাষ্য থেকে যেটা বোঝা যায়, ''হামলাকারীরা কালো পোষাক পড়া ছিল। তারা গুলি করছিল, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছিলো, ওরা কখনো বার্মিজ ভাষায় কথা বলছিল, কখনো বাংলা বলছিল। ওদের হাতে অনেক ধারালো অস্ত্র ছিল।''
তাহলে এই অঞ্চলে এই প্রস্তুতি দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের উগ্রপন্থীরা রোহিঙ্গাদের সমর্থন করছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পাহাড়ে কী তাহলে তারা রোহিঙ্গা জঙ্গিদের এতদিন প্রশিক্ষণ দিয়েছে? মাঝে মাঝে এত বিপুল অস্ত্র তাহলে কোথা থেকে আসতো? এই অস্ত্রের যোগানদাতা কারা? মায়ানমার সেনাবাহিনী নিশ্চয়ই রোহিঙ্গাদের উপর ধারালো অস্ত্রের ব্যবহার করছে না! বিশেষ করে হিন্দু রোহিঙ্গাদের উপর! তাহলে বিষয় কিন্তু অনেক জটিল।
সারা বিশ্বে মোট রোহিঙ্গা রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ। এদের মধ্যে মায়ানমারে রয়েছে ১৪ লাখ, বাংলাদেশে ৬ লাখ, সৌদি আরবে ৫ লাখ, পাকিস্তানে ২ লাখ, থাইল্যান্ডে ১ লাখ, মালয়েশিয়ায় ৪০ হাজার, ভারতে ৪০ হাজার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২ হাজার, ইন্দোনেশিয়ায় ১২ হাজার ও নেপালে ২০০ জন।
তাহলে সমীকরণ কী বলে? পাকিস্তান ও সৌদি আরবে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে, তারাই প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্রসহ ঢুকে পড়েছে মায়ানমারে। আর সেই অস্ত্রের যোগানদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও পাকিস্তান। আর ঘুটি হিসেবে তারা ব্যবহার করেছে বাংলাদেশের পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা।
এবার যারা মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসছে সেই শরণার্থীদের দলে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। পুরুষ মানুষ খুব একটা আসছে না কেন? তারা কী কোনো সুনির্দিষ্ট মিশনে থেকে যাচ্ছে? অর্থ্যাৎ একটি দীর্ঘমেয়াদী গৃহযুদ্ধের দিকেই যাচ্ছে ঘটনাক্রম।
আরেকটা ব্যাপার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মায়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধনের যেসব ছবি ছড়ানো হচ্ছে, তার বেশিরভাগই ভুয়া ছবি। এসব ছবি যারা ছড়াচ্ছে, তারা কী কোনো বিশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোদি আরব, পাকিস্তান- এখানেও সেই পুরানো তিন শত্রু! যাদের এখনো সমীকরণ মিলছে না, দয়া করে একটু মিলিয়ে নিন। গৃহযুদ্ধ মায়ানমারে হলেও বাংলাদেশে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে, এটা এখনই নিশ্চিত করে বলা যায়।
------------------------
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৯:০৯