somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রিকস মঞ্চের ঘোষণা ও রোহিঙ্গা ইস্যু!!!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চীনে অনুষ্ঠিত পাঁচ দেশের জোট ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) শীর্ষ সম্মেলন থেকে এবার জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রতি তীব্র নিন্দা ও হুঁসিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। সম্মেলন শেষে ‘ব্রিকস সিয়ামন ডিক্লারেশন’-এ বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সেই সব জঙ্গি হামলার কঠোর নিন্দা করছি, যাতে নিরীহ আফগান নাগরিকদের মৃত্যু হচ্ছে। এই অঞ্চলের নিরপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এবং তালিবান, আইএসআইএল/দয়েশ, আল-কায়দা ও তার শাখা ইস্টার্ন তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট, ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মহম্মদ, টিটিপি এবং হিজব উত-তাহরির সৃষ্ট হিংসা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’’

ওই বিবৃতিতে পাকিস্তানের নাম সরাসরি উচ্চারিত না হলেও লস্কর-ই-তৈয়বা, জইশ-ই-মহম্মদ, হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো জঙ্গি সংগঠন যে পাকিস্তানের মাটি থেকেই তাদের কার্যকলাপ চালায়, তার ইঙ্গিত দিয়ে ইসলামাবাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হলো। পাশাপাশি যে সব দেশ সন্ত্রাসবাদীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে সতর্ক করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা জোর দিয়ে বলছি, সন্ত্রাস যারা চালাচ্ছে, সংগঠিত করছে বা সমর্থন করছে, তাদের ফল ভুগতেই হবে।’’ এ ছাড়া ব্রিকসের খসড়া ইশতেহারে উত্তর কোরিয়ার পরমাণবিক বোমার উৎক্ষেপণের কড়া নিন্দা জানানো হয়েছে।

ব্রিকস শীর্ষ সম্মলনের আগে ও পরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিগত আড়াই মাস ধরে ভারত-ভূটান-চীন সীমান্ত ‘ডোকলাম’-এ ভারত ও চীনের সেনাবাহিনীর মুখোমুখী অবস্থান নিয়ে যে চরম সঙ্কট চলছিল, তার অবসান হয়েছে দু'দেশের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর। উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস বাড়াতে এবং সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে দু’দেশের বাহিনীর মধ্যে সংযোগ বাড়ানোর উপরে ওই বৈঠকে জোর দেওয়া হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্মেলনের পরেই উভয় দেশ হিমালয় সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।


রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে মায়ানমারে সংগঠিত সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে চীন ও ভারত নিজ নিজ স্বার্থের প্রতি খুবই সচেতন। এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য ঠেকাতে চীন ও ভারত মায়ানমারের সাথে স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিয়েছে। চীন মায়ানমারের পুরনো মিত্র। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবেশী মায়ানমারে দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতা ভারতের জন্যও হুমকিস্বরূপ। কারণ এই অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হলে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি প্রদেশে (সেভেন সিস্টার) নতুন করে বিচ্ছিন্নতাবাদ দান বাঁধতে পারে। সেই গুরুত্ব অনুধাবন করেই ব্রিকস সম্মেলন শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মায়ানমার সফরে গেছেন।

ভারতের দিল্লী ও কাশ্মীরসহ বিভিন্ন জায়গায় বসবাসরত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে, এই আশংকায় ভারত ওই ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে এখন মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিনিময়ে মায়ানমারের জন্য দুই বিলিয়ন বাণিজ্য সহায়তার প্রস্তাব করেছে ভারত।

মায়ানমারের ঘটনায় রাশিয়া সরাসরি এখনো জড়িয়ে না পড়লেও দূর থেকে আসল কলকাঠি নাড়ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একদিকে ব্রিকস সম্মেলনে উপস্থিত থেকে মিস্টার পুতিন চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার নয়া মিত্র তুরস্ককে দিয়ে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করাতে নানান উদ্যোগ নিচ্ছেন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডাকা বৈঠকে চীনের ভেটো প্রয়োগের পর তুরস্ককে দিয়ে এ মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে নতুন করে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরার উপর জোর দিয়েছে রাশিয়া। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রধান প্রতিপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইন্দোনেশিয়াকে দিয়ে মায়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিক দৌড়ঝাপ বহাল রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের খায়েস বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনে একটি নৌঘাটি স্থাপন করা। যাতে চীনের সহায়তায় গড়ে তোলা মায়ানমারের সমুদ্র বন্দর ও বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের দিকে যুক্তরাষ্ট্র নজরদারি করতে পারে। পাশাপাশি এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য বিস্তার করা যায় তা প্রতিষ্ঠা করা।

বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের একটি সমুদ্র বন্দরের ৮৫ শতাংশ মালিকানা দাবি করেছে চীন। সমুদ্র বন্দরটি চীনের জন্য কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড পরিকল্পনার আওতায় বঙ্গোপসাগরের কিয়ায়ুক পিউ সমুদ্র বন্দরটির অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে চীন। এই সমুদ্র বন্দরটি চীনের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন চীনে আসার প্রবেশমুখ হিসেবে বন্দরটি কাজ করবে। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানীর বিকল্প একটি রুট তৈরি হবে। তখন মালাকা প্রণালী দিয়ে আর চীনকে তেল আনতে হবে না।

একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে মায়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তে নিজেদের শক্তি ও প্রভাব বিস্তারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে চীন এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যকে রুখতে চিরশত্রু ভারতের সঙ্গে মিলে মায়ানমারকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে প্রস্তুত। যে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মায়ানমার চীনের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম চালাচ্ছে। পিছিয়ে নেই ভারত। যে কারণে মোদি'র এই সফর। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটা যুদ্ধাবস্থা ঘুটি পাকাচ্ছে। যেখানে মার্কিন ষড়যন্ত্রের কৌশলটি ইসলামী জঙ্গি। গোপনে তারা রোহিঙ্গাদের অস্ত্র দিয়ে এখন সাহস যোগাচ্ছে। আর তাতে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে সৌদি আরব। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পুরো মার্কিন স্বার্থটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে। মাঝখান থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপে পিষ্ঠ হচ্ছে বাংলাদেশ।

ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এবং পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কৌশল হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। যে কারণে চীন ও ভারত বলয় থেকে বের করে এনে চাপ প্রয়োগ করে হলেও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশে একটি নৌঘাটি। মার্কিন সেই ইচ্ছাকে স্বার্থ হিসাবে প্রয়োগে তৎপর বাংলাদেশের উগ্রপন্থী শক্তিগুলো। যে কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য মরার উপর খরার ঘায়ের মত। কূটনৈতিক কৌশলে একটু ভুল হলেই বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বাংলাদেশকে।

---------------------------
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×