somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দর্শকশূন্য জাতীয় নাট্যশালায় ইউনিভার্সেল থিয়েটারের পরিচ্ছন্ন প্রযোজনা 'মহাত্মা' !!!

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে এক স্থায়ী কলহ ও অশান্তির বীজ বপন করে গেছে। সেই পরিকল্পনার সুদূরপ্রসারী দুর্ভোগের ফলাফল এখনো এই উপমহাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে। 'অহিংসা পরম ধর্ম' এই ব্রত নিয়ে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের সেই কূটনৈতিক কৌশলকে অনেকটা বসে আনতে পেরেছিলেন বলেই তিনি ভারত জাতির পিতা, বাপুজি।

ইতিহাসের সুদীর্ঘ কাঠগড়ায় বরং স্বয়ং গান্ধীজীসহ জওহরলাল নেহেরু, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীরা ব্রিটিশদের সেই ষড়যন্ত্রের অংশিদার হিসেবেই একদিন প্রমাণিত হবে। আমি মনে করি, সেই তুলনায় বরং সুভাষ চন্দ্র বসু হলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান প্রবক্তা। স্বয়ং গান্ধীজী সেখানে ব্রিটিশদের কূটনৈতিক স্বার্থের কাছে বলির পাঁঠা। সেটা অবশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি আলোচনা হতে পারে।

আজ বরং কথা বলি গান্ধীজীকে নিয়ে। ইউনিভার্সেল থিয়েটার আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী ইতিহাসভিত্তিক নাট্যোৎসব- 'ইতিহাসের মহানায়কেরা'-তে আজ ছিল ইউনিভার্সেল থিয়েটারের নাটক 'মহাত্মা'। তাই আজ কেবল এই নাটক কেন্ত্রীক কয়েকটি কথা বলব। আজকের নাটকে আমি হলভর্তি দর্শক না দেখে বড়ই হতাশ হয়েছি।

আয়োজকরা এই জায়গাটিতে শতভাগ ফেল করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই উৎসবের নাটকগুলো অত্যন্ত সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে রিলিভেন্ট। সেখানে হলে দর্শক নাই। এটা খুব হতাশার। এর বাইরে ইউনিভার্সেল থিয়েটারের আজকের নাটক খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে গান্ধীজী'র চরিত্রে আবুল কালাম আজাদ ও গোলাম সরোয়ার হোসাইনী'র চরিত্রে আবুল হোসেন খোকন দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন।

খেলারাম পাণ্ডে ও এডওয়ার্ড প্রিন্স চরিত্রে মাজহারুল হক পিন্টু ও শওকত আলী মনসুর ভালো অভিনয় করেছেন। সেই তুলনায় সুকুমার ও সাধনা চরিত্রে দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু সবমিলিয়ে সাদামাটা পরিছন্ন পারফর্মিং। বিশেষ করে গান্ধীজী'র মঞ্চে আগমন ও বিদায় দৃশ্য মনে রাখার মত। বিশেষ করে এই দৃশ্যে লাইটের ব্যবহার ভালো লেগেছে। তবে মঞ্চে গান্ধীজীকে একা একা আরো কয়েকটি সিকোয়েন্সে দেখার আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। গোটা ভারতের সর্বত্র এমন মানুষসৃষ্ট দুর্যোগের সময় একা গান্ধীজী কেমন আচরণ করতে পারেন, দর্শকের সেই চাহিদা আজকের নাটকে অনুপস্থিত ছিল। নির্দেশক এই জায়গাটিতে আরো ভাবতে পারেন।

বাদল শহীদের সেট ভালো লেগেছে। কিন্তু আবহ সংগীতের একটি জায়গায় গান্ধীজী যখন কথা বলছেন তখন ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড এত লাউড ছিল যে, গান্ধীজীর ব্ক্তব্যকে ছাড়িয়ে দর্শককে গান শোনানোর প্রচেষ্টা ভালো লাগেনি। কারন ওই মুহূর্তে দর্শকের আকর্ষণের চূড়ান্তে স্বয়ং গান্ধীজী। তিনি কী বলছেন তা শুনতে চায় দর্শক। টোটাল সাউন্ড প্রজেকশানে আরো উন্নতি করার সুযোগ আছে।

ইউনিভার্সেল থিয়েটারের প্রযোজনা 'মহাত্মা'র রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মাজহারুল হক পিন্টু। সেট ও মিউজিক নির্দেশনা দিয়েছেন বাদল শহীদ। শিল্প নির্দেশনা দিয়েছেন আবুল হোসেন খোকন। কস্টিউম পরিকল্পনা করেছেন বুনো, সুতোয় বোনা কাব্য। মেকআপে ছিলেন শুভাশীষ দত্ত তন্ময়। আলোক পরিকল্পনায় শামীমুর রহমান। মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় দীন ইসলাম শ্যামল। নাটকের সমন্বয়কারী ছিলেন আজিজুল পারভেজ।

মহাত্মা নাটকে রূপক আকারে যে মূলবার্তাটি দেওয়া হয়েছে, তা সমকালীন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এখনো খুবই প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে এখনো গান্ধীজীর অহিংসা পরম ধর্মের প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত শীক্ষণীয় একটি পূর্বশর্ত হওয়ার মত বিষয়। গান্ধীজী তাঁর এই ঐতিহাসিক বাণী কেবল ভারতবাসীর জন্য নয়, গোটা মানবজাতির জন্যই চরম সত্যরূপে প্রচার করেছেন, যার লক্ষ্য পূরণের জন্য এখনো গোটা মানবসমাজ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। হিংসাই মানব জাতির ধ্বংসের প্রধান কারণ। তাই অহিংসা হতে পারে এই ধ্বংসরোধের প্রধান হাতিয়ার। জয়তু ইউনিভার্সেল থিয়েটার। জয়তু ইতিহাসের মহানায়কেরা নাট্যোৎসব।

----------------------------------
৮ নভেম্বর ২০১৭



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×