ভারতের প্রাক্তণ রাষ্টপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি'র বাংলাদেশ সফরকে একটু অন্যরকমভাবে উদযাপনের অংশ হিসাবে বা একটু ঐতিহ্য দিতেই 'আন্তর্জাতিক বাংলা লেখক সম্মেলন' নামে কথিত একটি লেখক সম্মেলন হচ্ছে বাংলা একাডেমিতে (১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ২০১৮)। আর বাংলা একাডেমি প্রতিবছর যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনটা আয়োজন করে, ওটা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। আমি এটুকু সুস্পষ্টই বুঝতে পেরেছি।
ভারতের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি অবসর নেওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরের তালিকায় এক নম্বরে বাংলাদেশকে রেখেছিলেন। সেই এক নম্বরে রাখার পেছনেও একটা দীর্ঘ রাজনীতি আছে। সেটুকু এই কথিত লেখক সম্মলনে উপস্থিত বাংলাদেশী মহান লেখকদের বুদ্ধির দৌড়ের বাইরে। তাই তা নিয়ে এখানে কিছু বলার নাই!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শ্রী প্রণব মুখার্জি যোগদান করবেন। সে কারণে মুখার্জি বাবু'র সঙ্গে কলকাতার সাহিত্য ও শিল্পাঙ্গনের কিছু বিশিষ্টজন বাংলাদেশে এসেছেন। চট্টগ্রামেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে।
ওনারা সূর্যসেনদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের খোঁজ রাখেনি। আর এখন সূর্যসেনের বসতবাটি ভিজিট করে ইতিহাসের অংশ হতে চান প্রাক্তণ কংগ্রেস নেতা শ্রী প্রণব মুখার্জি বাবু। দেশ ভাগের সময় ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস যে ভুল করেছে, গান্ধী, নেহেরু ও জিন্নাহ যে ভুল করেছে, সে পথে আমার নেতা সুভাষ বোস হাঁটেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার বিজয়ী হলে ব্রিটিশকে গোটা ভারতের স্বাধীনতা-ই দিতে হতো। মোটেও বিভক্ত ভারত নয়।
মুখার্জি বাবুদের তখনকার ভুল নীতিতে সূর্যসেনদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের চট্টগ্রামে বসবাস করার সুযোগ হয়নি। চট্টগ্রামের ভিটেমাটি থেকে তারা উৎখাত হয়েছিল। সূর্যসেনের ফাঁসি হয়েছিল। আর এখন সেই বিপ্লবী সূর্যসেনের বাড়ি ভিজিট করে আলগা দরদ দেখানো ইতিহাসের সাথে মশকরা করার সামিল। এমনকি কলকাতায় চলে যাওয়া সূর্যসেনদের বংশধরদেরও ভারত সরকার কোনো খোঁজ রাখেনি। মুখার্জি বাবু'র কংগ্রেস তাদের জন্য কিছু করেনি।
নইলে হুট করেই কোনো ধরনের প্রচার ছাড়াই বাংলাদেশে একটা আন্তর্জাতিক লেখক সম্মেলন হবে, অথচ এখানকার তরুণ প্রজন্মের লেখকদের পর্যন্ত জানানো হবে না। এমন রহস্য রাখার কারণ কী? স্রেফ প্রণব বাবু'র জন্য এই আয়োজন। এই সুযোগে যারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চায়, সেই আগ্রহী দলকেই ক্যাশ করেছেন বাচ্চু ভাই। বাচ্চু ভাইকে স্যালুট। কো-অরডিনেটর হিসাবে আপনি মহান।
বাংলাদেশ থেকে যেসব লেখকদের ভারতীয় সনদ ও পুরস্কার লাগবে, তারা নানান অছিলায় এই সম্মেলণে যোগ দিয়েছেন। যাদের তা দরকার নাই বা আগ্রহ দেখাবে না, তা্দের এই দলে রাখা হয়নি। হিসাবটা মোটামুটি এরকম। পাশাপাশি ভারত থেকে যারা বাংলা সাহিত্য করেন, বাংলাদেশে যাদের বই বিক্রির হিরিক লাগানো দরকার, বাংলাদেশে ভারতীয় বইয়ের পাঠক সৃষ্টি করার একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য এই সম্মেলনের ভারতীয় এজেন্ডা।
এখন আপনি যদি এই রাজনীতি না বোঝেন, আর এমনি খামাখা হু-আক্কা-হু মারেন, আপনার সাথে আমার কোনো বিতর্ক নাই। আপনার বুদ্ধি ও ক্রিয়েটিভিটির দৌড় আমি জানি। আপনার চামচামির ধরনও আমি জানি।
একটা জিনিস আপনি নিজেই খেয়াল করে দেখবেন- মানুষ যখন কারো সামনে চামচামি করে, সে কার্যত কিছুটা খাটো হয়ে যায়। লম্বা একটা মানুষ, অথচ চামচামি করার সময় দেখবেন কেমন বামন হয়ে যায়। সত্যি সত্যিই তখন সাইজেও, আকারে ও প্রকৃতিতেও ছোট হয়ে যায়। এসব বামনদের আমি দেখলেই চিনতে পারি।
যে কোনো বন্ধুদের আড্ডায়ও খেয়াল করে দেখবেন, কেউ যদি একটু চামচামি করে, তার সাইজ একটু ন্যুজ হয়ে আসে। তো প্রণব মুখার্জি বাবু'র বাংলাদেশ সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ছোট আকারের এই লেখক সম্মেলন নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো বিরোধ নাই। এটা দুটি পক্ষের স্রেফ একটা এজেন্ডা। কিন্তু এই এজেন্ডা না বুঝে যারা এখানে যোগ দিয়ে নিজেদের বড় বড় লেখক প্রমাণ করতে চাইছেন, সেটা যদিও বড়ই হাস্যকর।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমার নেতা হিটলার, মুসোলিনিরা বিজয়ী হলে, নেতাজি সুভাষ বোস হতেন আধুনিক ভারতের জনক। তখন মুখার্জি বাবুদের কংগ্রেস এত বড় রাজনৈতিক ভুল করতে পারতো না। ভারতকে ব্রিটিশদের সাধ্য ছিল না ভাগ করার। ভারত ভাগ নিয়ে আমার নতুন উপন্যাসে সেসব বিস্তারিত আমি লিখব। অন্যচোখে ইতিহাসের সেসব বিশ্লেষণ আমি করছি সেখানে।
মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহরা ইতিহাসের যে ভুল করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। সূর্যসেনরা, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম, নজরুলরা অমন নাকখপতা দেওয়া আন্দোলন করেননি। তাঁরা প্রকৃত বিপ্লবী। সেই বিপ্লবীদের বংশধরদের আজ আর কোনো চিহ্ন নাই। আর এখন আপনারা ভিজিট করে, মশকরা করবেন, করেন। ভারতবর্ষে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিষবাষ্প রোপনের জন্য ইতিহাস একদিন গান্ধী, নেহেরু-জিন্নাহদের বিচার করবে। সেই দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
ইতিহাস নিজেই ইতিহাস লেখে। ইতিহাস নিজের ইচ্ছে মত লেখা যায় না।
-----------------------
১৪ জানুয়ারি ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১