'এতদিন মধ্যম আয়ের দেশে এখন বাংলাদেশ' বলে যারা মিথ্যা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালিয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আজ কী তাহলে তাদের মুখেই চুনকালি মেখে দিলেন? উন্নয়নশীল দেশের যে সকল ক্রাইটারিয়া, তা প্রাথমিকভাবে পূরণ হওয়ায়, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২১ সালে এই উত্তরণের উপর একটি রিভিউ করবে জাতিসংঘ। তারপর ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে জাতিসংঘ।
কিন্তু সরকারি অর্থের অপচয় করে সপ্তাহব্যাপী সরকারি-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই উদযাপন কতোটা যৌক্তিক? এমনিতে দেশের বিচিত্র ধরনের দুর্নীতির খবরাখবর সবাই জানে। সরকারী এই অপব্যয় জনগণের করের টাকার অপব্যবহার বলেই আমি মনে করি। প্রাথমিক স্বীকৃতি অর্জন এমন কোনো উল্লেখ করার মতো অর্জনই নয়। এমনিতেই দেশের রুগ্ন স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষাখাতের ধ্বংসের মধ্যে পাইকারী দরে গণহারে গোল্ডেন প্লাসের পাশ, মানুষের জীবনযাত্রার নাজেহাল অবস্থা, জনজীবনে নিরাপত্তা হুমকিসহ এসবকে পুঁজি করে এমন উদযাপন করাটা একটা অসুস্থতার লক্ষণ।
বাংলাদেশের মানুষের লাইফ এক্সপেন্ট্যান্সি এখন কত? শিক্ষার এই ভগ্নদশা নিয়েও সেই হার কত? মানুষের গড় আয় কত? এদেশের নারীদের ফার্টিলিটি রেট ও প্রেগন্যান্সি হার কত? এগুলোকে কী নিয়ে কী এখনই দেশ উদযাপনের মতো স্বস্থিতে পৌঁছেছে? আজকাল কথায় কথায় শোনা যায়, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল? যে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে, শিক্ষা ব্যবস্থা পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যখাতের কোনো চোখে পড়ার মত নজির নেই, দুর্নীতিতে যে দেশটি এখন প্রথম সারির, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বলতে যার কোনো বালাই নাই, জনজীবনে নিরাপত্তা নাই, সেই দেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বলাটা একটা প্রপাগাণ্ডা।
জনগণের করের টাকায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সপ্তাহব্যাপী এই উদযাপনে সরকার কত টাকা খরচ করলো, সেই শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। জাতিসংঘের প্রাথমিক স্বীকৃতিকে যারা এভাবে উদযাপন করতে পারে, সরকারী অর্থ অপব্যবহার করার জন্য তাদের একদিন এদেশের জনগণের কাছেই জবাবদিহি করতে হবে।
আজকের এই উদযাপনে যদি একটা ঘোষণা শোনা যেত যে, কোনো মন্ত্রী, এমপি, সরকারী কর্মকর্তা চিকিৎসার জন্য আর বিদেশ যাবে না বরং দেশের চিকিৎসা সেবা উন্নত করে, দেশেই তারা চিকিৎসা নেবেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করে, তাদের ছেলেমেয়েদের দেশেই শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন, জনগণকে শতভাগ নিরাপত্তা দেবেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখবেন, দেশে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন হবে, তাহলে এই উদযাপনকে সমর্থন করা যেতো।
এই উদযাপন যে আরো কিছু চুরিচামারি করার নজির স্থাপন করবে, সেই উদযাপনকে স্বাগত জানানোর কিছু নাই। বরং দেশের মানুষের সম্মিলিত অর্জনকে সরকারী অর্জনের সাথে গুলিয়ে উদযাপিত এই সপ্তাহব্যাপী আয়োজন সরকারী অর্থের চরম অপব্যবহার বলেই আমি মনে করি।
----------------
২২ মার্চ ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:৪১