তরুণ নির্মাতা অন্ত আজাদের ডেব্যু ফিল্ম 'আহত ফুলের গল্প'। 'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্রটি সেন্সর বোর্ড থেকে আনকাট ছাড়পত্র পাবার পর, এবার স্বয়ং নির্মাতার ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলচ্চিত্রটি ঈদের দিন মুক্তি পাচ্ছে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জে। একটানা দুই সপ্তাহ প্রতিদিন চারটি শো চলবে। নির্মাতা জানান, এরপর চলচ্চিত্রটি দেশের বিভিন্ন শিল্পকলা একাডেমি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য কালচারাল অডিটরিয়ামগুলোতে প্রদর্শনী শেষে ফাইনালি সিনেমা হলে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি বিদেশে বিভিন্ন ফেস্টিভালেও প্রদর্শনী হবে।
'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্রে বাস্তব জীবনের আমাদের চারপাশে দেখা ঘটনার বিশ্লেষণ থেকে আমাদের জীবনবোধের গভীর সংকটকে উপলব্ধির প্রচেষ্টা রয়েছে। সিরিয়াস বিষয় গল্পের বিষয়বস্তু হলেও দৈনন্দিন জীবনের হাসি-ঠাট্টা, আনন্দ-বেদনা, গান-গীত এবং একটি প্রেমের গল্পের ভেতর দিয়ে চলচ্চিত্রের প্রধান গল্পটির সুর প্রবাহিত। ফ্রেম উইদিন ফ্রেম, স্টোরিস উইদিন স্টোরিস!
বাংলাদেশে সিনেমা বানানো যেমন কঠিন কাজ তেমনি সেই সিনেমার বাজার ধরাও আরো কঠিন যুদ্ধ। বিশেষ করে ব্যক্তি উদ্যোগে স্বাধীন ধারার ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম মেকারদের জন্য বাংলাদেশে সিনেমা বানানো একটা যুদ্ধের মত। তরুণ নির্মাতা অন্ত আজাদ ইতিমধ্যে নিজ উদ্যোগে 'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন। সেন্সর বোর্ড থেকে আনকাট ছাড়পত্র পেয়েছেন। এবার নেমেছেন নিজের চলচ্চিত্রের বাজার ব্যবস্থাপনায় নিজেই।
সেই উদ্যোগের অংশ হিসাবে এবার অন্ত আজাদের গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ থানায় একটি পুরাতন সিনেমা হলকে সাজানো হয়েছে টানা দুই সপ্তাহ 'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর জন্য। ব্যক্তি উদ্যোগে সিনেমা বানানোর পর সেটি আবার প্রদর্শনীর ব্যাপারটিও নির্মাতার ব্যক্তি উদ্যোগে করার আইডিয়াটি সারা বিশ্বের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম-মেকারদের জন্য মোটেও নতুন নয়। বাংলাদেশেও এর আগে একই ধারায় অকাল প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করেছেন। অন্ত আজাদের এই শুভ উদ্যোগ সফলতা পেলে আমাদের তরুণ নির্মাতারা আরো সাহসী হয়ে উঠবেন।
অন্ত আজাদের 'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্র নিয়ে এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। যুদ্ধের মাঠের এই ক্যাপ্তানকে আমার মোবারকবাদ ও শুভেচ্ছা। আশা করি সিনেমায় করা মূল ইনভেস্ট এই উপায়ে উঠানোর প্রচেষ্টাতে অন্ত আজাদ সফল হবেন। প্রত্যাশা করি, সেই সফলতা দেখে আমাদের পরিবেশকরা 'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্রটি পরিবেশনার দায়িত্ব নিয়ে তরুণ নির্মাতা অন্ত আজাদকে নতুন সিনেমা করার রসদ যোগাতে এগিয়ে আসবেন।
আমরা আঠারো কোটি মানুষ। দশ কোটি মানুষ যদি কোনো না কোনো মাধ্যমে সিনেমা দেখেন, তাদের মধ্যে মাত্র কয়েক লাখ মানুষ এখন সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখেন। আমাদের সরকারগুলো সিনেমা হলে গিয়ে মানুষের সিনেমা দেখার বিনোদন পাবার সুযোগটিকে ধীরে ধীরে গলাটিপে হত্যা করেছেন। নব্বই দশকেও আমরা সিনেমাহলে গিয়ে সিনেমা দেখতাম। আর এখন লোকদেখানে নামেমাত্র ডিজিটাল যুগের উন্নয়ন দেখছি। কিন্তু বাস্তবের সিনেমাহল গুলো লোকসান গুণতে গুণতে গার্মেন্টস হাউজে রূপ নিয়েছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগের অভাব ও সংস্কৃতিতে সরকারি বাজেট কমে যাওয়া সরাসরি দায়ী।
অথচ বিদেশি সিনেমা বাংলাদেশের চালু সিনেমাহল গুলোতে এখনও ব্যবসায়িক সফলতা পাচ্ছে। আমাদের এফডিসি কেন্দ্রিক বাংলাছবিতে যে সিন্ডিকেট চক্র গড়ে উঠেছে, পরিবেশকদের যে একচ্ছত্র আধিপত্য, তা স্বাধীন ধারার নির্মাতাদের জন্য আরেক যুদ্ধের ইতিহাস। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার ছবি বানাবেন, আর এই সিন্ডিকেট চক্র কোনো কষ্ট না করেই ঘরে বসে ঘি খাবেন। আর লোকসান গুণবেন স্বয়ং নির্মাতা। কেবল সরকারি সদিচ্ছার অভাবে আমা্দের দেশে সিনেমাহল গুলোতে পরিবেশক ও হলমালিকরা যে সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তুলেছেন, সেই দুষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে এভাবে স্বাধীন প্রদর্শনীর ব্যবস্থাপনা নিশ্চয়ই অত্যন্ত সাহসী উদ্যোগ।
অন্ত আজাদ জীবনের সবকিছু তার এই প্রথম সিনেমায় ইনভেস্ট করেছেন। তিনবেলা না খেয়ে, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে, হাজারো ঝড়-ঝাপটা পাড়ি দিয়ে, হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা ও মানসিক শ্রম ব্যয় করে এবং একমাত্র সিনেমা ভালোবাসাকে পুঁজি করেই অন্ত আজাদ এই দুঃসাহস দেখিয়েছেন। এজন্য আমি অন্ত আজাদকে স্যালুট জানাই। ভালোবাসা জানাই। সিনেমা যুদ্ধে জয়ী হয়ে অন্ত আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করবে, এই প্রত্যাশা আমার রইল।
তরুণ নির্মাতা অন্ত আজাদ ও 'আহত ফুলের গল্প' চলচ্চিত্র টিমের সবাইকে আমার শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার হিসাবে আমি নিজেও অন্ত আজাদের এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়েছি। আশা করি, সিনেমার যারা দর্শক, সেই দর্শক এবার সিনেমা দেখে, আমাদের স্বপ্নকে সার্থক করবেন। জয়তু বাংলা সিনেমা। জয়তু 'আহত ফুলের গল্প'।
---------------------------
২০আগস্ট ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৩:২৭