প্রতিটা বিষয়ের দুটি দিক আছে, ইতিবাচক-নেতিবাচক তথা ভালো-মন্দ; আশীর্বাদ কিংবা অভিশাপ। ঠিক তেমনি বিজ্ঞানেরও দুটি দিক আছে। ছোটবেলায় বিভিন্ন বিষয়ের প্রবন্ধ পড়তে হতো তার মধ্যে অন্যতম ছিলো “বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ”, এই প্রবন্ধে সর্বশেষ যেটা প্রমাণ হতো- বিজ্ঞান মূলত আশীর্বাদ। কেননা এর ইতিবাচক দিকই বেশী।
বিজ্ঞানের কল্যানে আমরা যা পেয়েছি ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’ তথা Facebook, Twitter, LinkedIn, Pinterest, Instagram, pluse.gogle ইত্যাদি অন্যতম। উক্ত মাধ্যমগুলোরও দুটি দিক আছে, আশীর্বাদ ও অভিশাপ।একটা দিক আশীর্বাদ হলেও , আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অভিশাপই বটে। কেননা এসব মাধ্যম শিক্ষা সহায়ক হিসেবে ব্যবহার না হয়ে বিনোদন সহায়ক হিসেবেই বেশী ব্যবহার হচ্ছে। আমরা যখন পড়ালেখার মাধ্যমিক স্তরে ছিলাম শিক্ষকগণ কর্তৃক দৈনিক ছয়-আট ঘন্টা পড়ালেখা করার শর্তে ভালো রেজাল্ট করার স্বপ্ন দেখতাম। সে শর্ত পালনে আমাদের অলাভ হয়নি বরং জীবনের কিছু মূল্যবান ভিত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে আমাদের প্রজন্ম দৈনিক ছয়-আট ঘন্টা পড়াশুনা করে ভালো ফলাফল করার স্বপ্ন দেখতো সেখানে আজকের প্রজন্ম দৈনিক ৩-৪ ঘন্টা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করে ভলো ফলাফলের দুঃস্বপ্ন দেখছে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোকে শিক্ষা সহায়ক হিসেবে ব্যবহার না করে বিনোদন সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি- বিনোদন সহায়ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন-চার ঘন্টা সময় ব্যয় করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা অবশ্যই আকাশ কুসুম কল্পনা।এতো বললাম সময়ের অবমূল্যায়নের কথা।
এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া জাতির জন্য লজ্জাজনকই নয়, জাতির বিবেককে আরেকবার ভাবিয়ে তুলেছে যে শিক্ষার্থীদের জন্য এই মাধ্যমগুলো কতটা শিক্ষাসহয়াক।
তাছাড়া, ফেইসবুকে প্রেম অতঃপর ধর্ষণ, ফেইসবুকে পরিচয় অতঃপর খুন এই রকম বিভিন্ন শিরোনামে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তাতে আমরা সচেতন হইনি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কাল্পনিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ধর্ষিতা হয়েছেন অনেক নারী যাদের অধিকাংশই ছাত্রী। প্রেমেরে জেড়ে খুন হয়েছে অনেক প্রেমিক যাদের সিংহভাগই ছাত্র।শুধু কি তাই! এই সব মাধ্যমগুলোতে ব্লেক মেইলের স্বীকার হয়ে সর্বস্ব হরিয়েছে এরকম লোকের সংখ্যাও কম নয়।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তরুন প্রজন্মের জন্য আশীর্বাদ তা বলতে পারি না। অভিশাপই বলতে হবে নির্দ্বিধায়।
এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে শুধু শিক্ষার্থীদের সচেতন হলে হবে না, শিক্ষক-অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। শিক্ষকসমাজের উচিত হবে শিক্ষার্থীদের মাঝে এর নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা। অভিভাবকদের উচিত হবে সন্তানরা যাতে এই সব মাধ্যমে আসক্ত না হয় তার দিকে নজর রাখা।
আসুন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আসক্ত হওয়া থেকে আমাদের সন্তানদের দূরে রাখি। এই সব মাধ্যমগুলোকে যাতে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে শিক্ষা সহায়ক হিসেবে ব্যবহার করে তার জন্য সচেতন করি। অভিশাপ থেকে মুক্ত হই।