আমরা নিউটন,আইনস্টাইন ও আলবার্ট এফ পোর্ট’র মতো বিজ্ঞানীদের জীবনী সম্পর্কে জানি,পড়ি, তাদের তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করি। কিন্তু তাঁদের তত্ত্বকে ভুল প্রমাণকারী ইমাম আহমদ রেযা সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখিনা বললেই চলে। হয়তো তিনি মুসলিম বলে নয়তো ভারতীয় উপমহাদেশের বলে!
৭০টির ও অধিক বিষয়ে প্রায় ১৫০০ কিতাব রচনাকারী এই মহান মনষী ভারতের বেরেলবী শরীফে ১৮৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
লেখা সংক্ষেপণে শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর রচনাবলীর সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরছি।
#১৯১৯ সালে স্যান ফ্রানসিসকো আমেরিকার জ্যোর্তিবিজ্ঞানী প্রফেসর আলবার্ট এফ পোর্ট ভবিষ্যৎবাণী করলো যে, ১৭ ডিসেম্বর ১৯১৯ সালে একই সময়ে কয়েকটি গ্রহ সূর্যের সামনে চলে আসার দরুণ উদ্ভুত মধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর কোন কোন অংশে তা-ব সৃষ্টি করবে। এই খবরটি ভারতের বানকিপুর হতে প্রাশিত ইংরেজী দৈনিক এক্সপ্রেস পত্রিকায় ১৮ অক্টোবর ১৯১৯ সালে প্রকাশ হয়।শামসুল হুদা কলেজের প্রিন্সিপ্যাল জাফরুদ্দী বিহারী এই ভবিষ্যত বাণী সম্পর্কে ইমাম আহমদা রেজা বেরেলবীকে জ্ঞাত করলে , আলা হযরত পোর্টের ভবিষ্যত বাণী ছেলে মানুষী আখ্যায়িত করে; তার অভিমত খন্ডনে উর্দু ভাষায় বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ সম্বলিত “মুঈন-ই-মুবীন বাহারে দাওরে শামস ও সাকুনে যামীন” পুস্তক রচনা করেন। যা ১৯৮৯ সালে পাকিস্তান থেকে ইংরেজী ভাষায় অনূদিত হয়।
# আইজেক নিউটন, আইনস্টাইন প্রমুখের প্রচারিত অভিমত খন্ডনে
১. আল কালিমাতুল মূলহামাতু ফীল হিকমাতিল মুহকামা লি ওয়ায়ে ফালসাফাতিল মুশামমাহ (১৯১৯ খ্রিঃ)
২. ফাওযে মুবীন দর রদ্দে হরকতে যমীন (১৯১৯ খ্রিঃ)
৩. নযুলে আয়াতে কুরআন বে সাকুনে যামীন ওয়া আসমান (১৯১৯ খ্রিঃ)
কিতাবগুলোতে পবিত্র কুরআন করীম দ্বারা প্রমান করেন যে পৃথিবী স্থির,সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র পৃথিবীর চারিদিকে পরিভ্রমণে রত আছে। এ মতের স্বপক্ষে তিনি ১০৫টি প্রমাণ দাঁড় করেন যার মধ্যে ১৫টি প্রমাণ পূর্বেকার লেখকদের গ্রন্থ থেকে আর ৯০টি দলীল স্বয়ং নিজেই দাঁড় করেন।
#বিজ্ঞান বিষয়ের উপর ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) লিখিত কিতাবের সংক্ষিপ্ত তালিক তুলে ধরা হলো-
১. আল বয়ানু শাফিয়া হুকমে ফনোগ্রাফীয়া (১৯০৮ খ্রিঃ)
২. আল-কালিমাতুল মূলহিমা (পদার্থ ও জ্যোার্তিবিদ্যা)
৩. হাশিয়ায়ে উসূলে তাবয়ী (পদার্থ)
৪. আস্ সারাহুল মুওজিয ফি তাদীলির মারকীয (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা )
৫. জদূল রবায়ে জানতরী শাহত সালাহ (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
৬. কানুন রুয়তে আহিল্লাহ (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
৭. তুলুউ ওয়া গারুবে কাওয়াকিব ওয়া কামর (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
৮. রুয়তুল হিলাল(আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
৯. বাহসুল মা আদিলা ফাতাদ দারজাতুস সানিয়া(আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১০. হাশিয়াযে কিতাবুস সুওর(আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১১. হাশিয়ায়ে শরহে তাযকিরাহ(আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১২. হাশিয়ায়ে তিয়বুন নাফস (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৩. আকমারুল ইনশারাহিল হাকীকাতিল ইসবাহ (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৪. জাদাতুত তু’লুওয়ান মুমর লিস সাইয়্যারাতি ওয়ান নজুম ওয়ার ক্বামার (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৫. হাশিয়াযে তাসরীহ্ (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৬. হাশিয়ায়ে ইলমে হাইয়্যাত (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৭. রফউল খিলাফ ফি দাকায়িকিল ইখতিলাফ (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৮. শরহে বাকুরাহ (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
১৯. মা’ আদানে উলুবী দর সীনিনে হিজরী ওয়া ইসওয়ী ওয়া রুবী (আধুনিক জ্যোর্তিবিদ্যা)
২০. সামউদ দায়ী ফীমা জাওদাসুল ইজযি আনিল মায়ী (পদার্থ)
২১. আন নুর ওয়ান নাওরক লি ইসফারিল মায়ীল মুতলাক্ব (পদার্থ)
২২. আদ দিককাতু ওয়াল রযান লি ইলমের রিককতি ওয়াল ইয়াসলান (পদার্থ)
২৩. আল মাতরুস সায়ীদ আল বিনতি জিনসিস সায়ীদ (শিলা বিদ্যা)
২৪. আর কাশফু শাফিয়্যাাহহুকুম ফনোগ্রাফিয়া (শব্দ বিজ্ঞান)
২৫. আল আহলা মান আসকারা ইয়াতলুবু সাকরা ওয়া সিররা (রসায়ন)
২৬. ফাতওয়ায়ে রজভীয়া ৮ম খন্ড (প্রাণিবিদ্যা)
#একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করতে চাই,
ইসলামিয়া কলেজ লাহোর এর গণিতের অধ্যাপক প্রফেসর হাকেম আলী (মৃতঃ১৯৪৪ খ্রিঃ) ইমাম আহমদ রেযার কাছে পৃথিবীর গতিশীলাত সম্পর্কে মতামত জানতে চেয়ে স্বীয় এক পত্রে লিখেছেন যে, ‘জনাব! দয়া করে আমার সাথে একমত হয়ো যান। ইনশাহ আল্লাহ! এতে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীগণকে আপনি মুসলমান হিসেবে পাবেন।’
ইমাম আহমদ রেযা প্রতিউত্তরে লিখেছেন, ‘প্রিয় বন্ধু! বিজ্ঞানীরা মুসলমান হবে না যদি কুরআনের আয়াত ও নস (দলীল) সমূহকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও কাট-ছাঁট করে ইসলামী বিধি-বিধানকে বিজ্ঞানের সূত্র মোতাবেক করা হয়। আল্লাহর পানাহ্! এতে তো ইসলাম বিজ্ঞানকে কবূল করে নিলো, বিজ্ঞান ইসলামকে নয়। হ্যাঁ! তারা সুমলমান হবে এটাতে যে, যতো ইসলামী বিধান বিজ্ঞানের সাথে বিরোধ আছে সবটাতে যদি ইসলামের বিধি-বিধানকে সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা হয় আর বিজ্ঞানের প্রামাণকে খ-ন ও পদদলিত করা হয়। সর্বত্র বিজ্ঞানের সূত্র দ্বারা ইসলামী বিধানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হয় আর বিজ্ঞান প্রত্যাখ্যান হয়। তবেই তারা হাতের মুঠোতে ধরা দেবে। আর এটা আপনাদের মতো বিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের জন্য আল্লাহর রহমতে কোন কঠিন ব্যাপার নয়।”
#তথ্যসূত্রঃ
১. ইমাম আহমদ রেযা, মুফতীহ গোলাম ছামদানী রেজভী, মুশির্দাবাদ
২. এশিয়া মহাদেশের ইমাম, মুফতীহ গোলাম ছামদানী রেজভী,মুশির্দাবাদ
৩. মাওলানা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন অনূদিত, কুরআন,বিজ্ঞান ও ইমাম আহমদ রেযা
৪. মুহাম্মদ যুফর উদ্দীন বিহরী, হায়াতে আ’লা হযরত, ১ম খন্ড, পৃঃ১৫৬, করাচি
৫. ড.মুহাম্মদ মাসউদ আহমদ, হায়াতে ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী পৃঃ১১২,করাচি
(বি:দ্র: আমি কোন বিজ্ঞানী নই, আমি একজন ছাত্র মাত্র। বিভিন্ন বই পড়ে যা জেনেছি তার কিয়দংশ তুলে ধরেছি। অন্যজনের ভিন্নমত থাকতে পারে। সাদরে গ্রহণযোগ্য)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:৫২