সন্দীপ থেকে ফিরলাম একটু আগে,কুমিরা বিচে গিয়েই মজার ঘটনা। লঞ্চ কিংবা ট্রলারে কখনো উঠা হয়নি,তার উপর বঙ্গোপসাগর। ভাবতেই কেমন জানি লাগতেছিলো।
সন্দীপ এ যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বঙ্গোপসাগর দিয়ে লঞ্চ কিংবা ট্রলারে করে একটা দ্বীপে যাবো,যার নাম সন্দীপ। এর আগে আমরা কখনো সন্দীপ নিয়ে ভাবিনি।
ফজরের পরে বের হই,কুমিরা বিচে গিয়ে কলা পাউরুটি খেয়ে নিলাম আমরা,ছোটলোকের খাবার। তারপর অনিকের পাগলামি শুরু,একজোড়া লাল টাইপের লোফার পায়ে সে যেন নিজেকে এখুনি সুপারম্যান ভাবতে শুরু করে দিবে,কিন্তু ব্যাচার ফোনে এমবি নাই,কখনো এমবি কিনেওনি বোধহয়। আমার থেকে ফোনটা জোর করে নিয়ে গুগল করতে থাকলো,সন্দীপ সম্পর্কে। ব্যর্থ টাইপের ভং ধরে ফটো তোলাতে মনোযোগী হয়ে উঠলো।
হা হা...
লম্বায় আমার থেকে ডাবল হওয়ায় ট্রলারের টিকেট কাউন্টারে তার মাথাটা স্পষ্ট এক কিলোমিটার দূর থেকে দেখা যাচ্ছিলো বোধহয়। যাই হোক,পাচটা টিকেট কেনা হল। তারপর উঠলাম ট্রলারে,অনিক সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড ছিলো মে বি,আমি ছিলাম রুগী,দীর্ঘ ১৫-২০ দিন ধরে জ্বর সর্দির ভালোবাসাটা যেন ব্রেকাপ হবেইনা।
ট্রলারের চালকের চেহারা মধ্যবয়স্ক কিংবা তার থেকে একটু বেশি,দুটো যাত্রীর সাথে বসা নিয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু হল,শুরু হল গালাগালি চালকের। বুঝলাম,সভ্যতা,ভদ্রতা সেখানে পৌছাতে এখনো অনেক দেরি আছে। আমরা হেসে যাচ্ছি,আর মনে মনে তালেবের কথা চিন্তা করতেছিলাম। আমার এলাকায় হইলে তালেব এতক্ষণে ঘাট অব্দি বন্ধ করে দিত আর চালককে ট্রলারের সাথে বাইন্ধা গাছের গুড়ি কিংবা বাশ দিয়ে সভ্যতা শেখাতো। অথবা লুঙ্গি খুইলা পা উপরে তুইলা পরিত্যক্ত জাহাজে লটকাইয়া রাখতো।
যাই হোক,সন্দীপ ঘাটে গিয়ে নামলাম,আপাতত আমাদের আশা স্বার্থক। ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগরে ভেসে ভেসে একটা দ্বীপে আসছি। নেমেই চা খেলাম,আবারো গুগল,উইকি করে সন্দীপের ঐতিহ্যবাহী স্থান বা দেখার মত জায়গা গুলো খুজতেছিলাম। খুঁজে পেলাম শত বছরের পুরনো মরিয়ম বিবি সাহেবানি মসজিদ,মসজিদ সংলগ্ন শুকনা দিঘী।
বাহ,সিএনজি নিয়ে গেলাম সাহেবানি মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে,উহু হলনা,যেমনটা ভেবেছিলাম তার ছিটেফোঁটা ও নেই। ছোট একটা পুকুরকে প্রতারণা করে দিঘি বলে চালিয়ে দিলো সন্দীপের প্রতারকরা। ছোটলোকদের একটা স্বভাব,এরা প্রতারণা করবেই সুযোগ পেলে।
নামাজ শেষে ভাত খেলাম,খেয়ে সন্দীপের পশ্চিমের বিচে গেলাম। সেখানে গিয়ে একটু শান্তি পেলাম। জায়গাটা তাবু খাটিয়ে রাত কাটানোর জন্য পারফেক্ট। আমাদের একদিনের ট্যুর,ভাগ্যে জুটলোনা। অনেকদিন পর স্কুল ফ্রেন্ডরা এক হলাম এক দিনের ট্যুর ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা। সেখানে সময় কাটালাম,বেশ খানিকক্ষণ। নারিকেল গাছ,খেজুর গাছ। ঘাসের উপর বসে অনেক্ষণ সময় কাটিয়ে বিকেলে আবার ট্রলার ধরে কুমিরা বিচে। ট্রলারে বসে বসে ভাবলাম,প্রতারকে ভরপুর একটা দ্বীপে এত কম প্রতারক মানায় না। আমাদের উচিৎ সেখানে আরো কিছু প্রতারক ধারে পাঠানো।
এরপর ফ্রেন্ডের ভার্সিটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরলাম। ভার্সিটির বাসে ভাটিয়ালি হয়ে ফেনী। সন্দীপ যেমনই হোক,সেখানে যত প্রতারকই থাকুক না কেন আমরা আনন্দ পেয়েছি,বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে ভেসেছি।
(একদিন সন্দীপে আমরা)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০১