কথার ফাকে ফাকে মিষ্টি হাসি হেসে,
বেঘোর ঘুমোনো রাতটাকেও নির্ঘুম করে দেয় সে।
তার চোখের তারায় যে ঝিলিক লেগেছিল বিকেলে;
আজ এতোদিন পরেও তা এতোটুকু ম্লান হলো না।
চমকিয়া যায় বিদ্যুৎ ঐ মেঘে;
জীবন ঋতুতে উৎসব যায় লেগে
আষাঢ়ের সেই বিকাল গিয়াছে চলি,
আজ বসন্তে, এতোটুকু নাহি ভুলি।
একটি হাসির ঝংকার লাগে মনে,
তারি সুর বাজে কংক্রিটের এই বনে।
আজ আমারে পাইবে না কেউ ছুঁইতে,
স্বপন বাহিছে লতায় পাতায় ভুঁইতে।
মেয়ের মুখাবয়ব এক নিঁখুত শিল্পির কারুকার্য যেন।
হাসি-কান্নায়, দুঃখে-সুখে;
নাহ! অদ্ভুত! অদ্ভুত সুন্দর!
নিকষ কালো আঁধার রাতেও যদি;
তুমি এসে, দাঁড়াও আমার দ্বারে।
শুধুই আঁধার, যখন দু'চোখ মুদি;
নইলে আলো, ছড়ায় সারা ঘরে।
নয়ন আমার তোমায় প্রথম দেখে;
ভুলে গেছে, ধরার সকল গ্লানি।
তোমার মুখের আগুন রুপে মেখে;
ঝলসে গেছে আমার পরাণ খানি।
তার পিঠে ছড়ানো চুল-
কোনো কোনো দিন লম্বা লতার বেণী।
সেদিন থেকে, বিধেছে এ'মনে হুল;
হৃদয় মাঝারে একটি কুঠীর কিনি।
কুঠীর সাজাই লাল করবী ফুলে,
শিশির বিন্দু যেথায় মিশেছে জলে।
খেঁয়া বেঁধেছি রক্ত নদীর কূলে,
সেই কুঠীরে তোমায় আনব বলে।
থাকবে তুমি? আমার নতুন ঘরে?
বাঁধব সেথায়, নতুন কাঁদার জমি।
দুটি তারাই থাকবে আকাশ জুড়ে,
একটি আমি, আর যে শুধুই তুমি।
কলেজেও যে ছেলেটি ছিল অবোধ,
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে, সে এখন প্রেমের জোয়ারে ভাসে।
মাঝে মাঝে লজ্জায়ও সে রাঙে,
নামের সাথে মিলেছে যেন-
কারন-
নামটিও তার "রক্তিম"।
মনের কথা শুধুই থাকে মনে;
বসে নিরালায়, ক্লাশের একটি কোণে,
তোমার দিকে তাকাই নিঁখুত গোপনে,
তোমায় দেখে, তৃপ্তি আসে নয়নে।
পিঠে ধাক্কা, হঠাৎ বন্ধু বলে-
"স্যার যে এথায়, কেন যাও বারে ভুলে?"
লজ্জা পেয়েছি আবারো লজ্জা পাব।
বিষম খেয়েছি, আবারো বিষম খাব।
ঠাট্টার জলে নেয়ে চলি প্রতিদিন।
বন্ধু যে তারা, তাই বলে এত হীন?
অথচ তুমি বুঝে না বোঝার ভান কর।
কৌশলে রোজ আমার রাতের ঘুম কাড়।
তোমায় আমায় জড়িয়ে সারা ক্যাম্পাসে,
কৌতুক হয়, সবাই ওরা খুব হাসে।
মেয়েটির বয়স কুড়ি,
এতোদিনে সে বুঝে গেছে সবখানি।
তার ওপরে চলছে নজরদারি।
তারা দোহায়, সবার মধ্যমনি।
একদিন, হঠাৎ ধরা পড়ে রক্তিম।
ছিচকে চোরের মত চুপসে যায় সে।
বালক তখনও পালক গজিয়ে উড়ছে,
তার আলয়ে, বসন্ত হাওয়া বইছে।
যথারীতি সে বালিকার পানে চায়।
মুখ গুজিয়ে বইয়ের আঙিনায়।
বালিকা যে আজ রয় সচেতন ভারি,
বালক তখনও, দেয় যে স্বপন পাড়ি।
হঠাৎ বালিকা দঁড়ায় সামনে তার,
আজ ঘটবে এসপার নয় ওসপার।
রুক্ষ মেজাজ, কন্ঠ যে তার ভারী,
বাতায়নে তার উড়ছে চুলের সারি।
এই যে, শোনো, এই যে লুকোনো বালক,
আমার পানে বিষদৃষ্টি থামুক।
ফের যেন না তোমার মুখটি দেখি;
দোহাই তোমায়, এই যে শুধুই ভিখি।
ক্যাম্পাসে আর মুখ দেখাতে না'রি,
আমার পিছু ছাড় তাড়াতাড়ি।
হৃদয় তখন কাঁচের টুকরো সম,
হঠাৎ তারে লাগে নিঠুরতম।
অঙ্কুরে আজ বিনাশ হলো স্বপ্ন,
হৃদয় ভাঙে, তেষ্টায় বুক শুকনো।
অতঃপর, এক বুক কষ্ট নিয়ে বালক হেঁটে যায়,
হেঁটে যায় দূরে, আরো দূরে, বহু দূরে।
আজ সহসাই তার মনে হয়-
এ পৃথিবীটা ঘোর মিছে।
এ শহরের প্রতিটি উচ্ছ্বাস-
তার বুকে লাগে-
শেলের মতো।
অপমানে, হতাশায়, কষ্টে;
জর্জরিত বালক হেঁটে চলেছে পথে।
এ পথ যেন শেষ নাহি হয় তার,
আমার গল্প, ফুরোবে না কি আর?
নিশ্চয়ই, আছে শেষ।
যার হয়েছে শুরু,
শেষ হবে তার, বলি বারবার-
শেষ হবে, একেবারে শেষ হবে।
দিন চলে যায় একের পরে এক,
বালক নিঁখোজ, না আসে এই বাঁটে।
কদম ফোঁটে, বর্ষা আসে বারেক;
কৃষ্ণচূড়া ধুলার পরে লুটে।
নিম বনেতে লাগল হাওয়ার মাতল,
মড়মড়িয়ে ভাঙছে গাছের গুড়ি।
গ্রীষ্মকালে মাঠে ধরে ফাটল,
বালিকার মন, যেন পাথর নুড়ি।
অবশেষে, পাথর হলো ক্ষয়-
মেয়ে বোঝে-
তার জীবনটা একঘেয়ে আজ বড়ই।
একলা জীবন, একলা পড়ে রয়;
সঙ্গী হীনা ঘর ছাড়া এক চড়ুই।
" আকাশ পানে তাকিয়ে দেখি রোজ-
একটি তারা হারিয়ে গেছে আজি।
এতোদিনে আমার হলো হুস,
প্রতিদিনই তোমার মুখটি খুঁজি।
সখা-সখী, বলতে পার তোমরা?
কোথায় আছে, আমার প্রাণ ভোমড়া?
কোথাউ তাহার মুখটি হাসি হাসি?
বলব তারে, আমি ভালোবাসি।
নিরব সবে, বেবাক মুর্তি যেন,
মুখ ফুটে কে বলল, কি সব ক্ষীণ।
.....................................................
............ ........ ...............................
ব্যালকনির কোণটায়-
প্রতিদিন বসে রয় বালিকা।
হঠাৎ হাওয়া দেয়।
ওড়না ওড়ে, আরো ওড়ে,
এক রাশ কালো চুল।
সেই চুল-
আলতো করে বুলায় মুখের পরে।
একনাগারে আজ বালিকার,
শুধুই অশ্রু ঝরে।
অশ্রু ঝরে, অবিরত, ফোঁটায় ফোঁটায়।
আর, উপচে পড়া জলের তোড়ে-
ভেসে যায় মেঝে।
সেই গন্ড বাহিত নদীতে-
ভেসে ওঠে একটি মুখই বারবার।
ক্যান্সার ছিল তার।
কিছুই বলতে পারে নি তাই।
বলতে পারে নি দু'হাত বাড়িয়ে;
গলা ছেড়ে, নেশায় হারিয়ে;
মন প্রাণ উজাড় করে-
"তোমায় ভালোবাসি।"
কিন্তু তাহার চারিপাশ ঘেরা,
রাজ্যের সব নিশি।
নিশীথ আঁধারময়।
আঁধার ঘনায় আরো।
এক তার জীবন প্রদীপ,
ছড়ায় মৃদু আলো।
হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে-
শহর জুড়ে বয়;
দপ করে নেভে প্রদীপ
এখন, শুধুই আঁধার রয়।
আলোয় ভরা ঘর বালকের-
নিকষ কালো হয়।
নিশীথের চাঁদের কীরণ মেঝেয় ছড়ায়,
এক ফালি তার পড়ে মেয়ের ঠোঁটে।
আলতো করে হাত বুলিয়ে যায়-
কে যায়? কে সে?
কে তুমি? তুমি সেই বালক?
জোৎস্না রাতে চাঁদের আলো-
রক্তিম হয়ে ঝরুক।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৬