(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Google)
সকাল থেকেই মানাউস শহরের ব্যস্ত সড়কে পায়চারা করছে ডিয়েগো আলবার্তো।বয়স সবে আট।এরই মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন রূপ দেখে ফেলেছে সে।বিশ্বকাপের জ্বরে কাঁপছে ব্রাজিল,কাঁপছে পুরো বিশ্ব।নানা দেশ হতে আগত পর্যটকদের আগমন আর বর্ণিল সব রঙে মুখরিত হয়ে আছে প্রতিটি শহর,প্রতিটি সড়ক।ডিয়েগো একনাগাড়ে চারপাশটার দিকে তাকিয়ে আছে।একটা কেমন ঘোরলাগা ভাব তাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে রেখেছে।ফুটবল যেখানে ধর্মের মত,সেই দেশে মাতামাতি একটু বেশী হবে স্বাভাবিক।তাই বলে দারিদ্র্যতার বুকে পা রেখে!!!ভাবতেই ভেতর থেকে দ্বীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার।ভেবেছিল পর্যটকদের ভিড়ে ভিক্ষা করে দু চার পয়সা কামিয়ে নিবে।তাতে যা রোজগার হবে তা দিয়ে নিজে কিছু খাবে,বাড়ির সবাইকেও কিছু মুখে পুরে দিবে।কিন্তু কোথায় কী!!এখানে কেউ ভিক্ষা দিতে চায় না।সুযোগ পেলেই টাকা ঢালছে কেবল নারীর শরীরের উপর।টাকার বিনিময়ে শরীর ঘেঁটে নিজেদের ঘামিয়ে নিচ্ছে।
নিজেকে নিজে ধিক্কার জানায় ডিয়েগো।ভাবে মেয়ে হয়ে কেন জন্ম নিল না সে।তাহলে শরীর বেঁচে সেও রমরমা ব্যবসা করতো।কামুক ভাব আসুক আর না আসুক,পুরুষের সাথে বিছানায় শুলেই টাকা আর টাকা!!!আর বার্তি হিসেবে তো একসাথে বসে খেলা দেখা আছেই!!
পাড়ার এরেনা রোজারিও তো এভাবে করেই সংসার চালাচ্ছে এ ক'টা দিন।বয়সে ডিয়েগোর চেয়ে পাঁচ বছরেরবড় এরেনা।লিকলিকে শরীর,সাদামাটা চেহারা।কিন্তু বিশ্বকাপ আসতেই রূপ হঠাৎ কেমন পাল্টে গেল!!ছোট ছোট আটোসাটো কাপড়ে বড় হয়ে ধরা দিল শরীরের গোপন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।যেন নিজের ইচ্ছেমতো শরীর বানিয়ে নিয়েছে সে!!এ শরীরে না খেঁটে,টাকা না ঢেলে খদ্দের যাবে কই!!!
ডিয়েগো চোখে অন্ধকার দেখে।বুঝতে পারছে ক্ষুধা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।পেটের পোকাগুলোও খাবার না পেয়ে,অনাহারে থেকে থেকে আজকাল যখন তখন বিদ্রোহ শুরু করে দেয়।কি করবে কিছু ভেবে পায় না সে।এদিকে পশ্চিম আকাশেও সূর্য হেলে পড়েছে।একে একে জ্বলতে শুরু করেছে শহরের রঙিন বাতিগুলো।ডিয়েগো জানে আর অপেক্ষা করে লাভ নেই।এই সময়টা এখন শুধু নিশিকন্যাদের।ছোট একটা অন্ধকার কাঁনা-গলিতে ঢুকে যায় ডিয়েগো।সেই অন্ধকারে হারিয়ে যায় ক্ষুধার্ত বালকের ছায়াটি.....
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৭:২১