গতকাল শেষরাতে পোস্ট করা হয়েছিল এই লেখাটি, পুরনো পোস্টটা মুছে দিয়ে আবার ফ্রন্ট পেইজে দিলাম, সব পাঠকের পড়ার সুবিধার জন্য।
এই লেখাটি আমি লিখছি একটি তৎক্ষনাৎ অনুভূতি থেকে, যখন সামহোয়ারইনের কিছু নতুন ফিচারের সম্পর্কে অবগত হলাম, দীর্ঘ সময় ধরে ব্লগে উন্নয়নজনিত অচলাবস্থার পর।
আমি মোটামোটি বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হতে চাই। আমার মা আমাকে বিশ্বাসী হতে বলেন, তার কথা, তার অস্তিত্ব, তার ভালবাসা এই মুহূর্তে আমার জন্য সবচেয়ে বড় বিশ্বাস। আমি আমার মায়ের কাছে বিশ্বাসী হয়ে থাকি, থাকার চেষ্টা করি, তাই আমার গোপন কোডগুলোর মুহূর্ত এবং রাজনীতি, চিঠি এবং ভালবাসা, ক্ষোভ এবং বিপ্লব, অবক্ষয় এবং দীনতাগুলো তার কাছে জমা রেখে আসি প্রতিদিন।
কিন্তু যখন রাষ্ট্র ট্রুথ কমিশন গঠন করল, আমাকে বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হতে বলল, এবং আমাকে কনফেশন করতে বলল, আমি দ্বিধায় পড়লাম। তখন রাষ্ট্রের পোপগিরি: রাষ্ট্রের পোপ কে হইবেন? শিরোনামে একটি ছোট নোট লিখেছিলাম ব্লগে। রাষ্ট্রের পোপ হওনের আকাঙ্ক্ষা তথা ধর্মাকাঙ্ক্ষা, কনফেশন এবং রাষ্ট্রকে নাগরিকের কনফেশন করানোর দায়িত্বার্পন- এর পেছনে রাষ্ট্রের যে বাসনা ও চরিত্র দাঁড়ায় তার কোন নতুন সংজ্ঞায়ন সম্ভব বা দরকার কিনা- এইসব বিষয়গলো নোট আকারে তুলেছিলাম।
আধুনিক রাষ্ট্রের এই ধর্মাকাঙ্ক্ষার গোড়ায় আরো যে বহুবিধ ক্ষমতা সম্পর্ক আছে, তাকে পরিশুদ্ধ এবং পবিত্রায়ন করে, আরো নিরাপদ করার নিমিত্তে পরবর্তীতে বাংলাদেশে যে ঘটনাটি ঘটল, তা হল আমার ফোনে আড়িপাতার নির্দেশ, এবং ছয় মাস ধরে আমি, আমার সমগ্র অনুভূতির পাতা, প্রেম, ক্ষোভ এবং অনুযোগ, আমার গোপন কোড, বিবিধ নকশাগুলো, যা আমার মায়ের কাছে প্রতিদিন জমা রেখে আসি, বিশ্বাসী হতে চাই বলে; রাস্ট্র, এক মহা ক্ষমতাশালী পোপের রেকর্ডারে বন্দী থাকবে, যতক্ষণ না, আমি বিশ্বাসী, অর্থাৎ রাস্ট্রের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হবো।
আজকের প্রশ্নটি এবং প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন, কিন্তু প্রকৃতি এক-ই। সামহোয়ারইন ব্লগ এর মডারেটরগণ আমাকে বিশ্বাসী হতে বলছেন এবং তার জন্য আমার ফোন নাম্বারটি চেয়েছেন। বিশ্বাসী না হতে পারলে, আমার পোস্ট সংকলিত পোস্টে সরাসরি স্থান পাবে না, আর ডিফল্ট অনুসারে, সংকলিত পোস্টই আসল পেইজ হিশেবে ভিজিটরদের কাছে উপস্থিত হবে, মানুষ অবিশ্বাসীদের লেখা দেখবে না। অবিশ্বাসীদেরকে, পোস্ট দিয়ে বিনীতভাবে অপেক্ষা করতে হবে, এবং মডারেটরদের যথাযথ সময় হবে যখন, তারপর যথার্থ মডারেশনের পর, যদি দেখেন, আমি, মানে সেই অবিশ্বাসী লোকটা ঈমানদারের মতন কাজ করেছি, রাষ্ট্র, এবং অথরিটির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না, তাহলে অবিশ্বাসীর পোস্ট জেল থেকে ছাড়া পাওয়া যেতে পারে।
আমার লেখালেখি এবং ব্যক্তিগোপনীয়তার গভীর খবর, আমার অবস্থান এবং পরিচয়, নকশা এবং গোপন কোডগুলো পোপ হতে চাওয়া রাস্ট্রের দরকার হয় কখনো কখনো, নিজের পবিত্র এবং সাম্রাজ্যবাদী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে জয়ী হতে, আমার অবস্থান চিহ্ণিত করে, আমাকে খুন করে যাতে একই সাথে রাষ্ট্র, ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টার এর নিরাপত্তা, এবং ইনফিনিট জাস্টিস এনশিউর করা যায়।
সামহোয়ারেরও কখন আমার ফোন নম্বর দরকার হয়? রাষ্ট্রের যখন ধর্মাকাংক্ষা জাগে, রাষ্ট্রের ভিতরে প্রতিষ্ঠান আর রাষ্ট্রের সম্পর্ক তখন এক জায়গায় এসে সেই ধর্মাকাংক্ষাকে বাঁচানোর জন্য কাজ করে।
আমার মা আমাকে এই ধর্মাভিলাসি রাষ্ট্রের ইনফিনিট জাস্টিসের বিরুদ্ধে লড়তে বলেছেন এবং গেরিলা হামলা করতে বলেছেন। আমি গেরিলা সেজে লিখছি, নিজের সব পরিচয় লুকিয়ে, ক্যামাফ্লোজ পরে, এই শাদা পোশাকের অরণ্যের ভিতর। আমি আমার মায়ের কাছে বিশ্বাসী, কিন্তু রাষ্ট্র এবং তার সবরকমের সহযোগী বন্ধুদের কাছে অবিশ্বাসী। এবং তাই থাকতে চাই। তাই আমার ফোন নাম্বারটি দিতে পারবো না। দুঃখিত, প্রিয় সামহোয়ার ইন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৫